
নাজনীন সাথীর গল্প : আমাদের সামগ্রিক জীবনের উপভাষা
একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০ নির্বাচিত ৯ গ্রন্থের আলোচনা প্রকাশ করা হল। গল্প ও কাব্যগ্রন্থ মিলিয়ে ৯টি গ্রন্থ নির্বাচন করেছি আমরা। উল্লেখ্য যে, এগুলো প্রতিকথার বাছাই এবং অভিরুচি।
গ্রন্থগুলো হল : কোথায় কোথায় ঘুমিয়েছিলাম– কবীর রানা, চোখে তার শিশিরের ঘ্রাণ– তাপস বড়ুয়া, আমি ইয়াসিন আমি বোরো ধান– বিজয় আহমেদ, জীবগণিত– আনিফ রুবেদ, জীবন এখানে এমন– মারুফ ইসলাম, ধর্ম নিরপেক্ষ বসন্ত– অনার্য নাঈম, শেকলের নূপুর- হানিফ রাশেদীন, আমাজান লিলি– নাজনীন সাথী, ভিন্ন দিনের জীবনায়ন– আকিম মহমদ।
বই : আমাজান লিলি ॥ ধরন: গল্পগ্রন্থ ॥ লেখক : নাজনীন সাথী
প্রকাশকাল : ফেব্রুয়ারি ২০২০ ॥ প্রকাশনা : প্রতিকথা ॥ প্রচ্ছদ : শিশির মল্লিক
নাজনীন সাথীর জন্ম ১১ এপ্রিল ১৯৭১ অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে। তার জন্মের পরপরই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক তার বাবা নিহত হন। পরবর্তীতে পাঁচ ভাই-বোনকে নিয়ে তার মায়ের সংগ্রাম তার মনে রেখাপাত করে। আরো পরবর্তী জীবনে সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গীতে নিজেকে পরিপালন করা সেই সাথে বাংলাদেশের মানুষের কঠিন বাস্তবতাকে সামনে থেকে দেখা তার মানস গঠনে এক ধরণের গ্লানি তৈরি করে। দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ, মানুষের প্রতি দায়বোধ থেকে নিজের ভিতরে সাজাতে থাকেন ছোট ছোট গল্পের প্লট। মানুষের নিকট নিজের মনের অভিব্যক্তি পৌঁছে দেয়ায় তার একমাত্র লক্ষ্য এবং তা মানুষেরই সাধারণ জীবন যাপন। তার গল্পে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ, শরণার্থী জীবন, বস্তি জীবন, সমাজতান্ত্রিক চেতনা, দাম্পত্য কলহ, নর নারীর প্রেম ও প্রেম সংক্রান্ত জটিলতা, সংসারের খুঁটিনাটি ইত্যাদি।
‘আমাজান লিলি’ নাজনীন সাথীর প্রথম গল্পগ্রন্থ। প্রতিকথা প্রকাশনী থেকে ২০২০ এর বইমেলায় প্রথম প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশের সমান বয়সী এই গল্পকার তার জীবনের অর্ধশত বছর বয়সে প্রথম বই প্রকাশ করলেও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, লিটল ম্যাগাজিনে তার গল্প প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থের ভূমিকাতে আন্না পুনম যথার্থই বলেছেন, “সমাজ, বাস্তবতা, প্রতিবাদ, সংগ্রাম, মেনে নেয়া ও মনে নেয়ার ধূলিচিত্র নাজনীন সাথীর আমাজান লিলি গল্প সংকলন। একজন সত্যাশ্রয়ী, নির্ভীক, স্পষ্টবাদী লেখকের প্রথম গল্প সংকলন এটি।”
মুক্তিযুদ্ধ ও শরণার্থী জীবন
