
শূন্যতাই সর্বজনীন বিধি
পুনর্জন্ম
প্রতি নিশিতে আয়নায় মৃত্যু দ্যাখে ঘুমুতে যাই
পুনর্জন্মের লালসায় মোবাইলে এলার্ম দিই।
পুবের আকাশের আলো গায়ে মেখে—
আবারো প্রত্যহ নতুন জীবন শুরু করি।
তোমাদের হাটে কখনো মরিচিকার বাতি কিনতে যাই না…
নিজের অন্তরের ব্যথা শুধু নিজের হৃদয়ের ঘরেরই সিঁধ কাটে,
ক্ষয়ে ক্ষয়ে রক্ত ঝরায়।
মাঝে মাঝে রাতেরা প্রশ্ন করে উঠে—
‘অই তোমার শহরের স্বচ্ছ আয়নায় এখনো কি মৃত্যু দ্যাখা যায়?
এখনো কি মানুষেরা নিশিতে কুপিবাতি জ্বালিয়ে ভোর আনার স্বপ্ন দ্যাখে?’
একলা আমি নিঃসঙ্গ রাতে স্মৃতি কুড়োই—
দুজনই ভীষণ একা!
হাজারো জোনাকের জ্বলজ্বল আলোয়,
কিংবা সভ্যতার এতো এতো মানুষের ঘিরেও।
যারা হৃদয়ের কাছাকাছি ফিসফিস করে গাইত
তারা বহু আগেই আহত হৃদয় এবং রন্ধ্রে রন্ধ্রে ভরা বিষ দ্যাখে পালিয়েছে।
মুখ বাড়িয়ে ফেরার পথের ঠিকানাও বলে যায়নি—
অনেকে আবার নিছক ব্যথার গল্প বলে হাটে-কাগজে আবরু বিক্রি করে চলছে…
এখনো প্রতি নিশিতে পুনর্জন্মের লালসায়,
অনাদিকাল যাবৎ জেগে থাকা চোখ জোড়ায় চাঁদর দিয়ে—
ভোরের আলো গায়ে মাখার স্বপ্ন দ্যাখি…
শূন্যতাই সর্বজনীন বিধি
একদিন আমি এবং দাদু সূক্ষ্ম চোখ এবং বন্দুক নিয়ে এক গহীন বনে গেলাম শিকারে। বিচিত্র কিছু মিহি আলো আমাদের হৃদয় ভেদ করতে লাগল। আমরা শিকার ছেড়ে আলোর কেন্দ্র সন্ধান করতে গিয়ে—আবিষ্কার করলাম এক কুঠির। আমি বিবাদে না গিয়ে দাদুর উপর ছেড়ে দিলাম। দাদু সুদর্শনা দ্যাখেই কেনো যেন মোমের মতোন গলেগলে নমনীয় হয়ে আলো ছড়িয়ে অই ঘরে ঢুকে যেতে লাগলেন!… শত প্রচেষ্টায়ও দাদুকে আর সংসারে ফেরানো গেলো না। সোনালী আলো ফুরিয়ে গেল এবং পৃথিবীর বুকে নেমে গেল ঘন অন্ধকার। ‘লোভ বয়স ও লিঙ্গ মানে না’—এই প্রমাণ হাতে নিয়ে নিঃসঙ্গ আমি এক বিষাক্ত সাপের পিঠে চড়ে সাপের-মনির আলোয় অন্ধকার কেটে কেটে ছুটছি গন্তব্যে ফেরার অভিপ্রায়ে…
জমিনের জহর
এ-সভ্যতার আস্তিনে লেগে আছে স্বজাতির রক্ত
রাজা নেই বাদশা নেই সবই লাশ;—সভ্যতার দুঃখ।
ভেবেছিলে একই বৃক্ষের অরণ্য—
কিন্তু প্রত্যেক বৃক্ষের ফলের স্বাদ ভিন্ন।
প্রোথিত ফরমানে রাণীর তারিফ,
দেবীর কর্ণের কি পৌঁছায় জনপ্রাণীর নিদারুণ আর্তি?
নিন্দুকের ফরিয়াদে হাতকড়া পরহিত বৈষ্ণব!
জনসাধারণের মর্মে খোদ রোদন।
জলরাশি একই, কিন্তু স্থানভেদে নাম ভিন্ন।
জানো কী কখনো নগরী জন্মদাত্রী নদীও
ডুবায় সেই সৃষ্ট-নগরী?
আছে কী মৃত্যুর কোন সুরক্ষা কিংবা বিধ্বংসের সীমা?
