
পরদেশে পরবাসী ॥ পর্ব ২৯
রমজান মাস তাই ভগ্নীপতি ফখরুল ইসলামকে অনুরোধ করি, একটি রাত থেকে যান।
অন্যত্র জরুরি কাজ থাকায় অপারগতা প্রকাশ করে যেইভাবে এলেন সেইভাবেই খালিমুখে চলে গেলেন, জিন্নাহ-টুপি মাথায় এঁটে। ভগ্নীপতিকে বিদায় দিয়ে বসারঘরে এসে বসতেই মামুজি জিজ্ঞেস করলেন, দামান্দ (জামাতা) কত দিয়ে গেল?
পাঁচ পাউন্ড।
নোটটি বের করে রেখে দিই মামুজির সামনে, সেন্টল টেবিলে। বললেন, না, তোমার কাছে রেখে দাও। পত্রিকা কিনতে তো পয়সার প্রয়োজন।
বুঝতে অসুবিধে হলো না, পত্রিকা কিনে পয়সা খরচ করা মামুজির কাছে মস্ত বড়ো অপচয় বলে মনে হচ্ছে। তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য বলি, না মামুজি, পত্রিকা আর কিনব না।
মামুজি প্রশ্ন করলেন, কেন?
আমি যে টেকনিক্যাল জবের জন্য লন্ডন তোলপাড় করে বেড়াচ্ছি, সে আশায় এখন গুড়ে বালি পড়েছে, একথা এতদিন বুঝতে পারিনি।
মামুজি আবার প্রশ্ন করলেন, কী হয়েছে?
আমার ধারণা ছিল প্রকৌশলী চাকুরি না পেলেও একটা প্রকর্মীর চাকুরি তো আমার অপেক্ষায় রয়েছে। খুঁজে বের করতে বেগ পেতে হবে না। কিন্তু বড্ড দেরিতে বুঝতে পারি, এদেশের মানুষ বিদেশিকে দিয়ে শুধু ন্যাক্কারজনক কাজ করাতে চায়। তাই প্রায়োগিক কাজে প্রায় অসম্ভব শর্ত আরোপ করে রেখেছে। কথায় বলে না—সাত মণ ঘিও হবে না, রাধাও নাচবে না।
তুমি কী বলতে চাও, স্পষ্ট করে বলো। মামুজির কণ্ঠে বিরক্তির প্রকাশ, কত মানুষের চাকুরি হচ্ছে, তোমার বেলা হবে না কেন? আর এমন কথা তুমি কোথায় পেয়েছ?
বুঝতে পারি, সল্পায়ের শ্রমিকের পক্ষে আরেকটা পেট-পালন বিরক্তিকরই তো বটে। বলি, সাধারণ মেহনতি মানুষের কাজ করতে চাইলে আমিও চাকুরি পেয়ে যাব। সপ্তাহ অতিক্রম নিশ্চয় হবে না। কিন্তু আমি চেয়েছিলাম আমার ট্রেডসংক্রান্ত একটা কাজ। যন্ত্রবিদ্যা শিখে বিলেত এসেছি, একেবারে সাধারণ যন্ত্রবিদ হতে পারব না— এমন কথা ভাবতে পারিনি। আমি শুভঙ্করের ফাঁকিতে পড়ে গেছি, মামুজি।
মামুজি সিগারেটে সুখটান দিয়ে জানতে চাইলেন, তা আবার কী?
আমার সমস্যা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করি, বলি, ইঞ্জিনিয়ারিং চাকুরির জন্য ইউনিয়নের সম্মতি প্রয়োজন। ট্রেড ইউনিয়ন অফিসে গিয়ে অবগত হই যে, তাদের সংগঠনের সদস্যপদের জন্য ট্রেড-কোম্পানির নিয়োগপত্র অত্যাবশ্যক। কেমন মজার কথা মামুজি—নিয়োগপত্র না হলে ইউনিয়নের সদস্য হওয়া যায় না, আবার সদস্য না হলে নিয়োগপত্র পাওয়া যায় না। মুরগি আগে না ডিম আগে এই সমস্যায় পড়েছি।
মামুজি কিন্তু কৌতুকের কিছুই খুঁজে পেলেন না, কপালের কুঞ্চিতরেখাগুলোই তার প্রমাণ। তার এই অকারণ অপ্রসন্ন মনের অবস্থা উপলব্ধি করে এবং তাকে আঘাত করার লোভ সামলাতে না পেরে বলি, এয়ারপোর্টের চাকুরিটা নিলেই আজ ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হয়ে অন্যত্র কাজ পাওয়া সহজ হতো।
তাহলে চলে যাও সেখানে।
তখন গেলে আমার যে অসুবিধে হতো বলে আপনার দৃঢ়বিশ্বাস ছিল, এখন গেলে সেই একই অসুবিধেয় পড়তে হবে না তার কি কোনও নিশ্চয়তা আছে?