যেহেতু লেখকের জন্ম মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং মুক্তিযুদ্ধে পিতার শহীদ হওয়া পরবর্তীতে পাঁচ ভাইবোনকে নিয়ে মায়ের আরেক যুদ্ধ লেখকের মনে দীর্ঘস্থায়ী রেখাপাত করেছে সন্দেহ নেই। তাই তো মুক্তিযুদ্ধ এবং নিজের জন্ম অভিজ্ঞতার নিষ্পেষণে লিখলেন ‘ফিরে দেখা ১৯ শে এপ্রিল’। গল্পটি সার্থক ছোটগল্প না হলেও নস্টালজিয়ার এক সার্থক স্টেটমেন্ট হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। সেই সময়ের অর্থাৎ ১৯৭১ সালের এক যন্ত্রণাময় সময়ের স্মৃতিকাতরতা। গল্পের মধ্যে লেখক যখন বর্ণনা করেন, ‘পথে পথে ভীতসন্ত্রস্ত মানুষ। বাড়িঘর দোকানপাট বোমারু বিমান; মালবহনের ভারে একপাশে বৃদ্ধ মা অন্যদিকে ভাতের হাঁড়ি, হোঁচট খেয়ে কান্নারত শিশু, মহাপ্রলয় সমাগত। এভাবেই মাইলখানেক চলার পর শহর ছাড়িয়ে এগোতেই সামনে এসে দাঁড়ায় অস্ত্রধারী জল্লাদরা— আমরা এখনো নারী ও শিশুদের গায়ে হাত তুলিনি।’ এরকম খণ্ড খণ্ড যুদ্ধকালীন চিত্র ফুটে উঠেছে এই গল্পে যা বর্তমান সময়ের পাঠককে নিয়ে যাবে যুদ্ধ-সময়ে।
লেখকের আরেকটি গল্প ‘অদলবদল’। গল্পের প্রেক্ষাপট নিকট অতীতের হলেও এক বৃদ্ধ নারী যখন গল্পের প্রধান চরিত্র রেহানকে বলে, ‘আমার মাঝে মাঝে মনে হয় কি জানো? শরণার্থী শিবিরে আমার ছেলেটা কারো সঙ্গে বদল হয়েছে। আমি ওর মা নই, পালন করেছি মাত্র।’ তখনই গল্পের আবেদন পাঠকের চিন্তা জগতে নতুন চিন্তার ক্ষেত্র তৈরি করে, স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে যুদ্ধকালীন সময়ের শরণার্থী জীবন, আমাদের ভাগ্য বিড়ম্বনা, আমাদের ইতিহাস।
শহর ও গ্রামীণ জীবনে টানাপোড়েন
‘আমাজান লিলি’র বেশিসংখ্যক গল্পেই শহর ও গ্রামীণ জীবনের টানাপোড়েন লক্ষ্য করা যায়। আমাদের জীবন ব্যবস্থায় এই টানাপোড়েন খুব বেশি পুরোনো নয়। ইউরোপের শিল্পবিপ্লবের ফলে মূলত এই টানাপোড়েনের সূচনা ইউরোপে শুরু হলেও বাংলাদেশে নব্বই দশকের পর থেকে বদলে যেতে থাকে গ্রামীণ প্রেক্ষাপট। বাংলাদেশের অতীত ঐতিহ্যে যে কৃষিকাজ নির্ভরতা ছিল তা শিল্প কলকারখানা স্থাপনের ফলে সেখানে এক ধরণের মাইগ্রেশন শুরু হয়। অবশ্য তারও আগে ইংরেজ শাসনামলে শিল্প বিপ্লবের পরপরই আমাদের তাঁত শিল্প তথা বস্ত্র শিল্পের যে অধঃপতন শুরু হয় তা গ্রামীণ জীবনযাপনের স্বাচ্ছন্দ্যকে ব্যহত করে। স্বাধীনতা-উত্তর নগরায়ন ও বিদেশ-নির্ভর শিল্পোৎপাদনের যে প্রক্রিয়ার সূচনা ঘটে তা নব্বই দশকের পর খোলাবাজার অর্থনীতির ব্যাপক আধিপত্যের কারণে কৃষক এবং কৃষি অর্থনীতি পুরোপুরি বাজার মুখীন হয়ে পড়ে। ফলে রপ্তানিকারক ও তার সহযোগী মধ্যসত্ত্বভোগী দালালদের দ্বারা শোষণ ও নিপীড়িত হতে থাকে। কৃষিকাজ হয়ে ওঠে কৃষকের জন্য অলাভজনক। অন্যদিকে উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন প্রচুর শ্রম শক্তি ফলে চরম পরিস্থিতি তৈরি হয় শহর ও গ্রামীণ জীবনের টানাপোড়েন। নাজনীন সাথী এই সময়ের মানুষ। সময়টাকে ভালোভাবে স্টাডি করেছেন তিনি। তাইতো তার গল্পে আমাদের এই ক্রাইসিস এক অনিবার্য সত্য হয়ে ধরা দেয়— গ্রামের ছেলে শহরে চাকরি করে, কয়েকদিনের জন্য স্ত্রী-সন্তান নিয়ে গ্রামের বাড়িতে বেড়িয়ে শহরে ফিরে যাওয়ার সময় পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের যে ধরণের মনস্তাত্ত্বিক বেদনার্ত আবহ তৈরি হয় তা যেন বাংলাদেশের এক কমন মনস্তত্ত্ব। আবার ‘দূর আকাশের সেই মেঘ’ গল্পের প্রথম লাইনে তিনি বর্ণনা, ‘লাল ইটের গাঁথুনিতে চমৎকার তিনতলা বাড়ি’। এই ‘লাল ইট’ শব্দদ্বয় আমাদের ঐতিহ্যের মধ্যে এক শহুরে তাৎপর্য বহন করে; সেইসাথে ‘আদিগন্ত বিস্তৃত ধানক্ষেত’ একইসাথে গ্রামীণ দৃশ্যের অবতারনা। এভাবেই শহর ও গ্রামের প্রকৃতি ও মানুষ পাশাপাশি চলতে থাকে গল্পের দৃশ্য পরম্পরায়। এখানেই গল্পকারের মুন্সিয়ানা। গল্প শেষ হয় আর পাঠকের মনে এক ধরণের দ্বান্দ্বিকতার সূত্রপাত হয় যা আমাদের বিষয় ও বৈচিত্র্যকে আমদের মনন দ্বারা বিশ্লেষণ করতে হয়।
সমাজতান্ত্রিক চেতনা
লেনিনের রুশ বিপ্লবের পর মূলত বিংশ শতাব্দীর বিশের দশকে লেনিন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ষাটের দশকে চীনের অবিসংবাদিত নেতা মাও সেতুং’র চিন্তাধারা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে বাম চিন্তাধারার ব্যাপক চর্চা লক্ষ্য করা যায়। পরবর্তীতে ট্রটস্কি ও এনভার হোক্সা দ্বারা বাম চিন্তা ধারার কিছুটা সংস্কার হলেও মাওবাদ আর লেনিনবাদ এই দুই চিন্তাধারার সমন্বয়ে বামপন্থার যে অগ্রযাত্রা তা বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরবর্তী প্রায় দুই দশক ব্যাপক প্রভাব বজায় রাখে। আশির দশকের শেষের দিকে বাম নেতাদের ডানের সঙ্গে একীভূত হওয়ার মধ্যদিয়ে মূলত সংকীর্ণ হয়ে যায় স্বাধীন বাংলার সমাজতান্ত্রিক চেতনা। দলগতভাবে সমাজতন্ত্রের চেতনা হারিয়ে গেলেও মানুষের মনোজগতে এই চেতনা এক আবশ্যিক প্রশ্নের ও তার সমাধানের রূপকল্প তৈরি করে রেখেছে। মানুষ নিজেই তার স্রষ্টা আর কার্ল মার্ক্স তার পথপ্রদর্শক। মানুষের এই বুদ্ধিবৃত্তিক মনোজগত অপর মানুষের মনোজগতকে প্রতিনিয়ত নাড়া দিয়ে চলেছে বিভিন্ন মাধ্যমে— সঙ্গীত, চলচ্চিত্র, গল্প, উপন্যাস, কবিতা, নাটক ইত্যাদি। গল্পকার নাজনীন সাথী বেছে নিয়েছেন গল্পের মাধ্যম। এই মাধ্যমই তার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম বলে তিনি মনে