
স্বর্গের রাজা
ব্রেকিং স্টেরিওটাইপ
— আপাতত কি ভাবছো?
— কিছুই না। তবে বউ বিক্রি করে কবিতা ছাপাবো ভাবছি।
— আরে তোমার বউ-ই তো জুয়ায় হেরে তোমাকে আমার কাছে বন্ধক রেখে গেল। টাকা হলে ছাড়াবে। তুমি আবার…
কবিতার মা-বাবা
ডাক্তার দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে, ফলাফল অতিনগন্য! একদিন ডাক্তারকে বললাম, ‘আপনি আমাকে সংকোচ না করে আমার রোগের ব্যাপের সবকিছু খুলে বলুন।’ তিনি বললেন, ‘আমার স্ত্রী-কে বললে ভাল হতো, আমি এতে আরো বেশি ভেঙে যেতে পারি।’ আমি বললাম, ‘আমি নিজেকে ভেঙেভেঙে কবেই খরচ করে ফেলেছি, এখন সমান্য খরচের বাকি! আর ভাঙা-টাঙার কিছুই নেই, আপনি বলুন—’
তিনি বললেন, ‘আপনি পৃথিবীতে আর বেশিদিন থাকছেন না। তবে আপনি কি সে-ব্যাপরে চিন্তিত?’
আমি বললাম, ‘কই নাতো! বহুদিন ধরেই স্বর্গের ঠিকানা বরাবর অনেক মেইল করেছি। সর্বশেষটা অ্যাপ্রুভ হল— তা সুখকর! তবে ‘কালি’ কবিতা জন্ম দেওয়ার পর আর কবিতার তেমন খোঁজ রাখে না। আমার তাদের জন্য একটাই চিন্তা এখানে জন্মানো আর স্বর্গে যখন জন্ম নিবে আগামীর কবিতা; তখন একে-অপরকে চিনবে তো? তারা জানবে তো তারা এক সুতায় গাঁথা?’
স্বর্গের রাজা
বিষন্নতা নিয়ে সমুদ্রপাড়ে বসে আছি, নানা প্রশ্নবানে জর্জরিত। সহসা দেখলাম ইন্দ্রদেব সমুদ্রপাড়ে তাঁর গায়ে পরহিত সকল পোশাক খুলে রেখে, দ্রুত সমুদ্রে নামছেন স্নানের অভিপ্রায়ে। তাকে পেয়ে আমার প্রশ্নবানগুলো তাঁর দিকে ছুড়তে লাগলাম। তিনি নিকটে এসে বিরক্তের স্বরে বললেন, বহুদিন ধরে তিনি সমুদ্রের অভাবে স্নান করতে পারেনি এখন আমি আবার কি চাই (ইহজাগতিক কিছু)? আমি বললাম, ‘আমি এবং আমার বউ একই দ্যাশে ধর্মের দুই ব্রাঞ্চে বিলং করছি। এখন কার প্রমোশন কতো মসৃণ হবে? কিংবা স্বর্গেও কি আমাদের এমন আলাদা ব্রাঞ্চে বিলং করতে হবে কি-না? সেখানের ডেমোক্রেসির অবস্থা যেহেতু ভালো, তাই নবীন হিসেবে নির্বাচন করলে রাজা হওয়ার সম্ভাবনা কেমন? নির্বাচনের খরচ কেমন এবং আমার বউ নির্বাচন প্রচারণা করতে পারবে কি-না?’
মনুষ্যবৎ স্বর্গ গিয়ে নির্বাচনে দাঁড়ায়ে স্বর্গের রাজা হতে চায়! এসব আদিখ্যেতা দ্যাখে তিনি সমুদ্রপাড়ে রাখা পোশাক না-পড়েই—বাঁহাতে লয়ে স্বর্গ অভিমুখে রওনা করলেন…
নিজস্ব ও ব্যক্তিগত বেদনা
বেদনাদের প্রেয়সীর বুকের মধ্যে রাখতে চেয়েছিলাম
কিন্তু সে বললো, সেই বুকে না-কি আমি থাকি!
