
সারা টিজেলের কবিতা
সারা টিজেল, জন্ম- অগাস্ট ৮, ১৮৮৪—মৃত্যু- জানুয়ারি ২৯, ১৯৩৩। আমেরিকান গীতিকবি। পুরো নাম সারা টেভর টিজেল। বিয়ের পর সারা টিজেল ফিলসিঙ্গার নামে পরিচিত হন। তার জন্মস্থান আমেরিকার সেন্ট লুইস, মিসৌরিতে। বিয়ে করেন ১৯১৪ সালে। শৈশবে রুগ্ন স্বাস্থ্য থাকায় তাকে অনেক দেরীতে স্কুলে ভর্তি করা হয়। বাড়িতেই লেখাপড়া চালিয়ে যান। ১০ বছর বয়সে স্কুল যাওয়া শুরু করেন। ভর্তি হন মেরী ইনসটিটিউটে ১৮৯৮ সালে। একবছর পর ১৮৯৯-এ স্কুল পরিবর্তন করে ভর্তি হন ‘হসমার হলে’। গ্র্যাজুয়েশন করেন ১৯০৩ সালে। টিজেলের পরিবার থাকতো ৩৬৬৮ লিনডেল ব্লভড-এ। তারপর ৩৮ কিংসবুরী, সেন্ট লুইস, মিসৌরি।
১৯০৪-১৯০৭ টিজেল ‘দি পটারস’ গ্রুপের সদস্য হন, যেটি পরিচলনা করতেন লিলি রোজ আর্নস্ট, এটি ছিল মেয়েদের একটি আর্টিস্ট গ্রুপ যেখানে টিনএজ পরবর্তী বিশের কাছাকাছি সৃজনশীল মেয়েদের বই প্রকাশ করতো। সেন্ট লুইস থেকে তারা একটি মাসিক শিল্প-সাহিত্য পত্রিকা করতো যার নাম ছিল ‘দি পটার’স হুইল’।
টিজেলের প্রথম কবিতা ছাপা হয় উইলিয়াম মিরন রীডিস মিরর নামে একটি স্থানীয় পত্রিকায় ১৯০৭-এ। তার কাব্য সংকলন ‘সনেট টু দোসে ও অন্যান কবিতা’ একই সময়ে প্রকাশিত হয়। তার দ্বিতীয় সংকলন ‘হেলেন অব ট্রয়’ ও অন্যান্য কবিতা প্রকাশ হয় ১৯১১ সালে। সমালোচকরা এটিকে ভালোভাবে গ্রহণ করে। তিনি গীতিধর্মীতা ও রোমন্টিক বিষয় বস্তুর জন্য প্রসংশিত হন। ১৯১১—১৯১৪ সালে টিজেল বহু মানুষের দ্বারা প্রসংশিত হন যার মধ্যে কবি ভেসেল লিন্ডসেও ছিল। যিনি সত্যিকার অর্থে তার প্রেমে পড়েছিল কিন্তু টিজেলকে সন্তুষ্ট করার জন্য তার যথেষ্ট অর্থ ও সামর্থ ছিল না। টিজেল ১৯৩৪ সালের ১৪ ডিসেম্বও তার দীর্ঘদিনের কবিতার গুণমুগ্ধক আর্নেস্ট ফিলসিঙ্গারকে বিয়ে করেন।
টিজেলের তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘রিভারস অব দি সী’ প্রকাশিত হয় ১৯১৫ সালে। এটি বেস্ট সেলার হিসেবে বহুবার পুনমুদ্রণ হয়। ১৯১৬ সালে তিনি ফিলসিঙ্গারের সাথে নিউওয়ার্ক শহরে চলে আসেন। তারা থাকতে শুরু করেন ওয়েস্ট সাইড এ একটি এ্যাপার্টমেন্টে সেন্ট্রাল পার্ক ওয়েস্টে।
১৯১৮ সালে তিনি পুলিৎজার পুরস্কার জিতেন ১৯১৭ তে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘লাভ সং’ এর জন্য।
ফিলসিঙ্গার ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে বাইরে চলে গেলে টিজেল খুব নিসঙ্গতার মাঝে পড়ে। ১৯২৯-এ তিনি মাস তিনেকের জন্য আন্তরাজ্য ঘুরার অজুহাতে সন্তোষজনকভাবে বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তে উপনীত হন। তিনি ফিলসিঙ্গারকে না জানিয়ে আইনজ্ঞের মাধ্যমে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ফিলসিঙ্গার এ সিদ্ধান্তে আহত হয়েছিলেন। টিজেল পুরোনো বন্ধু ভেসেল লিন্ডসের অনুগ্রহ লাভ করেন, যিনি বিবাহিত ও সন্তানের জনক।
