
দাগ
চাঁদ বৃত্তান্ত
চাঁদের শরীরে মাঝেমধ্যে কাতুকুতু ওঠে
কাতুকুতু উঠলে তার খুব হাসি পায়
হাসতে হাসতে বেসামাল হয়ে গড়িয়ে পড়ে সে।
এরকম হাসতে হাসতে একদিন
আকাশ থেকে হঠাৎ ছিটকে এসে
পড়ে গেলো হাতেম তাঈয়ের ছাদে
ছাদ থেকেও গড়াতে গড়াতে হারিয়ে গেল
পৃথিবীর অন্ধকারের ভেতর,
খুঁজে খুঁজে ব্যর্থ হলো ছয় ব্যাটারির টর্চ
ঘর পালানো মেয়ের মত কোনোএক পূর্ণিমার রাতে
ফিরে এসে বললো,
এতদিন আটকে ছিলাম ইঁদুর মারা কলে
ভাগ
দেশভাগের কথা মনে হলেই—
আমার চোখের সামনে একটা কবর ভেসে ওঠে
দাদা মারা গেলেন অল্প বয়সে,
ভালোবেসে উঠোনেই কবর দিয়েছিলেন দাদি
কাকা আর বাবার সম্পর্কের মতো
সহজেই ভেঙে গেল একান্নবর্তী পরিবার
তারপর ভাগ হলো—ফসলের মাঠ, বাড়ির উঠোন;
একদিন হুট করে—
কবরের মাঝ দিয়ে উঠে গেল সীমানা প্রাচীর
সেই থেকে দাদিও ভাগ হলো—কবরের মতো,
সমান ভাগে
পাঁঠা
প্রেমিক পালিয়ে গেলে ব্ল্যাকারের বউ হলো
মিনতি দাস। কোলেকাঁখে দুটো বাচ্চা রেখে
ক্রসফায়ারে মরে গেল সে বেটাও
সেই থেকে পাঁঠা পুষে সংসারের হাল ধরে সে।
পাঁঠার স্বাস্থ্য আর সক্ষমতার সুনাম
চারিদিকে ছড়িয়ে গেলে—
ব্যবসা ভালো হয়, দূর থেকেও খরিদ্দার আসে
ওভারলোড নিতে নিতে পাঁঠারও ক্লান্তি নামে,
আরও অসুস্থ হলে—
হাটবারে কিনে নেয় পাড়াতো কসাই
চামড়া বিক্রি হয়, মাংস বিক্রি হয়।
একেএকে সবকিছু ফুরিয়ে গেলে—
মাথা থেকে বেরিয়ে আসা একজোড়া চোখ
জগতের দিকে তাকিয়ে থাকে, উপহাসের মতো
দাগ
বখাটেরা মিলিত হলেই নারীর শরীর নিয়ে
কথা বলে। নারীদের থাকে স্বর্ণালঙ্কার,
কুৎসা আর স্বামীর উপরি আয়ের বিষয়।
কালো পাথরের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে
যারা সাফল্যের গল্প শোনায়
তারাও নিরবে হিসাব মেলাতে থাকে
খোলা আকাশের নিচে বসবাস ক’রে জানি—
কিভাবে শিশির আর বৃষ্টি জমে চোখে।
সকালের কাছে এই গল্প শোনাতে চাইলেই
সূর্য নেমে আসে—
রাতের অশ্রু, শিশির আর বৃষ্টির দাগ
দ্রুতই মুছে দিয়ে যায়
নিরামিষাশী
মধ্যহ্নভোজে শুয়োরের মাংস খেয়ে
গরুকে দেবতা মানেন কেউ কেউ
গোমাংস খেতে খেতে কিছু মানুষ
শুয়োরের নাম শুনলেই চমকে ওঠে,
তওবা পড়ে থাকেন
এক টেবিলে দুটোই খেয়ে বিয়ার হাতে
এগিয়ে আসেন লালন ফকিরের যিশু
আমি নিরামিষাশী, কোনটাই ছুঁই না।
তবু হঠাৎ হঠাৎ আমার হাঁড়ির মধ্যে দাঁতাল শুয়োর
আর শিঙঅলা গরু এসে হুটহাট ঢুকে পড়ে।
শিং আর দাঁতের লড়াই দেখে বেসামাল হই,
নিমিষে উল্টে পড়ে নিরামিষের হাঁড়ি
কমলালেবু
হাসপাতালের বেডে মুমূর্ষুতার সাথে
একরাত যাপন করতে যেয়েই মনে হলো—
পৃথিবী কমলালেবুময়
ডেটলের গন্ধ, মাছিদের জোটবদ্ধ ওড়াউড়ি আর
নার্সের সমস্ত সেবা উপেক্ষা করে
একঘেঁয়ে ঘুরে যাচ্ছে সিলিং ফ্যান
আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে রসালো আঙুর,
বেদানার বেদনাময় কনকনে এই শীতের রাতেও
ঘেমে যাচ্ছি আমি—
ফ্রিজ থেকে সদ্য বের করা কমলালেবুর মতো—
ঘামছে পৃথিবীও