
পরদেশে পরবাসী ॥ পর্ব ৮
আমার সামনের লোকটি একটির বদলে দুটো তোয়ালে হাতে তুলে নিল। লোকটির হাত সোনালি রোমে ঢাকা, পেশির গঠন অত্যন্ত শক্ত, কী সাংঘাতিক তার ভাষা, এই ভাষায় যে কোনও কামুক নারী মাংসের সন্ধান করবে। পাশ থেকে একটি নারীর চঞ্চলসুরও ভেসে এলো, যেন এক পুরুষহীন জীবনের হাহাকার। বিড়ালের সঙ্গে আমিও শিউরে উঠি। নারীটির দিকে না তাকিয়েই লোকটিকে অনুসরণ করতে থাকি। গা ঘষা ও মোছার জন্য আলাদা তোয়ালের প্রয়োজন বই কি! সঙ্গে এক টুকরো সাবান ও একটি শ্যাম্পুর প্যাকেট চেয়ে নিলাম কাউন্টারে বসা লোকটির কাছ থেকে। তারই নির্দেশে বারান্দায় পাতা একটি বেঞ্চে বসতে-না-বসতেই অপর বেঞ্চে বসা একজন স্বজাতির ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো। তার কাছে উঠে যেতেই তিনি বাংলায় সাদর সম্ভাষণ জানিয়ে সম্বোধন করলেন। আমি যে তার স্বজাতি তা বলে দিতে হয়নি; চেহারাই তার বাস্তব প্রমাণ—বিবর্তনের পথ ধরে প্রকৃতি যে আমাকে বাঙালি করে সৃষ্টি করেছে এই বিষয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। ভদ্রলোকের পাশে বসি। কুশলমঙ্গল আদানপ্রদানের পর, তিনি গল্পের ঝাঁপির মুখ খুলে দিলেন। গল্পের স্রোত শুধু দৃশ্যাগতই হলো না, হঠাৎ বিচিত্রভাবে মোড়ও নিল। এদিকে কেমন করে মোড় নিল তা আমার কাছে অজানা। এই কাহিনির সঙ্গে আমার কোনও সম্বন্ধ বা যোগাযোগ আছে বলে মনে করি না, তবে গল্পটিকে যুক্তি বা অর্থপূর্ণতা দিয়ে বিচার করার জন্যই হয়তো-বা উৎসাহের সঙ্গে শুনতে থাকি; হয়তো-বা শুনতে চাইনি, শুধু ভদ্রতার খাতিরে নিজেকে নিমিজ্জিত করে রেখেছি। ভদ্রলোক বলে যেতে লাগলেন, চার বছর পর, দেশে ফিরে ছয় মাসও থাকতে পারিনি। যাওয়ার আগেই আমার একমাত্র ভাই একখণ্ড জমি খরিদের সর্বাঞ্জাম করে রেখেছিল। এমতাবস্থায় আমি গ্যাঞ্জাম করলে ভাইটি মানবে কেমন করে!
