
সাহিত্যে রাজনীতি তালাকের প্রস্তাবনা: একটি প্রতিক্রিয়ামূলক আলাপ ॥ পর্ব- ৪
আবদুল মান্নান সৈয়দ-এর প্রেম: প্রেমের গল্পে মতার্শিক রাজনীতি
আবদুল মান্নান সৈয়দের (২০১৮) একটি গল্পের বই আছে। নাম প্রেম। দু’টি গল্পের সংকলন এটি। একটি গল্পের নাম পোড়ামাটির কাজ। অন্যটির নাম উৎসব। এ বইয়ের নাম, এর প্রচ্ছদ ও অলংকরণ শতভাগ নিশ্চিত করেছে যে, বইটি প্রেমের গল্পের। আর গল্পের ভাষা শুধু প্রেমের নয়; সাবালক-সাবালিকারও। পোড়ামাটির কাজ-এর মূল নারীচরিত্র কমলা। পেশায় একজন নর্তকী, গায়ের রঙ কালো। নৃত্যপটিয়সী। জন্মসূত্রে ‘অস্পৃশ্য। অন্তজ। বন্যফুল’ (সৈয়দ, ২০১৮, পৃষ্ঠা-৯)। কিন্তু দেহজ সৌন্দর্য ও নৃত্যকুশলতার গুণে কমলার অবস্থান আলোচনার কেন্দ্রে, আগ্রহের মূলবিন্দুতে। কমলাকে নিয়ে আলাপচারিতায় মেতে থাকেন রাজা, রাজপুত্র, নগরপ্রধান, কবিপ্রধান, কবি, সুরকার, গীতিকার-শ্রেণি ও মর্যাদার প্রশ্নে সামাজিক পদসোপানের উপরের দিকে থাকা প্রায় সবাই। কিন্তু কমলার মালিকানা অঙ্গদের, যিনি সে সময়কার বণিকশ্রেষ্ঠ, রাজ্যের সেরা ব্যবসায়ী। যিনি কমলাকে নিয়ে এসেছেন তাঁর বাবা-মার কাছ থেকে, পরিবারটির চরম দারিদ্র্যের সময়, নিজের বাগানবাড়ি, নৃত্যশালায় ব্যবহারের জন্য। অঙ্গদের এ বাগানবাড়ি-নৃত্যশালাটি নিছক বিনোদনকেন্দ্র নয়; এর রয়েছে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য, রাজনৈতিক অর্থনীতি। ব্যবসাকাজে রাজঅনুমোদন দরকার হলে অথবা ভিনদেশি ব্যবসায়ীর সাথে ব্যবসাসম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় এটি ব্যবহৃত হয়। এ রাজঅনুমোদনপ্রাপ্তি কিংবা ব্যবসাসম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় কমলাও ব্যবহার হয় অব্যর্থ হাতিয়ার হিসেবে। রাজার বিশেষ কক্ষে কমলা যেদিন নৃত্য করতে আসেন, যেখানে রাজা, অঙ্গদ আর কবি ছাড়া কেউ থাকে না, সেখানে রাজা ও কবির কথোপকথনে আমরা এটাও জেনে যাই যে, রাজা কর্তৃত্ববান ও ক্ষমতাবান হলেও, কখনও কখনও ব্যবসাপুঁজির ক্ষমতা রাজার ক্ষমতাকেও ছাড়িয়ে যায়। অঙ্গদ হয়ে ওঠেন রাজার চেয়েও ক্ষমতাবান। মূলত ব্যবসায়ীরাই যে সবকিছুর নিয়ন্ত্রক সেটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
‘এম্নিভাবে এক চক্র ঘুরতে থাকে। গোবিন্দ, কৃষ্ণপা আর রাজেশ্বর ঘুরে-ঘুরে আসে। আসে আরও অনেকেই। কমলা দিন-ব্যাপী মৃণাল, বন্যফুল, শাক-পাতা খুঁজে খুঁজে বেড়ায় মাঠে ময়দানে। তাঁত আর চাঙারি বানায় প্রাণপণে রম্ভা আর দণ্ডক। কোথায়-কোথায় ঘুরে বেড়ায় দর্ভ। রাত্রি না হলে আসে না। কিন্তু সংসার চলে কই। একবেলা আধপেটা ভাত জোটে। বড়ু জীর্ণ হ’তে থাকে, তার খয়েরি রোমের উজ্জ্বলতা নির্বাচিত হতে থাকে। মাটির দেয়াল ধ্বসে যায় একদিকে, খড়ের চাল অনেকখানি উড়ে গিয়ে নীল আকাশ দেখা যায়’ (পৃষ্ঠা-২৯)।
