
যদিও ইলিউশনে দ্বিধাগ্রস্ত চোখ
অক্ষর, কবি ও মিসিং মিটিওরাইট
অক্ষরগুলো কোন মিসিং মিটিওরাইট নয়
মহাশূন্য থেকে ছিটকে পড়ে
বায়ুমণ্ডলেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে,
অক্ষর হলো প্রাণের স্পন্দন, হৃদয়ের বিস্তৃর্ণ মানচিত্র জুড়ে যার নির্মল হৈহুল্লোড় ,
হীমেভেজা রাতে পেঁজা তুলোর মতো ওড়ে
নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে কবিতা হয়ে ,
এ যেন কবির অরূপে স্বরূপ আরাধনার মতো।
কবিতা ধীর পায়ে হাঁটে ,বহুদূর যায়
বাতাসের পায়ে যেন ছন্দনূপুর।
নিকষ আধাঁরে, বজ্রের পথচিহ্ন ধরে, কবি পথচলে
যেতে যেতে এক সময় ঈশ্বরের খুব কাছাকাছি কবি,
কালোকে আলো করে মাটির তবকে জ্বেলে আগুন
জ্যোৎস্নার শরীর যখন পুড়ে হয় ছাই অমাবস্যার তাপে!
এ আগুন পোহাতে এসোনা সখি, ভস্ম হবে।
যদি হও অনলের কোরক
যদি ভালোবাসা হয় ফুলে
যদি ভালোবাসা হয় কবিতায়
তবে পুড়তে হবে নির্ঘাত জেন
সাথে পোড়াতেও পারো তাবৎ ব্যথিত হৃদয়।
৫, ৩, ২১
লন্ডন
যদিও ইলিউশনে দ্বিধাগ্রস্ত চোখ
একবার জ্বলে ওঠো আলো, জন্মান্ধ চোখে,
মোহনও মন্ত্রে,
মেমব্রেন ছিন্ন করে
রেটিনার গভীরতম প্রকোষ্ঠে, যেখানে স্বপ্ন জেগে থাকে,
একবার পাঁজরে পাঁজরে ঘর্ষণ লেগে জ্বলে ওঠো আগুন
যেখানে নিঃশ্বাস লুকোচুরি করে মৃত্যুর সাথে বাঁচার তাগিদে।
এসো হাতের আঙুলগুলো মেলে ধরি আকাশের বিশালতায়
যেখানে চন্দ্রলোকে বৃক্ষের ছায়ায় বসে নক্ষত্রের শহর!
এখনও আসেনি সময় জীবনকে প্রত্যাখ্যান করার
যদিও মহামারীর ইলিউশনে চোখ দ্বিধাগ্রস্ত।
ব্যাকুল মন
চেয়ে দেখো রোদভরা অন্তহীন মাঠে হাওয়ার উল্লাস
বিনিদ্র সাগর দর্জির মতো
ঢেউ সেলাই করে করে এগিয়ে যায়
তীর ছোঁয়ার তীব্র আশায়,
আর বিশাল সাগরবক্ষে উত্তাল ঢেউয়ের ছন্দে
শুশুকের নির্মল জলকেলি জীবনের উচ্ছ্বাসে।
৭, ২, ২১
লন্ডন
জিজীবিষা
কতকথা জিহ্বার নিচে
আহত সৈনিকের মতো রক্তের সরোবরে-
সাঁতার কাটে কষ্টে!
যখন শব্দগুলো উড়ে এসে জড়ো হয়
তারপর আস্তে আস্তে
গজদন্তের পেষণে হয় রক্তাক্ত।
আমাকে তাড়িত করে পঙ্গু বিবেক
কবিতার মতো দুঃসাহস আমার নেই, তাই-
আমার কথামালা ঠোঁট থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে
যদিও আকাঙ্ক্ষা ছিল জিজীবিষার।
আমার রাতজাগা শব্দগুলো কবিতা হয়ে ওঠে না কখনওই
আমি নির্ঘুম চেয়ে দেখি আমার আকুতিগুলো
নিমিষেই মিলিয়ে যায়, হাওয়ায় হাওয়ায়…
আর আমি অন্ধকার মাড়িয়ে হাঁটতে থাকি হার্টফোর্ড রোডের পাশ ঘেষে
আনমনে একা, ভীষণ একা।
২৪, ১১, ২০
লন্ডন
বাঙ্কসির গ্রাফিটি আর্ট
নিশ্চুপ হয়ে গেলে সন্ত্রস্ত ঠোঁট
হাতের আঙুলগুলো-
গান গায় নিঃশব্দে, শব্দের মৌনবানে
ক্ষিপ্ত হয় আঙুল, আঁকে দ্রোহ,
পৃথিবীর দেয়ালে দেয়ালে,
দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে নিঃশ্বাস আমার;
আমি বিস্ময়ে দেখি কষ্টের রঙ
দ্রোহীর ক্যালিওগ্রাফিতে সিক্ত হয় আঁখি পল্লব,
হৃদয়ের আয়নায় ভেসে ওঠা রক্তের চারুলিপি
করে চরম বিদগ্ধ বিদ্রোহ।
বাঙ্কসির তুলিতে আঁকা
পৃথিবীর সব পার্লামেন্টই মনে হয় যেন
শিম্পাঞ্জির আস্তাবল!
গাঢ় অরণ্যে ভয়াল মৃত্যু উৎসবে অনন্ত উল্লাস;
সুঁতাকাটা ঘুড়ির মতো যখন হৃৎপিণ্ড ধমনী ছিন্ন-
করে অসীম আকাশে দেয় কষ্ট উড়ান
তখন শিম্পাঞ্জিগুলো হর্ষধ্বনি দিয়ে ওঠে সমস্বরে
ইয়েস মাই লর্ড…
ধূসর পৃথিবী শহস্র পায়ে হাঁটে শ্মশানের দিকে
আর আমি কবিতার জমিনে শুধু বুনে যাই কষ্টের চারা।
২, ৯, ২০
লন্ডন
নৈষ্ঠিক ঋষি
জমে যাওয়া বরফের মতো
পলকহীন চেয়ে থাকে রাতজাগা তারার দল;
এখানে হীমেলে বাতাস এসে কেটে দেয়
অলিভ বৃক্ষের পাতা,
ছায়ার মাছ, সমস্তরাত সাঁতার কাটে
দুধসাদা জ্যোৎস্নার জলে, ধীরে ধীরে
তারাগুলো পড়ে গলে গলে, পৃথিবীর দীর্ঘশ্বাসে!
তারপর সব যেন মিশে হয় দিনের কোলাহল
মাছগুলো ঝরাপাতা, চোখগুলো জমে থাকা জল!
সব যেন নথি করে পাঁচশত ছিয়াত্তর ম্যাগাপিক্সেল
টাইম ল্যাপসের ফিতায়…
হে বন্ধু আমার, তুমি কি দেখো নৈসর্গিক বিলাস?
আমি সব দেখে চোখ বুজি
নৈষ্ঠিক ঋষির মতো
বুকে গভীরে পুঁতে রাখি আরাধনার বীজ।
২৫, ১২, ২০
লন্ডন