
পতন
আমার মা
আমার মায়ের সবগুলি অধ্যায় স্নেহ অংকিত পৃষ্ঠা
পৃষ্ঠাগুলি আমার মুখস্ত, আমি পৃষ্ঠাগুলি বারবার পড়ি
শহরের জ্যামের মিছিল, ভাসমান শিসার স্রোত, শব্দদূষণ
এসব প্রতিদিনকার বিরক্তিকর এলফাবেটের বদলে
আমার মা একগ্লাস চাঁদের ঠাণ্ডা লেবুজলের শরবত
আমার মা কোন একটি নদী যার নিজস্ব কোন নাম নেই
অথবা বাচাল সবুজের ছোট্ট দেউরীতে একাকি তিনি
আলোহীন এক অন্ধ তাম্রনিশি, যার অন্ধত্বে দুধ-সাদা
আমার ভূত ভবিষ্যত
পতন
এই চোখ আমার না, এই সাগর তবুও কান্না
এই ভাঙন লিখছে অহর্নিশ পতনের নামতা
ঘুম-অতল ফেটে জাগো
তোমার জন্যে হৃদপাত্রে রেখেছি সূর্যমুখির কুর্নিশ
শেওলার জনপদ-এই বুক ভেঙে যাক নীল আসমান
তারাদের মুখর রাত নিয়ে খেলছে নীরব অন্ধকার
মুখোশের পাড়া
যেই জীবনের উপর এতটা কাল হেঁটে এসেছি
সেটা আমার অন্ধকার, সেটা আমার ভুলের আবাদ
আমার যে অতীত তার নাম বর্ণচোরা মুখোশের পাড়া
সেই পাড়ায় আমি ভুল করে রক্ত বীজে রোপন করেছি
গুচ্ছ গুচ্ছ প্রেমের অর্কিড অথচ সাদা অংশ ছাড়া
ডিমের একটি হলুদ কুসুমও আমার ভাগ্যে জুটেনি
সেই পাড়ায় এখন বাটপারেরা মুখোশধারী আচার্য্য
সেখানে এখন চোরের মার বড় গলা, সেই মুখোশের
পাড়া এখন একটা পাড়া, শুনেছি সেখানে এখন শুধু
বিষাক্ত ধুতুরা জন্মে, থোকায় থোকায় জন্মে…
দেয়াল
সবকিছু ভেঙে গেলে মানুষই মানুষের দেয়াল
অথচ মানুষ সাহস আর সংযমে নিয়তিকে চাষ করে
অতিক্রম করেছে অনুর্বর অতীত, জিরাফ উচ্চতা আর
চুল উল্টানো বৈরী সময়
সেই মানুষই আজ সময়ের দাস, পরিবর্তনের সূচক
কথিত সভ্যতা যার ঢাল, শিল্প যার প্রাণ ভোমরা
শিল্পের উৎপাদনশীলতার রেখাচিত্র আজ মরণমুখি
যা মানবিক বিশ্বকে উপেক্ষা করে ক্রমশ স্পর্শ করেছে
কসমোপলিটন সিটির নীল প্রহর; সেখানে টুকরো টুকরো
মাংসপিণ্ডে তারার বৃষ্টি, আগুনের ফুল, অনিশেষ
ছায়াপথ শুধুমাত্র বুর্জোয়াদের চাহিদারেখায় আঁকা।