
শীতের শীৎকার
নতজানু হও, প্রার্থনা করো
নতজানু হও, প্রার্থনা করো
অন্ধকারাচ্ছন্ন রাতের কসম
দম্ভের পাহাড়েও ধস নামে,
রূপবতী ঝর্ণাও কাঁদে অবিরাম।
নতজানু হও, প্রার্থনা করো।
বাতাসের কাছে, আকাশের কাছে
সূর্যের কাছে, মাটির কাছে ঋণ তোমার।
ঋণ আত্মায় মিশে থাকা স্বত্বার কাছে।
প্রচণ্ড ঋণ গোলাপের মতো এক জীবনের কাছে।
তার কাছে নতজানু হও, প্রার্থনা করো।
আত্মায় যে মিশে থাকে, তাকে ভোলা যায় না
আত্মার আধেক জুড়ে প্রেম,
আর প্রেমেই বাঁচেন ঈশ্বর।
সঙ্গমে সঙ্গমে যাকে পরিযায়ী চাঁদ করে তুলেছ।
তার কাছে এসব কি অহং দেখাও তুমি!
নতজানু হও, প্রার্থনা করো
নতজানু হও নদীর মতো কলকল ছলছল বয়ে যাওয়া নারীর কাছে,
নতজানু হও মায়ের মতো শাসন করা প্রেমিকার কাছে
তার কাছে নতজানু হবে না তো, কার কাছে হবে?
নতজানু হও পূর্বপুরুষের কাছে
যারা তোমাকে পৃথিবীর বুকে সজীব করে তুলেছে
হে মানুষ নতজানু হও
হে আগন্তুক নতজানু হও
হে প্রেমিক নতজানু হও।
দূরের ওই আকাশটাও এক সময় সাগরে মেশে
উঁচু উপত্যকাও মাটিতে নুয়ে পড়ে
ফলদ গাছটাও মাটির খুব নিকটবর্তী হয়।
কেবল তুমি দম্ভে আকাশে উড়তে যাও!
এর চেয়ে বরং,
নতজানু হও, প্রার্থনা করো…
শুধু তোমাকে ছোঁব বলে
আমি ঠিক এখানে
দাঁড়িয়ে থাকা সন্ধ্যার আকাশ
ডুবে যাওয়া নদীর কিনার।
তুমি এলেই
চায়ের কেটলিতে ঝড় ওঠে
তেজপাতার ঘ্রাণে দুকূল ভাসে।
তুমি এলেই
ভাঁজ খোলা বাতাসে শীৎকার ওঠে
শাড়ির কুচির মতো ঢেউগুলো গোপনে কানাকানি করে।
আমি চেয়ে চেয়ে দেখি
বোতাম খোলা শার্টের ভেতরে থাকা বুকের নগ্নতা
আলতা রাঙানো পায়ের খুলে পড়া পায়েলের দস্যিপনা
অষ্টাদশী প্রেমিকার তেঁতুল চিবানো কপোল।
তরুণদের ধোঁয়া ওঠানো সিগেরেট আর চায়ের মাতম।
তুমি এসেই
আমাকে ছুঁয়ে যাও, কখনো মাড়িয়ে যাও
আমি কাকের মতো হা করে থাকি,
শুধু তোমাকে ছোঁব বলে।
শীতের শীৎকার
শিমের মাচা বেয়ে শীত নেমেছে
জলপাই রঙের ভোরে কুয়াশার নাচ
ঘুম ঘুম ঘাট, নারকেল গাছের সারি
আমলকীর বনে মৃদু কাঁপন।
নগরে শীতের মেলা
পাটিসাপটা, পুলিদের শহরে
প্রেমিক বেঁচে নেই
শীতের শীৎকারে ঝরে গেছে দেবদারুর মতো।
আগুন নয়, তবুও ছাই
তুমি তো আগুন নও
তবু কেন পুড়ে যাই, ছাই হই।
তবু ফের কেন ভাসে হৃদয় পাল তোলা নাওয়ের মতো।
ব্রেইন ফ্রগ
খুঁজে পাচ্ছি না।
এই তো এখানেই রেখেছিলাম,
ঝরা পাতাও যেখানে যত্ন করে রাখি।
যেখানে রোজ তাকে মহারানির সম্মান দেওয়া হয়।
অভিমান করে ও কি নিজে ঝাঁপ দিল কোথাও
নাকি আমি অযত্ন আর উপেক্ষায় হারিয়ে ফেলেছি
ঠিক বুঝতে পারছি না।
ফ্লোরমার নাম তার
গড়ন কালো। গাঢ় অন্ধকারের মতো।
এই কালোতেই সাজতো আমার চোখ।