
বালিকার নারী হওয়ার অসহ্য দহন
অসহায়ত্ব
ভাঙা চালের ফাক দিয়ে আসা এক ফালি বাঁকা চাদের আলোর নিচে
আমরা আছি দাঁড়িয়ে বালিকা
তুমি একা, আমরা চারজন,
ছাড়া ছাড়া কথাবার্তায় ভয়ের আয়োজন
তুমি এখন আমাদের খোদা ডাকতে প্রস্তুত
দেহ বাঁচাতে তুমি এখন আমাদের মন দিয়ে দিতেও প্রস্তুত।
ভয় পাচ্ছ, মেয়ে?
পশুর কামড়া-কামড়িতে রক্তের বান বয়ে যাওয়ার
অথবা
দৈহিক লাঞ্ছনা শেষে বিচার না পাওয়ার
অথবা
সামাজিক অনুষ্ঠানে লোকের নোংরা কথার শিরোনাম হওয়ার?
অথবা
আর কভু বাড়িতে না ফিরতে পারার ভয়?
ভাবতেছ চিৎকার করবে?
তুমি, আমরা চারজন আর এই ওয়্যারহাউজ
আর আছে কিছু ইদুর বিড়াল কুত্তা,
তোমার অসহায়ত্বের গান গাও তুমি সুর করে
আমরা শুনে মজা পাই যেন।
কার কসম দিচ্ছ?
খোদার? তারে দেখি না
মা-বোনের? জন্ম থেকে জারজ আমরা
ভয় দেখাচ্ছো আইনের?কাচকলা হবে
দোহাই দিচ্ছ মানবতার? আমাদের কি মানুষ মনে হয়?
গালি দিচ্ছ? গায়ে লাগছে না কেন আমাদের?
তোমার প্রেম তোমার প্রেমিকের জন্য, আমাদের তাতে কি?
আমাদের ক্ষুধা কয়েক জন্মের, তাকে মেটানো যাবে কি?
তোমার সম্মান কেড়ে নেয়ার জন্য যতটা আবেগ প্রয়োজন
তা আমাদের নেই
তোমায় রান্না করে খাওয়া যাবে না
তোমার দেহের প্রতি তাই ক্ষুধা নেই আমাদের,
শুনেছি তোমায় রক্ষা করতে ক্ষতিপূরণে কেউ কেউ
কোটি টাকা দিতে রাজি
আমাদের ক্ষুধা ও প্রেম সেই টাকার প্রতি
তাই ভয় পেয়ো না বালিকা দামী।
বেঁচে থাকার প্রমাণ
এভাবে আবার
তোমার দরোজার পাশে
হাত পা গুটিয়ে বসে থাকা পোষা কুকুর
পোষ না মানা বন্দুকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে
আশ্রয় খোজে তোমার জিন্সের আশেপাশে,
তখন তুমি অন্যের জিন্সের ভেতরে।
মদের ঘ্রাণ, সিগারেটের গন্ধ,
এক রাতের পাপ; ছড়িয়ে
আছে ছিটিয়ে আছে, প্রমাণ
লেগে আছে জানালার পর্দায়।
নীরবে খোলে দরজা
কেটে পড়ে তোমার পাপের অংশীদার,
একা তুমি কুকুরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে
শাওয়ার শেষে, ডিম পাউরুটি জুসে কামড় দিয়ে
ছিটকে গিয়ে পড় অফিসের মাঝে
৯টা-৫টা।
লাঞ্চে লাঞ্চনা গঞ্চনা করো অফিসের বেতনে
পোষা তোমার মত কিছু ঘেয়ো কুকুরের সাথে
বসের গুষ্টিরপিণ্ডি চটকে তবে তুষ্টি।
বিকেলে আবার তুমি একা
এ বিশাল শহর, সামুদ্রিক জনস্রোত,
সে স্রোতে ভাসতে থাকা তুমি একা।
তারপরে প্রবেশ এক বারে, এক গ্লাস শ্যাম্পেন
বাম চোখের কোণে ধরা পরা পাপীকেও এক গ্লাস অফার করো,
এভাবে প্রথমে জমাও ভাব
অতঃপর
হাসাহাসি কাছাকাছি
পাপ পঙ্কিল রাতের সুখ ভাবনা আসে তাড়াতাড়ি
বিল চুকিয়ে দ্রুত তোমরা বেড়িয়ে যাও জনন পেশীর তীব্র কাপুনিতে।
আজ ঠিক হল তুমি ওই পাপীর বাসায় যাবে
পৌছাতে দেরী, দেহ চুপকাতে দেরী না।
কী এমন ক্ষতি যদি একটু থামো, দুজনে একটু গল্প করো
ভাগ করে নাও দিনের ক্লান্তিগুলো রাত্রির শব্দে,
গল্পের জন্য গল্প নয়, বন্ধুত্বের জন্য গল্প
নয়তো পরদিন সকালে একজন আরেকজনকে মুখ দেখাতে লজ্জা পাবে।
চুপকানো দুই দেহ নিঃসরণের শেষে ঘুমের দেশে যায়,
পরদিন সকালে তুমি চুপি চুপি বের হয়ে আসো
যেন মস্ত অপরাধী
অথবা অন্যের ঘরের সূর্যের আলো তোমার সয় না
ভয় হয়তো ঘরের মালিক সূর্যের আলোয় তোমার দেখা চায় না।
নিজের বাসায় আবার সে পূবেকার রুটিন
তার আগে কিছুক্ষণ কুকুরটাকে জড়িয়ে বসে থাকা
তুমি যে বেঁচে আছো এ তার একমাত্র প্রমাণ,
তোমার প্রাণ ওর পশমে প্রবাহিত
বাকিটা তো লুপহোল
অফিস, লাঞ্চ, বসের গুষ্টির ষষ্টি
আবার একাকীত্ব, আবার রাত্রি, আবার সেক্স।
বেশ্যা
১. সতী পতি রতি ও সমাজ পত্নী
সুখলীলার বাজারে বালিকার ঘুম
আয়েশ করে আঁধারেতে সৎলোকের চুম,
করুণায় রচিত হয় করুণের পাপকামী
শুরু হয় খেলা, পরে থাকে বালিকার হামি,
যদিও কভু বা নগ্ন বালিকা হাসে
শুষে শুষে খায় দেহের মালিক ত্রাসে,
ঘর মাঝে বেজে ওঠে আহত চিৎকার
বদলে যায় তা ক্রমে জান্তব শীৎকার।
আগামীতে মৃতবৎ পরে রয় বালিকা সাদা
কুৎসা রটে, ছুড়ে স্বজনে কাদা
বুঝিতে পারে না সতী নারীগণ
বালিকার নারী হওয়ার অসহ্য দহন।
সমাজের পতি আড়ালে করিল রতি, নারীত্বের অপমান
তব সমাজ পত্নী দিল বালিকাকে বেশ্যার সম্মান
২. বেশ্যার স্বগতোক্তি
কাপড় উঠায়ে, শরীর দাবায়ে কার বিসর্জন?
আবীর রাঙায়ে, উলু বাজায়ে প্রতিমার অর্জন
প্রতিমা ক্ষুধার্তহীন, আমার জ্বলে জঠর
যৌবনের হাটে বেঁচি যুবকের আদর।
সতীপ্রেমের সখ আমার স্বপ্নের মাজারে
মিথ্যাপ্রেমের শীৎকার আমার যৌবনের বাজারে।
নিথর নিধর মাংসের দলা কুকুরের আহার
কাঁপে দেহ বা যদি বারবার, মন কাঁপে না একবার,
ভাঙিয়া, রসে মজে যায় মজনু
দু’শো পাঁচশো টাকার ক্ষুধাহীন ক্ষুধার্ত তনু
আতর চন্দন গোলাপ দিয়া নিজেরে সাজাই
নাগরের আশে নকল আদরের চিৎকার বানাই,
কী আসল, কী নকল, সত্যই ভেজাল
মিথ্যে শুধু নাগর আর নাগরের মাল।
সমাজের ঘেণ্ণা আমি, আমার তনুখানি
তব প্রদোষকালে মধুমেলায় সমাজ আমারে লয় টানি।
কত যদু মধু রাম শাম দেখেছি, শুন্য আকর আলয়
সমাজের পুকুর একহাত কাটা পৌরুষত্বের বেশ্যালয়,
বেশ্যালয় মাঝে শক্ত দূর্বল কত বাঘ আসে
আমার মনের ঈশ্বর পেছনে লুকায়ে হাসে,
আলোর অন্তরালে সবাই শুধু আমায় মাগে
সূর্য উঠে গেলে চিনবে না ওরা আগে।
নীচ পেশায় নত হয়ে কাটে সারাবেলা
আমার ভালোবাসা যেন বালিকার রান্নাবাটি খেলা,
মনের দীপালোকে তোমার প্রেমের আশ
শরীরের খাজে খাজে বহুজনের সুভাষ,
কার আদর নিতে নিতে কাদতে থাকি আজ
কবে তোমার প্রেমে ভরে যাবে আমার দেহের খাজ?
কতজনের সুখের উত্তপ্ত নিঃশ্বাস আমার চামড়ায় সাটি
তব জীবনকালে নাই স্বামী, মরণকালে মাটি।
ডুবছে আমার দৃষ্টিসীমা জনলোকের সাথে
কাঁদছে আমার অস্থিরাশি মৃত ভোলানাথে,
তিথিলগ্নের মাগী, বেশ্যার ভালোবাসা
খেলো কেন ঈশ্বর আমারে নিয়ে পাশা?
তব মাগী বলে শোয়ার কেন আশা-
নিচু জাতের কন্যা, উচু মানের বেশ্যার ভালোবাসা।
নষ্ট
১.
নষ্ট হলে নষ্ট ভালো
ভ্রষ্ট হলে ভ্রষ্ট
স্পষ্ট করে আমার হলে
তাতেই আমি তুষ্ট
২.
আমি নষ্ট
তুমি নষ্ট
শরীর জুড়ে একে দিলাম
নীল নীল কিছু কষ্ট