
তীরন্দাজ
পুকুরের শীতল জলে খেলা করে যে বাতাস, শেফালীর উঠোনে এসে তা সাপ হয়। শ্বাস ফেলে দরজায়, জানালায়। টিনের গায়ে। আর ফণা তুলে ঘোরে। শেফালী তখন ট্রমার মধ্যে ঘোরে। দল বেঁধে হায়েনা আসে… কাড়াকাড়ি করে… টেনে-হিঁচড়ে অবশেষে এক গভীর কূপের মধ্যে তাকে ফেলে দেয়।
শেফালী বেঁচে থাকে। তবে তার স্বপ্নের মৃত্যু হয়। স্বপ্নের মৃত্যু হলে কেবল প্রাণে বেঁচে থাকাই মুখ্য হয়।প্রাণে বাঁচতে হলেও এ-সময় উঠে দাঁড়াতে হয়। কিন্তু বেঁচে থাকার পথ ক্রমে কঠিন হয়ে উঠে আর দূরে সরে যেতে থাকে।
একদিন অজানা গন্তব্যের দিকে বেরিয়ে পড়ে সে। অসংখ্য উৎসুক দৃষ্টি তাকে ঘিরে ধরে। সেখান থেকে সে দ্রুত সরে যেতে চায়। সমবেত উৎসুক তখন নিদারুণ মজা উপভোগ করে আর হাসতে থাকে। এ হাসি সেদিনের উল্লাস ধ্বনির মতোই তার কানে এসে বাজে। মনে হয় তাদের সমবেত হা-থেকে ফুসফুস নির্গত বিষাক্ত বাতাস তাকে লক্ষ্য করে তেড়ে আসছে। দমকা বাতাস এসে এ-সময় ওড়না উড়িয়ে নেয়। স্যান্ডেল খুলে সে তখন জোরে দৌড়াতে শুরু করে। জনসমাগম এড়িয়ে ফাঁকা পথে দৌড়াতে থাকে। দূরে বিস্তীর্ণ প্রান্তর। সেখানে এসে থামে।তারপর আবার ধূ ধূ প্রান্তরে দৌড়াতে থাকে।
দূর থেকে তখনও তাকে দেখা যায়। কৃশ অবয়ব দূর থেকে সরলরেখার ন্যায় প্রতীয়মান হয়। কৃ্ষ্ণবর্ণ কেশ উদ্দাম বেগে কালো ঝান্ডার মতো বেসামাল উড়তে থাকে। একসময় একটি কালো বিন্দু যেন দৃশ্যপট থেকে হারিয়ে যায়। আসলে অজানা শূন্যের ভেতর সে কোথায় হারিয়ে যায়। সন্ধ্যার আকাশে তখনও আঁধার নামেনি। এরপর অন্ধকার ধীরে নামে।
অতঃপর অবশেষে, অন্ধকার গভীর হলে, এক অদৃশ্য শূন্য থেকে একটি নির্বাক তীর নিঃশব্দে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসতে থাকে।
তবে, বিষিত-মস্তিষ্ক-ক্ষরিত অকল্যাণের বিষ মনুষ্য চরাচরে যে মাত্রায় ছড়িয়ে পড়েছে—তা নিষ্ক্রিয় করবে ‘এমন বিষ’ ঐ তীরের ডগায় মিশ্রিত রয়েছে কি-না, তা জানা যায় না।