একটি প্রেমের গল্পে কমলাদের পরিবারের এ চক্রবন্দিত্বের কথা পড়তে পড়তে আমরা পরিচিত হতে থাকি শুধু দারিদ্র্যপীড়িত একটি প্রান্তিক ডোম পরিবারের সাথে নয়; একই সাথে একটি স্তরায়িত সামাজিক কাঠামোর সাথে। যেখানে গোবিন্দ, কৃষ্ণপা কিংবা রাজেশ্বররা মধ্যসত্তভোগী হিসেবে বিত্তশালীদের পক্ষে সক্রিয় থাকে। ‘একদিকে এই অবস্থা; অন্যদিকে নিত্য প্রলোভন। এই পল্লীতেই অনেকগুলি মানুষ প্রলোভনের পাত্র ভ’রে নিয়ে আসে (পৃষ্ঠা-২৫)। তাদের এ রকম প্রলোভনের সক্রিয়তায় অসংখ্য কমলা পরিবারচ্যুত হয়। একদিকে প্রলোভন অন্যদিকে দারিদ্র্য, দুয়ের প্রভাবে বঞ্চিত হয় বাবা-মা ও পরিবারের স্নেহ থেকে। হয়ে ওঠে আপাতত কোনো নৃত্যশালার কেন্দ্রবিন্দু। গল্পের ক্রমাগত বিস্তৃতি ক্ষমতাবানদের এ অদৃশ্য রাজনীতিকে পষ্টাপষ্টি করে তুলে। এ ক্ষমতাটা শুধু শ্রেণির নয়; পুরুষেরও, পুরুষতন্ত্রেরও। কারণ এ ক্ষমতাবানরা বৃত্তবান পুরুষ অথবা বৃত্তবানের সাথে সম্পর্কিত পুরুষ। কিন্তু কমলা কি একেবারেই ক্ষমতাহীন? মোটেই না। বরং কমলা কখনও কখনও ক্ষমতাবানের অস্বস্থির কারণ হয়ে ওঠেন। কমলার এ ক্ষমতার উৎস তার মানবিকতাবোধ, অভিজ্ঞতা, শ্রেণিসচেতনতা এবং সেসবের মিশ্রণে ক্ষমতাবান মালিককে প্রশ্নবান করে তোলার দক্ষতা। একজন চন্ডাল বালকের নগরীতে প্রবেশ করার অপরাধে অমানবিক শাস্তি হতে দেখে কমলা যখন তার মালিক বণিকশ্রেষ্ঠকে প্রশ্ন করেন—
‘আচ্ছা, আমি তো অস্পৃশ্যা, তাই না?… আমি তো অনেককেই স্পর্শ করেছি, কিংবা অনেকেই আমাকে স্পর্শ করেছে, যেমন আপনি (অঙ্গদ), কিন্ত আমার কোনো শাস্তি হচ্ছে না কেন?’ (পৃষ্ঠা-৩১)।
কমলার এ প্রশ্নের মধ্য দিয়ে পাঠকের সামনে উন্মোচিত হয় ক্ষমতাবানদের দ্বৈত অবস্থানের। রাত ও দিনের, প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য দু’ধরনের আচরণের। একটা সম্মুখমঞ্চ। অন্যটি পেছনের মঞ্চ। একই ব্যক্তি কিন্তু তার এক মঞ্চের আচরণের সাথে অন্য মঞ্চের আচরণের কোনো মিল নেই। পার্থক্য রাত ও দিনের।
বলেছিলাম এটা একটা প্রেমের গল্প। তাহলে এ গল্পে প্রেম কোথায়? প্রেমও আছে খুব গভীরভাবে। যেখানে কমলার প্রতি সবার অনুভব কামের সেখানে কবির অনুভব গভীর প্রেমের। কমলার প্রতি কবির এ প্রেম জেগেছিল প্রথম দেখাতেই। সে প্রেম গভীর থেকে গভীরতর হতে থাকে। ফলে নর্তকী কমলাকে কবি নির্বসনে দেখলেও যেদিন দু’জন মিলে নগরভ্রমণে বের হন সেখানে কমলার মুখশ্রীই কবির কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। কবি শরীর নয়; মনের অনুবাদেই সক্রিয় হয়ে উঠেন। কমলা ও কবির কথোপকথনে, প্রেমময় সংলাপে প্রতিষ্ঠিত হয় সমাজে অন্ত্যজা বলে পরিচিত প্রান্তিক নারীর সাথে সমাজে প্রতিষ্ঠিত মর্যাদাবান মানুষদের প্রেমময় সম্পর্কের ধারণা। এক অর্থে এটি সামাজিক জাতিপ্রথার বিরুদ্ধেও একটি রাজনৈতিক অবস্থান। এ রাজনীতিটা আরও স্পষ্ট হয়। যখন সমস্ত অন্ত্যজরা মিলে বিদ্রোহ করে, নগর আক্রমণ করে। আর এ বিদ্রোহের প্রতি সমর্থন জানিয়ে কমলা কবির হাতে তার জমানো সমুদয় অর্থ তুলে দেন। কবিকে অনুরোধ করেন তা যেন বিদ্রোহীদের কাছে পৌঁছে দেন। বিদ্রোহীদের প্রতি কমলার এ অনুরাগ ও সমর্থন একজন দেখে ফেলে। দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করে। হঠাৎ জেগে ওঠা বিদ্রোহ সফল হয় না। বিদ্রোহ থেমে গেলে নগরী যখন আবার উৎসবমুখর হয়ে ওঠে কবি আর কমলাকে খুজে পায় না। কেউ আর বলতেও পারে না কমলার কী হয়েছে। কিন্তু বিদ্রোহের প্রতি সমর্থনের কী পরিণতি হতে পারে সেটা আঁচ করা যায়। কমলার প্রতি এক দারুন ভালোবাসার অনুভূতি নিয়ে নগরের পথে ঘুরতে থাকেন কবি।
