
দূর নিয়ন্ত্রিত প্রেম
দূর নিয়ন্ত্রিত প্রেম- ১
টেলিভিশনের পর্দায় কোন
সুন্দরী রমণী দেখলেই প্রেমে পড়ে যাই
যতক্ষণ তার দেখা মেলে-
নয়নাভিরাম দোলাচলে দুলি
সমস্ত পাশবিক রাত ভেবে ভেবে
স্বপ্নদোষের দুষ্টচক্রে ভাসি
এ কেমন দূর নিয়ন্ত্রিত প্রেম!
পরবর্তী দিন থেকে একটু একটু
বিলীন হতে থাকে; ঝাপসা হতে থাকে
গভীর সমুদ্রে হারিয়ে যাওয়া জাহাজের মতো
এভাবে ধোঁকা খেতে খেতে হাঁপিয়ে উঠি;
ভগ্ন স্বপ্নের ব্যাখ্যা খুঁজি তাবিজের কিতাবে;
তারপর একদিন নিজের টেলিভিশনকে
বিক্রি করে দিই আমার চেয়ে
বয়সে ছোট পুরুষের কাছে।
দূর নিয়ন্ত্রিত প্রেম- ২
উষ্ণতার ডালে বসে শীতল বাতাস খুঁজি
ক’জন বন্ধুর চাঁদাতোলা ভিসিআর
হিন্দি সিনেমায় রাত জেগে থাকি;
দিব্যা ভারতী, পূজা ভাট আর সরল শ্রীদেবী
কেন নায়কের সাথে সারাটা সিনেমা কাটায়?
সিনেমা শেষ হলেও প্রশ্নটা থেকে যায়
একা দুলতে থাকে চাঁদের আলো মধ্যরাতে।
আমি পূজা ভাট আর দিব্যা ভারতীকে ভাবতে থাকি
এও ভাবতে থাকি শ্রীদেবী আমার সিনিয়র নারী
আমি অজয় দেবগন আর শাহরুখ এর মতো করে
তাদের দৃষ্টিতে দৃষ্টি ফেলি বাংলাদেশ থেকে।
প্রত্যন্ত গ্রামের মাঝে ভিসিআর তখন আমাদের প্রেম।
দূর নিয়ন্ত্রিত কবিতা- ৩
মাধুরীর নৃত্যের তালে তালে দুনিয়া কাঁপে
কাঁপে জলের গভীরে থাকা পদ্মফুল
শতায়ু চোখের দৃষ্টি ঐখানে গেঁথে রাখে চোখ
ফলিত জৈব-কলা নৃত্য জালে ধরা পড়ে ভুল
মাধুরী আমার মায়া প্রস্থের এক খণ্ড অস্থিরতা
ভেঙে যাওয়া নূহের নৌকা- ঢেউয়ের আঘাতে
বিষম বাহুর মতো ভেসে থাকে জলে
উৎকণ্ঠায় ক্লান্ত নাবিক বিভোর তাহার সাথে।
তুমি দাঁড়িয়েছিলে একা
তুমি দাঁড়িয়েছিলে একা
সংসারের দিকে মুখ করে;
আমি পৃথিবীর দিকে।
মাঝখানে ছিলোনা কোন দ্বিধা
যে ঘুরিয়ে দেবে তোমার মুখটা আমার দিকে
অথবা আমারটা তোমার দিকে।
তুমি দাঁড়িয়েছিলে একা
সন্তানের দিকে মুখ করে;
আমি অর্থ ও রাজনীতির দিকে।
মাঝখানে নাই কোন সীমান্ত দেয়াল
অথবা রাষ্ট্রীয় বন্দুক আমাদের দিকে।
তুমি দাঁড়িয়েছিলে একা
মৃত্যুর দিকে মুখ করে;
আমি দয়ময় ঈশ্বরের দিকে।
মাঝখানে নেই কোন প্রার্থনা
অথবা প্রেরিত পুরুষের আবেদন।
শেষ পর্যন্ত মানুষ একা
জীবিত অথবা মৃত।
প্রশ্নবোধক
এই প্রশ্নটি ব্যকরণের নয়, জীবনের।
এক অমীমাংসিত প্রশ্নের জন্ম দিয়ে
আমাকে দার্শনিক বানিয়েছেন আমার পিতা।
শুক্রাণু হিসাবে আমার উৎপত্তি;
তারপর প্রতিস্থাপন এক মহাকালের গর্ভে;
আমার অন্ধত্ব আমাকে জানতে দেয়নি কিছুই।
সীমাহীন মহাকাশের নক্ষত্রগুলো
আমার জন্মের মতো প্রশ্নবোধক।
প্রতিটি অপ্রত্যাশিত ভবিষ্যৎ-
অন্ধের অনিশ্চিত পদক্ষেপ।
ধীরে ধীরে বড় হই আর পিতাকে প্রশ্ন করি
জীবনের উৎপত্তি কিভাবে?
পিতার কাছে কোন উত্তর নেই
মহাকালের কাছে কোন উত্তর নেই; অথবা
যার ভাষা আমার বোধগম্য নয়;
ভাষার অপরিহার্যতার সন্ধানে
জন্ম দিই গণিতের
গণিত আমাকে ছেড়ে দেয়
অগণিত সংখ্যাতত্ত্বের মাঝে;
প্রশ্ন আমাকে ঠেলে দেয় সূর্যাস্তের দিকে
তারপর অন্ধকারে ‘প্রশ্নবোধক’ শব্দটি
আমার দিকে তাকিয়ে থাকে
আমার পিতা ও মাতার দিকে তাকিয়ে থাকে।
এখনো মেলেনি দেখা
সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া
প্রতিটি নারীকে আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি;
দেখি তার গ্রীবা, চিবুক ও চোয়ালের গড়ন;
চুলের দৈর্ঘ্য, কপালের সৌন্দর্যের টান;
ভ্রুর বাঁকা চাঁদ স্টাইল;
ওষ্ঠ ও অধরের নিবিড় সম্পর্ক এবং
লিপ লাইনের অদ্ভুত ফিনিশিং আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি।
আমার সামনে দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে
সে যদি কখনো হেসে ফেলে অকপট;
আমি মুগ্ধ হয়ে সে হাসির সৌন্দর্য দেখি;
তারপর আমি নাকের ডগায়
শিশিরের মতো বিন্দু বিন্দু ঘাম
দেখার জন্য কিছুক্ষণ দাঁড়াই;
সম্মিলিত প্রতারক চক্রের কাছে
আমি প্রতারিত হই-
সকল নাকের ডগায়
বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে না;
ও রকম সৌভাগ্যবতী ক’জনের ভাগ্যে জোটে।
আমি একটু একটু করে দৃষ্টি নিয়ে যাই তার চোখের কাছে
আস্তে আস্তে ভিতরটা পড়তে থাকি
সেই প্রাচীন পাণ্ডুলিপি থেকে আজ অবধি;
চিত্রশিল্পীর মতো নিখুঁত ছবি আঁকি
আঁকতে আঁকতে থেমে যাই;
মরমী বাউলের মতো ঈশ্বর খুঁজি
এখনো মেলেনি দেখা।
অলংকরণ- মারুফ ইসলাম