
২০২০ নোবেলজয়ী লুইস গ্লুক এর কবিতা
লুইস এলিজাবেথ গ্লুক একজন আমেরিকান কবি এবং প্রাবন্ধিক। তিনি জীবনে অনেক পুরস্কার লাভ করেছেন, তার মধ্যে ২০২০ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অন্যতম। তাঁর প্রাপ্ত অন্যান্য পুরস্কারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পুরিৎজার পুরস্কার, জাতীয় মানবতা পদক, জাতীয় গ্রন্থ পদক, জাতীয় গ্রন্থ সমালোচক পদক, বলিজেন পদক ইত্যাদি। ২০০৩ থেক ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি আমেরিকার রাজকবি বা পোয়েট লরিয়েট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
গ্লুক নিউ ইয়র্ক সিটিতে জন্মগ্রহণ করেন এবং লং আইল্যান্ডে বেড়ে উঠেছেন। মাধ্যমিকে থাকা অবস্থায় তিনি অ্যানোরেক্সিয়া নারভোসা নামক রোগে আক্রান্ত হন এবং পরবর্তীতে তিনি সেরে ওঠেন। তিনি সারা লরেন্স কলেজ এবং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ করতে পারেননি। তবে পরবর্তীতে আরো অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কবিতা বিষয়ে পড়পশুনা করেছেন।
গ্লুক বর্তমানে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক এবং লেখক। তিনি ম্যাসাচুয়েটস এর ক্যামব্রিজে বসবাস করছেন।
রাত্রি পরিযাণ
এই সে-মুহূর্ত যখন তুমি দেখবে আবার
ভষ্মগিরির লাল বেরি ফল
আর অন্ধকার আকাশে
পাখিদের রাত্রি পরিযাণ।
আমাকে দুঃখ দিচ্ছে এ-ভাবনা,
মৃতেরা তাদের দেখতে পারবে না—
আমরা যার উপর নির্ভর করি
তারাই হয় বিলীন।
তাহলে আত্মা কী আর সান্ত্বনা দেয়?
আমি নিজেকে বলি সম্ভবত
আনন্দের আর দরকার নাই কোনো;
কিছু না হওয়াই একেবারে যথেষ্ঠ,
যা ভাবতে পারাও কঠিন।
অতীত
আকাশের মৃদু আলো
দুটি পাইন ডালের মাঝে
দৃশ্যমান হল, তাদের সূক্ষ্ম সূচ
এখন রশ্মির তলদেশে আবদ্ধ
এবং তারও উপরে
পালকাবৃত স্বর্গ অবস্থিত।
বাতাসের ঘ্রাণ নাও। এ হলো সাদা পাইনের গন্ধ—
ভীষণ তীব্র যখন এর মধ্যে বাতাস বয়ে যায়
এবং এর উৎপাদিত শব্দ একই রকম অদ্ভুত,
কোনো সিনেমায় বাতাসের শব্দের মতো—
ছায়ারা নড়েচড়ে। দড়িগুলো
উৎপন্ন শব্দে যোগান দেয়। এখন তুমি কী শুনছো?
কোনো নাইটিঙ্গল পাখির গান? কর্ডাটা গোত্রের,
পুরুষ পাখি স্ত্রীটির বিচার করছে—
দড়িগুলো নড়েচড়ে।
দুটি পাইন শাখায় শক্ত করে বাঁধা
দোলবিছানাটা বাতাসে দুলছে।
বাতাসের ঘ্রাণ নাও। এ হলো সাদা পাইনের গন্ধ।
তুমি শুনছো যে স্বর তা আমার মায়ের,
কিংবা এটা কেবল বৃক্ষে উৎপন্ন শব্দ
যখন বাতাস বয়ে যায়
কারণ যে শব্দ এটা সৃষ্টি করে,
কোনো কিছুই তা ভেদ করে না?
রেড পপি
মন থাকাটা কোনো
মহান বিষয় নয়। অনুভূতি:
আহা! আমার আছে,
তারা আমাকে পরিচালিত করে।
আসমানে এক প্রভূ আছে
যাকে আমরা সূর্য বলি
এবং তার জন্য খোলা হৃদয়,
তাকে দেখাই যতো দহন,
তার উপস্থিতির মতো সে উত্তাপ।
কী হয় এসব মহিমায়
যদি হৃদয় না থাকে?
ভাইয়েরা-বোনেরা শোনো,
অনেক আগে, মানুষ হবার পূর্বে,
তোমরা কি আমাকে পছন্দ করতে?
তোমরা কি চাইতে মেলে ধরতে হৃদয়,
কখনো যারা মেলেনি পুনরায়?
কেননা সত্য হল, এখন আমি
কথা বলছি যেভাবে তোমার বল।
এসব বলছি কারণ, আমি ছিন্নভিন্ন।
সান্ধ্য আরাধনা
দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে তুমি আমাকে করেছ
পার্থিব বিনিয়োগে ভোগের প্রত্যাশী।
আমি এখন আমার ব্যর্থতার প্রতিবেদন
দাখিল করছি, বিশেষ করে,
টমেটো চাষ সংক্রান্ত আমার চূড়ান্ত
অপারগতা। আমার ধারণা, আমাকে
টমেটো চাষ করতে বলা একদম ঠিক হয়নি।
অথবা, যদি আমাকে করতেই হবে
তাহলে তোমার উচিৎ বৃষ্টি প্রতিরোধ করা,
হীমরাত্রি নামে এখানে ধীরে, কিন্তু দেখো,
অন্যান্য অঞ্চলে বারো সপ্তাহ গ্রীষ্ম থাকে,
এসব কিছুই তোমার: অন্যদিকে,
আমি বীজ বপন করছি, আমি দেখেছি
মাটি ভেদ করে কুঁড়ি ফোটে, এবং এটা
আমার হৃদয় যা মাজরা পোকায় জর্জরিত,
অতিদ্রুত দাগগুলো বহুগুণে বেড়ে যায়।
আমার ধারণা তোমারও হৃদয় আছে,
তার মাধ্যমেই আমাদের বোঝাপড়া হচ্ছে।
তুমি, যার কাছে জীবীত ও মৃত একই অর্থবহ,
যারা অতঃপর প্রতিরোধ করে পূর্বসূরী,
তুমি হয়তো জানো না কতোটা আতঙ্কে থাকি,
দাগযুক্ত পাতা, ম্যাপেলের লাল পাতা
ঝরে পড়ছে এমনকি আগস্টেও,
কৃষ্ণপক্ষের প্রথম তিথিতে:
আমিই ওইসব দ্রক্ষালতাদের জন্য দায়ী।