মাস দেড়েক দেখেও যখন কাজ হচ্ছে না, তখন যা পাওয়া যায় তা-ই ধরতে হবে বই কি!
না মামুজি, ডুবন্ত মানুষই কেবল যা পায় তা আঁকড়ে বেঁচে থাকতে যায়। আপনি থাকতে নিজেকে এত অসহায় মনে করছি না।
মামুজি অপ্রস্তুত। বললেন, না, না, তা মনে করবে কেন? আমি তো তা বলিনি।
বোধ হয় মামুজি মনে মনে লজ্জা পেলেন। তাকে লজ্জার হাত থেকে উদ্ধারের বাসনায় বলি, না মামুজি, আমি ঠিক করেছি, আগামী সপ্তাহের শেষে একটা অঘটন ঘটাবই, চাকুরি একটা নেবই; আর তা যদি না পারি, তাহলে বেকারভাতার জন্য আবেদন করব। শুধু আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত শেষ চেষ্টা করে দেখব।
১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৬২। সোমবার। সকাল।
সকাল নয়টায় চল্লিশ নম্বর চেশায়ার স্ট্রিট থেকে বেরিয়ে ব্রিকলেন ধরে অলগেট ইস্টের পাতালপুরিতে প্রবেশ করি। ট্রেন ধরে পৌঁছে যাই কিংসক্রস রেলস্টেশন। ওপরে উঠতেই দেখতে পাই কয়েকটা লাল ডবলডেকার দাঁড়িয়ে আছে স্টেশনের সামনে। কিছুক্ষণ উত্তর-দক্ষিণ করে স্বদেশির মুখ না দেখতে পেয়ে রাস্তার অন্যপাশে সেন্ট পানক্রাস স্টেশনে উঠে আসি। পেয়ে যাই জানাশোনা এক স্বদেশিকে—ফতেপুরের একজনকে। তার কাছ থেকে জেনে নিই পোর্টার কাজের ফিরিস্তি, যা আমাদের দেশের রেলস্টেশনের কুলির সমতুল্য; পার্থক্য এই যে, দেশে এই কাজটি নিন্দনীয়, এদেশে তা নয়, শ্রমের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে বলেই হয়তো, বিশেষত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নিম্নশ্রেণির লোকের যে আবেষ্টনী ছিল তা চুরমার হয়ে গেছে। বেতন মন্দ নয়—উপরি আছে যাত্রীদের বক্শিস; তবে ঝাড়ু হাতে প্লাটফর্ম পরিষ্কার করতে হয়, অর্থাৎ একাধারে কুলি ও মালি। সে আমাকে জানাল, প্যাডিংটন রেলস্টেশনে স্টোরকিপারের একটি পদ খালি আছে বলে গত পরশু তাকে একজন বলেছিল। তাতে লেখাপড়া জানা লোকের প্রয়োজন বলে বাঙালি কেউ এখন পর্যন্ত চেষ্টা করেনি।
কালবিলম্ব না করে সিঁড়ি ভেঙে নিচে নেমে আসি। পাতাল রেলস্টেশনে আবার প্রবেশ করি। সার্কল লাইনের ট্রেন ধরে ইউস্টোন, গ্রেট পোর্টল্যান্ড স্ট্রিট, বেকার স্ট্রিট, ম্যারিলিবোন হয়ে প্যাডিংটন পৌঁছি। খোঁজাখুঁজি করে লেবার রিক্রুটিং অফিসে এসে উপস্থিত হতেই জানতে পারি, স্টোরকিপার চাকুরির জন্য একটা পরীক্ষা দিতে হবে, তাছাড়া অভিজ্ঞ লোক ছাড়া নিয়োগ দেবে না। আগেই আমার ভাবা উচিত ছিল, এরকম একটা সহজ চাকুরি স্থানীয় ছেলেমেয়ের জন্য সংচিতি রাখাই স্বাভাবিক। মাথার ঘাম পায়ে ফেলা কাজ ছাড়া ইংরেজ বিদেশিকে বিশেষ করে কৃষ্ণ বা বাতামি বর্ণের লোকদের চাকুরি দেবে কেন? অল্পদিনেই বুঝে ফেলেছি, কাগজকলমে, খাতাপত্রে ইংরেজ জাতির বর্ণবাদী চিহ্ন না থাকলেও বাস্তবে কিন্তু তা সম্পূর্ণ উলটো, যেন ভারতীয় সংবিধান—অর্থাৎ যেখানে রয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের কথা, সেখানে, প্রকৃতপক্ষে, বাস্তবক্ষেত্রে সমাজজীবনে এই দুটোকে খুঁজে পাওয়া ভীষণ কঠিন।
স্টেশন থেকে বেরিয়ে হাঁটতে শুরু করি, লক্ষণহীন শূন্যমনে। লন্ডনের রাস্তার ম্যাপ বের করে দেখি, যে ম্যারিলিবোন রাস্তা দিয়ে হাঁটছি এমনভাবে হাঁটলে ইউস্টোন রোডের মাথায় কিংসক্রস স্টেশনে সহজেই পৌঁছে যাব। ইউস্টোন রোড কিংসক্রস স্টেশনের মাথায় এসে তিনটা ডাল মেলে দিয়েছে। ডানদিকে যে-রাস্তাটা মুড়ো নিয়েছে তার নাম গ্রেজইন রোড। মনে পড়ল, ইন-এ ব্যারিস্টার তৈরি করা হয়। ছাত্রজীবনে সখ ছিল ল’ পড়ার, লন্ডন এসে ব্যারিস্টার হবো। তখন খুঁজ নিয়ে জেনেছিলাম গ্রেজইন, লিনকনইন, ইনার টেমপোল ও মিডল টেমপোল নামে চারটি লিগ্যাল সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল চতুর্দশ শতাব্দীর প্রথমদিকে। আইনের ছাত্রদের ব্যারিস্টারি পড়ার অনুমতি দেওয়ার একমাত্র অধিকার তাদেরই। বন্ধুরা বলত, তুই যেরকম তার্কিক, ব্যারিস্টারিই তোর জন্য উপযুক্ত পেশা। আজ ইনগুলোর কোনও একটা অফিসে আইনের গ্রন্থ এককক্ষ থেকে অন্যকক্ষে বহন করার একটা চাকুরি পেলেই রক্ষে। আমরা বাঙালি কল্পনার স্বর্গে বসবাস করতে ভালোবাসি।
একুশে ফেব্রুয়ারি ১৯৬২। বুধবার।
বেকার জীবনের তিক্ততা দিন দিন বেড়েই চলছে। নিজেকে কাঙালভিখারির মতোই মনে হচ্ছে। প্রথমদিকে আমজনতা যে শ্রদ্ধা করত তা ক্রমশে উবে গেছে। হবেই-না কেন, একটা চাকুরি যার ভাগ্যে জুটে না সে আবার বিদ্বান? এই প্রশ্নটিই ওদের মনে উদয় হয়েছে, হওয়াও স্বাভাবিক। এখনও লোক আসে তাদের কাজ বিনামূল্যে করিয়ে নিতে, তবে আগে যেভাবে সমীহ করে কথা বলত, আমার ব্যক্তিত্বের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করত, এখন তাতে ভাটা পড়েছে; হিমশীতল না হলেও উত্তাপ আর নেই, বরং চাকুরির ব্যাপারে ওরা উপদেশ দিয়ে আমাকে কৃতার্থ করে। মামুজির দয়াধর্মের ওপরই তো বেঁচে আছি, ছোটোখাটো ইচ্ছেও পূরণ করছি। মামুজি সামনে থাকলে তিনিও ওদের সঙ্গে সায় দেন। আমি সকলের কৃপাপাত্র হয়ে পড়েছি। সমাজের নিম্নতলাতেই আমার বাস, পঙ্গুর চেয়ে খুব একটা যে ভালো অবস্থায় আছি তা নয়, বড্ড লজ্জা হয়, যদিও জাবেদ ও আজরাফ আমাকে সাহস দেয়। একদিন জাবেদ বলেছিল, কত লোক ছমাস-নমাস বেকার থাকে, তাতে কী? তাড়াহুড়ো করে একটা চাকুরি