বটেই তো! হয়তো তার মনে অন্য কিছু ছিল।
আমার কথায় অনিচ্ছে সত্ত্বেও ভদ্রলোকটি মাথা নেড়ে স্বীকার করলেন। তারপর আস্তেধীরে স্তব্ধ উত্তেজনা জড়ানো অকম্পমান কণ্ঠে বললেন, অবশ্য স্ত্রীও ঠিক করে রেখেছিল, তবে সে একা আমার আর জমিখণ্ডটি তার। যেমন করে তার হয়ে গেল আমার ভালোবাসার মানুষটিও। সে এখন আমার বৌদি। বৌদি শব্দটি আমার চোখের সামনে আরেকটি মুখের ঝাপসা চিত্র ফুটিয়ে তুলল।
যে-মুখটি সবসময় থাকত নিবিড় জিজ্ঞাসায় উন্মুখ, উদ্বেগে আক্রান্ত; সেই মুখের মানুষটি, একদিকে, যেমন লাগাম টেনে ধরত, তেমনি অন্যদিকে, শক্ত হাতে চাবুক চালাত; আর চাবুকের দুরন্ত আঘাতে আমার হৃদয়ের একদিকে যেমনি দুর্লঙ্ঘ্য নিয়তির স্বরূপ প্রকাশ পেত, ঠিক তেমনি অন্যদিকে, যন্ত্রণার তীব্রদাহ মগজে দাগ কাটত, যা ছিল আমার কাছে নিষ্ঠুর আর রহস্য মিশানো একরকম অনুভূতি। সেই মুখটি থেকে দৃষ্টি ফিরাতে পারিনি। মুখটি ছিল আমার সুপ্রিয় বন্ধু আনোয়ারের স্ত্রীর। এই বৌদি পৌষের এক সকালে, অনেক দিনের গম্ভীর গভীর কঠিন যবনিকা ছিঁড়ে, দেবর-বৌদির পরিচয়ের অন্তরাল থেকে বেরিয়ে এসে নিজেকে নতুনভাবে প্রকাশ করে। সে রান্নাঘরের দাওয়ায় পাটি বিছিয়ে, আমাকে ডেকে, নরম-গরম চিতই পিঠা খাওয়ানোর আয়োজন করে, যা ছিল অভাবিত। এই আহ্বানে সাড়া না দেওয়ার ভাষা আমার ছিল না। পাটিতে বসতেই বৌদি আমাকে কোনও প্রকার সম্বোধন না করেই, কিছু না বলেই, ঠোঁটের কোণে হাসির প্রলেপ মেখে একমনে থালা সাজাতে থাকে। আমার বুকে চিকচিক করে ওঠে বিব্রতকর অস্থিরতা, কিন্তু তা প্রকাশ করতে পারিনি, বরং পাথরবৎ স্থির হয়ে বসে থাকি। তবে বাড়ির পাশের খেজুরক্ষেত থেকে তুলে আনা খেজুর-রসের বাটিটি থালার মাঝখানে নীরবে সাঁতার কাটতে থাকে। স্থির হয়ে বসে থাকা আমি, পিঠার ঘ্রাণের মধ্যে একটি নতুন অদৃশ্য ছবি অনুভব করি। যখন আমার মগ্নতা ভাঙল তখন খেজুর-রসে পিঠা ডোবাতে গিয়ে বৌদির দিকে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি। সেই মুখ, সেই দৃষ্টি ভুলতে পারিনি আজও। সেই চাউনি, সেই গুড়ের স্বাদ এখনও আমার চোখেমুখে লেগে আছে।
অতীত থেকে ফিরে এসে ভদ্রলোকটিকে বলি, মানে?
একলাফে ভদ্রলোকের বয়স যেন কয়েক গুণ বেড়ে গেল। আক্ষেপের সঙ্গে মাথা নেড়ে, ধসে যাওয়া কবরের তলা থেকে ওঠে আসা চাপা কান্নার মতো বললেন, মানেটা খুবই সহজ। ভাই বলল, “আলের জমিন খরিদ না করলেই নয়। আর তোর বৌদির চুড়িগুলো যেমন তেমন করে গড়ে দিতেই হয়।” তার ভোগের জিনিশ তো আগেই সামলাতে হয়। জমির দলিল রেজিস্ট্রি করা ও আমার ভালোবাসার মানুষটির জন্য স্বর্ণের চুড়ি গড়ে দেওয়া বাঞ্ছনীয় হয়ে পড়ে। একান্নবর্তী পরিবারের সুখসুবিধে আর গুণগাথাকীর্তন করতে করতে গাজির বয়ানের মতো মায়ের সুরে সুর মিলাতে না পেরে পালিয়ে এলাম, একপ্রকার অতিষ্ট হয়ে।
আমার সাম্যক ধারণা নেই ভদ্রলোকের গন্তব্যের সঠিক দূরত্ব কতটুকু, তবে তার স্বরে বিস্ময়ের সুর মিশে আছে, অভূতপূর্ব, যা এর আগে কখনও শুনিনি। ভদ্রলোকের মুখের দিকে তাকিয়ে হঠাৎই আমার ঠোঁটের ফাঁকে বেরিয়ে এলো, অ!
ভদ্রলোকটি তার বসার স্থান পরিবর্তন করলেন। মুখোমুখি বসলেন। তার মুখভঙ্গি দেখে কিছুই বোঝা গেল না, যদিও তার মুখের পেশিতে অস্তগামী সূর্যের রক্তাভা লেপটে আছে। আমার মনে হলো, ভদ্রলোকের হৃদয়ে গাঢ় অন্ধকার বিরাজ করছে। চামড়ায় শীতের হাওয়া, চোখের পাতায় পৌষের কুয়াশা, আঁখিতে নিস্তেজ অশ্রু। আর দেহটি—বিলেতি কষ্টিপাথরের ধাক্কা খেতে খেতে কেমন যেন ঝরে পড়েছে। এমন সময় স্নানাগারপরিচর এসে জানাল, বাথ প্রস্তুত।
বেঞ্চ ছাড়তে উদ্যত হলেন তিনি। আমার অন্তরে ফস করে দিয়াশলাইয়ের আগুন যেন জ্বলে উঠল; তবে আর্তনাদ নয়, শুধু বিভীষিকা সৃষ্টি হলো, হ্রেষাধ্বনি যেন। চুপ করে পকেট থেকে রুমাল বের করে চশমার কাচ মুছে তোয়ালে-সাবান-শ্যাম্পু হাতে নিয়ে উঠে পড়লেন ভদ্রলোকটি। তিনি হাঁটতে হাঁটতে লোহার বড়ো স্তম্ভের কাছে পৌঁছাতেই একবার থমকে দাঁড়ালেন। সর্বস্ব লুণ্ঠিত হয়ে যাওয়ার পর মানুষকে যেমন বিপর্যস্ত বিভ্রান্ত দেখায়, এর সঙ্গে ভদ্রলোকটির তেমন কোনও পার্থক্য দেখতে পাইনি, তাই হয়তো আমার অন্তরাত্মা কেঁদে উঠল, শিরদাঁড়ও। ভদ্রলোকটিকে মনে হলো যেন নুয়ে কাত হয়ে পড়ে থাকা ধানগাছ। এই বিশাল ঘরের এককোণে গরম করে রাখা বাতাসে হঠাৎ কেমন যেন ঠান্ডা ঠান্ডা অনুভব করি। অন্তরে অন্যরকম বেদনা সৃষ্টি হলো। এই ব্যথা থেকে বাঁচার জন্যই হয়তো-বা ঝাঁপ দিই অতীতে আবার, বৌদির হাতে বানানো পিঠায়, যা ছিল আমার খুবই প্রিয়।
আমার খাবারের ভঙ্গি দেখে বৌদি বলল, পেট ভরে খেতে হবে কিন্তু।
খেতে খেতে যখন থালার শেষ পিঠায় হাত পড়ল তখন বৌদি বলল, লজ্জা করছ কেন? চাল ভিজিয়ে, গুঁড়ো করে পিঠা বানাতে আর কতক্ষণ লাগে বলো তো !
বৌদির সেই কথা মনে পড়তেই চমকে উঠি। ভদ্রলোকটি আরেকবার পেছন ফিরে তাকালেন, আর আমি গভীর বিস্ময়ে তার অশ্রুসিক্ত মুখের দিকে দৃষ্টিনিবব্ধ করে থাকি। তারপর, তিনি ঘাড় ঘুরিয়ে হাঁটতে শুরু করলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই অদৃশ্য হয়ে গেলেন। আমার মন বিহ্বল হয়ে নীরবতার মধ্যে ডুবে গেল। এই নীরবতার মধ্যেই খুঁজতে থাকি বৌদিকে আবার, যার সন্ধান পাই তা আমনের ক্ষেত, মাঠ, বিল, বাড়িঘর, উঠোন, গোয়ালঘর, তারপর এক ভোরবেলা—ভোরবেলাটি ছিল স্বর্গের চেয়েও সুন্দর।
দুই দিনের জন্য এসেছি আমার প্রিয়বন্ধু আনোয়ারের বাড়ি। সকালে পুবের আকাশকে স্পষ্ট করে জাগ্রত করে সূর্যটি। দূরে নদীর ঘাটে লাল, নীল, বেগুনি রঙের সারিবদ্ধ নৌকাগুলো দাঁড়ানো, যেন জন্তুর মতো। ভাঙা পাঁচিল টপকে বেরিয়ে পড়েছে হাঁস-মোরগ। হাঁস-মোরগের ডাকাডাকির সঙ্গে একটি ঝ্যাঁটার শব্দও আমার প্রিয়বন্ধু আনোয়ারের বাড়িটাকে মাতাল করে তোলে। এরই সঙ্গে ঘরের মধ্যে একটু-আধটু করে অন্য সদস্যদের জেগে উঠার শব্দও। ঝ্যাঁটার শব্দ সহ্য করতে না পেরে পুকুরের শ্যাউলাঘন জলের দিকে এগিয়ে যাই। কিছুক্ষণের মধ্যে হাঁস-মোরগের ডাকাডাকির সঙ্গে ঝ্যাঁটার শব্দও থেমে যায়।
থেমে গেল আমার স্মৃতিচারণও। বাস্তবে ফিরে আসি। স্নানাগারপরিচরের আহ্বানের জন্য অপেক্ষা করতে আর সহ্য হচ্ছে না। ভিজিটরস্ লন্ডন পকেটবুকে মনোনিবেশ করি। আন্ডারগ্রাউন্ডের অবস্থান মনের মানচিত্রে এঁকে নেওয়া দরকার। কিন্তু এ কী! ম্যাপে দেখা যাচ্ছে পাঁচ-ছয়টি লাইন, এক-একটি স্টেশনের গা বেয়ে একাধিক দিকে ছুটে চলেছে, টেমস নদীকে ছয় স্থানে ক্রস করে। ছয়টি সুড়ঙ্গপথ! ব্রিকলেন অঞ্চলের অধিবাসীর জন্য নিকটবর্তী পাতাল রেলস্টেশন হচ্ছে—অলগেইট ইস্ট। এখানে দুটো লাইন দেখা যাচ্ছে—একটি ডিস্ট্রিক্ট, অপরটি মেট্রপলিট্যান। অন্য লাইনের ট্র্রেনে উঠলে হয়তো অলগেইট ইস্ট স্টেশনে পৌঁছানো সম্ভব নয়; তবে কি করে বুঝব যে, এ হচ্ছে মেট্রপলিট্যান লাইন, অন্যটি নয়! এ সম্বন্ধে আমার আরও জানা ও বোঝার প্রয়োজন রয়েছে। এখন কি তাহলে বাসে যাতায়াত করা উচিত। কিন্তু বাস লাইনেও দেখা যাচ্ছে সমস্যা। নির্দিষ্ট স্থানে যেতে হলে কোন রাস্তায় কোন বাসস্টপে উঠতে-নামতে হবে তা জানা নেই, জেনে নিতে দীর্ঘ অভিজ্ঞতার প্রয়োজন। কিন্তু …।
তোমার স্নানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
স্নানাগারপরিচরের গলায় কথাগুলো ভেসে আসতেই আমার ভাবনায় যতি পড়ল। মাথা তুলে তাকাতেই দেখি, গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছে পেয়াদা যেরকম হাজির হয় সেইরকম মলিন আবরণে আবৃত্ত একটি লোক আমার সামনে এসে উপস্থিত। আগের স্নানাগারপরিচরটি এরকম ছিল না। আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটির গায়ে সাদা হাতকাটা একটি কোট, কব্জি পর্যন্ত ওয়াটারপ্রুফ গ্লাভস্—জল নিয়ে কারবার তার; পরনে ট্রাউজারস্—হাঁটুর নিচ পর্যন্ত কালো। জল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই বোধ হয় সে একজোড়া বুট পরে আছে। আঙুলে ঝোলানো বাথের চাবিগুচ্ছ টুনটান শব্দ তুলছে।
স্নানকক্ষে ঢোকার পথে স্নানাগারপরিচরকে এক শিলিং দিতেই সে থ্যাংক ইউ বলে তার কোটের পকেটে রেখে দিলো।
ইউ ওয়েলকাম বলে স্নানকক্ষে ঢুকতেই স্নানাগারপরিচরটি বলল, স্নান শেষ হলে আমাকে ডাক দিয়ো, জল বদলে দেবো।
কি বলে ডাকতে হবে?
