
ভাষার লড়াই: বাংলায় জ্ঞানচর্চা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত
প্রতিকথা ডেস্ক : ‘’আমাদের কেন বলতে হয় ভাষার লড়াই আজো শেষ হয়নি। বাংলায় জ্ঞান চর্চা কর? তার কারণ বহু হতে পারে; বির্তকও হতে পারে প্রচুর কিন্তু ‘বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি’ পত্রিকা মনে করে এর প্রধানতম কারণ হলো দেশপ্রেমহীনতা, ব্যক্তিগত স্বার্থ, দলীয় স্বার্থ, গোষ্ঠীগত স্বার্থপরতা ও ক্ষমতার চর্চা। ইংরেজি চর্চার যেসব অজুহাত দেখানো হয় তা আসলে হীনমন্যতা এবং অক্ষমতা ছাড়া কিছু নয়। অক্ষমতা কেন? এর উত্তর আজকের আলোচনায় বিজ্ঞ আলোচকদের কাছ থেকে আমরা পাবো নিশ্চয়। বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি পত্রিকা সম্পূর্ণত বাংলাভাষা ও সংস্কৃতি চর্চাকে গুরুত্ব দেয়। অন্য ভাষা-সংস্কৃতি চর্চার রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকার করে। ভাষা যেহেতু যোগাযোগের মাধ্যম সেহেতু অন্য ভাষা জানা-বোঝার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকারের কিছু নেই। তার জন্যে দশ-পনের বছরব্যাপী স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাভ্যাসের চর্চার কি দরকার? আসল কথা আজকের এই কর্পোরেটোক্রেসির যুগে সবকিছুর সাথে ভাষাও একটি বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত।…”

শিশির মল্লিকের এ লিখিত বক্তব্য দিয়ে ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১-এ শুরু হয় ‘ভাষার লড়াই: বাংলায় জ্ঞানচর্চা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানটি। ছোটকাগজ ‘বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি’ এবং শিক্ষা বিষয়ক বুলেটিন ‘শিক্ষালোকে’র যৌথ উদ্যোগে আলোচনা সভাটি সিদীপ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এতে অনলাইনে আলোচনায় অংশ নেন ‘বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি’র প্রধান সম্পাদক বিজ্ঞানী ড. আশরাফ আহমেদ, অধ্যাপক কুদরতে খোদা, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সৈয়দ বদরুল আহসান, শিক্ষাবিদ শহিদুল ইসলাম ও গবেষক ফজলুল বারি।
সরাসরি আলোচনায় অংশ নেন লেখক ও উন্নয়নচিন্তক শাহজাহান ভূঁইয়া, বিজ্ঞানুরাগী অসিত সাহা, কবি ও চিত্রশিল্পী জাহিদ মুস্তাফা, কবি সৈকত হাবিব, সাংবাদিক শাহেরীন আরাফাত, লেখক তাপস বড়ুয়া, লেখক-গবেষক সিরাজুদ দাহার খান, লেখক মারুফ ইসলাম এবং কবি ও প্রভাষক জয়নাব বিনতে হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন লেখক-গবেষক সালেহা বেগম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন ‘বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি’র সম্পাদক আলমগীর খান ও নির্বাহী সম্পাদক নাজনীন সাথী।
মন্ট্রিল থেকে অনলাইনে আলোচনায় জনাব কুদরতে খোদা বলেন, স্বাধীনতার এত বছর পরেও যে আমাদেরকে বাংলা ভাষার প্রতিষ্ঠা নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে তা ভাবা যায় না। তবে সম্প্রতি উচ্চ আদালতে রায় বাংলায় লেখার জন্য যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তাকে তিনি আশাব্যঞ্জক মনে করেন। অবশ্য এরকম অনেক সিদ্ধান্ত আগেও হয়েছে, কিন্তু বাস্তবায়িত হয়নি। তিনি বলেন জাপান ও চীনের মতো দেশ যারাই উন্নতি লাভ করেছে তারা প্রমাণ করেছে মাতৃভাষা চর্চার মাধ্যমেই সত্যিকার উন্নয়ন সম্ভব।
খ্যাতনামা সাংবাদিক সৈয়দ বদরুল আহসান আমাদের কথায় কথায় বিশেষত রেডিও-টেলিভিশনের অনুষ্ঠানগুলোয় বাংলার সঙ্গে যথেচ্ছ ইংরেজি ব্যবহারের দুঃখজনক প্রবণতার উল্লেখ করেন। আবার আনুষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডেও আমাদের প্রমিত বাংলা ব্যবহারের পরিবর্তে আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহারের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। অনেকের ইংরেজি ঢঙে বাংলা উচ্চারণের বাতিকের কথাও বলেন তিনি।
অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম প্রকৃত উন্নয়ন কী সেই প্রশ্ন করেন এবং বলেন আগে শিক্ষার দর্শন ঠিক করতে হবে। বিজ্ঞানী ও লেখক আশরাফ আহমেদ বলেন আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু বাংলায় বিজ্ঞান বিষয়ে লিখেছেন। তিন বলেন শিক্ষক যদি বাংলায় বিজ্ঞান বোঝাতে না পারেন তবে তিনি নিজেই বিষয়টি বোঝেন না। গবেষক ফজলুল বারি মাতৃভাষায় জ্ঞানচর্চার ব্যাপারে জাপানিদের আগ্রহ নিয়ে তার অভিজ্ঞতা থেকে তুলে ধরেন এবং আমাদেরও সর্বস্তরে মাতৃভাষা ব্যবহারের প্রয়োজনের কথা বলেন।
আলোচনা অনুষ্ঠানের সভাপতি লেখক সালেহা বেগম বলেন, এরকম ছোট ছোট উদ্যোগ সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।