
যেতে যেতে বলি, ‘‘আসি’’
যেতে যেতে বলি, ‘‘আসি’’
শুধু আমরাই যেতে যেতে বলি, “আসি”
শুধু আমরাই চলে গিয়েও বলি, ‘‘আছি”
শুধু আমরাই বলি, ‘‘সব ঠিক হয়ে যাবে”
যখন কিছুই ঠিক হবে না জানা থাকে।
শুধু আমরাই জানি মিথ্যে আশার ছলনা
শুধু আমরাই ভালোবেসেও বাসি না
বাইরে হাসিমুখ, ‘‘তুমি ছাড়া বাঁচিনা”;
ভিতরে রাগ, ক্ষোভ, অবজ্ঞা, ঘৃণা।
শুধু আমরাই অহরহ হেসে বলি, ‘‘ভালো আছি”
শুধু আমরাই ঘর ভেঙ্গে সংসার করি।
দিকশূন্যপুর
আপনার যদি পুবে যাওয়ার থাকে, পুবেই যান
কোনো মায়াবী ডাকে পশ্চিমে যাবেন না
দেড়যুগ একসাথে হাঁটার পরে
তার উত্তর ভালো লাগতে পারে
অন্যকারো সাথে সে উত্তরমুখী পায়ে পা মেলাবে
আরো সিকি যুগ আছি-নাই এর মধ্যে থাকার পরে
নিশ্চিত জানা যাবে, পশ্চিমের যাত্রায় সে আর নেই।
পশ্চিমের যাত্রায় আপনি তখন একা; শূন্যহাত
আপনার না আছে পুব, না আছে পশ্চিম
উত্তর দক্ষিণ বেছে নিতে আপনি অভ্যস্থ নন
স্থাণুর মতো চেয়ে চেয়ে দেখতে হবে তাদের উত্তরের খেপ
আর ভাবতে হবে, ভুল কি আমার ছিলো!
সে দিব্যি বলে দেবে কুড়ি বছর অনেক সময়
মানুষ বদলে যায়; সে বদলে গেছে
কোনো অনুশোচনা নেই মাঝপথে ছেড়ে যাওয়ার; অথবা ছুঁড়ে ফেলার
আপনি শিশুর মতো কাঁদবেন; পাগলের মতো চেঁচাবেন
তার কিছু যাবে-আসবে না। সে নীরব-শীতল থাকবে।
উত্তর দক্ষিণ খুঁজতে খুঁজতে বাকী জীবন আপনি হবেন দিকশূন্য
যদিও তারাই তাদের গন্তব্যের নাম দিয়েছে “দিকশূন্যপুর”।
দুঃখগুলো বেচো না
দুঃখগুলো বাজারে তুলতে নেই
দুঃখরাই সাগর সেচে তোলা মুক্তো
ওগুলোই যদি বেচে দাও সুখের দামে
নিজের জন্য রাখলে কী?
সর্বস্বসম্পদের কোনো বিনিময়মূল্য হয় না
যা কিছু একান্ত নিজস্ব, তা বেচতে নেই
সুখের মূল্যেও না। রেখে দাও নিজের কাছে।
ওগুলো বেচো না।
সুখ চিরস্থায়ী নয়; আজকের দিনটাও শেষদিন নয়
দুঃখ বেচে কেনা সুখ ফুরিয়ে গেলে
তখন থাকবে কী নিয়ে?
দুঃখগুলো অন্তত থাক বুকের গভীর ভাঁজে
যে-সুখ পেতে দুঃখ বা দুঃখের কল্পনা লাগে
কী লাভ সেই সুখে।
ঘরে ফেরা
খুব সহসা হাসি মুখে
দুয়ারে যেই দাঁড়াই এসে
বিরক্ত এক মুখ এসে
দরজা খোলে চোখ কুঁচকে
“অসময়ে এলে যে!”
হাসিমুখ ম্লান হয়
খুব সহসা কান্না পায়
কার আনন্দ ম্লান করার
কোন অধিকার আছে কার
কী দরকার অসময়ে ঘরে ফেরার!
ধারাজল
‘‘আনন্দধারা বহিছে ভূবনে”
কেউ বুঝে যায়; ধারাজলে সিক্ত হয়
বোকারা বোঝে না, নিভৃতকোণে কাটিয়ে দেয় অযুত বছর।
তারপর একদিন “প্রখর দারুণ অতিদীর্ঘদিনে”
ধারাজল দরজার চৌকাঠ পেরিয়ে এসে বুঝিয়ে দেয়
”অন্ধ হলে প্রলয় বন্ধ থাকে না”।
অবশেষে বোঝা যায়, মানুষ মূলত ব্যক্তি
সমষ্টির অংশ হয় প্রয়োজনে; গোষ্ঠীবদল তাই অস্বাভাবিক না
বোকারা অপেক্ষা করে; দিন-তারিখের হিসাব করে
বুদ্ধিমানের কোনো দায় নেই তাতে।
বুদ্ধিমান পিছুডাক ছাড়তে পারে; সামনের পথ খুঁজে নিতে জানে
তারপর এক কাকডাকা ভোরে বোকা আর বুদ্ধিমান
মুখোমুখি দাঁড়ায় অমোঘ নিয়মে।
বোকা করে কান্নাকাটি, তর্জন-গর্জন-তিরস্কার
বুদ্ধিমান ঋজু থাকে, অনড় থাকে, বলে দেয় এটাই জীবন।
রিজারেকশন
অনেকদিন গাছের পাতার শব্দ পাওনি।
বৃষ্টিতে ভেজেনি এলোচুল।
আজ মন ভিজেছে অদৃশ্য বৃষ্টিতে।
তাই তোমার মন প্রস্তুত গাছের পাতার শব্দের জন্য।
তুমি পাতার শব্দ পাচ্ছো। এই হলো অর্জন।
বুক ভরে শ্বাস নাও, চোখ ভরে দেখো, কান ভরে শোনো।
অনিঃশেষ বলে যদি কিছু থাকে, তা এই মুহুর্তের সঞ্চয়।
নীরবতা হিরন্ময় এমন সময়ে। প্রাণভরে শুধু নিতে হয়।
যীশুর রিজারেকশন মিথ্যে নয়। এমন ক্ষণেই বোঝা যায়।