
বৈরীতার কালে
বৈরীতার কালে
জানালায় ঝড়ো বেগে বৈশাখি বাতাস
আকাশে দিকে তাকাই, মেঘের দেখা নেই
দাবদাহে অস্বস্তি লেগে আছে মানুষের মুখে
মন যেন ক্লান্ত হয় তারই ছায়ায় অজান্তেই
প্রকৃতি যেমন বৈরীতা নিয়ে বখে গেছে
চেনা মানুষেরা যেন তেমনি অচেনায় হারায়
বদল হয় সংস্কৃতির রূপ নতুন সংজ্ঞায়।
অস্তিত্বের টান ফতোয়াবাজের পালে উড়তে থাকে
শিল্পমুখী মানুষের মন দোদুল্যমান, জাগ্রত শংকা,
এ যেন পুরানো চলা পথে হঠাৎ অন্ধকার করা ঝড়।
তুমি তবে কোন পক্ষে ফেলবে তোমার নোঙ্গর?
উত্তেজিত মুখ, ফেসবুকের পাতায় শব্দের অসংলগ্ন কড়চা,
অর্থহীন যুক্তির উত্তর প্রতিউত্তরে মনে হয়
শুনছি বিচারকক্ষের পেশাগত উকিলের তার্কিক উচ্চারণ।
পেশাগত উকিলেরাও হেরে যায় জ্ঞানের লটবহরে,
মনে হয় জ্ঞানপাপীরা মেতে উঠে উল্লাসে,
নতুন সূত্রের জন্ম দিয়ে,
সমাজতন্ত্রের পিঠে যেন চালায় চাবুক।
কারো কারো চোখে যেন প্রতিহিংসা
আগ্নেয় লাভা হয়ে গড়ায় সম্প্রীতির ঘরে।
ধর্ম আর সংস্কৃতি যেন রেললাইনের পাত
তার উপরে দাঁড়ানো বাংলাদেশ, দ্রুতগামী।
চলছিল তো পাশাপাশি, ভাগাভাগি করে সুখ, দু:খ ,
কারা যেন উপড়ে নিয়ে ফেললো অপর পাশে,
বেঁধে গেলো দ্বন্দ্ব, সংঘাত, জিজ্ঞাসা, জিংগাসা।
আমাদের নিশ্চিত ঘরে, ডেকে ওঠে শিয়ালেরা
কাটা লেজ সার্জারি করে লুকিয়েছে পাপের ক্ষত।
আমি চোখ মেলে তাকিয়ে থাকি আ-রাত্রি ,
ভুল করে চোখ বন্ধ করলেই দেখি-
আলখাল্লার আড়ালে হারাতে থাকে
আমার পরম আত্মীয়;
আমি যেন ভুলে যেতে থাকি আমার পূর্বপুরুষের
সকল আচার, নতুন সমাজবিধির তন্ত্রে।
না চোখ আমি মেলেই থাকব যতই জড়াক ঘুমে,
উৎকর্ন রবে আমার কর্নদ্বয়, যতই বজ্রাঘাত হোক,
আমার মাটিতে আমি তো হতে পারি না পরাভূত,
হাজার বছরের সংগ্রাম ভুলে এই বৈরীতার কালে।
পরবাসী
কোথায় চললে তুমি?
চেয়ে দেখো-
পাখির কুজন তোমায় ডাকে,
নতুন দিনের আলোর মায়ায়,
শৈশবের অলস সকালের ঘুম জড়ানো ভোর,
মায়ের কপট রাগ, বাবার হুংকার,
বোনের মমতামাখা আবেগি করতল,
পথের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা বন্ধুরা,
সব আজ স্মৃতি হয়ে আসে,
তুমি কি একটু দেখতে পাও না?
কোথায় চললে তুমি?
ছেড়ে দিয়ে নদীর মধুর কলতান
মাটির সোঁদা গন্ধ, মাথার ওপর বাঁশ বাগান,
বনের শীতল ছায়া!