করেন। তাই তো তার গল্পের মধ্যে পাওয়া যায় সমাজতান্ত্রিক ঘ্রাণ। কোন কোন চরিত্রকে তিনি দাঁড় করিয়েছেন মনের ছবিটাকে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করার জন্য। ‘আমাজান লিলির খোঁজে’ গল্পের নায়িকা কান্তার বড় ভাই আশিক সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সাথে জড়িত। পার্টির জন্য তিনি বাড়ি-ঘর সব ছেড়েছেন। সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সভা, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সংগঠনগুলোকে একত্রিত করার জন্য একজোট করা, ইত্যাদি বিষয়গুলোতে আমরা সে সম্পর্কে এক ধরণের ধারণা পাই। ‘স্রোতের বিপরীতে’ গল্পে নেহাল যখন ইশরাতকে এগিয়ে দেয়ার প্রস্তাব করে, ইশরাত বলে— ‘তো কমরেড, আমাকে আর এগিয়ে দিতে হবে না। আমি বেশ একাই চলতে পারি’। এখানে নেহালের সমাজতান্ত্রিক চেতনাকে প্রকাশ করতে যেয়ে নারীর স্বাধীনতা ও স্বতন্ত্রবোধকে তিনি উস্কে দিয়েছেন। ‘চে’র ছবি সম্বলিত সেফটিপিন’ গল্পটি ‘আমাজান লিলি’র’ সমাজতান্ত্রিক চেতনার প্রতিনিধিত্বকারী গল্প হিসাবে ধরে নেয়া যায়।
প্রেম ও প্রেম সংক্রান্ত জটিলতা
মানুষের মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ের একটি বৈজ্ঞানিক ভিত্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন সিগমুন্ড ফ্রয়েড। তারপরও তা অবধারিত নয়। পৃথিবীর সবচেয়ে আশ্চর্য রহস্য হলো মানুষের মন। তা কখনো স্থির নয়, প্রবাহমান এবং পরিবর্তনশীল। এই পরিবর্তনশীল মনস্তত্ত্বের জন্য পৃথিবীকে বারবার বেকায়দায় পড়তে হয়েছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, পারমাণবিক বিস্ফোরণ ইত্যাদি কোন না কোন মানুষের মনস্তাত্ত্বিক বিক্রিয়ার ফলাফল আবার তা একটি আর্থ-রাজনৈতিক ব্যবস্থার দ্বন্দ্ব-সংকটের ফলাফল। এই বৈশ্বিক জটিলতাকে আমরা যদি একপাশে রেখে দিই আরেক পাশে থেকে যায় ব্যক্তি জীবন— তা নর অথবা নারীর। আর এই নর অথবা নারীর প্রেম সংক্রান্ত জটিলতার কোন বৈজ্ঞানিক সমাধান নেই। এই জটিলতা মানব সৃষ্টির আদি থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত বিদ্যমান। শশী ডাক্তার ও কুসুম-এর প্রেম এই মনস্তাত্ত্বিক জটিলতার পরিণতি (পুতুল নাচের ইতিকথা/মানিক বন্দোপাধ্যায়)। বাংলা সাহিত্য তথা পৃথিবীর সমগ্র সাহিত্যে এই ধরণের জটিলতার চিত্র পাওয়া যায়। গল্পকার নাজনীন সাথীও এই জটিলতার বাইরে নন। তাই তো তার গল্পেও এ ধরণের ঘটনা ঘটতে দেখি। যা অবধারিত তা জেনেও আমরা আশ্চর্য হই; যা জটিল তা বুঝতে পেরে আমরা বাধাগ্রস্থ হই; যা সরল তা আমাদের অনেক কিছুর অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত করে। ‘আমাজান