
সম্পর্ক
এতক্ষণ যেমন তেমন। রিকশায় উঠে চোখ ছেড়ে দেয় রত্নার। তার জীবন আর ম্যাডামের জীবনে কতো পার্থক্য। না, টাকাপয়সার কথা তিনি ভাবছেন না। ওসব তো জন্ম থেকেই মেনে নিয়েছেন। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীতে তো মিল থাকতে পারত। একজন আরেকজনের সুখ-দুঃখ বুঝতে পারত। ম্যাডামের স্বামী যেমন, ফরিদও তো তেমন হতে পারত।
নাক টানার শব্দে বুড়ো রিকশাওয়ালা বার দুই পাশ ফিরে তাকান। কিছু বলেন না। রত্না ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে চোখ মোছেন। টিস্যু একগাদা আছে সাথে। ফেসিয়াল করতে এসেছিলেন সে মনেশ্বর রোডের এক বাসায়। জিগাতলা বাস স্ট্যান্ডে এসে রিকশাভাড়া দিতে গিয়ে দেখেন ফোনটা ফেলে এসেছেন সেখানে। রিকশা ঘোরান।
সব কিছুতেই ভুল হয়ে যাচ্ছে আজকে। সকালে ফরিদের সাথে ঝগড়া সেই দিয়ে শুরু। আজকাল তুচ্ছ ব্যাপারে খটরমটর লেগেই আছে। দিনের পর দিন এই চলছে। ফরিদ চালায় রিকশা। মন নেই কাজে। বেশি রোদে ফিরে আসে। বৃষ্টিতে বেরোয় না। ঘরেই থাকে দিনের বেশিরভাগ সময়। বসে বসে টিভি দেখবে সে; কোনো কাজে হাত লাগাবে না। এই যে পার্লারে যাওয়ার আগে এই বাসায় কাজ করতে এসেছেন সকালে, ফরিদের দুপুরের খাবার রান্না করে রেখে এসেছেন।
এই বাসায় এসে দেখেন, তিনি ম্যাডামের ফেসিয়াল করছেন আর ম্যাডামের স্বামী রান্না করছেন। ভিনেগার আনতে রান্নাঘরে গিয়েছিলেন; দেখেন ম্যাডামের স্বামী রান্না করছেন। প্রথমবার ম্যাডামের স্বামীকে কাজ করতে দেখে অবাক লেগেছিল। কিন্তু এই বাসায় প্রতিমাসে একবার আসেন। দেখতে দেখতে চোখসওয়া হয়ে গেছে।
তখনই তুলনাটা আসে তার মনে। সারাদিন পার্লারে। তার আগে বা পরে মানুষের বাসায় কাজ। এর আগে পরে সব রান্নাবাড়া, ঘরের ছোটখাটো কাজ। ফরিদ শুধু বসে বসে টিভি দেখে আর ছুতোয় নাতায় ঝগড়া করে। প্রচন্ড মুখ খারাপ করে। বাসায় কাজ করতে যাওয়াকে ইঙ্গিত করে কুৎসিত সব কথা বলে। এসব জাবর কাটতে কাটতে ম্যাডামের বাসায় ফিরে আসেন তিনি। রিকশাওয়ালাকে দাঁড়াতে বলে নিজে চারতলায় ওঠেন।
ফ্লাটের বেল চাপেন। একবার, দুইবার, তিনবার সাড়া নেই। চতুর্থবারে দরজা খোলেন ম্যাডাম। তার চোখমুখ লাল। একটু আগে এত যত্নে ফেসিয়াল করা গাল বেয়ে চোখের জলের ধারা। থমকে যায় রত্না। নিজের মনখারাপ নিয়ে আনমনে ছিলেন। হঠাৎ পুরো চিত্র পাল্টে যাওয়ায় তার কাছে স্বপ্ন বলে মনে হয়। কয়েক মুহুর্ত তার মাথা কাজ করে না; তিনি কিছু বলতে পারেন না।
রান্নাঘর থেকে ম্যাডামের স্বামীর গলা শোনা যায়, সারাদিন চ্যাট, চ্যাট, চ্যাট। মেসেঞ্জারে খোশগল্প। আমি কিছু বুঝি না? মুখে বড় বড় কথা। এর নাম কি জানো? প্রতারণা, তঞ্চকতা। লজ্জা করে না?
ম্যাডাম অপ্রস্তুত। স্তম্ভিত।
আমার ফোনটা থেকে গেছে। আমতা আমতা করে বলেন রত্না।
দাঁড়াও।
তাকে দরজার বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে ম্যাডাম ফোন এনে দেন। দরজা আধা খোলাই থাকে। রান্নাঘর থেকে তখনও ভেসে আসছে রাগত কন্ঠস্বর, এত পার কি করে? এত জনরে খেলাও।
ফরিদের মুখের কথাগুলো ম্যাডামের হাসব্যান্ডের মুখ থেকে বেরোচ্ছে যেন। কন্ঠস্বরও কি একরকম লাগছে?