
জবুথবু গাছ
জবুথবু গাছ
ভরসা ভেঙ্গে গেলে একটা গাছ থাকে
জবুথবু, একা
পুরোনো চিঠিতে কোথাও লিখেছিলো
বিশ্বাস অথবা বিশ্বস্ততা
বিশ্বাস ভেঙ্গে গেলে মানুষটা থাকে
নিশ্চল, পাথর
শ্রদ্ধার দিন শেষে মন থাকে
নিরাবেগ, অসাড়
মন ভেঙ্গে গেলে জীবনটা থাকে
প্রাণহীন, নিরুত্তাপ
সব কথা শেষে কিছু কথা থাকে
অস্ফুট সংলাপ
সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে একটা খোলস থাকে
যায়মান, হিম
ঘর ভেঙ্গে গেলে একটা বাড়ি থাকে
আঁধার, শব্দহীন।
সুবর্ণ স্মৃতি
অসংখ্য দিন, মাস, বছর নিয়ে একটা জীবন
ওরই মাঝে কয়েকটা দিন, দু’চারটা সপ্তাহ
সুবর্ণস্মৃতি হয়ে থেকে যায়
যা কিছু সুবর্ণ তাতে হাত দিতে নেই
মাঝে মাঝে শুধু মনে মনে নেড়েচেড়ে দেখে নেয়া
হারানো আনন্দে ফিরে যাওয়া দীর্ঘদিবসের শেষে
সেটুকুকে চেষ্টা করে হারাবার দরকার কী
থাক না কয়েকটা দিন তাদের নিজেদের মতো জ্বলজ্বলে হয়ে
ওগুলোতে কাঁটাছেঁড়া, লালকালির দাগ দেয়া কেন
সুবর্ণ কোনোকিছুই সহজে নষ্ট হয় না; স্মৃতিও না
বাড়তি চেষ্টা লাগে তাকে নষ্ট করতে
কষ্ট করে নষ্ট করার দরকার কী!
থাক না, কয়েকটা দিন স্মৃতির মতো মিষ্টি হয়ে।
বরং বসন্তেই কেঁদো
বর্ষায় তো আকাশ কাঁদে
তোমার চোখের সবটুকু জল বর্ষায় মেশাবে কেন
বসন্তের জন্য রেখে দাও কিছুটা।
আঙ্গিনায় একটা পাতাঝরা গাছ লাগিও
ফাল্গুনে লিকলিকে পাতার আগমন দেখে কেঁদো
আনন্দের সাথী পেয়ে খুশি হবে গাছটা।
উৎসবের সবচেয়ে বড় উপহার চোখের জল
মনখারাপের কান্না ভীষণই কমন; কতকটা সংক্রামক
আনন্দের কান্নায় ফাঁকি থাকে না।
কষ্টে কেঁদেছি অনেক; হিসেব রাখিনি
আনন্দে কেঁদেছি অল্প
সেগুলো হারায় না।
নতুন নির্মাণের প্রস্তুতি
একবার খামচা খামচা চলটা খসতে শুরু করলে
সেই ছাদ সিমেন্ট-বালির পরতে আর টেকে না
যতোবার মেরামত, খসে পড়ে ততোবার।
মূল কাঠামোর সাথে বিচ্ছেদ হয়েছে
কসমেটিক মেরামত টিকবে কিভাবে!
জীবনের মূল কাঠামোর সাথে বিচ্ছেদের পরে
ফেসবুকের ছবি, শাড়ী-চুড়ি-পাঞ্জাবীর আয়োজন বেকার হয়
বেকার হয় হীরের আংটি
সম্পর্কটা তো হীরের নয়; হীরের চেয়ে দামী কিছুর।
ভাঙ্গন শুরু হলে খামচা প্লাস্টার আর ধরে রাখতে পারে না
অন্তর্লীন ভাঙ্গন সর্বস্ব গ্রাস করে; ফোকরের পরে ফোকর
চলটা ওঠার পরে উদোম রড়ে মরিচা ধরে; চূড়ান্ত ভাঙ্গনের প্রস্তুতি।
এক খামচা সিমেন্ট-বালি দিয়ে খুব কি কিছু হয়
পরেরবার চলটা খসার প্রতীক্ষা করা ছাড়া
তারচে’ হাতুড়ি-শাবলই ভালো; চূড়ান্ত ধ্বংসই হতে পারে
নতুন নির্মাণের প্রস্তুতি।
বদ্ধজল
প্লাবন ফসল ভাসায়
বাঁধ ভেঙ্গে দেয়
ক্ষেতভরা পলি তবু রেখে যায়।
পলিতে ফসল ফলে
বাঁধ গড়ে না
পরের প্লাবন তাই সহজে ভাসায়।
তবু তো প্লাবন আসে যায়।
ভবদহে প্লাবন আসে না
শক্ত বাঁধ স্রোত আটকে দেয়
জলাবদ্ধতা স্থায়ী হয়।
দিনে দিনে নদী মরে যায়
বাঁধ কেটে দিলেও স্রোত ফেরে না
বদ্ধজল একান্তে গোমরায়।
আর মানুষেরা ধানের বদলে শামুক কুড়ায়।
স্মৃতির সঞ্চয় থাক
হাওয়ায় খুলে যাওয়া দরজা ফিরতি হাওয়াতেই বন্ধ হয়ে যায়
এরই ফাঁকে ঘরে ঢোকে কিছু ধুলো আর কিছু বাতাসের সঞ্চয়।
পাখি উড়ে এসে মাচায় বসে, উড়ে চলে যায়
থেকে যায় কিছু গান আর কিছু দৃশ্য স্মৃতিময়।
না বাতাসকে, না পাখিকে আটকে রাখা যায়
জোর করলে সাবলীলতা পালায়।
আটকে থাকা বাতাসে মুক্তি থাকে না
খাঁচায় বদ্ধ পাখির কন্ঠে গান থাকে না।
হাওয়া বয়ে যাক হাওয়ার মতো; পাখি আসুক, চলে যাক
স্মৃতির সঞ্চয় থাক; থেকে যাক কিছুটা বাতাস।
অতীত-বিলাস
দেয়াল লিখনে এগিয়ে আছে এক টুকরো না-ছোঁয়া অতীত
ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তাকেই বয়ে নিয়ে যাচ্ছে একদল মানুষ
যা ছিলো না কিন্তু থাকতে পারতো তাই নিয়ে দিনমান অন্ধকার
যা আছে তা দিয়ে যা হতে পারতো, সেসব আর হয় না তাই।
তারপর হঠাৎ একদিন মন জুড়ে বