
প্রবঞ্চক
প্রবঞ্চক
নিকোটিনের থেমে থেমে জ্বলা দেখেছো
দেখোনি কত হৃদয় পোড়া গন্ধ চারপাশে
রাজপথে মিছিল দেখেছো
দেখোনি স্বার্থপরেরা দাউ দাউ মশালে কত আবেগকে দগ্ধ করে!
আত্মীয়, অনাত্মীয়, বন্ধু সকলেই হয় প্রবঞ্চক
বাতাসও বিষাক্ত গন্ধে ভরে উঠে
বিশ্বাস টুকরো টুকরো হয়ে ছুটে চলে দিগন্তে দুঃসময় ভীষণভাবে কথা বলে!
তবু চলতি পথে বিশ্বাস জন্মে!
যখন অন্ধকারে নিরব আর্তচিৎকার আকাশ ভেদ করে
বারংবারের ধোঁকায় বন্ধ হতে চায় নিঃশ্বাস
কি অস্থির! গোমট! একাকীত্ব!
এই স্বার্থের পৃথিবীতে,
কেউ বাঁচতে দেয় না
কেউ ভালোবাসে না
কেউ চলতি পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে না
তাই আমিও আজ স্বার্থের পৃথিবীতে প্রবঞ্চক হতে চাই!
সত্যিই কি হতে পারব প্রবঞ্চক?
কেন পারব না! প্রবঞ্চকরাই তো শেখালো আমাকে
বাধ্য করলো প্রবঞ্চক হতে, নয়তো নিঃশ্বাসে নাকি ১৪৪ ধারা জারি করবে!
প্রশ্নের আর উত্তরের মিশ্রণে একাকার হয়ে যাচ্ছে আজ সব
তবু বেঁচে থাকতে হয়, চলতে হয়
কারণ নশ্বর পৃথিবীতে কোথাও
একজন পথিকও পাবে না
যার ভেতর ঘরকে আলোড়িত করছে না
কোনো নিরব কোলাহল।
নিস্তব্ধ কবি আর নির্বাক ভালোবাসা
হিজল বনে কদম্ব লতিকা
বে-মানান সে অপার প্রকৃতি
বেলকনিতে বাগান বিলাস
স্নিগ্ধতার এক অনন্য সৃষ্টি
ভাবনার সাগরে তুমি রাজহংস
বাস্তবতায় দুর্লভ মুক্তো
হলেই-বা-কি বসন্তের কোকিল
যখন বিকিয়েই দিয়েছো সব সুর
মৃদু হেসে বলেছিলে, যাবে নাকি ঝাউবনে
পুলক লেগেছিলো মূহুর্তে
কিন্তু তুমি তো নিতান্তই বে-খেয়ালি
সহস্র কথামালায় গাঁথা ঝাউবন
শিশির স্নাত পদতলের সেই ঘাস
গোধূলি বেলায় যেন, কল্পনারই এক আখড়া
তীক্ষ্ণ বাক্যবাণে বোঝাতে তুমি যা
সূক্ষ্ণ চিন্তাশৈলীতে হয়তো কখনো কখনো
অনুভব করেছি তা
মাঝে মাঝে মনে হতো
বাক্যবাণে তুমি বড্ড মিতব্যয়ী
ধুর! কি-ই-বা এমন হতো
যদি তুমি অজস্র শব্দরাশির মাল্যখানি
পড়াতে মোর গলে!
আমি থাকতাম নির্বাক তাঁকিয়ে সুদূর পানে
আর তুমি নিস্তব্ধ কবি হয়ে ঐ ছন্দের রাজ্যে
কাদম্বিনীর আড়ালে উঁকি দিতে মত্ত শশী
আলো আধারিতে ওরা থাকুক স্বাধীন
আমরা বরং এবার,
মহাকর্ষ সূত্রের সমানুপাতেই চলি
আরে! হাসছো কেন!
ভেবে দেখো, ঐ ঈশান কোণে
মুক্তি খুঁজে পায় আমাদেরই একাগ্রতা
নিস্তব্ধ কবি আর নির্বাক ভালোবাসা
বাধা বিপত্তিতে পৌঁছেছে যেথা!
দুঃখ
দুঃখ! তুমি কি জানো
তোমার সংজ্ঞা কি?
তুমি কি জানো
কৃষকের পাকা ধানের ক্ষেত
শিলাবৃষ্টিতে যখন ঝড়ে যায়
সেই দুঃখের সংজ্ঞা কি?