কৃষ্ণাঙ্গ নারী কমলার শারিরীর সৌন্দর্য বয়ানের মধ্যেও সম্ভবত রাজনীতি আছে, সে রাজনীতিটা সৌন্দর্যের, বিশেষ করে নারী সৌন্দর্যের বর্ণবাদী অবস্থানের বিরুদ্ধে। গায়ের রঙ ফর্সা হলেই যে সুন্দর সেটি বাতিল হয়ে যায় সৈয়দের কমলার রূপবর্ণনায়। আবার অন্যদিকে লেখক নিজেও পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বাস করেন। ফলে নারী সৌন্দর্য দেহজ সে ধারণাটিও বলবান হয় সৈয়দের বর্ণনায়। সৈয়দ একদিকে শ্রেণির ও বর্ণবাদের পক্ষের রাজনীতিকে খারিজ করেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী দিয়ে বিদ্রোহ করান। কিন্তু সে বিদ্রোহ সফল হয় না। এ না হওয়ার কারণ গল্পে নেই। তবে বুঝা যায়, কারণটি হচ্ছে সংগঠনের অভাব। সামাজিক কাঠামোর শক্তি। অন্যদিকে সম্ভবত নিজের অজান্তেই লেখক লিঙ্গীয় রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত হন। বর্ণনার পরতে পরতে তুলে ধরেন নারী শরীর। কিন্তু নারীর শরীরসর্বস্ব ধারণাটিকে আবার চ্যালেঞ্জও করেন। আমরা যখন দেখি কবি কমলার শরীরের প্রতি নয়; মনের প্রতিই দুর্বল, তার মানবিক হৃদয়ের প্রতিই সংবেদনশীল। সমাজ প্রতিষ্ঠিত যৌনতার শুচি-অশুচির ধারণাও ভেঙ্গে দেন। কবি নিজেও বলেন, সে নিজেও পবিত্র নয়, কারণ তারও ইতোপূর্বে যৌনাভিজ্ঞতালাভের সুযোগ হয়েছে। তার মানে যৌনতার পবিত্রতার ধারণা যদি প্রয়োগ করতে হয় শুধু নারীর জন্য প্রযোজ্য নয়; পুরুষের জন্যও প্রযোজ্য হবে। কবি একই সাথে ভবিষ্যতেরও স্বপ্ন দেখেন। বলেন, বাংলাদেশ এক সময় এসব ধারণা থেকে মুক্ত হবে। নরনারীর সম্পর্ক একটি মানবিক সম্পর্ক হিসেবেই বিবেচিত হবে। একটি প্রেমের গল্পে সমাজ, সংস্কতি ও রাজনীতির নানা মাত্রিকতা কীভাবে আসতে পারে, কতো স্পষ্টভাবে আসতে পারে—এ গল্পটি তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
এবার আসা যাক দ্বিতীয় গল্প প্রসঙ্গে। গল্পের নাম উৎসব। এ গল্পের প্রধান চরিত্র সিরিমা। পেশায় ‘যৌনকর্মী’। গল্পকারের ভাষায় ‘গণিকা’। এটি কামের গল্প নাকি প্রেমের গল্প—এ প্রশ্নটা উঠতেই পারে। আমার বিবেচনায় দু’টিই। তবে গল্পের বিকশিত অবয়বে এটি এক সময় প্রেম ও কাম এর সীমা ছাড়িয়ে রাজনৈতিক গল্পও হয়ে উঠে। কিন্তু রাজনৈতিক গল্প হয়ে উঠতে গিয়ে একটি প্রেমের গল্পের যে আবেদন, সে আবেদনকে এতটুকুন খর্ব করে দেয় না। কারণ গল্পের ভেতরে সুপ্ত রাজনীতিটা বুঝবার জন্য পাঠকের আলাদা রাজনৈতিক চোখ থাকার দরকার পড়ে।
আগেই বলেছি সিরিমা একজন যৌনকর্মী। লেখক যে সময় ও সমাজের কথা বলছেন, সে সময় ও সমাজে ‘গণিকা’ বা যৌনকর্মী শুধু একজন নন, আরও আছে। তারাও সবাই ‘আকর্ষণীয়া, অনন্যা। তারপরও সিরিমা আলোচনা ও আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রে। রাজা, অভিজন থেকে শুরু করে সাধারণ, সবাই সিরিমাকে চায়। কিন্তু সিরিমার এ অবস্থান দেহজগুণাবলীর জন্য নয়, অর্জিত গুণাবলীর কারণে।’ কিন্তু আর সবাই অর্থদাসী, আর সিরিমার মধ্যে আছে ব্যক্তিত্বের বিভা। কেবল এ চারিত্রগুণেই সে অন্যদের থেকে আলাদা’ (পৃষ্ঠা-৫৩)। নারীর অর্জিত গুণাবলির চেয়ে আরোপিত বৈশিষ্ট্যসমূহই সামাজিক ব্যাকরণে গুরুত্বপূর্ণ। আপাতত শ্রেষ্ঠত্বের কারণও। আর যদি সে নারী পেশায় যৌনকর্মী হন তবে তো কথাই নেই। গজফিতা মেপে মেপেই দেহজ উৎকর্ষতার বয়ান তৈরি হবে। সে বয়ান পাঠক সৈয়দের বর্ণনায়ও পাবেন। তবে সাথে জেন্ডার রাজনীতির প্রতিষ্ঠিত ব্যাকরণটিকে উল্টে দেয়ার, বিনির্মাণের প্রয়াসও পাঠকের দৃষ্টি এড়াবে না। পাঠক যখন গল্পটা পড়তে পড়তে কবুল করবেন যে, সিরিমার দেহজ বৈশিষ্ট্য নয়; তার ব্যক্তিত্বই তাকে নিয়ে আগ্রহ ও বিপুল জনপ্রিয়তার কারণ। সিরিমাকে ঘিরে রাজনীতি, সংস্কৃতি, শিল্প-সাহিত্যের আলাপ হয়। একজন কবির জন্য নিবেদিত নৃত্য-উত্তর সিরিমা যখন বলবেন, ‘নৃত্য তো নশ্বর, কবিতা চিরকালীন। এ চিরন্তনের উদ্দেশ্যে নশ্বরের শ্রদ্ধাঞ্জলি’ (পৃষ্ঠা-৬৩)। অথবা একদা রাজার সভাগৃহের একাদশ সদস্যা কিন্তু ব্যক্তিত্ব রক্ষায় সে সভাগৃহ থেকে পদত্যাগ করতেও যে কুণ্ঠিত হন না। সিরিমার পিতৃপরিচয় নেই। কারণ তাঁর মাও একজন যৌনকর্মী ছিলেন। কিন্তু সে পরিচয় নিয়ে সিরিমার মধ্যে কোনো সংকোচ নেই। বরং তার পরিচয় নিয়ে রাজসভাগৃহে একজন পরিকল্পিতভাবে প্রশ্ন তুললে সিরিমা খুবই সহজ সাবলীলভাবে নিজের পরিচয় দেন এবং ঘোষণা করেন—জন্ম পরিচয়ে নয়; পরিচয় যোগ্যতায়, ব্যক্তিত্বে। বলেন, মানুষের বড় পরিচয় সে মানুষ। জাতপাত বা জন্মসূত্রীয় সামাজিক মর্যাদার বিপরীতে মানুষের মানবিক পরিচয়ের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষিত হয় সিরিমার মুখ দিয়ে। তারপর তিনি রাজসভা থেকে পদত্যাগ করেন। শুধু পদত্যাগ করেন না, সাথে এও বলে দেন যে, পদত্যাগ করেই আমি প্রমাণ দিলাম, আমি তোমাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। ক্ষমতাকেন্দ্রিক সুবিধাবাধিতা সবাই ছাড়তে পারে না। কেউ কেউ পারে। সিরিমা এ বিশেষ কেউ কেউদের একজন। এভাবেই গল্পের চরিত্র হিসেবে সিরিমা হয়ে ওঠেন সবার চেয়ে উজ্জ্বল।
যারা সিরিমাকে ঘিরে থাকে সিরিমার প্রতি তাদের অনুভবটা কামের। একজনই ব্যতিক্রম। তিনি হলেন তরুণ ভিক্ষু কল্যাণ। সমাজ-ধর্ম মতে যার গণিকালয়ে যাওয়া তো দূরে থাক, নারীর প্রতি প্রেম-কামও জাগার কথা নয়। অথচ সে ভিক্ষুই একদিন গণিকালয়ে হাজির, সিরিমার প্রেমপ্রার্থী হয়ে। উপস্থিত সবাই দূরদূর বলে তাড়িয়ে দিতে চাইলেও সিরিমা এগিয়ে আসেন, ভিক্ষুর প্রতি কাম নয়; প্রেমই অনুভব করেন। এ প্রেমের গভীরতাও অসামান্য। তারপর সারা রাজ্য যেদিন উৎসবে মেতে উঠে সেদিনই সিরিমার মৃত্যু হয়। সিরিমার মৃত্যুর পর তার শরীর অনেকটা নিলামে তোলার মতো দাম হাকা হয়। এতদিন যারা সিরিমার জন্য হাজার টাকা খরচে উন্মত্ত ছিল তাদের কেউ এগিয়ে আসে না। শুধু একজনই সর্বোচ্চ দামে সিরিমাকে নিয়ে যেতে চায়। সে হচ্ছে কল্যাণ ভিক্ষু। এভাবে কল্যাণ প্রেমিক হিসেবে অনন্য হয়ে ওঠে। ভিক্ষু কল্যাণের একজন গণিকার প্রতি অনুরাগী হয়ে ওঠার মধ্য দিয়ে ধর্মারোপিত আচারের বিপরীতে প্রেম ও যৌনতা যে, মানবিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, সে সত্যটাও পুনঃপ্রতিষ্ঠা পায়। এটাও একটি ধর্মাশ্রিত সামাজিক আচার বিনির্মাণের রাজনীতি অথবা সে রাজনীতিকে একটু উসকে দেয়ার শিল্পিত প্রয়াস।
