
মানুষ দেখি না
মানুষ দেখি না
বিকেলের কমলা রোদ
রাতের খিলানে ঢাকা পড়ে
মুখ কিরিটির
চোখে মুখে নামে ঘুমের আবেশ
দৃশ্যমান নিসর্গ মূর্ত হয়
বিমূর্ত রাতের আঁধারে।
গাছ গ্রাম পাখি ও শহর
শকুন, শুকর, সাপ সরিসৃপ,
পাখির পরম প্রেম, গণ্ড গরু দেখি
তবু মানুষ দেখি না।
বুদ্ধিজীবীর ভণ্ড বিবেক
শুষে নেয় অজস্র মগজ
হৃদয়ের ভাঁজে ভাঁজে
ঢেকে রাখা ব্যভিচার
দাঁতালো করাত ব্যবচ্ছেদ করে
বুনো আদম দেখি
মানুষ দেখি না।
পঁচা ও পাচার
জিহবা চুইয়ে পরা
ভাষাহীন লালসার খেদ
রক্তও তাদের হাত রাঙ্গায়
বিদ্বেষ আগ্রাসী স্বার্থের টেবিলে
বেচাকেনা হয় দেশ।
বোবা ঈশ্বর কেবলই দেখে
ক্ষত বিক্ষত শিশু, বৃদ্ধ ও নারী
হিংসার হেচকা টানে
কাটাপরা পরম জীবন
সংসার ও ভালোবাসা।
মসজিদ, মন্দির, গির্জা, পেগোডা দেখি
মানুষ দেখি না।
আমার আমি
পাড়াগায়ের মেঠো পথে
তোমার চরণ বয় ধুলিতে,
মনের রঙ্গে রাঙিয়ে দিলে
তোমার ছোঁয়ার ঐ তুলিতে।
ঐ মাটি না মাখলে অঙ্গে
সোনার অঙ্গ খাঁটি হয়?
মানের মাঝি দাঁড় বেয়ে যায়
তার মধ্যেই যে নদী বয়।
ভরা নৌকা ডুব সাঁতারে
তুমি যখন কূল হারাবে,
সেই নদীতে ডুব না দিলে
কোথায় তুমি তোমায় পাবে।
সিঁধেল চোর
ছতর ঢেকে গতর লুকাও
দিবস যামি
ভিতর গরল বাইরে তরল
খুঁজে দেখো তোমার মাঝে
কী ভণ্ডামি।
তুমি হাসলেও সে হাসে না
দ্বন্দ্ব ছড়ায়,
তুমি কাঁদলেও সে কাঁদে না
তোমার ভিতর ঠাট্টা হাসির
গন্ধ ভরায়।
ছলচাতুরি করেই তুমি
উচ্চ শিরে,
বোকারা সব পড়ছে পাঁকে
তোমার ছুড়া মন ভোলানো
ধনুক তীরে।
এমন করে খেলার নাটাই
ঘুরাও তুমি,
বন্দি পাখি খাঁচায় বসেই
উড়ে যাবার হিসেব কষে
আপন ভূমি।
কেবা তুমি কোথায় নাটাই
রইলো পড়ে,
তোমার হিসাব তুমিই করো
সিঁধ কেটে সব নেবার আগে
সিঁধেল চোরে।
সাম্য
স্বাধীন দেশের স্বাধীন হতে যদি
উড়তে তুমি ঘুরতে তুমি
কত সাগর নদী,
মনটা যদি পাখির মতো হতো
পুচ্ছ মেলে ইচ্ছে মতো
ঘূরতে অবিরত।
নন্দি তুমি বন্দি তুমি ঘরে
শিকল ছিঁড়ে আসবে কবে
স্পন্দিত অন্তরে।
ঈশ্বর আছে সর্বব্যাপী জানি
তোমার আমার সবার সাথে
এ-কোন-হানাহানি
ধর্ম সমাজ সৃষ্টি করে যে জন
তারাই রাখে পৃথক করে
তোমার আমার মন।
চলে এসো পোষা পাখি বনে
ধন্য করো গণ্য করো
অবাধ বিচরণে।
শিশুর সাথে নেইকো শিশুর দ্বেষ
চুলের সাথে নেইকো চুলের ক্লেশ
মৃতের সাথে নেইকো মৃতের আড়ি
মনের কাছে আমরা কেন হারি।
নির্জনে বড় একা
একা থাকার বিরম্বনায়
সময়ের সরোবরে হারিয়ে যায়
নীলা, গোমেজ, রক্ত প্রবাল।
তাদের দু একটি খুঁজে খুঁজে
ফিরে যেতে হয় উত্তর পুরুষের
বাস্তভিটায়।
যখন চৈতন্যে ঘন্টা বাজে
তখন শুভ্রতার শিয়রে
কেউ থাকে না আঁতকে উঠার।
পোষা কুকুর, বিড়াল প্রিয় হয়ে উঠে
প্রিয় জন শূন্য আঙ্গিনার পাশে ঘাস ফুল।
তোমার প্রস্থান এক নিঃশব্দ উচ্চারণের মতো
পতনের শব্দিত স্পন্দনে উথলে উঠে
পুঞ্জিভূত ব্যথার বৈভব।
এখন নিজেকে যেমন পৃথক করে দেখি
একটি সংখ্যার মতো ধ্রুব
তখন তেমনটি ছিলাম না হয়তো।
মান অভিমানের উপদ্রুব ছিল
ক্লান্তি ছিল, স্পৃহা ছিল
হারিয়েও পাওয়ার দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষা ছিল।
ছিল এক একটি রক্তিম মুহুর্ত সবাক।
তুমি নাই তাইতো প্রয়োজন নেই কারু
তোমারও প্রয়োজন শেষ হয়েছে কি?
এই দীর্ঘশ্বাস আছে চারপাশে,
অস্ফুট শব্দ শুষ্ক অধর ছুঁয়ে যায়
তোমার সমস্ত অবয়ব ফুটে উঠে
মুঠোফোনের ইথারে অবিরত।
আছে হাহাকার সব কিছু ফাঁকা
বড় একা একা লাগে।