বেঁচে আছি
অবিশ্রান্ত সহস্রপ্রহর, নির্ঘুম
প্রত্যাশার বেদিতে সংগুপ্ত উদ্গত-কুসুম!
জন্মের নিয়তি নির্ভুল—
দিনান্তে শূন্য, অদৃষ্টের আঁজলায় একগুচ্ছ রক্তেঝরা ফুল!
চোখ থেকে ঝরছে রক্তঅশ্রু, সঘন আর্তনাদে কাজল
কপোল বেয়ে নামছে রক্তিম নদী, আলুথালু মর্মমূল।
তবুও বেঁচে আছি এই আমি—কুমারীর বুকের উদ্গত-কুসুম।
যুবতীর সঙ্গমে যুদ্ধ দগড় উত্তেজনা
সকাল-দুপুর-বিকেল অস্তমিত অভিসারে
আমার আত্মাকে দীর্ণ করেনি।
নারী
মাংস
মদ
সিগারেট
লিঙ্গ
লোভ
অর্চনা
ঘৃণা
এসমস্ত একপাশে রেখেও বেঁচে আছি এই আমি—
মানুষীর শিৎকারে আর তেঁতুলের লোলুপতায় লালায়িত জিভে।
প্রাকৃতিক জীবন
তোমার বাথরুমের কৃত্রিম ঝর্ণায় কিংবা
সুইমিংপুলের ঠান্ডা-গরম পানিতে,
আমার প্রাকৃতিক মন ভিজে না।
তোমার ছাঁদের পোষা মেঘের বৃষ্টিতেও
আমার প্রাকৃতিক মন ভিজল না।
সমুদ্রের স্বাধীন উত্তাল ঢেউ যেমনে
বাধাহীন আঁচড়ে পড়ে তীরে।
বানের স্বাধীন জল ভাসায় প্লাবনে
আমার প্রাকৃতিক মন চাতকের মতোই
গুনছে অপেক্ষার প্রহর; ভিজার…
তোমার শরীরের প্রাকৃতিক গন্ধ
বড্ড নিরোপায় পারফিউমের কৃত্রিমতায়
স্বাধীন প্রাকৃতিক হাওয়ায় বিলিয়ে দিচ্ছ বহুবিধ কৃত্রিমতা।
আমার প্রাকৃতিক নিঃশ্বাস বন্ধের উপক্রম।…
হাওর বেষ্টিত দ্বীপ
প্রত্যেক বিকেল আঁছড়ে পড়ে গোধূলির বুকে
আমি চাচাদের নিয়ে বেড়াই, গান গাই—
তোমার দিকে আঁখি নিক্ষেপ করার সময় না পাই।
তাদের দ্বীপের বহুদিনের জমানো কীর্তি শুনি
প্রতিদিন প্রিয় সংগীতের মতো শুনি। হাতে কাজ নাই—
বাঁশের মাথায় বসি, আগুন চিবাই—
মনে মনে চাচাদের ভীষণ মহৎ কার্য ভাবি।
দ্যাখি..
তাদের কাজ খোলা রাস্তায় কুকুর-কুকুরী
করে বেড়ায়। তফাত না পাই…
বিকেল হলেই চাচার বউয়ের বান্ধবীর সাথে বেড়াই ছাঁদে
চাচার আখ্যান আওড়াই, তাকাই আড়আঁখিতে—
রাত্রি হলে কেমন করে আগুন বের হয় ননীর দেহ থেকে!
ভাবি। কূল না পাই ভেবে…
চাচার বউয়ের বোনের বাসনাবন্ধ পেলব-অধরে
দ্যাখি কুৎসিত এক কামনা খেলা করে।
বিবশ রাতের অন্ধকারে আদিম খেলায় মাতে।
এমন মহৎ কাজে হাওর দ্বীপের এত আয়োজন—
মায়ের গর্ভে ঘুমিয়ে থাকা আগামীর শিশু
এমন করেই হাটবে কি এক অনিবার্য সিঁড়ি বেয়ে? হয়তো…
নগর-নগরী হারিয়ে য়ায় মহাকালের খরস্রোতে
কিন্তু এই বিশাল সভ্যতা, মুক্তি পাবে কবে?
সভ্য মানুষেরা নিজেদের ঢেকে সভ্যতার চাঁদরে,
আরো যেন অসভ্যতায় মিত্রতা করছে।
এই কি শ্রেষ্ঠজীব মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব!মনুষ্যত্ব!…