তুমি কি জানো
ক্ষুধার জ্বালায় কনকনে ঠান্ডা শীতে
মরিচ মাখানো ঠান্ডা ভাত
সেই দুঃখের সংজ্ঞা কি?
তুমি কি জানো
পরিবারের দায়িত্ব নিতে না পারা
শিক্ষিত বেকার যুবকের
কাজের সন্ধানে পথে পথে ঘুরা
সেই দুঃখটারই বা সংজ্ঞা কি?
কখনো কি সংজ্ঞায়নের চেষ্টা করেছিলে
জিপিএ ফাইভ না পাওয়া
মেধাবী ছাত্রের আর্তচিৎকার
কখনো কি সংজ্ঞায়নের চেষ্টা করেছিলে
চাকুরীজীবি এক ছেলের প্রেয়সীর চাপে
বৃদ্ধ বাবা-মা কে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসার
তীব্র সে অসংজ্ঞায়িত যন্ত্রণার
কখনো কি সংজ্ঞায়নের চেষ্টা করেছিলে
চাকুরীজীবী এক মেয়ের উপর
পুরুষতান্ত্রিক অধিকার ফলানোর জন্য
কোনো উৎসবেও বাবাকে
একটি পাঞ্জাবী দিতে না পারার
মুমূর্ষু সে বেদনার
দুঃখ তবে কেন তুমি?
দুঃখ তবে কি তুমি?
পারবে কি দিতে এর উত্তর
যদি দিতে না পারো
তবে উপহাস জানালাম আজ তোমায়
কেন আসো তুমি সকলের জীবনে
কি চাও তুমি সকলের জীবনে
আর যদি উত্তর দিতে পারো
তবে ফিরিয়ে দাও
কৃষকের হাসি মুখ
ফিরিয়ে দাও
শিক্ষিত বেকারের সু-দিন
মেধাবী ছাত্রের সফলতা
চাকুরীজীবী ছেলের মা-বাবার প্রতি শ্রদ্ধা
চাকুরীজীবী মেয়ের বাবাকে উপহার দেয়া
ফিরিয়ে দাও সব সুখ
যা তুমি কেড়ে নিয়েছিলে নিষ্ঠুর থাবায়
এক চিলতে সুখ নিয়ে
ফিরে যাক যে যার গন্তব্যে
তবেই তো হবে তুমি স্বার্থক
নৈস্বর্গিক এই পৃথিবীর সবাই স্বার্থক, সবাই স্বার্থক।
বিকেল বিজ্ঞপ্তি
শুনেছি, তোমার নাকি নীল রং পছন্দ
আচ্ছা ধরো, কোনো একদিন
শিশির ভেজা ভোরে বা বৃষ্টিস্নাত কোনো সন্ধ্যায়
আমি একটি নীল শাড়ি পড়ে
খোঁপায় গোটা কয়েক নীলকণ্ঠ গুঁজে
তোমার সামনে আসি!
তখন কি তোমার বায়না গুলো হলুদ রংয়ের হবে?
আর অভিমানগুলো?
অভিমানগুলো কি রাঙ্গা কৃষ্ণচূড়া হবে নাকি প্রিমরোজ?
নাহ! আমি চাই অভিমান গুলো নাগচম্পার মতো
একটার উপর আরেকটা গেঁথে থাকুক
কেন আমার এই বিষাক্ত চাওয়া?
তুমি শুনেছো কি না জানি না
আমি শুনেছি অভিমান গুলো নাকি
সম্পর্কের গাথনের একেকটা মুক্তো দানা
যার প্রতিটি গঠিত ভালোবাসার পরশের শক্ত ভিত দ্বারা
একটা কথা কি জানো!
আমি না নীল রংয়ের শাড়ী এখনো পড়িনি
আমি কিন্তু অষ্টাদশীও নেই
আমি এখন একবিংশ
আর তুমি নিখোঁজ
তোমার খুঁজে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি শরৎয়ের রাঙ্গা বিকেলে
সেই বিকেল বিজ্ঞপ্তিতে
তোমার একটি ছবিও এঁকেছি কাঁশফুলের তুঁলিতে
আমি জানি তুমি বিজ্ঞপ্তিটি দেখবে
কোনো এক হেমন্তে
আর কোনো এক বসন্তে নিশ্চয় চলে আসবে
নিশ্চয় আসবে!