
মাহমুদ কামাল’র একগুচ্ছ কবিতা
বিপরীত স্রোতে
হেঁটে হেঁটে বহুদূর এসে
মনে হলো এতো প্রতিসারী পর্যটন!
তাহলে ভ্রমণ-বৃত্তান্ত আর লেখাই হবে না?
ঘরে বসে ফিরে তাকাতেই
দেখা হয় অচেনা শহর।
যাকে নিয়ে হুলস্থুল আর খুনসুটি
সে এখন স্রোতের বিপরীত
পথ তাই হয়ে যায় নদী
নদী হয় শান্ত পথরেখা
সেই পথে কিংবা নদীতে
হেঁটে হেঁটে পর্যটক ফিরে আসে
যেখানে সূচনা।
রান্নাঘর
প্রকৃত প্রস্তাবে ওটি অনূদিত এক রান্নাঘর
প্রাকৃতিক রান্নাঘর
গরম তেলের মাঝে অনায়াসে ডিম ভেঙ্গে দিলে
তখন থাকে না কোনও সৃজন-কৌশল
ভাতের বলক-ধ্বনি ঢেউ হয়ে যদি নেচে ওঠে
রান্নাঘর তখন পার্থিব।
সাদা কবুতর আনন্দ ভ্রমণ-ব্যাপী যেভাবে চঞ্চল
ইলিশের স্বাদু গন্ধে ক্ষুধার্ত উদর
সেভাবে গ্রহণ করে উপাদেয় খাদ্যবস্তুকণা
পটু শোল মাছ চোখের আড়াল হয়ে
লুকোয় যেখানে
প্রকৃত প্রস্তাবে ওটি অনূদিত এক রান্নাঘর
সেখানে আজন্ম-ব্যাপি সদা ব্যস্ত পাচক পুরুষ।
তবু ব্যক্তিগত
ব্যক্তিগত নয়, তবু
কথাগুলো ফেরত চেয়েছিলাম
অর্থ নয়, বিত্ত নয়, জালিয়াতি চেক নয়
লিখিত কাগজও নয়
তবুও ফেরত চেয়েছি কথাসূত্রগুলো।
এ রকম চাওয়া-পাওয়া প্রেমিককে মানায়
হারিয়ে ফেলেছি কতো কাগজ কুচি আর কবিতার খাতা
হারিয়ে ফেলেছি দ্রুত প্রেমিকের তরুণ বয়স।
ব্যক্তিগত নয় জেনে তবু ব্যক্তিগত
না পাওয়ার বেদনা থেকেই
কথাগুলো ফেরত চেয়েছিলাম।
আপনার প্রিয় শব্দগুলো
যে হারায় সে কখনো বাড়ি ফিরে আসে
অনেকে ফেরে না।
ফিরবে না খলসে ও তিতপুটি
বারো হাজারের মতো বীজধান
যে নদীর যৌবন নেই
সেই নদী মরতে বসেছে
যে অদৃশ্য পুকুরে আজ ঘরবাড়ি
সেভাবেই হারিয়ে ফেলেছি খোলা ময়দান
মৃত্যুর ভেতরে বসবাস
আলোকিত বনভূমিগুলো
সেদিনের পিতৃসম ‘মধুর’ তৎসম
শ্রীমধুসূদন-
আপনার প্রিয় শব্দগুলো
কপোতাক্ষ নদের মতোই
হারাতে বসেছে।
যে হারায় সে কখনো বাড়ি ফিরে আসে
ইতিহাস হবে বলে অনেকে ফেরে না।
পরমাপ্রকৃতি তবু প্রেম পদ্য নয়
যে ঢেউ দেখেছি যমুনায়
সেই ঢেউ তোমার শরীরে
এটা কোনো প্রেম পদ্য নয়-
যমুনায় পদ্মফুল নেই
পদ্মফুল চোখের গভীরে
সেই পদ্ম রক্তজবা হয়ে
বিকেলের পড়ন্ত বেলায়
কামগন্ধসহ আলোড়িত
তবু এটা প্রেম পদ্য নয়
খয়েরি বর্তুল দু’টো ঢেউ হয়ে
পুরুষকার শ্রেয়কল্প করে
হতে পারে পদ্মফুলসম
পরিপ্লুত পরমাপ্রকৃতি
যে ঢেউ দেখেছি যমুনায়
সেই ঢেউ শরীর শয্যায়
সেই ঢেউ পড়ন্ত বিকেলে
ডেকে আনে প্রখর দুপুর
সেই ঢেউ রাতে নিরবধি………।