মান্নান সৈয়দের এ ছোটগল্পের বইটি যে পাঠক নিছক প্রেমের গল্প হিসেবে পড়বেন তার পক্ষে নিরেট প্রেমের উপাদান খুঁজেই বিমোহিত হওয়া সম্ভব। এমনকি কেউ যদি আরেকটু এগিয়ে সাবালক উপাদানে আগ্রহী হন, সেটিও পাবেন। আবার যেসব পাঠক প্রেমের পাশাপাশি সমাজ বাস্তবতা, শ্রেণি, সমাজিক সম্পর্ক কাঠামোর ভেতরের রাজনীতি অনুসন্ধানের প্রয়াস চালান, সেটিও পাবেন। রাজনীতিকে তালাক দিয়ে নয়; সমাজকাঠামোর রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে মুন্সিয়ানার সাথে অন্তর্ভুক্ত করেই গল্পগুলি স্বার্থক হয়ে উঠেছে। বারবার পাঠযোগ্য হয়ে উঠেছে।
ছ.
আলোচনা শেষ করতে চাই কানাডা প্রবাসী জ্যামাইকার কবি ও কথাসাহিত্যিক অলিভ সিনিয়র (গার্ডিয়ান, ২০১৩) এর একটি লেখার প্রসঙ্গ টেনে। তিনি মূলপ্রবন্ধ হিসেবে লেখাটি পাঠ করেছিলেন ত্রিনিনাদে অনুষ্ঠিত এডিনবরা বিশ্ব লেখক সম্মেলনে। প্রবন্ধটির সম্পাদিত সংস্করণ প্রকাশ করেছে গার্ডিয়ান, ২০১৩ সালের ২৯ এপ্রিল। তিনি আলোচনাটি শুরু করেছেন একটি প্রশ্ন দিয়ে। প্রশ্নটি হচ্ছে-সাহিত্য কি রাজনৈতিক হওয়া উচিত। উত্তরটি দিতে গিয়ে তিনি দু’টি বিদ্যমান ধারণা ভাঙবার, ভাঙ্গাবার চেষ্টা করেছেন। একটি ভাবনা সাহিত্য নিয়ে। যেখানে মনে করা হয় সাহিত্য হচ্ছে একটি নির্মল পরিসর, যা রাজনীতির মতো অনির্মল জায়গা থেকে মুক্ত থাকতে হবে। অন্যদিকে রাজনীতি মানেই কিন্তু মনে করা হয় দলীয় রাজনীতি, নির্বাচনী রাজনীতি কিংবা নেতৃত্ব। সাহিত্য ও রাজনীতি নিয়ে বিদ্যমান এ ধারণার কোনটিকেই তিনি সমর্থন করেননি। কেননা যা কিছু নির্মল নয় সেটি যেমন সাহিত্যের পরিসরভুক্ত আবার তেমনি রাজনীতি মানে কিন্তু শুধু দলীয় বা নির্বাচনকেন্দ্রিক দলাদলি নয়। বরং রাজনীতি হচ্ছে, তার মতে, শাসনের শিল্প। এ রাজনীতিই আমাদের দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত পথচলাকে ঠিক করে দেয়। পথটিকে তৈরি করে দেয়। আমাদের খাবারের দাম, অস্ত্রের উপস্থিতি, আমাদের জীবন কি প্রাচুর্যময় হবে, অথবা শরণার্থী শিবিরের কষ্টকর জীবন হবে—সেটিও রাজনীতি নির্ধারণ করে। আমরা যেখানে জন্ম নেই, বেড়ে ওঠি, আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনযাত্রা—এ সব রাজনীতিই নির্ধারণ করে। ফলে আমরা কোনো না কোনো ভাবেই রাজনীতির সাথে মিশে আছি। কেননা আমরা কোনো না কোনো ভাবেই কোথাও না কোথাকার নাগরিক। লেখক নিজেও একজন নাগরিক। অতএব আমরা চাইলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পারি না। পালিয়ে যেতে পারি না। সুতরাং সাহিত্য রাজনৈতিক হওয়া উচিত কি না এ প্রশ্নটিই অবান্তর। তাঁর মতে সাহিত্য হচ্ছে রাজনৈতিক কারণ সাতিহ্যস্রষ্টা একজন রাজনৈতিক প্রাণী। সাহিত্যিককে রাজনৈতিক হতে হয় মানবিক হওয়ার দায়বদ্ধতা থেকে, বিশ্ব নাগরিক হওয়ার দায়বদ্ধতা থেকে।
তিনি নিজের উদাহরণ দিয়ে বলেন, আমি যে সময় বেড়ে উঠেছি, বড় হয়েছি সেখানে শিশুদের বইতে আমি নিজকে খুঁজে পাইনি। আমি আমার আশপাশের মানুষদের খুজে পাইনি। আমি শিশুদের জন্য লিখি। একজন শিশুসাহিত্যিক হিসেবে আমি এমন কিছু লিখতে চাই—যা পৃথিবীর সব শিশুর জন্য প্রযোজ্য হবে। কিন্তু একই সাথে এটাও স্বীকার করছি যে, বইয়ের অঙ্গসজ্জ্বায় আমি খুব সচেতনভাবে বহুসংস্কৃতির উপাদানকে তুলে ধরতে চাই। এই যে চাওয়া, এটা কিন্তু সাহিত্যের রাজনীতি। একই কথা রোমান্টিক সাহিত্য সম্পর্কেও খাটে। একজন সাহিত্যিককে সমাজের সাথে যুক্ত থাকতে হয়। সমাজের নানা কাজে অংশ নিতে হয়। যার সোজাসাপ্টা অর্থ হচ্ছে রাজনৈতিক অংশগ্রহণ। এ রাজনৈতিক যুক্ততায় ধর্ম, জেন্ডার, জাতিসত্তা, লিঙ্গ ইত্যাদি ভূমিকা রাখে। তবে তিনি মনে করেন, সাহিত্য নিছক দলীয় রাজনৈতিক হওয়া উচিত নয়।