সমুদ্রে রাখতে চেয়েছিলাম,
সে বললো, তার বিশাল জলরাশি শুকিয়ে যাবে
এতো এতো প্রাণী মারা গেলে, এতো পাপ কিরূপে বইবো!
পাহাড়ের সুউচ্চ চূড়ায় বেশ আরাম করেই তাদের রাখলাম
কিন্তু নতুন এক সমস্যা আবির্ভাব—
তারা নিয়ম করেই মেঘেদের গিলতে লাগল!
বরফ আচ্ছাদিত পূর্ব অ্যান্টার্কটিকার ডোম আরগাসেও রেখেছিলাম,
দেখলাম তাদের উত্তাপে বরফ গলে যাচ্ছে, মনুষ্যবৎ হুমকিতে!
কোথাও স্থান না পেয়ে গেলাম জনপ্রাণীহীন মঙ্গলে,
সে বললো তার ফোবোস ও ডিমোস তাদের ভারসাম্য হারায়!
নিজের বেদনারাও নিজস্ব ও ব্যক্তিগত
কোথাও তাদের স্থান নেই!
তাদের বুকে নিয়েই ঘুরছি পৃথিবীর পথে-প্রান্তরে বনেবাদাড়ে…
জানুয়ারি
শীতে নয়া বউকে নিয়ে এসেছিলেম সমুদ্র দ্যাখাতে
শপিং টপিং নানা প্যাকেজ প্লান ছিল হাতে
কিন্তু মাঝরাতে আমার আপেলরঙা বউ পালিয়েছে এক ছিনতাইকারীর সাথে।
ভালবাসার নাম করে করল সম্পর্ক-পান!
মাছভাজা আর মদ টদ ঘোষ বাবদ চোরের সর্দারকে খাইয়ে
বললাম আমার আপেলরঙা বউয়ের কথা;
এখন দ্যাখছি আমার থেকে তার ইন্টারেস্ট আরো বেশি!
পকেট থেকে কন্ডোম ফেলে মদ হাতে নিয়ে ফিরতেই দ্যাখি—
মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কাজ করছে না ভেসে যাচ্ছি অন্যকোথাও!
আকাশ টাঙিয়ে শুয়ে আছি সমুদ্র কিনারায়
ঢেউ এসে মুছে দিয়ে যায় অতীত, সফেন বুকে ঘুমিয়ে যায়…
বুকের ভেতরে পাথর নিয়ে গুণগুণ করি :
সমুদ্রপাড়ে ছিনতাইকারী গিলে ফেললো আমার নয়া সংসারী ডাইনি!
একাকীত্ব
পুরো বিকেল মেলিয়ে বসে আছি,
ধুয়ে দিচ্ছে সোনালি আলো–
অনন্ত কেউ এসে দেখুক আমার একাকিত্বের দুখ।
হিজল দেখলো, বিছিয়ে দিল নিজেকে বানের জলে।
মেঘেরাও দেখলো, ঝরে পড়লো বৃষ্টিতে।
কিন্তু বালিকা তুমি দেখলে না, আমার একাকিত্ব!
আচ্ছা তোমার দিবাতে কি বিকেল আসে না?
চোখে পড়ে না সোনালি আলো?
ততটুকু চাইনি তো!
অত মাধূর্য কিংবা অত ঐশ্বর্য!
শুধু চেয়েছি অনন্ত কেউ এসে দেখুক আমার একাকিত্বের দুখ।
অত ভিড়, অত মানুষ কিংবা সভ্যতা আমার দুঃখ না জানুক
বালিকা শুধু তুমি জেনো
কেউ একজন বিকেল পোড়াচ্ছে তোমার জন্য।
ততটুকু চাইনি তো!
শুধু চেয়েছি জীবনের অপরাহ্নে–কেউ অন্তত পাশে বসুক।
একটি শীতল কূয়া হোক–ভিজিয়ে দিক তৃষ্ণার্ত বুক।
জেগে থাকা যান্ত্রিক চোখে ঘুমের ঢল নামিয়ে দিক।
‘এই শুনছো, অনেক হয়েছে এবার ঘুমাতে এসো!’ বলে ডাকুক।