লিলি’র’ গল্পসমূহ থেকে আমরা সেইসব অভিজ্ঞতা লাভ করি। ‘পুরোনো মেডেল’ গল্পে নিপুণ ও বিথীর হারানো দিনের প্রেম ভিতরে ভিতরে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করে। ভিতরে ভিতরে ভেঙে যায় কাঁচের গ্লাস; একই টেবিলে থাকা হয়না কখনো। ‘মনে পড়ে এক সময় নিপুণ ভাইয়ের বাবা একান্তে ডেকে নিয়ে দুই পরিবারের শ্রেণি পার্থক্যের কথা বলেছিলো। বলেছিলো যৌবনের ভাবাবেগ কেটে গিয়ে বাস্তবতার কঠিন সত্য এক সময় জ্বলজ্বল করে সামনে চলে আসবে’ (পুরোনো মেডেল)।
আবার ‘আমাজান লিলির খোঁজে’ গল্পে কান্তা-জামান-নীরার ত্রিভূজ প্রেম তিনজনকেই বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। কান্তা ও জামান স্বামী-স্ত্রী; পুরোনো প্রেম নীরা যখন সামনে চলে আসে জামান তাকেও অস্বীকার করতে পারে না। এভাবেই তৈরি মানব জীবনের জটিলতা; ফলাফল তিনজন তিন দিকে চলে যায়, মাঝখানে পড়ে থাকে শূন্যতা, টিএসসি চত্বর, জীবনের গড়িয়ে যাওয়া সময়।
জাতীয়তাবাদী গতি প্রকৃতি
গল্পকার গল্প লেখার সময় অনেক কিছু মাথায় রেখে গল্প লেখেন। কিছু কিছু বিষয়কে নাজনীন সচেতনভাবে হাইলাইট করার চেষ্টা করেছেন। সচেতন পাঠককে তা নিশ্চিত চিন্তার খোরাক যোগাবে। যেমন ‘মাঠ ভর্তি উচ্চ ফলনশীল ধান’ (আদিবা লাবিবার কমলা প্যান্ট)। এখানে উচ্চ ‘ফলনশীল’ তথা ‘হাইব্রিড’ শব্দটি এক কর্পোরেট পলিটিক্যাল চেতনা। আরেকটি গল্পে ‘বৃটিশরা আমাদের রক্তে এমনভাবে দাস্যবৃত্তি ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে যে আমরা শিক্ষিতরা চাকুরী ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেই পারি না’। এখানে ‘দাস্যবৃত্তি’ শব্দটি আমাদের জাতীয়তা বোধকে নাড়া দেয়। আমাদের মন পুনর্জাগরণের জন্য প্রস্তুত হয়ে ওঠে। এভাবেই গল্পের সাথে পাঠক রাজনীতি সচেতন হয়ে ওঠে এবং জাতীয়তাবাদী চেতনায় অগ্রগামী হয়।
প্রকরণগত ও অন্যান্য দিক পর্যালোচনা
নাজনীন সাথীর গল্প পাঠকের মনে কতদিন স্থায়ী হয়ে থাকবে তা উত্তর দেবে সময়। গল্পের স্থায়িত্ব নির্ভর করে গল্পটা কতোটা কালোত্তীর্ণ হতে পেরেছে আর তার কোন প্রকরণগত দুর্বলতা আছে কিনা? নাজনীন সাথীর গল্পে প্রকরণগত কলাকৌশলে অনেক দূর্বলতা দেখা যায়। উপমা ও রূপকের ব্যবহার আরো পরিমার্জিত হতে পারতো। অনুরূপ বিরাম চিহ্নের ব্যবহারেও বেশ দুর্বলতা লক্ষ্য করা যায়। গল্প বলার স্টাইলে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগানোর চেষ্টা আছে, কিন্তু পুরোপুরি সফল বলা যাবে না। তথাপি ‘আমাজান লিলি’ নাজনীন সাথীর প্রথম গল্পগ্রন্থ। বর্তমান ভুলত্রুটি অতিক্রম করবে পরবর্তী গল্পসমূহে; আশা করি আরো ধারালো হবে বর্ণনার ছুরি।