
দায়
অন্তত একবার
জোছনার রুপালি সন্ত্রাসের রাতে—
যদি কারো কাঁধে মাথা রেখে
কীর্তনখোলার জলে,
রুপালি কিরন দেখার অসীম সাধ হয়
তোমরা তাকে প্রেম বলো?
আমি বলি মরণ!
এই সুন্দর চিরচেনা জগতটা ছেড়ে যদি;
কারও হাত ধরে চলে যেতে ইচ্ছে হয়
গহীন অরন্যে,
তোমরা তাকে কি বলো ভালোবাসা?
আমি বলি সর্বনাশ!
তারপরও প্রেমিক কেবল জানে
মরার কি অপার আনন্দ!
যার সর্বনাশ হয়,
সেই জানে নিঃস্ব হবার কি পূর্ণতা।
অন্তত একবার ভালোবেসে দেখো,
বাঁচার চেয়ে মরার আনন্দ শতগুন বেশি।
দায়
যদি বলি এক বাটি জোছনা এনে দেবে?
আমি রুপালী হব,
জানি বলবে—
তুমি জোছনার চেয়েও রুপালী।
যদি এনে দিতে বলি
ধানক্ষেত থেকে একমুঠো সবুজ
আমি সতেজ হব,
জানি বলবে—
তুমি চিরসবুজ আমার কাছে!
যদি বলি দিগন্তের কিছু মায়া এনে
আমার চোখে মিশিয়ে দাও,
আমি হরিনীর মত মায়াবী হব!
তুমি বলবে—
তোমার চোখের চেয়ে মায়াবী
ত্রিভুবনে আর কিচ্ছুটি নেই!
যদি শুধাই—
ভালোবাস আমায়?
তবেই তুমি চুপ!
ভালোবাসলে যে দায় নিতে হয়,
মুগ্ধতার কোনো দায় নেই!
কান্না
কান্নায় আছে অধিকার সকলের।
নারী, পুরুষ, ছেলে, বুড়ো
যুবক, যুবতী সবার।
কান্নার অধিক সুখ
আর কিসে আছে বলো!
এই যে আমাদের অপাংক্তেয় বুলি—
পুরুষের আবার কাঁদতে আছে নাকি?
পুরুষ কি মানুষ নয়!
পুরুষকে দানব করে গড়ে তোলে মানব সমাজ।
আবার পুরুষের কাছেই
প্রেম, ভালোবাসা, মানবতা যাচে।
তোমরা কি চাও
নারীর কান্না, আর পুরুষের হাসিতে
জর্জরিত হোক মানুষের ইতিহাস?
মায়ের আঁচলে মুখ লুকিয়ে, প্রেমীর কাঁধে
মাথা রেখে কাঁদার আনন্দ পাক সবাই।
কান্নায় ভেসে যাক অপ্রাপ্তি,
ক্ষোভ আর হতাশা সকল।
কান্নার কাছেই মানুষ নামক প্রাণিটির
আরও মানুষ হবার ঋণ।
জীবনের প্রত্যাশা
আপনার প্রতি কোনো অভিযোগ নেই কমরেড।
আপনি পালিয়েছেন—
প্রেম, কবিতা, প্রথম ভোরের মৃদু-মন্দ বাতাস,
সদ্যজাত বাছুরের নাচ।
ফসলের উন্মাতাল ঘ্রাণ সব থেকে।
দেখুন কমরেড প্রেম অনেকের কাছেই আসে
কিন্তু থেকে যায় কি?
প্রেম পুঁজিবাদী ঐশ্বর্যের দারিদ্র্য মেনে নেয়,
অন্তরের দারিদ্র্যতায় প্রেমের ঘৃণা প্রকট।
তেমনি কবিতা—
ভণ্ড খেলুড়ে প্রেমিক কখনো কবি হতে পারে না।
তিনি হতে পারেন শব্দ শ্রমিক।
আপনি প্রেম, কবিতা আর সৌন্দর্য ছেড়ে
পা বাড়ালেন এক রৌদ্রময় অনন্ত কারাগারে।
আপনি জীবন ছেড়ে মৃত্যুকেই
বেছে নিলেন অনিন্দ্য জীবনের প্রত্যাশায়।
এইভাবে কেউ বাঁচে কি কমরেড!
রয়ে যাবে
যখন থাকব না আমি
থেকে যাবে ঘাসের বুকে লেপ্টে
থাকা শিশিরের প্রণয়।
থেকে যাবে প্রসারিত মধুর চাক—
জামের ঘণ নিবিড় ডালে।
কোনো দস্যু বালিকা ছুড়ে দেবে ঢিল।
মৌমাছিগুলো পাগলের মতো খুঁজবে তারে।
যেদিন চলে যাব এই রক্ত ক্লেদাক্ত জীবন ছেড়ে—
সেদিনও রয়ে যাবে অপুষ্টিতে ভোগা—
নগ্ন নিতম্ব, তরমুজ সদৃশ মোটা পেট,
মাছের ডিমের মতো লেপ্টে থাকা সর্দি ভরা নাকের
শিশুটির পরম সুন্দর হাসি।
রয়ে যাবে কর্মজীবি তরুন-তরুনীর—
পাবলিক বাসে দাঁড়িয়ে ঝুলে ঝুলে অফিসে যাওয়া।
হয়তো কোনো তরুণের অসাবধানী হাত
ছুঁয়ে যাবে তরুণীর ডাসা, পুরুষ্টু স্তন।
থেকে যাবে দলবেঁধে কোরাস গেয়ে—
ক্লান্ত পাখির নীড়ে ফেরা।
রয়ে যাবে নদীর বুকে পালতোলা নৌকার পাল।
থেকে যাবে প্রেমিক-প্রেমিকার ঘন নিঃশ্বাস।
আমিই চলে যাব—
রয়ে যাবে প্রাচূর্যে টইটম্বুর
অগনিত রুপালি পেয়ালা।