নিলেই হবে নাকি? প্রথমেই ভালো দেখে একটা চাকুরি নিতে হয়, নতুবা পরে আরও উত্তম চাকুরির পেছনে তাড়া করা যায় না। খারাপটাতেই লেগে থাকতে হয়, টাকার লোভে। আজরাফ যোগ করেছিল, স্ত্রীর বেলায় এই একই কথা। প্রথমে জেনেশোনে মেজাজমরজি বোঝে বিয়ে করতে হয়। আবার একথাও ঠিক নয় যে, বাবার পছন্দের একটা মেয়েকে বিয়ে করে ফেলি, পরে ভালো দেখে আরেকটা করলেই হবে অথবা অবস্থার পরিবর্তনে জীবনসঙ্গী বদলালেই চলবে, তাতে সুখ নেই। ডাকের কথা—আগের আগ, শেষে কপালের ভাগ। প্রায় সন্ধ্যাই এমনভাবে আলাপে অতিবাহিত হয়। তাদের সিগারেট ভস্ম করি। জাবেদ যে-সন্ধ্যায় আসতে পারে না, সেই সন্ধ্যায় আজরাফ আসর সরগরম করে রাখে। আজকের সন্ধ্যা আজরাফেরই। গল্পগুজব শেষ করে তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আগামীদিনের শুভাশা নিয়ে শয্যাগ্রহণ করি। মধ্যরাত্রি, তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় স্বপ্ন দেখি—ছেলে ও মেয়ে দুটো বাড়ির খোলা মাঠে খেলা করছে। যে-রাতে ছেলে ও মেয়েকে স্বপ্নে দেখি সেই রাত্রে ভালো ঘুম হয়। আজও ভালো ঘুম হলো। সকালে তরতাজা মন নিয়ে অন্তরসাগরমাঝে নব আশায় শয্যাত্যাগ করি। ফুরফুরে হাওয়া মনোবনে, দেহটাও হালকাপাতলা লাগছে, উরু উরু ভাব।
রান্নাঘরে মামুজির কণ্ঠস্বর শোনা গেল। একসঙ্গে নাশতা করে বের হবো। মাথার ঘাম পায়ে ফেলা পরিশ্রমকালে একটু পদার্থ পেটে না থাকলে প্রানান্ত অবস্থা হয়ে যাবে। তাই গতকাল থেকে আমার সঙ্গে মামুজি সবান্ধবে রোজা ছেড়েছেন, ছুটির সময় রাখবেন বলে। আজ বাসে বা ট্রেনে চড়ব না, শুধু হাঁটব। পকেটে মাত্র দুই পাউন্ড অবশিষ্ট, তা শেষ করে দিলে সিধেই হতে পারব না।
বেড থেকে উঠে ব্রেকফাস্ট টেবিলে এসে উপস্থিত হই। এখানে আমাকে পেয়ে বসলেন আরেক উপদেষ্টা, মামুজির এক বন্ধু, বাড়িটির ইজারাদার। আজরাফের তালুই এবং ব্যবসায় অংশিদার। তিনি কিছুদিন যাবৎ আমাকে ভাগনে বলে সম্বোধন করতে শুরু করেছেন। ডিমে ভাজা একটুকরো ব্রেডের সঙ্গে দুইটুকরো আনারস মুখ গহ্বরে ফেলে বন্ধুর সঙ্গে আলাপ করছেন, যে হোটেলে চাকুরি করছেন তার নিয়মনীতি নিয়ে। লন্ডনের অন্যতম হোটেল গ্লোসটার, বড়ো লোকের আনাগোনা বেশি, একইসঙ্গে আরবি-শেখদের আস্তানা। আমার দিকে নজর পড়তেই বললেন, ভাগনে আসেন না একদিন আমাদের হোটেলে? পছন্দ লাগার মতো জায়গা। আমাদের ওখানে ব্যারিস্টার পর্যন্ত চাকুরি করেন।
জবাব দিই, ব্যারিস্টারের কাজ তো আর আমি করতে পারি না।
তিনি উৎসাহিত হয়ে বললেন, ব্যারিস্টার আমাদের হোটেলে যে-কাজ করেন তা যদি আপনাকে দিতে পারি, তবে খুশি হবেন?
