
তারেক রেজার পাঁচটি কবিতা
১.
তোমার ছবির মতো ফেসবুকে আমার কবিতা
ভাবছি ঝুলিয়ে দেব—তাহলেই তৃষাতুর চোখ
অবিচল শব্দ থেকে জ্বেলে নেবে কিছুটা আলোক
সেলফি মুডের এই মাতলামি আদতেই চিতা
যৌবনের যাবতীয় স্বপ্ন তাই শরীরের কোষে
স্পর্শের সম্মতি চায় অন্তহীন ভাঙনের গানে
ক্যান্ডিড ছবির মতো প্রতীক ও চিত্রকল্প জানে
কতোটা খুলতে হয় পাঠকের মুখোমুখি বসে
কবিকে জানতে হয় কোন্খানে শব্দের আঁচল
সবচেয়ে সুখকর : উত্তেজক কতটা সরানো
গাছের আদলে তাই কবির বাগানে ধরে ফল
রুচির দোহাই : এই উচ্চারণ নিষেধ-জড়ানো
মেকাপ কেমন হলে রূপবতী কবিতার স্বর
তোমার দেহের মতো ঝড় তোলে বুকের ভেতর
২
আমার ইচ্ছের মাপে গড়া নেই তোমার স্বভাব
সুখ আর অসুখের মাঝখানে ভাগ-চিহ্ন আঁকি
কেমন জলের মতো মিলে যায় কথার জবাব
ভাষার বদলে তাই ভাবের ইঙ্গিতে কাছে ডাকি
এমন যুগল স্রোতে এক ঘাটে বেঁধে নিই নাও
পালের দড়ির মতো বাতাস আঙুল ধরে টানে
দুজনের চিঠিতেই না-দেখা ছবির মতো গাঁও
ঘরের চৌকাঠ এক—দুজনের উঠোনের মানে
প্রবাদের বরাতেই বলা যায়—সোনায় সোহাগা
চোখের ভাষার কাছে অবিকল উদ্ভাসিত মন
কবিতার কাছে তাই জমা রাখি এই ভালো লাগা
গোপন কথার মতো শিহরিত বকুলের বন
মনের কথাটি তবু জেগে থাকে ঘুমের আড়ালে
ভীষণ অচেনা লাগে তুমি এসে সামনে দাঁড়ালে
৩
কথা খুব বেশি নয়—চুপচাপ নীরবতা থেকে
দুফোঁটা জলের মতো ঝরে যাবে এর মৃদু স্বর
বেখেয়াল মনে তার ছায়ার মিনতি যাবে রেখে
এমন কিছুও নয়—যে-রকম জলের আঁচড়
ভুলে যায় কচুপাতা : বাজিকর বাতাসের মতো
আমাকে চমকে দিয়ে চলে যাবে বলে এই মন
মোটেও ভাবিত নয়—বয়স এটুকু পরিণত
করেছে বলেই আমি অনায়াসে ফুল ও চন্দন
এঁকে রাখি শূন্যতার মসৃণ কপালে আর গালে
পায়ের পাই না দেখা—সেখানেও নীলপদ্ম রেখে
হাঁটু গেড়ে বসা যায় : আরো কিছু ভেজাল মেশালে
বাঘের লেজের মতো নাগরিক মন নিয়ে বেঁকে
যায় বিশ্বাসের নদী : তবুও ভাবতে ভালো লাগে
প্রণয়ের পিটিশন আটকে আছে স্বাস্থ্য-বিভাগে
৪
জানার সীমানা নাই—অসীমের তৃষ্ণা থাকা ভালো
যা-কিছু পেয়েছি আর যার জন্য পড়ে থাকি পথে
দুদিকেই চোখ রাখি—দুর্যোগের দিন কোনোমতে
পার হলে খুঁজে নেব দুর্গতিনাশিনী সেই আলো
যার স্রোতে ভেসে যায় দুর্নিবার মুখোশের দাবি
অবরুদ্ধ শহরের পথে পথে মানুষ মিছিল
হৃদয়ের ডাক শুনে ভেঙে দেবে নিষেধের খিল
আবার জমবে মেলা—নৃত্যগীত বরণ বৈশাবি
সুদিনের আশা নিয়ে নিজেকেই নেড়েচেড়ে দেখি
অজানার ক্ষতগুলো কতদূর ছড়িয়েছে দাগ
জোড়া দেয়া জীবনের আল ভেঙে সম্প্রীতি ছড়াক
মানবিক পৃথিবীর মন থেকে মুছে দেই মেকি
সাগর-কিনারে জ্ঞানী নিউটন কুড়াতেন নুড়ি
প্রেমের দাবিতে চলো ভুবনের ঘাটে ঘাটে ঘুরি
৫
ঘুমেরও দেশ আছে—অনেকেই যখন তখন
সেই দেশ ভ্রমণের ছাড়পত্র চোখের পাতায়
এঁকে রাখে—তারপর পুলিশের সবুজ ছাতায়
দাঁড়ানোর অনুমতি : স্বাস্থ্যপ্রদ নিরাপদ জোন
এখানে জলের মতো ভাঁজ খুলে ভেসে থাকা যায়
ফুলের আড়াল থেকে হেসে ওঠে প্রিয় কোনো পাখি
সাগরের বুকে শুয়ে পাহাড়ের পথ চেয়ে থাকি
যা-কিছু পাইনি তার হাহাকার মুছে দিতে চায়
দেশের ভেতরে আরো দেশ আছে প্রাচীরবিহীন
নেই কোনো প্রতিরোধ—এখানেও পাসপোর্ট ভিসা
না থাকার অজুহাতে চোখে নেই ঘোর অমানিশা
এমন আলোর দেশ স্বপ্নে আসে—ঝলমলে দিন
ঘুমের বাগানবাড়ি কত দূর—জানে না জোনাকি
তবুও স্বপ্নের মতো দুই চোখে আলো ধরে রাখি