
সনদপত্র
কুর্মিটোলা হাসপাতালের ১২ নং ওয়ার্ড। ওয়ার্ডে ডাক্তার নার্সদের সমাগম অন্যদিনের থেকে চোখে পড়ার মতো। সবার মধ্যে ব্যস্ততা। মুখে চিন্তার ছাপ। দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াচ্ছেন এক থেকে অন্যজন। পিপিই পরে আছে সবাই। ডাক্তার মঈন উদ্দীন হতাশ মুখে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নাঈমার দিকে তাকালেন। ডাক্তার নাঈমা বুঝলেন যেকোন সময় ভদ্রলোক পৃথিবী ত্যাগ করবেন।
নাঈমার মনটা মোচড় দেয়। ১২ নং ওয়ার্ডে আজ তের দিন হলো ভর্তি মহব্বত উল্যা। ওনার দিকে তাকালেই বাবার মুখটা ভেসে উঠে মনের আয়নায়। তাকে তার বাবা বাবা লাগে।
আজ ক’দিন ভদ্রলোকের কাছাকাছি আসছেন ডাক্তার মঈনের এসিসটেন্ট বলে। এজন্যই মায়া অনুভূত নয়। ভদ্রলোক তার প্রতিবেশি। দিনকয়েক কলেজ যেতে গাড়িতে লিপ্ট দিয়েছেন। চেম্বারে নামিয়ে দিয়েছেন বেশ ক’দিন। এসব ছাড়াও একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে অবসরপ্রাপ্ত ফিস কর্মকর্তা মহব্বত উল্যার সাথে। নেহায়েত ভদ্রলোক বলতে যা বুঝায় তিনি তাই। এই পয়ষট্টি বছর বয়সেও যথেষ্ট ইয়াং এবং স্মার্ট। না বললে কেউ বুঝবে না তাঁর বয়স পঁষট্টি।
মহব্বত উল্যার একমাত্র ছেলে রায়হান। ছোট বেলায় তার মা মারা যায়। অনেক কষ্টে বড় করে তোলেন মহব্বত উল্যা ছেলেকে। এ কষ্ট অবশ্য অর্থ কষ্ট নয় শারীরিক এবং মানসিক কষ্ট। ছেলের কথা ভেবে তিনি আর বিয়েও করেননি। সেই ছেলে রায়হান এখন ব্যাংক কর্মকর্তা। বিয়ে করেছে দু’বছর হল।
একসময় মহব্বত উল্যা ডাক্তার নাঈমার বাবা ডাক্তার আফতাবের কাছে উঠতে বসতেই আবদার করতেন, “তোর এই মামনিকে আমি নিব। ও আমার রায়হানের বউ হবে। আমার ঘরে মুনিয়া পাখির মতো ঘুরে বেড়াবে। ক্ষণে ক্ষণে বাবা বাবা বলে ডাকবে। আর আমরা দুই বন্ধু পায়ের উপর পা তুলে খাবো। ক’দিন পরপর গাড়ি নিয়ে দেশ ভ্রমণে বেরুব।”
নাঈমার বাবা হাসতে হাসতে বলতেন “তোর মেয়ে তুই নিবি। এতে আমার আপত্তি নেই।”
নাঈমার মায়ের সাথে তার বাবার বিয়ে হবার আগে মহব্বত উল্যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়। বিয়ের আসরে আত্মীয়দের মনোমালিন্যে বিয়ে ভেঙে গেলে নাঈমার নানাদের পরিবার হতাস হয়ে পড়েন। তখন পাত্রপক্ষের সাথে আসা পাত্রের এক সাহসী বন্ধু কন্যাদায়গ্রস্থ পিতাকে উদ্ধার করেন। এ নিয়ে দু’বন্ধুর বেশ কয়েক বছর দূরত্ব থাকলেও পরে সব জল হয়ে যায়।
হঠাৎ করেই নাঈমার বাবা মারা গেলেন। তবু নাঈমার বুক জুড়ে ছিল একটা স্বপ্নের দোলা। কিন্তু দু’বছর আগে যখন রায়হান পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করবে বললেন। মহব্বত উল্যা কষ্ট পেলেও মেনে নিলেন। নাঈমার বাসায় সেদিন সন্ধ্যায় ছুটে এলেন এবং নাঈমার হাত ধরে শিশুর মতো হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন। নাঈমা অনেক কসরতে তাকে শান্ত করলেন। কিন্তু প্রথম পছন্দের মানুষের জন্য তীব্র হাহাকার আজও দুমড়ে মুছড়ে দেয় নাঈমাকে।