তিনি মামুজির দিকে তাকিয়ে তার প্রতিক্রিয়া লক্ষ করে সন্তুষ্ট হয়েছেন বলে মনে হলো। এরই মধ্যে উভয়ের মধ্যে একটা বোঝাপড়াও হয়ে গেল। মামুজির হাত ও তার বন্ধুর মুখ স্থির। ভদ্রলোক মস্তবড়ো একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন নিয়ে আমার বদনপানে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। আর মামুজি আমার মুখ দিয়ে হ্যাঁ শব্দটি শোনার জন্য অপেক্ষায় হা করে রইলেন। এতবড়ো হাঁ—জীবনে কখনও দিখিনি। ভয় হলো— মামুজি কি আমাকে আস্ত গিলে ফেলবেন, যেভাবে ইউনুস নবিকে গিলে ফেলেছিল সমুদ্রের অতিকায় তিমি। পরিণতি অবশ্য মন্দ হয়নি। আজও বাঙালি মুসলমান সম্প্রদায় অর্থবিনিময়ে সাতজন মৌলবি হ্যায়ার করে এনে খতমে-ইউনুস পড়িয়ে নিজের বিপদমুক্ত করার ব্যবস্থা করে। মানবগোষ্ঠীর মধ্যে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকা সাধারণ ব্যাপার নয়। মাছের পেটে হযরত ইউনুস নবির অবস্থানের কথা দিগ্বিদিক বিজয় ঘোষিত হয়েছে। বিজয় বললেও কখনও জয় বলা যাবে না—হিন্দুয়ানি শব্দ কিনা! এখানে লক্ষণীয় যে, বাঙালি মুসলমান গর্ববোধ করে হযরত ইউনুস নবিকে, কিন্তু ইহুদি ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের তিনিও নবি, তবুও তাদের বিপদমুক্ত হওয়ার কোনও সুযোগ নেই. শুধু বাঙালি মুসলমান সম্প্রদায়েরই আছে। কোনও কোনও বিষয়ে দেখা যায়, মুসলমানের একচেঠিয়া বন্দোবস্ত; যেমন—স্বর্গবাসের বেলায় মুসলমান ছাড়া অন্যকারও আবেদন নাকি আমল দেওয়া হবে না। পরকালের সম্ভাব্য সর্বসম্ভোগ উপভোগ সম্ভাবনায় ইহকালে মুসলমানের সর্বনিম্ন জীবনমান—জ্ঞানবিজ্ঞানে, ধনসম্মানে, এমনকি তীক্ষ্মধী সন্তান প্রজননেও; তবে প্রণয় ও পরিণয়ে ব্রিটেনের প্রিন্সেস ম্যারগারেট আর আমেরিকার কেনেডি ব্রাদার্সস কোনও ছাড়!
কী ভাবছ, লেঙলুটের কথার জবাব দাও।
মামুজির কথায় সংবিৎ ফিরে পাই। আমার শিক্ষকের কথা স্মরণ করি, সভয়ের ভরসা লক্ষ্মী—যদি প্রাণে বাঁচি। আর হিল অলিমৌলা মেরে তনপাকপাঞ্জাতন হেজা—ভূত, প্রেতাত্মা—তাড়ানোর গ্রাম্য পিরের নসিহাত-নসিহত-নাসিহাহ (উপদেশ) নজরে আনি। কবি কাজী নজরুল ইসলামের বাণী—শির নেহারি আমারি, নত-শির ওই শিখর হিমাদ্রীর—মনে হলো। তাই শির নত করি। অতঃপর মুখ খুলি, দুঃখিত আপনার মনঃপূত কথা শোনাতে পারব না। আগেই বলেছি, ব্যারিস্টারি পড়ুয়া বিদ্যা তার আছে। কাজেই তিনি যা পারেন তা আমি করতে অক্ষম। তেমনই আমার প্রযুক্তি বিদ্যা আছে, যা তার নেই। আমার মনে হয়, আপনার ব্যারিস্টারটি আসলে বোম্বের হাজির মতো হাফব্যারিস্টার। তা না হলে তিনি কি হোটেলের পোর্টার হতে পারতেন? আর নির্লজ্জের মতো ব্যারিস্টার বলে সহকর্মীদের কাছে জাহির করতেন?
আষাঢ়মেঘাচ্ছন্ন আকাশের মতো মুখ করে বিনয়হীনভাবে মামুজির বন্ধু বললেন, ব্যারিস্টার সাহেব পারেন না, এমন কী কী আপনি পারেন?
চলবে…