তুমি বুঝি নতুন এসেছ। ঠিক আছে। স্নানকক্ষের নম্বর দিয়ে ডাকতে হয়। এই দেখো দেয়ালে লেখা আছে। শাট আউট দিস্ নম্বর। ওকে।
থ্যাংকস।
জলের উষ্ণতা দেখে নাও। তোমার শরীর মানবে তো? ঠান্ডা বা গরম যা চাইবে তা-ই পাবে।
ডান হাতের একটি আঙুল জলে ডুবিয়ে আন্দাজ করে নিলাম জলের তাপমাত্রা। স্নানাগারপরিচরের আন্দাজের তারিফ করতেই হয়। তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে স্নানকক্ষের দরজা বন্ধ করতেই সামনে এসে উপস্থিত হলো আরেক সমস্যা। বিব্রতকর অবস্থা। মামুজি বলেছিলেন, স্নানে যাওয়ার সময় তেল, সাবান, লুঙ্গি সঙ্গে করে নিয়ে যেয়ো।
কিন্তু কিছুই আনা হয়নি। এই দারুণ শীতে বাড়ি থেকে পা বাইরে আনাই বীরের কাজ, ক্যারিয়ার ব্যাগ সঙ্গে না থাকলে অন্ততপক্ষে হাতদুটো ওভারকোটের পকেটে গরম রাখা যায়। এখন কি করি? দিগ্বিদিগ নির্ণয় করতে পারছি না। বাষ্পের তরঙ্গ ভেঙে চলেছে গরমজলের ওপর। চকচকে সাদা বাথটাবের কিনারে মাথাকুড়ে মরছে ভিজে শীতল বাতাস। এই শীতল কুয়াশাচ্ছন্ন বাতাসের মধ্যেই ঝাপসাভাবে ভেসে ওঠে বৌদির ভরাটে গোলাপি মুখটি আবার, লাল ঠোঁটে চাপা হাসি, আমার প্রতি কৌতুক আর তুচ্ছতায় তার চোখদুটো যেন একটু কোঁচকানো। অন্তর ছমছম। বাস্তবতার কাছে অতীতস্মৃতির কোনও স্থান নেই, তবুও অতীতের কাছেই হাত পাততে হয় সমস্যা থেকে উদ্ধারের জন্য। তখনই বিদ্যুচ্চমকের মতো আমার বুকের মধ্যে গজিয়ে উঠল কোহাট জীবনের একখণ্ড স্মৃতি।
প্রাথমিক ট্রেনিং মানে লেফট-রাইট শিখছি। এক দুপুরে রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে দেখি, প্রৌঢ় গোছের একজন পাঞ্জাবি, সাদাকালো দাড়ি নেড়ে, দিব্যি স্নান করছেন উলঙ্গ হয়ে। এই উলঙ্গ দৃশ্যটি আমার চোখের সামনে দীপ্যমান হতেই আন্ডারওয়ার খুলে, চিত হয়ে সটান শুয়ে পড়ি জলবিস্তৃত বাথটাবে। দেহ মিশে গেল জলে; হয়তো-বা মিশে গেলও না, তবুও আমার দেহ ফুলের মতো পালক মেলে কর্কের ন্যায় ভাসতে লাগল। নিজের কাছে নিজেকেই হালকা মনে হচ্ছে—কী আরাম! গরমজলে এত আরাম এর আগে কখনও অনুভব করিনি; সেজন্যই হয়তো-বা দুবাহু, দুপা ছড়িয়েছিটিয়ে গরমজলের কাছে আত্মসমর্পণ করি। শরীর ভিজে ময়লাগুলো কালো সেমাইয়ের মতো পাকাতে থাকে। বুঝতে অসুবিধে হয় না, দিগম্বর হওয়ার মাঝে একধরনের অভূতপূর্ব আনন্দ নিহিত। এরকম আনন্দোভোগের জন্যই বোধ হয় জৈনসাধুরা ধর্মের নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দিগম্বর হওয়ার স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছেন। তবে সেই পাঞ্জাবি ভদ্রলোকটি তো মুসলমান, তাহলে তিনি নাঙ্গা হওয়ার স্বাদ পেলেন কোথায় থেকে? কাদের দেখে তিনি এমন প্রথা শিখেছিলেন? সঙ্গে সঙ্গেই আমার মনের পর্দায় ভেসে উঠল পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে ভর্তিকালের একটি ঘটনা।
চলবে…