আবারও রবীন্দ্রনাথে কথায় আসি। কয়েকবার উল্লেখ করেছি যে, রবীন্দ্রনাথ ভাবের মানুষ। তাঁর বিচরণ ছিল ভাবজগতে। তিনি ভাবের কবি। তবে ভাবের মানুষও বস্তজগত থেকে আলাদা থাকেন না। তাকে বাস করতে হয় বস্তুজগতে। ফলে তাকে রাজনীতি সচেতন হতে হয়। রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকতে হয়। আর এ কারণেই ভাবের জগতের এ মানুষটি যখন জাপন সফরে যাবার পথে জাহাজে বসে বসে নিজের অনুভূতিগুলি লিখেন, যেটি পরবর্তীতে জাপানযাত্রা নামে প্রকাশিত হয়, সেখানে রবীন্দ্রনাথ ভাবের জগতে বিচরণ করেন না। বস্তু জগতেই বিচরণ করেন। অথবা ভাবের জগত ও বস্তু জগত—এ দু’য়ের মধ্যে মেলান। সমন্বয় করেন। তাকে পুঁজিবাদী দুনিয়ার উন্নয়ন অভিঘাত নিয়ে ভাবতে হয়। তিনি পরিবেশের বিপর্যয় দেখে থমকে যান। চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি পরিবেশ বিযুক্ত নগরায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ভাবিত হন। ভাবতে বাধ্য হন। এগুলি একজন মহৎ মানবিক কবির রাজনৈতিক সচেতনতারই প্রতিফলন। ঐ যে লেনিন বলেছেন, মহৎ শিল্পীর সৃষ্টি মাত্রই তাতে কোনো না কোনোভাবে বিপ্লবের বিষয় চলে আসে। রবীন্দ্রনাথ বিপ্লবী ছিলেন না; কিন্তু মহৎ শিল্পী তো বটে। মহৎ শিল্পী বলেই ভাববাদী রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য সামাজিক ও রাজনৈতিক হয়ে ওঠে। ভাবের জগতের রবীন্দ্রনাথ সামাজিক ও রাজনৈতিক হতে পেরেছিলেন বলেই ক্রমাগতভাবে আজও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছেন। প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকছেন।
প্রসঙ্গক্রমে মাওয়ের কথা মনে পড়ল। তখন চিন বিপ্লব চলছে। ১৯৪২ সালের মে মাস। ইয়ানানোর মুক্তাঞ্চলে মাও এক বক্তৃতায় বললেন, চীনা জনগণের মুক্তিসংগ্রামে দু’টি ফ্রন্ট সক্রিয়; একটি কলম অন্যটি বন্দুক। একটি সাংস্কৃতিক, অন্যটি সামরিক। (উদৃত: রনো ২০১৬)। তবে ভাবলে ভুল হবে যে, সমাজতান্ত্রিক বা বামপন্থীরা বোধহয় জোর করেই সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে রাজনীতির সাথে যুক্ত করার পক্ষে ফতোয়া দিচ্ছেন। অনুচিত কাজ করছেন। ইতিহাসের পাতা উল্টালে আমরা বোধ হয় দেখতে পাব পৃথিবীর সকল কল্যাণকর পরিবর্তনের সাথে সাহিত্যের, সাহিত্যিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। কখনও পরক্ষ, কখনও প্রত্যক্ষভাবে। এমনকি প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক বিপ্লবের সাথেও প্রতিক্রিয়াশীল সাহিত্যের সম্পর্ক রয়েছে।
