
লালটিপ
পুরস্কার
আমি আমার এক ছাত্রকে পড়িয়েছিলামÑ জানো
চার্চের বিচারশালা থেকে বেরিয়েই
পাথরে পা ঠুকে আকাশপানে চেয়ে গ্যালিলিও বলেছিলেনÑ
তবুও পৃথিবী ঘুরছেই।
প্রিয় ছাত্রটি সেকালের চার্চের চেয়েও অভিনব কায়দায়
আমার গলায় এক বিরাট কাঁটার মালা পরিয়ে দিল।
আমি আমার এক ছাত্রীকে বলেছিলামÑ
ভালবাসা ও সত্যের চেয়ে বড় কোনো ধর্ম নেই
সুলতানার স্বপ্নের চেয়ে বড় কোনো স্বপ্ন নেই মানুষের
শুনে প্রিয় সেই ছাত্রী আমাকে কারাগারে পাঠালেন
অথচ আশ্চর্য! তার নামও ছিল রোকেয়া সুলতানা!
আমি যখন আমার এক ছাত্রকে সাগানের কণ্ঠে বলেছিলাম
বিশ্বাসের ভূত নয়, যুক্তির দেবদূতের কথা শোনো
বিরাট এ মহাবিশ্বে বালুকণার মতো ক্ষুদ্র পৃথিবীতে
হিংসা লালসা ধর্মান্ধতা ও যুদ্ধোন্মদনা কী অলীক মূর্খতা!
সে আমাকে পুরস্কৃত করলো আরও অভিনব উপায়ে
আমার দৃষ্টিহীন চোখের সামনে রঙিন সুতায় ঝুলিয়ে দিল
আমারই কণ্ঠচেরা হৃদয় উপচেপড়া এক বাটি লাল রক্ত
দ্রোণাচার্যের দশটি আঙুল ধুলায় ছড়ানো ছিটানো
উত্তরাধুনিক ট্রেনের চাকায় পিষ্ট শিশুর খেলনা পুঁতির মত।
হৃদয়ের কারাগারে
আমাদের কারাগার হয়ে উঠছিল হৃদয়Ñ যখন
এই উন্মুক্ত প্রান্তর কত দিন এক বদ্ধ কারাগার।
কারাগার উড়বার পাখা পেল, পেল বাঁচার আনন্দ
হৃদয়ের ছোঁয়া তারে যেই করেছিলো পূণ্য তীর্থভূমি।
আমরা অনেকে তাই কারাগার পানে ছুটেছি সেদিন
স্বাধীন চিন্তার পূত লীলাভূমি হলো পুরনো খাঁচাটি
সোনার পাখিটি কণ্ঠ ছেড়ে গাহে যেই মুক্তির বারতা-
অন্ধ-অজ্ঞানের সঙ্গে আপোষ চলে না হৃদয় মণ্ডলে।
কারাগার হয় আজ উন্মুক্ত আকাশ যখন আমার
ছোট্ট আকাশ সংকীর্ণ হতে হতে কারাগারে রূপান্তরিত।
লালটিপ
এভাবেই পচে যায় মানুষ
এভাবেই গলে যায় সমাজ
এভাবেই ভেঙ্গে পড়ে দেয়াল
এভাবেই নষ্ট হয় নদী
এভাবেই খণ্ড হয় দেশ, ছেঁড়ে পতাকা
অন্তর্গত হত্যা ও সীমান্তে রক্তপাত হয়।
তবু ভয় পেয়ো না তুমি, মনে রেখো
এভাবেই পষ্ট হয় আশা
এভাবেই লেখা হয় বদলের কাব্য
এভাবেই আঁকা হয় সুদিনের ছক
দিনে দিনে বিদ্রোহের লালটিপ।
কালের বাঁশি
কালের বাঁশিটা দেখে ফেলেছিলাম
তাই রঙধনু ফুটায় দিয়েছি ফুঁ
হীরার নৌকায় চড়তে পারিনি ভুলে
ওঠেনি সোনার ধান পাইনি মধু।
কালের কলস কাঁখে জলকে চলি একা
সস্তা সুখ বিলাসী দুঃখ দলেছি দুপায়
প্রেমে ও কড়ির টানে মজেছে সেয়ানা
ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াবি আয়।
ফকিরের ফুঁয়ে পর্বত নড়োবড়ো
হাওয়ার গর্জন মেঘের গুড়ুগুড়ু
কালের বাঁশিটা দেখে ফেলেছিলাম
তাই রঙধনু ফুটায় দিয়েছি ফুঁ।
কবি
কবিতার নামে অন্তমিলঅলা চারটে লাইন
বা সমাজসচেতন দুইটা কথা লিখে দিলেই
তো আর একজন কবি হয় না
কবি হতে হয়
যেভাবে সমুদ্রের পানি মেঘ হয়
মেঘ বৃষ্টি হয়ে নামে হিমালয়
হিমের বুক চিরে ঝর্ণা হয়ে ছোটে
এরপর গঙ্গা-পদ্মা-মেঘনা হয়ে
সমুদ্র-হৃদয়ে মিশে যায়
কবি সেইভাবে হতে হয়
কবি হলে সে আর কেরানি থাকে না
ডাক্তার থাকে না ইঞ্জিনিয়ার থাকে না
উকিল থাকে না ব্যবসায়ী বা মন্ত্রীও থাকে না
তখন সে কেবলই কবি
কবি হলে সে স্বামী বা স্ত্রী থাকে না
সংসারী বা সন্ন্যাস্ওী থাকে না
বিশ্বাসঘাতক কি দেশপ্রেমিক থাকে না
শোষক কি বিপ্লবীও থাকে না
তখন সে কেবলই কবি
হয়তো কবি হলে সে মানুষও থাকে না
অন্তত ডারউইনের খুঁজে পাওয়া মানুষ
তখন সে কেবলই প্রেমিক বা প্রেমিকা
ক্রশবিদ্ধ সন্তান ঈশ্বরের
কবি সেই মানুষ যে
মৃত্তিকায় সমাহিত চির আসমানগামী