রায়হান মহব্বত উল্যার হাসপাতালে ভর্তির প্রথমদিন এসেছিলেন আর আসেন নি। ফোনে অবশ্য যোগাযোগ রেখেছেন। একজন মানুষের প্রতি মানুষের মায়া মমতা ফোনেই যদি পূরণ হয়ে যেত, তবে পৃথিবীর অনেক জটিলতা লাঘব হয়ে যেত সহজেই। অবশ্য করনা সুযোগকে ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর করে দিয়েছে। কি মারাত্মক ব্যাধি! মানুষ নিজেকে রক্ষার্থে পরিবারকে দূরে ঠেলে রাখতেও দ্বিধা করে না। রোগটা ফুসফুস জনিত ছোঁয়াছে রোগ। তাই মানুষের ভীতি বহুগুণ। তাছাড়া গুজবে এখনও কান দেয় শিক্ষিতরাও। সেই সুযোগ নিয়ে দেদারসে গুজব ছড়াচ্ছে অমানুষগুলো।
বিশ্বজুড়ে এর তাণ্ডবে সবাই নাকাল হচ্ছে। বড় বড় রাষ্ট্রগুলো হিমসীম খাচ্ছে। বিজ্ঞানিরা সর্বাত্মক দিয়ে চেষ্টা করছে একটা যথাযথ কার্যকর ভ্যাকসিন বা ঔষধ বের করতে। একদিন হয়ত অবশ্যই বিজ্ঞানের জয় হবেই। সেদিন বেশি দূরে নয়।
আবার এমনও হতে পারে, আল্লাহ্ এভাবেই তাঁর বিপথগামী বান্দাদের তাঁর গজব দিয়ে থাকেন। বিপথগামীদের সাথে ভালোরাও মারা যায় বা রোগাক্রান্ত হয়। যত যাই হোক আল্লাহ্ ক্ষমা করে দিন সবাইকে। বিজ্ঞানের জয়ের পথ সুগম করে দিক। কোন শত্রুরও যেন এই মারাত্মক ছোঁয়াছে রোগ না হয়। মনে মনে কথাগুলো বলে ডাক্তার নাঈমা মহব্বত উল্যার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকালেন।
গতকাল মা জানতে চেয়েছিলেন তাঁর কথা। বৃত্তান্ত শুনে চাপা স্বভাবের নাদিরার ফর্সা নাক লাল হয়ে উঠেছিল। বুক থেকে ছোট একটি দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে পড়েছিল। নাঈমার বুঝতে এতোটুকু দেরি হয়নি প্রথম স্বপ্ন ভাঙার কষ্টটা মায়ের বুকে গভীর ক্ষত করে রেখেছে। মাকে আশ্বস্ত করেছিল নাঈমা। কিন্তু যেভাবে অবস্থা খারাপ হচ্ছে, ভরসা পাচ্ছে না সে।
তার কি একবার মাকে এনে দেখিয়ে নেবার দরকার আছে বা ছিল? নাঈমা ভাবে কতটা যুক্তিযুক্ত হত বিষয়টি? কে কি ভাববে সে তোয়াক্কা করা যাবে না। আবার আবেগকেও প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। নিজের সাথে নিজে এক এক করে যুক্তি খন্ডায়। তাছাড়া কাকু এখন চোখ মেলে কাউকেই দেখছেন না। তবে থাক ছাই চাপা আগুন ওভাবেই মায়ের বুকে জ্বলতে থাকুক। কত কত প্রেম এভাবেই জ্বলে পুড়ে খাক্ হয়ে যায়। রায়হানের জন্য তার আগুনটাও কম নয়।
ক’দিন আগে অফিস বেরুনোর সময় দেখা হতেই নাঈমা সালাম দিয়েছিলেন মহব্বত উল্যাকে।
—আসসালামু আলাইকুম চাচা। কেমন আছেন?