গ্রীক দার্শনিক প্লেটোর গল্পটা সম্ভবত সবার জানা। গল্প প্রচলিত আছে যে, তিনি কবি ও কবিতার শত্রু ছিলেন। কবিতা ও কবিদের অপছন্দ করতেন। তার নামে বদনাম রয়েছে তাঁর আদর্শ রাষ্ট্র থেকে কবিদের ঝেটিয়ে বিদায় করবার কারণে। প্লেটো কেন কবিদের আদর্শ রাষ্ট্রে স্থান দিতে চাননি। সেটা কি কবিতার প্রতি স্রেফ বিরুপমনোভাবের জন্য? কবিতা নিয়ে প্লেটোর ব্যাখ্যার প্রতি মনোযোগ দিলে সে রকম মনে হবে না। নিশ্চই না। বরং স্পস্ট হবে যে, প্লেটোর এ সিদ্ধান্তও রাজনৈতিক, রাষ্ট্রনৈতিক (চক্রবর্তী ২০১৪)। প্লেটো মনে করতেন, কবি ও কবিতা তাঁর আদর্শ রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর। কবিতা নগর রাষ্ট্রের নাগরিকদের আবেগী করে তুলতে পারে। অযৌক্তিক করে তুলতে পারে। জনগণ যদি আবেগী হয়, অযৌক্তিক হয় তাহলে কী হতে পারে। বিষয়টি স্পষ্ট। নাগরিকগণ রাষ্ট্রের বিপক্ষে চলে যেতে পারে। খ্রীষ্টের জন্মের আগের এ ধারণা অমূলক ছিল না। ইতিহাসে আমরা কবিদের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধাচারণ করতে দেখি। কারাবরণ করতে দেখি। বিপ্লব ও আন্দোলনে প্রেরণা যোগাতে দেখি। আমাদের নজরুল তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। কিন্তু নজরুল রাষ্ট্র ও সমাজের বিরোধীতা করেছেন সরাসরি এবং সাহিত্যসৃষ্টি দিয়ে। তাতে তাঁর সাহিত্যের ক্ষতি হয়নি। বরং তার সৃষ্টি মহিমান্বিত হয়েছে। বেগবান হয়েছে।
শুরুতে দু’টি উদৃতি দেয়া হয়েছে। একটি লেনিনের। অন্যটি চণ্ডীদাসের। সাহিত্যের রাজনীতি থাকা উচিত কি উচিত নয় বিষয়টি বোঝার জন্য দু’টি উদৃতিই গুরুত্বপূর্ণ। লেনিন বিপ্লবী ছিলেন। বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি সরাসরি শিল্প-সাহিত্যে রাজনীতির পক্ষে। কিন্তু চণ্ডীদাস, যিনি মূলত: বৈষ্ণব সহজিয়া ভক্তিবাদের কবি। আর যে সহজিয়ায় প্রধান স্রোতধারাটি রাধা-কৃষ্ণের লীলার জয়গানে ভরপুর। তাহলে চণ্ডীদাস কি সাহিত্যে রাজনীতি থাকতে হবে এমন কথা বলেছেন। না বলেননি। কিন্তু তার চেয়ে বেশি বলেছেন। তিনি যখন বলেন, ‘শুন হে মানুষ ভাই/সবার উপরে মানুষ সত্য/ তাহার উপরে নাই’। তখন তিনি আসলে রাজনীতিই করেন। রাজনৈতিক প্রকাশই করেন। এ রাজনীতি হচ্ছে মানুষকে সবার উপরে স্থান দেয়ার রাজনীতি। যে রাজনীতিটা সাহিত্য ও সাহিত্যিকের জন্য খুবই জরুরি।
সাহিত্য যদি রাজনীতিবিযুক্ত হতো তবে আমরা একজন বেগম রোকেয়া পেতাম না। রোকেয়ার হাত ধরে বাংলা সাহিত্যে নারীবাদী সাহিত্যের সূচনা হতো না। কট্টর নারীবাদী গল্প- সুলতানার স্বপ্ন রচিত হতো না।
সুতরাং যারা সাহিত্যে রাজনীতিকে তালাক দেয়ার প্রস্তাবনা করেন, তারা আসলে একটা রাজনৈতিক মতলব নিয়েই মাঠে নামেন। তারা আসলে রাজনীতিই করেন। সেটা বিরাজনীতিকরণের রাজনীতি। সাহিত্যকে জনজীবন থেকে, জনজীবনের বয়ান তৈরি থেকে বিচ্ছিন্ন করার রাজনীতি। মান্যবর সম্পাদকের প্রস্তাব অনুযায়ী যদি সাহিত্য থেকে রাজনীতিকে তালাক দেয়া হয় তবে সে সাহিত্যে আমরা হয়তো মানুষ পাব, কিন্তু সম্পূর্ণ মানুষকে নয়, খণ্ডিত মানুষকে। তাতে বড়জোর কোনো কোনো পত্রিকার সাহিত্য পাতার সিন্ডিকেট নির্ভর কবি-সাহিত্যিকের দল পাওয়া যাবে, মহৎ সাহিত্য পাওয়া যাবে না। অতএব মান্যবর সম্পাদকগংদের এ ধরনের রাজনীতিকে রুখে দাঁড়ানোও জরুরি, সাহিত্যের মাধ্যমে। শিল্পের মাধ্যমে।
তথ নির্দেশিকা
১. আজাদ, হুমায়ুন, উনিশ শতকের বাঙলা সাহিত্য, আগামী প্রকাশনী, ঢাকা, ২০১৯
