
পতঙ্গবিলাস
সমীকরণ
যা হবার তা হয় না
মানুষ শুধু দাঁড়িয়ে থাকে
মানুষ শুধু দেখে গড়ানো জল
পথের মোড়ে কাদের গোল
কারা চায় অধিকার
চাপাতা ছিঁড়তে চায় না কারা
যাদের পেটে ক্ষুধার বান
তাদের দাবিও তারার মতো উঁচু নয়
অথচ যা হবার না হয়ে যায়
ব্যাংকের টাকা হাওয়ার পাখি হয়
দেশের টাকা সুইস ব্যাংকে উড়ে যায়
শত কোটি ঋণ খেলাপিদের দাপট
দেশটার নাকানিচোবানি
মাত্র ক’হাজার লোনে কৃষকের মাজায় দড়ি
উপরওয়ালা দুচোখে দেখে না
এক চোখের আগুনে পুড়ে যায় সব
আমজনতা দুচোখে দেখেও দাঁড়িয়ে থাকে মনোবিকারশূন্যে
ধর্ম ও রক্তপাত
ইতিহাস আছে মিশে গেছে রক্তের দাগ
ইতিহাস আছে নিভে গেছে আগুনের হাঁক।
আবার আগুন লাগে বসত পোড়ে মানুষ পোড়ে
আবার গুজব ছড়ে দাঙ্গা বাঁধে রক্ত ঝরে
ধর্মের নামে ধর্মের নামে ধর্মই ভাসে রক্তের বানে
ধর্মের নামে ধর্মের নামে ভণ্ডরা সব তরোয়াল হানে।
ইতিহাসেই সেই স্মৃতিপট
ইতিহাসেই সেই চিত্রপট
ধর্মে-বর্ণে কত জীবন হয়েছে হত
কত আরও জন বলি হচ্ছে অবিরত।
রাজনীতিও পেছনে নেই
আঘাতে রক্তপাতে সেই
জাতিতে মানুষে পৃথক করে
স্বার্থের জন্য হত্যা করে
দুটোই ছিল অদ্ভুত এক আঁধার বনে
মানুষই এনেছিল মানুষের কল্যাণে!
মেয়ে জন্ম
মেয়ে জন্মে অখুশি
সবার কাছে এখবর অনাকাঙ্ক্ষিত মেঘে ধারাপতন
ভয়ও ভীষণ
ভয়ে যান্ত্রিকভাবে সনাক্তে মেয়ে হলে তো ভ্রূণ হত্যা
আবার মেয়ে জন্মেও যদি
তবে আনন্দে সোনা সোনা বলে কেউ আর ঊর্ধলোকে তোলে না দু’হাতে।
সে হোক না পিতা-দাদা-দাদি,
প্রকারান্তরে মা নিজেও।
কারণ মেয়ে জন্মে মা-ও দোষী
পেটের দোষে নাকি মেয়ে জন্ম হয়
শ্বশুর-শাশুড়ি তো বলেই দেয়, ‘বউ’র পেটটাই মেয়েমুখ।’
আর যদি সেই মেয়ে রঙে কাল দেখতে বেঁটে কিংবা চোখে টেড়া হয়
সবার মুখে জমে অমাবস্যা।
অমাবস্যার পরে চাঁদ ওঠে
কিন্তু তাদের জন্য এ আঁধার আজন্মকালের।
তাড়াহুড়ো
এতো তাড়া কেন
সে কলে তো বাঁধা আছে পা
গৃহ ছেড়ে অপেক্ষাতে কারা আছে যেন
তারও বন্দি তো
মানুষের কেবল বন্দির সাথে
আপস করে চলে।
চলাচলে না বুঝে উঠা না বুঝেই তাড়াহুড়া করা
তাড়াহুড়ায় মানুষ স্বভাবগত।
কেনই বা তাড়াহুড়ো না
তাড়াহুড়ার ভেতরে যে উজান নদীর ঢেউ থাকে
ঢেউ এর ছলাৎ সিঁড়ি হয়ে ওঠে উঁচুতলায়
জীবন ফুরিয়ে যেতে যেতে
উঠে যেতে
কতজনের ঘর হয় বাড়ি হয় বাগান হয়
কৃতকামগুলোর চমক জ্বল জ্বল করে
পৃথিবী জুড়ে পড়ে থাকে মায়র আগুন।
এ জীবনে অত কিছু নাই বা হলো তোমাকে তো করেছি অধিকার
বন্দিঘরে উঠতে উঠতে সেই বিকেলে
তোমার কথা মনে হলেই খুশি আমি।
এ মাটি
এ মাটি কোথায় ছিল
জলে ভেসে এসে ঘর বাঁধলো শস্যভূমির।
আর সেই শস্যভূমি কত যুগ পেরিয়ে ‘পানিসাইল’ নাম নিয়ে একটি গ্রাম হলো।
ভালোবেসে বুকে রাখলো আমার জন্মসূত্রের নাভির নাড়ী।
অতঃপর আমি শক্ত পায়ে মাটি থেকে বেড়ে উঠলাম
ঠিক যেভাবে আমার বংশ পরম্পরা উঠে দাঁড়িয়েছিল।
আজ তারা নাই প্রকাশ্যে
নিয়ামানুগ অদৃশ্য হলে তাদের
মৃত্যুর সম্ভ্রম ঢেকে রেখেছে এ মাটি।
এ মাটিজল শূন্যে ছিল?
জলে ভেসে এসে মায়ের মতো প্রিয় হলো
যার বৃক্ষলতা শ্যামল ছায়া দুর্বা মাঠফসলে বুক বেঁধে আছি।
পতঙ্গবিলাস
এই পতঙ্গবিলাস জীবনে পাঠ হয় না মাটির প্রদীপ
পোড়া মাটির পাঠদান বিদ্যালয়ে
তুমুল আলোহীন আলোর চরকাচরণ
হিংসা-প্রতিহিংসায় বিভোর বিদ্যাবল
নির্বিচারে ঘরে উঠছে শেওলাআঁধার।
পাঠ্য যাদের মাটির প্রদীপ
তারা মাত্র কটি তারা মেঘে ঢাকা আকাশে
যুগে যুগে জেগে থাকে জমিনেও
তারা কেন আলো জ্বাললে উড়ে আসে পতঙ্গপাল
তবে কি সক্রেটিস, কোপার্নিকাস আরও কত মনিষীর
আত্মাদণ্ডেও আসেনি সত্যের জয়
সত্য ধারণ আজও দেখি অপরাধ!