১৯৩৩-এ টিজেল আত্মহত্যা করেন অতিরিক্ত ঘুমের বড়ি খেয়ে। লিন্ডসেও দুই বছর পর আত্মহত্যা করেন।
আমি তোমার নই
আমি তোমার নই, তোমাতে হারাইনি
হারাইনি, যদিও সাধ
মধ্যাহ্নে জ্বলা মোমের মত হারাই
হারাই সমুদ্রে গলে যাওয়া তুষারকনার মতো।
তুমি ভালোবাস আমাকে, আমি তোমাকে দেখি
এখনও প্রফুল্ল সুন্দর আর উজ্জ্বল,
তবু আমি তো আমিই, যাদের সাধ
আলোর মতো হারাবার আলোর ভেতরে।
ওহ আমাকে ডুবিয়ে দাও প্রেমের অতলে—
বোধশূন্য করো, করে দাও অন্ধ ও বধির
ভেসে যাক তোমার প্রেমের বন্যায়
বয়ে যাক ঝড়ো হাওয়ার প্রচণ্ডতায়।
মে দিবস
পাখির গানের এক সুক্ষ্ম তন্তু
ভাসে বাতাসে,
ভেজা বুনো পৃথিবীর ঘ্রাণ
সর্বত্রই ছড়িয়ে।
ম্যাপলের লাল খুদে পাতাগুলো
হাতের মতো মুষ্টিবদ্ধ,
মেয়েদের প্রথম মিলনের মতো
নাশপাতি গাছগুলো দাঁড়ানো।
ওহ্ আমি কিছুতেই যাবো না
তাদের এতো ভালবাসা ছেড়ে,
বৃষ্টির ফোঁটা আমার ঠোঁটে থাকার চেষ্টা করুক
ঘাস আমার সংস্পর্শে থাকুক।
কিভাবে আমি নিশ্চিত হবো
পুনর্বার আমি দেখতে পাবো
বৃষ্টির পর পহেলা মে’র আলোয়
উদ্ভাসিত হচ্ছে পৃথিবী।
আলো
আমরা রাতে যখন বাসায় ফিরি আর দরজা বন্ধ করি,
যখন ছায়াচ্ছন্ন ঘরে পাশাপাশি দাঁড়াই,
মৃদু আঁধারে সুরক্ষিত থাকে আমাদের ভালোবাসা,
পারিবারিক বাঁধন আর চেয়ার ও মেঝে থাকে খুশি।
পরিপাটি শহরের কোলে ছড়িয়ে পড়ে আনন্দ;
নিচের দিকে দেখি চকচকে রাস্তায়
শোভিত আলো, তবুও চেষ্টা করেছি কয়েক পা এগিয়ে।
নির্বাক করুণায় উথলে উঠছি আমরা দুজন;
মানুষ কঠিন চেষ্টায় রত এড়াতে আঁধার;
লাখো আলোকিত জানালার ঔজ্জ্বল্য
জড়িয়ে আছে শীতরাত্রির স্বর্ণাভ উদ্যানগুলোয়,
কিন্তু আমাদের এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় যেখানে অনমনীয়
জীবনানুভূতি জন্ম নেয় প্রত্যেক হলুদ আলোর পিছে,
আর আমরা কেউই সম্পূর্ণ সুখি, গর্বিত বা মুক্ত নই।
আমি তোয়াক্কা করি না
আমি যখন মৃত আর উজ্জ্বল এপ্রিল হবে শেষ
তার বৃষ্টি ভেজা চুলগুলো উঠবে নড়ে
ভগ্ন হৃদয়ে আমার উপর নত হবে যদিও তুমি
আমি তোয়াক্কা করবো না।
আমি শান্তিতে থাকবো, পাতবহুল গাছেদের মতো শান্ত
যখন বৃষ্টি তাদের নত করার জন্য বাঁকাবে,
আর আমি থাকবো অধিকতর শীতল হৃদয় ও স্তব্ধ
এখন ধন্যবাদ তোমাকে।
স্বপ্নের ঘর
তুমি নিয়ে গেছো আমার অসার স্বপ্নগুলো
আর এপ্রিল ও সূর্যকে
তাদের কোমলতা আর আভিজাত্যে
করেছো পরিপূর্ণ।
পুরোনো অসার স্বপ্নগুলো
যেখানে আমার ভাবনাগুলো জাগ্রত হবে
এমনকি একটি গান করার আনন্দে পাবে
অনেক বেশি পূর্ণতা।
আমার অসার স্বপ্নগুলো ম্লান হয়ে গেছে
গেছে ছড়িয়ে,
তারা ছিল মিষ্টি ও ছায়াচ্ছন্ন ঘরগুলোয়
যেখানে আমার স্বপ্নগুলো থাকতো লুকিয়ে।
কিন্তু তুমি নিয়ে গেছো আমার স্বপ্নগুলো
আর দিয়েছো সত্যি করে সব
আমার ভাবনাগুলোর এখন খেলবার কোন জায়গা নেই
নেই আর কিছু করার।