
দূরবীনে ব্যাকবেঞ্চার: স্মৃতিকাতরতার ঐন্দ্রজালিক উপস্থিতি
নব্বই দশকের কিশোর-কিশোরীদের একটি বৈশিষ্ট্য হলো তারা ঐতিহ্য আর আধুনিকতার যুগসন্ধিক্ষণের রাজসাক্ষী। উন্মুক্ত খেলার মাঠ থেকে কম্পিউটার গেমে সূচনালগ্নের খেলোয়াড়। একদিকে তীব্র অনুভূতিশীলতা অন্যদিকে যান্ত্রিক প্রতিযোগিতা এই দুইয়ের মিশেলে নব্বই দশকের টিনএজ প্রজন্মের শৈশব রচিত। তৎকালীন মধ্যবিত্ত পরিবারের কিশোর-কিশোরীদের চিত্র কমবেশি একইরকম।
কিন্তু উপন্যাসে তো আর সাদামাটা জীবনের একঘেঁয়ে রচনা চলে না। সেখানে কমন কিছু উপকরণ থাকতে হয়, প্রেম, বন্ধুত্ব, রহস্য, নাটকীয়তা। হুমায়ুন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন আর কাজী আনোয়ার হোসেনের মাসুদ রানার পাঠককূল এবং এই পাঠককূল থেকে যারা লেখক হয়েছেন তাদের কাছে এসব উপকরণ খুবই প্রত্যাশিত।
লেখক অসীম হিমেলের ‘দূরবীনে ব্যাকবেঞ্চার’ বইটিতেও উপর্যুক্ত উপকরণের উপস্থিতি দৃশ্যমান। শৈশব স্মৃতির এমন তীব্রতর হাহাকার বিরলতম মনে হয়েছে। কেন্দ্রীয় চরিত্র শুভ্রর শৈশব আর বর্তমানের সমান্তরাল ঘটনার নাটকীয় পরিসমাপ্তি ঘটলেও উপন্যাসের দ্বিতীয় খণ্ডের দ্বার উন্মোচিত রয়ে গেছে।
শুভ্র আর তার বন্ধুরা প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন একটা সময়ের যখন উচ্চতর শিক্ষায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কেবল যাত্রা শুরু করেছে। বুয়েট, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ ছিল মেধা ও মননের মাপকাঠি। প্রতিটি বাবা-মা এবং তাদের শিক্ষার্থী সন্তানদের স্বপ্ন ছিল এসব প্রতিষ্ঠানে নিজের ঠিকানা খুঁজে নেওয়া। তবে এখনকার মতো তখনও সহজ ছিল না ভর্তি যুদ্ধ পেরিয়ে নিজেদের মনোমতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পাওয়া। সৌভাগ্যবান মেধাবীরা প্রথম সুযোগে ভর্তি হতে পারলেও তাদের ব্যাচমেটদের বড় অংশকে ফেলে যেতে হয়েছে দ্বিতীয়বারের ভর্তি যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য।
আলোচ্য উপন্যাসের প্রধান চরিত্রগুলো এই দ্বিতীয় যুদ্ধের যোদ্ধা। হতাশা, শুন্যতা আর অদম্য মনোবাসনাকে উপজীব্য করে প্রতিটি ক্ষণ পার করতে হয়েছে পরবর্তী ভর্তি যুদ্ধে নিজেদের শাণিত করতে। প্রেমের বিরহ আর বন্ধুত্বের দ্বন্দ্বে ছিল সময়ের সংঘাত।
হ্যাঁ, আপনি, আমি এবং আমাদের মতো অনেকেই এসব বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েই বর্তমানে উপস্থিত হয়েছি। জীবন নদীর প্রবাহ আমাদেরকে যার যার ঠিকানায় পৌঁছে দিয়েছে। দূরবীনে ব্যাকবেঞ্চার বইটিও এমন একটি নদী। বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে সুদূর আমেরিকার কুখ্যাত গুয়ান্তানোমো বে কারাগারের জীবনযুদ্ধ এবং সেখান থেকে আবারও দেশমাতৃকায় ছায়াতলে আশ্রয় নেওয়ার মায়াময় ঘটনার সাক্ষী হবেন বইটির পাঠকগণ। আর জেমস, আইয়ুব বাচ্চুর গান যাদের হৃদয়ে এখনও ঢেউ তোলে তাদেরও স্মৃতিকাতর করবে।
এবারের বই মেলায় অন্যতম বেস্টসেলার দূরবীনে ব্যাকবেঞ্চার। হার্ডকভারে মোড়ানো ১৯৮ পৃষ্ঠার বইটি প্রকাশিত হয়েছে শব্দশৈলী থেকে।