তিনি মৃদু হেসে বলেছিলেন,
—ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ্। মোটামুটি আছি। তুমি কেমন আছো মা?
—ভালো আছি চাচা। মোটামুটি মানে কী? প্রেসার চেক করেছেন? আপনাকে বলেছি যখন যা দরকার আমাকে বলবেন। আপনি মুখ ফুটে কিছুই বলেন না। মেয়ে মেয়ে বলে অস্থির অথচ মেয়েকে নিজের ভালো মন্দের কথা গোপন করেন।
—গোপন নয় মা। প্রেসারও নয়। সামান্য খারাপ লাগছে।
নাঈমা চিন্তিত হল এবং জানতে চাইলো,
—সামান্য খারাপ মানে কী হয়েছে চাচা?
—তেমন কিছু নয়। কাশ হচ্ছে দু’দিন থেকে। জ্বর জ্বরও লাগছে।
—আপনি চেম্বারে চলে আসুন চেকাপটা করে দিবো। আমার সাথে চলুন না হয়।
—না ডাক্তার, তুমি যাও। আমি পরে আসছি। আমার সাথে তোমাকে নিতে পারতাম। বাট, এখন করোনারকাল। তুমি আলাদা যাও তাই নিরাপদ।
নাঈমা তার মুখটা ভালো করে দেখল। অন্যদিনের চেয়ে বিমর্ষ। এই ভদ্রলোকের দিকে তাকালেই বাবার মুখটা ভেসে উঠে। বাবা বেঁচে থাকলে আজ এঁনার মতোই হতেন।
নাঈমা চেম্বারে পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই তিনি এলেন। করোনা পরীক্ষা দিয়ে চলে গেলেন বাসায়। ছ’দিন পরে রিপোর্ট এলো পজেটিভ। তিনি রিপোর্ট নিতে নিজেই এলেন। সব শুনে কিছুই বললেন না। ডাক্তার নাঈমা বললেন,
—চাচা আপনি ভর্তি হয়ে যাবেন?
তিনি গম্ভীর মুখটা তুলে ডাক্তার নাঈমার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
—মা, দু’টো দিন সময় দাও। ঘরে মায়ার জাল। জালে জড়ানো নানান রঙের সুতো। একটু ছুঁয়ে আসি?
তারপর যেদিন ভর্তি হতে মনস্থির করে এলেন, তিনি নাঈমাকে বললেন,
—ছেলের বউ মিতু যখন শুনলো আমার করোনা পজেটিভ, তখন ঝাঁঝের সাথেই বলেছে,
“যখন দেখলেন করোনা পজেটিভ তখন বাসায় এলেন কেন? গুষ্টিশুদ্ধ না মারলে ষোলকলা পূর্ণ হচ্ছে না বুঝি? যা করেছেন করেছেন, এখন হয় আপনি বেরিয়ে জান। নয়ত ছেলে নিয়ে আমি বেরিয়ে যাই। যদিও কেউ এখন আমাকে জায়গা দিবে না। সন্দেহের চোখে তাকাবে। ভাববে করোনা রোগির সাথে থেকে আমিও করোনা নিয়ে বেরিয়েছি। না দিক। করোনা রোগির সাথে থাকার চেয়ে গাছতলায় থাকা ভালো। বুড়ো হয়েছেন বাতাসে? আল্লাহ্ কি আপনাকে নুন্যতম বোধও দেয় নাই? যদি দিতেন তবে নিজের সেইফে নিজে থাকতেন। এভাবে ঘর শুদ্ধ মানুষকে মারতে পারতেন না।”
আমি নরম গলায় বললাম,
—যদি তোমার বাবা মায়ের এমন হতো, তখন তুমি কি তাদের বের করে দিতে পারতে?
—মানে কি বুঝাতে চাইছেন আপনি? তাছাড়া বাবা মায়ের সাথে সবার তুলনা হয়?
