
মিরোস্লাভ হোলুবের কবিতা
চেক কবি মিরোস্লাভ হোলুবের জন্ম ৩ সেপ্টেম্বর, ১৯২৩। মৃত্যু ১৪ জুলাই ১৯৯৮, প্রাগে। মানবিক ও বৈজ্ঞানিক বিষয়ের উপর তাঁর ভিন্নধর্মী গতিল চিন্তাধারার জন্য তিনি বিখ্যাত। পেশায় ছিলেন প্যাথোলজিস্ট এবং ইম্যুনোলজিস্ট। চার্লস ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিন থেকে ১৯৫৩ সালে এম, ডি এবং চেকোস্লোভাক অ্যাকাডেমি অব সাইন্স-এর ইনষ্টিটিউট অব মাইক্রোবায়োলজি থেকে ১৯৫৮ সালে পি এইচ, ডি ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ১৯৪৭ সালে এবং ১৯৫৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কবিতা সংকলন ‘ডে ডিউটি’। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তাঁর ১০টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এদের মধ্যে ‘অ্যাকিলিস অ্যান্ড দ্য টরটয়েজ’ (১৯৬০), দ্য সো কল্ড হার্ট’ (১৯৬৩) এবং ‘অলদো’ (১৯৬৯) উল্লেখযোগ্য। ৬০-এর দশকে তাঁর ‘সেলেক্টেড পোয়েমস’ (১৯৬৭)-সহ বেশ কিছু কবিতার বই ইংরেজিতে অনূদিত হয়। পরে তাঁর আর যে কবিতা সংকলনগুলো ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছিল সেগুলো হলো ‘নোটস অব আ ক্লে পিজিয়ন’ (১৯৭৭), ‘অন দ্য কনট্রেরি অ্যান্ড আদার পোয়েমস ‘(১৯৮৪), ‘পোয়েমস বিফোর অ্যান্ড আফটার’ (১৯৯০), ‘ইনটেনসিভ কেয়ার : সেলেক্টেড অ্যান্ড নিউ পোয়েমস’ (১৯৯৬) এবং ‘দ্য র্যাম্পেজ’ (১৯৯৭)। একজন বহুপ্রজ কবি হওয়া সত্ত্বেও বিজ্ঞানই ছিল তাঁর প্রাথমিক সংশ্লিষ্ঠতার বিষয়। ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তিনি বিজ্ঞান বিষয়ক ১২১টি প্রবন্ধ ও প্রতিবেদন রচনা করেন। ১৯৮০ সালে প্রকাশিত কবিতা সংকলন ‘স্যাজিটাল সেকশন’-এর কবিতাগুলোয় চিকিৎসা বিজ্ঞানের নানা বিষয় খুঁজে পাওয়া যায়। এই কবিতাগুলো শেমাস হিনি এবং টেড হিউজ সম্পাদিত বিশ্বকবিতার সংকলন ‘দ্য র্যাটল ব্যাগ’ এর অন্তর্ভূক্ত। কবিতাগুলো চেক থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন জর্জ টেইনার।
রুপ কথা
সে নিজেকে একটি বাড়ি বানালো
তার ভিত
তার পাথর
তার দেওয়াল
তার মাথার উপর ছাদ
তার চিমনি ও ধোঁয়া
তার জানালার দৃশ্যাবলী।
সে তার ওপরের কিছুটা আকাশ কেটে বাদ দিল।
এবং সে বাগানটিকে আকাশের মধ্যে মোড়ালো
এবং বাড়িকে বাগানের মধ্যে
এবং ভাগ্যকে রুমালে জড়ালো
অতঃপর সে সুমেরুর শৃগালের মতো
একাকী ঠান্ডা ও অবিরাম বর্ষণের মধ্যে
চলে গেল পৃথিবীর দিকে।
মাছি
ক্রেসির যুদ্ধের অংশত দেখতে দেখতে
চিৎকার
কাঁপানো আর্তনাদ
ঈষদশব্দ এবং আছাড়
সে একটি উইলো গুঁড়িতে এসে বসলো।
ফরাসি অশ্বারোহী সৈন্যদের চতুর্দশ
আক্রমণের সময়
সে ভ্যাডিনকোর্ট থেকে আগত একটি
বাদামি চোখের পুরুষ মাছির সাথে
সহবাস করলো।
সে তার পদযুগল লেহন করলো
মাছিদের আমরত্ব নিয়ে ভাবতে ভাবতে
সে তখন একটি নাড়ি ভূঁড়িহীন ঘোড়ার
পিঠে চড়ে বসলো
সে স্বস্তির সাথে খুঁজে পেল
ক্লারভস্ক্রের ডিউকের নীল জিহ্বা
যখন নীরবতা নেমে এলো
কেবল ধ্বংস ও ক্ষয়ের ফিসফিসানি
আলতো করে ঘিরে ধরলো শরীরকে
এবং কিছু বাহু ও কিছু পা
তখনো গাছের নিচে ঝাঁকি দিয়ে নড়ছিল
সে রাজসেনানী জোহান আওরের
একচোখে ডিম পাড়া শুরু করলো
এবং এভাবে সে একদা
এসট্রীজের আগুন থেকে উড়ে আসা
খাটাশী পাখির খাদ্যে পরিণত হলো।
মহান ও শক্তিশালী
কম বেশি একফোঁটা রক্ত, সে বললো,
সে ছিল মহান ও শক্তিশালী, খুবই শক্তিশালী
এটা অবশ্যই দুর্বলতা থেকে হয়ে থাকবে।
এক ফোঁটা রক্ত, সে বললো এবং সে হাত ধুতে গেল
অবশ্যই কিছু জিনিস আছে যা কখনো ধোয়া যায় না।
কিন্তু এটা সে জানত না, কারণ সে ছিল শক্তিশালী
তার কনুই পর্যন্ত সে ছিল স্মার্ট অতঃপর সে
ব্যবহার করলো তার মুষ্টি,
যখন সে কথা বললো সে অন্যের মুখের কথা
গবগব করে গিলে ফেললো
উপস্থিত বাতাস হতবুদ্ধি হয়ে পড়লো আর ট্রানজিস্টারের
পিঁপড়েরা তার কর্ণকুহর হয়ে চলে গেল বিড়বিড় করে।
একফোঁটা রক্ত, মানুষটি বললো, এবং সাথে সাথে তার
কথাগুলো সবারই ভাবনা হয়ে দাঁড়ালো
তিনিই সেই লোক যিনি কার্থেজ জয় করেছিলেন
অপ্রয়োজনীয় যুদ্ধের মতো পরিষ্কার,
একটি হায়েনার অ্যানাটমির মতো পরিষ্কার
পিঁপড়াদের রাজার মতো পরিষ্কার
চেঙ্গিজ খানের বীর্যের মতো পবিত্র
অ্যানথ্র্যাক্স বীজানুর মতো পরিষ্কার
মৃত্যুর পিছনের নগ্নতার মতো পরিষ্কার
সবাই তাদের মাথা নোয়ালো
ট্যাম্পনগুলোও তাকে কুর্নিশ করলো
এবং কেবল একফোঁটা রক্ত
মাটির ওপর কেঁদে উঠলো।