চেয়ে দেখো-
নদী, মাটি, বন তৃষ্ণার চোখ নিয়ে
তাকিয়ে আছে তোমার দিকে বিষন্নতায়,
উত্তরসূরীর জন্য সোনালী সময় খুঁজতে,
পাড়ি দিতে হয় মখমলি দেশে,
যেখানে ধূসরতা
ছেয়ে থাকে সাদা সাদা বরফের ঝড়ে।
ঝকঝকে সুনিপুণ শহরের অত্যাধুনিক বারোয়ারী মায়ায়
কেমন যাপন করতে শিখে গেছ একলা ঘরে।
বিলাসবহুল যাপনের ভ্রমময় হাতছানিতে
অস্তিত্বের লড়াইয়ে আকন্ঠ ডুবে থাকা তুমি
হারিয়ে ফেলো ঝলকিত সময়, হৃদয়ের উষ্ণতা।
কারো করতল ধরে হেঁটে যাওয়া শৈশবের
চঞ্চলতর সব রৌদ্র-বৃষ্টি-ঝড়;
নিবিড় নির্যাস চাপা রয় অকেজো খাতায়,
রুদ্ধশ্বাস ঘড়ির কাঁটার চক্রে,
তোমাকে ঘিরে থাকে না বাংগালীর আলসেমি,
অযথা ঝড় তোলা বিশ্ব রাজনৈতিক মতবাদে।
খালিল জীবরাল তথ্যে-
‘তোমার সন্তান তোমার নয়,
তারা তাদের নিজের, তুমি তো মাধ্যম মাত্র।’
কেউ কারো নয় ক্ষীণকায় ছায়া মাত্র!
তবে কেন বেঁধে থাকা, বেঁধে রাখা মনে,
মমতার সুতায়, আবেগের হতচ্ছাড়া যন্ত্রণা-
মানুষের প্রলম্বিত স্মৃতি ক্ষীণতর হয়,
ছানিময় চোখের দৃষ্টি জুড়ে।
একাকিনী বয়ে নেয় আরো কতো কী
নিশ্বাসের দীর্ঘ আড়ালে।
পরবাসী ভালো যেন থাকো অহর্নিশ,
সোনালী সময়ের দুধ-সাদা রঙের
মায়াজালে মিশে মিশে পরবাসে।
সেই ডাক
আবার যেন শুরু হলো অন্ধকুপের খনন
বাতাসও যেন ভয়ে অধোমুখী হয় আজকাল
চেনামুখ কেমন বদল হয় ভাবনার সংকীর্ণতায়
নিজেকে প্রশ্ন করি, এরা আমারই সহচর!
শিউলি ফুলের মালায় যে ভোর সেজেছিল,
আজকাল সেখানে আতরের ঘ্রাণ ভাসে।
ঠোঁটের রেখায় কি অচেনা গন্তব্য উঁকি মারে,
চোখের দিকে তাকাতে পারি না, মনে হয়
আমাকেই ভস্ম করে আমারই আড়ালে।
কতখানি শ্বাপদ সংকুল পথ পেরিয়ে আসা
এই আমরা আবার কেন অমানিশায় হারাই?
কখনো শিক্ষক, কখনো নারী, কখনো ধর্মান্ধতা-
এরাই ভাসে আস্ফালনের চূড়ায়।
অশরীরী চাদরের হাজার প্যাচে হারায়
উর্বর মস্তিষ্কের চারণভূমি এই অকালেই।
লাভের লবডঙ্কা বাজায় ঐ কারা;
স্বপ্নবাজের অনিশ্চিত দৃষ্টির সীমানায়।
অসহায় নগরীর সভ্য নাগরিক দাঁড়িয়ে কেন দ্বিধায়,
কার কাছে যাবে, কে দেবে সেই ডাক একাত্তরের মতো?