তেজিস্বরে জবাব দিলো মিতু।
আমিও আর ধৈর্য রাখতে পারলাম না দু’কথা শুনিয়ে দিলাম ওকে। বললাম,
—হয় না! ঠিক বলেছো মিতু! হয় না তো! কিন্তু জান এটা আমার অপদার্থটা যদি বুঝতো!
কথাগুলো বলতে বলতে টের পাই আমার কণ্ঠ ভিজে উঠেছে। নিজেকে গোপন করতে রুমের দিকে এগিয়ে যাই। পেছনে সাপের ফণা তোলা মিতু ফোস ফোস করতে করতে রায়হানকে ফোন দিল। ইনিয়ে বিনিয়ে নানার কথার পর বলল, ‘‘আমার ছেলেকে নিয়ে আমি চলে যাচ্ছি। তুমি থাক তোমার বাবাকে নিয়ে।”
নিজের রুমে ঢুকে দরজা দিলাম। বুক ফেটে যাচ্ছিল। বড্ড অসহায় লাগতে লাগল অনেক বছর পর। তোমার কাছে বা তোমার মায়ের কাছে গিয়ে কিছু সময় কাটাতে ইচ্ছে হলো। পরক্ষণে ভাবলাম ‘না!’ যে বিষ আমার শরীরে প্রবেশ করেছে। তার একমাত্র মালিক আমিই থাকব। এর ভাগ কাউকেই দিব না। দেওয়া উচিতও নয়। আরো ভাবলাম ছোট বেলায় রায়হানের কতবার চোখ ওঠা রোগ হয়েছিল। ডায়েরিয়া হয়ে যায় যায় অবস্থা হয়েছিল। হাম, বসন্ত হয়েছিল। কই কখনও তো তাকে ফেলে কোথাও যাবার কথা এক মুহূর্তেও ভাবিনি। সন্তান আর বাবা মায়ের মধ্যে এখানেই বোধ হয় পার্থক্য।
বিকেলে রায়হান অফিস থেকে ফেরার সাড়া পেয়েছি। কিন্তু রাত হবার পরও তার সাথে কোন কাথা বলিনি। এমন কি ফোনেও না। নিজেকে সামলাতে না পেরে গভীর রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে হুহু করে কেঁদে উঠে ছিলাম মা। কান্না থামিয়ে ছেলেকে ফোন করেছিলাম। তখন রাত দেড়টা। দু’বার ফোন করার পর তিনবারের বার ফোন তুলল রায়হান।
“হ্যালো” বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর বলল, “কেন ফোন করেছো কিছু বলবে?”
আমি বলতে চেয়েছি অনেক কিছু। কিন্তু বলা হয়ে উঠেনি। আমার কণ্ঠের কাছে কথাদের কেউ থামিয়ে দিয়ে বলে,
“যখন তোর থেকে কারো প্রাপ্য থাকবে না, তখন তুই তার কাছে মৃত। মৃত সম্পর্ক নিয়ে টানা-হেচড়া না করে সঠিক সিদ্ধান্ত নে। পরিস্থিতি ক্রমাগত অবিশ্বাস্য রকম খারাপ হবে। শুনিসনি, যে বউয়ের জন্য জীবন বাজি রেখে কর্ম করে পুরুষ। বউয়ের ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র প্রয়োজন মেটাতেও তটস্থ থাকে সার্বক্ষণিক। সেই বউ পর্যন্ত করোনা শুনে স্বামী রেখে পালায়। আবার যে স্ত্রী স্বামীর জন্য তার জীবন উৎসর্গ করে। সেও করোনায় নির্ধিদায় দূরে সরে যায়। প্রাণ প্রিয় সন্তান সম্পর্কের মায়া ভুলে যায়। মিছেই তুই যত্ম-আত্মির লোভে আর ছেলের ভালোবাসায় মত্ত্ব হয়ে আছিস্। ঘোর থেকে বেরিয়ে এসে বাস্তবতার সামনে দাঁড়া। তোরও কর্তব্য আছে সন্তানকে নিশ্চিত জীবাণু আক্রান্ত থেকে রক্ষা করার।”