২. কবির, আহমদ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-জীবনস্মৃতি (ভূমিকা), দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, ঢাকা, ২০১৩।
৩. চৌধুরী, সিরাজুল ইসলাম, উনিশ শতকের বাংলা গদ্যের সামাজিক ব্যাকরণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা, ঢাকা, ২০০৩
৪. চক্রবর্তী, সুমিতা, প্লেটো এবং অ্যারিস্টটলের শিল্পতত্ত্ব ও কাব্যতত্ত্ব, রহমান, হাবিব (সম্পাদিত), পাশ্চাত্য সাহিত্যতত্ত্ব-ধ্রুপদী ও আধুনিক, কথাপ্রকাশ, ঢাকা, ২০১৪
৫. চৌধুরী, সিরাজুল ইসলাম, নজরুলকে চিনতে চাওয়া, সংহতি, ঢাকা, ২০১৪
৬. চৌধুরী, সিরাজুল ইসলাম, সাহিত্যের রাষ্ট্র বিরোধিতা, রাষ্ট্র ও সংস্কৃতির সামাজিকতা, চন্দ্রবতী একাডেমি, ঢাকা, ২০১৫
৭. ছফা, আহমদ, সাম্প্রতিক বিবেচনা- বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস, খান ব্রাদার্স এন্ড কোম্পানি, ঢাকা ২০১৩
৮. ব্রুততি (গান ও আবৃত্তি থেকে নেয়া) https:// www. youtube.com/ watch?v=jYMDVJTYT8g
৯. মামুন, নাসির আলী, শামসুর রাহমান ও আল মাহমুদ: তফাৎ ও সাক্ষাত, অনন্যা, ঢাকা, ২০০৯
১০. মাসুদুজ্জামান, বাংলাদেশের সাহিত্যপাঠ-রাষ্ট্র, রাইফেল ও ব্যক্তিমানুষের বয়ান, অন্যপ্রকাশ, ঢাকা ২০১৬
১১. মুনীরা, সিরাজাম, সেলিনা হোসেনের উপন্যাসে রাজনীতি, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি, ঢাকা, ২০১৮
১২. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০০৭), সৌন্দর্য ও সাহিত্য, সাহিত্য, পুনর্ভবা প্রকাশন, ঢাকা, ২০০৭, পৃষ্ঠা-৪৮
১৩. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আত্মপরিচয় (আবদুশ শাকুর সম্পাদিত), প্রথম সংস্করণ, দ্বিতীয় মুদ্রণ, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, ঢাকা, ২০১১
১৪. রনো, হায়দার আকবর খান, বাংলা সাহিত্যে প্রগতির ধারা, প্রথম খন্ড, ছায়াবীথি, ঢাকা, ২০১৬
১৫. রিয়াজ, আলী, স্বপ্নগুলো জেগে থাকে, সূচীপত্র, ঢাকা, ২০১৯
১৬. শাকুর, আবদুশ, ভুমিকা, আত্মপরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রথম সংস্করণ, দ্বিতীয় মুদ্রণ, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, ঢাকা, ২০১১
১৭. সৈয়দ, আবদুল মান্নান, প্রেম, তৃতীয় মুদ্রণ, অ্যাডর্ন পাবলিকেশন, ঢাকা, ২০১৮
১৮. সরকার, যতীন, কথক শরৎচন্দ্র: তাঁর কথাসরিৎসাগর, সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা, বিভাস, ঢাকা, ২০১৫
১৯. হক, হাসান আজিজুল, বাংলাদেশে বঙ্কিম চর্চা, কথা কথাসাহিত্য, চন্দ্রাবতী একাডেমি, ঢাকা, ২০১৫
২০. হাননান, সুদীপ্ত, আহমদ ছফার কবিতা: জীবনের দাহ ও ঐতিহ্য- বোধের সমন্বয়, হাওলাদার প্রকাশনী, ঢাকা ২০১৯।
২১. https://www.theguardian.com/books/2013/apr/29/olive-senior-literature-political?fbclid= IwAR1AiPpMa5ExUiz_IPAO850xJR3mIqc-biYm9sU0aGJc63WfIAVw0X2ZD5w , visited on 21 February 2019
২২. Mambrol, Nasrulla, Literary Criticism of Plato in Literary Theory and Criticism, 2017, https://literariness.org/2017/05/01/literary-criticism-of-plato/ visited on 25 November 2019
-শেষ