
বৃক্ষ ও নৈঃশব্দের আলো
দীর্ঘ আলোয় চকচকে জোছনা
দীর্ঘ পথ হেঁটে হেঁটে
অচেনা পথে দেখলাম একটা ছবি
বৃক্ষদেবী উঠে এসে আবার ফিরে গেলো
কোথাও ছায়া নেই, মৃত্যুপুরি
অচেনা গাঁয়ে সন্ধ্যার বর্ণিল ধুলোয়
কে যেন ডেকেছিলো ঝিরিঝিরি বাতাসে
তখন ফাগুনের বিদায় বারতা
পেছন ফিরে দেখি মেহগনির ছায়াঘন পল্লব
অদূরে কাঁদছে ঢেউহীন যৌবন
আগুন জ্বলে, ফিনফিনে ধুতি-মালকোঁচা
আবার এসেছে আমাদের উড়ুক্কু সময়
ধূসর বেদনায় উঁকি দিয়ে দেখি অলস বিকেল!
বৃক্ষ ও নৈঃশব্দের আলো
তোমরা ঘুমিয়ে গেলে, জেগে থাকে পৃথিবী
বৃক্ষের সাথে আমি কেবল জোছনা কুড়াই
পাতা দিয়ে সাজাই তরণী, শ্রাবণ বিষাদে
তারপর নৈঃশব্দের সাথে চলে যাই
শাদা শাদা সুখের খোঁজে….
ভোরের আলোয় উজ্জ্বল খয়েরী রঙের হাঁস তখনো সাঁতরায় নিটোল জলে শামুকের গুগলি মুখে। সোনা ঝরা পাতার ফাঁকে হেসে ওঠে সুনীল আকাশ…
আরো কিছু পরে পাখিরাও নিস্তব্ধ হয়ে ভালোবাসে শুভ্র কারুকাজ। চোখের কোণায় দগদগে ক্ষত নিয়ে বেঁচে থাকার আনন্দ পাই বৃক্ষের কথা ভেবে….
অতীত কোলাহল
তুলোর মতো উড়ে যাও
রেখে যাওয়া নিরেট চুমু আঁকবে মায়ার জাল
পুরনো রোদ শুঁকে ভাসবো সময়ের স্রোতে
নৈঃশব্দের সাথে চলে যাবো অতীতের কোলাহল ঠেলে
বৃক্ষ আমাকে ভালেবাসে বলে—
দুঃখরা আজকাল জলে ভাসে
অবিশ্বাসের ঢেউ
তিন টাকার মোমবাতির মতো নিভু নিভু করছে জীবন। দিনরাত শুয়ে-বসে এক অজানা আশংকায় ভেতরটা শুধুই পুড়ছে। এক বিঘা জমি বিক্রি করে একফালি জোছনা কিনেছিলাম গতবছরের হাটে। চড়ুই পাখির ঠোঁটে এঁকেছিলাম সুখের বাড়ি। অথচ সবকিছু ভেঙে পড়ে নরোম ঢেউয়ের মতো।
যেদিন জানলাম পৃথিবী আসলে ভুলের পাহাড়, স্বপ্নহীন এক একটি রাত নিমিষেই হাওয়া হয়ে যায়। চোখের কোণায় দগদগে ক্ষত নিয়ে বেঁচে থাকা মানে অবিরাম ঘুড়ি ওড়ানো মিথ্যে কল্পনা।
গত জনমের দুঃখগুলো হলুদ হয়ে মিশে আছে শাদা শাদা ধানের আলে। কতবার দাঁড়িয়েছি যৌবনদীপ্ত নদীর ঘাটে, সকলেই প্রবলভাবে অবিশ্বাসের মতো চলে যায় ঢেউয়ের সাথে।
চারিদিকে হাহাকারগুলো উড়ে আসে গাঙচিলের ভিড়ে। শুকিয়ে যাওয়া ফুলের মতো নীরবে কাঁদে এক একটি রাত। নিমিষেই হারিয়ে যাই অরণ্যে, কখনো বা উড়ে যাই শালিকের সাথে দেখা-অদেখা নিকটজনের চোখ ফাঁকি দিয়ে।
খুলে দেই চুপিসারে শনশন বায়ু
শব্দশৈলী উড়ছে মেঘের ভাঁজে
শ্রমিক-জনতা পুরনো ছবি আঁকে
আমি শুধু সংসারী হতে গিয়ে ঝরেছি পাতার সাথে
তোমার সংসারের খোঁজে বহুদিন হাঁস হয়ে ভেসেছি পুকুরের শ্যাওলা জলে। অথচ হলুদ পাতার নিচে দুঃখের অতীত জড়িয়ে যায় বারে বারে!
তবুও আউশের ক্ষেতে গভীর আলোয় বুনেছি চাঁদের মখমল জোছনা। পুরনো ছবি বুকপকেটে রেখে স্নান করি কলমিলতার সাথে।
রোদ মেখে যে নদী শুকিয়ে যায় বৃষ্টির আগে
যে আকাশ পেটের ক্ষুধা আঁকে, আমি তার চিবুক ছুঁয়ে হেঁটে যাই সমুদ্রের কাছে, শুধাই—
এতো জল কোথা থেকে আসে চোখের কোণায়?
স্তনের বোঁটায় চুমুক দিতে গিয়ে—
শৈশব-কৈশোর-যৌবন ভেঙে পড়ে কদমের মতো। ঝরে যায় হিজলফুল নরোম সকালে। তবুও সাঁতার কেটে ডুবে যাই গুগলি শামুকের সাথে।