মনের কথার সাথে একমত হলাম। ফোনটা কেটে দিলাম। সারারাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছি। সকালে ভালো করে ঘন্টা দেড়েক ধরে গোসল করি। ইস্ত্রি করা পাঞ্জাবী পাজামা পরে তোমাকে ফোন করি। তারপর বেরিয়ে পড়ি হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। রাস্তায় বেরিয়ে কেমন ফুরফুরে লাগে। সকালের হাওয়া ঘামহীন গায়ে শীতল পরশ বুলিয়ে দেয়। বেরুবার সময় ইচ্ছে করেই নিজের রুমের দরজাটা বাহির থেকে লাগিয়ে এসেছি। জানি, করোনার জীবাণু ছড়িয়ে আছে সমস্ত ঘরে। যদি অবুঝ নাতি ভুল ক্রমে ঢুকে পড়ে খোলা দরজা দিয়ে? তাই নিজের দায়িত্ব পালন করেছি। হয়ত ছেলে বা মিতু যখন জানবে আমি চলে এসেছি। তখন ভীষণ খুশি হবে। রায়হানের কী একটুও কষ্ট হবে না নাঈমা? ওর ধমনিতে কি কোন আলোড়ন হবে না? হয়ত হবে, হয়ত হবে না। যে বৃক্ষ আর ফুল ফল দেয় না তার মোহ কাটিয়ে উঠে সহজেই মানুষ।
একটানা কথাগুলো বলে থামলেন মহব্বত উল্যা। ডুবন্ত বিকেলের মতো তাকে অনুজ্জ্বল দেখাচ্ছিল। নাঈমা সান্ত্বনার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে সেসময়।
সেদিন হাসপাতালে ভর্তি হতে হতে প্রায় এগারোটা বেজে গেল। তিনি তার জন্য রাখা সুনির্দিষ্ট বেডে বসে ফোনটা পকেট থেকে বের করলেন। না কোন কল আসেনি। হয়ত তিনি আশায় ছিলেন তাকে বাড়িতে না দেখে ছেলে একবার ফোন করবে। করেনি। তিনি তার কর্তব্য পালনে পিছ পা হলেন না। অভিমান ভুলে ছেলের ফোনে নিজের নতুন ঠিকানা এসএমএস করে দিলেন। যদি সে একবার আসে? যদি কথা বলে? ফোন রাখতে রাখতে এ কথা নাঈমাকে বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন।
রায়হান এসেছিল ভর্তির তিনদিন পর। তিনি তার সাথে তখন একটি শব্দও উচ্চারণ করতে পারেনি। মানুষ বুঝি এমনি, না চাইলেও অভিমানের চোরাবালিতে ডুবে যায়।
আজ ঘন্টা দেড়েক থেকেই মহব্বত উল্যার শ্বাস কষ্ট বেড়ে গেলো। আইসোলেশনে ডাক্তার নার্সের সমাগম একটু বেশিই। কারণ মহব্বত উল্যা ডাক্তার নাঈমার চাচা বলে কথা। অবশেষে হার মানলেন ডাক্তারেরা। জয়ী হলো করোনা।
রায়হানও উপস্থিত আছে আজ। বাট সে দরজার বাহিরেই দাঁড়িয়ে আছে। পিপিই পরা রায়হানকে চোখ ইসারায় ভেতরে এসে বাবার পাশে দাঁড়াতে দু’বার ডেকেছিলেন ডাক্তার নাঈমা। না সে আসেনি। বরং মাথা নেড়ে জানিয়ে দিল এখানেই ভালো আছে। দেটস্ ওকে। ডাক্তার মঈনের নির্দেশে অতিদ্রুত সব ব্যবস্থা হল।
রায়হান শেষ মুহূর্তেও বাবার লাশ নিতে চাইল না। জানাজায়ও অংশ নিল না। লাশ ফেলে চলে গেল। হাসপাতাল ছাড়ার আগে কতৃপক্ষের কাছ থেকে বাবার মৃত্যু সনদপত্রটা নিয়ে গেল। বাবার লাশ করোনা ছড়ানো ছোঁয়াছ, মূল্যহীন হলেও ওই কাগজটার মূল্য আছে রায়হানের কাছে। বাবার পেনশনের টাকাটা তো তুলতে হবে!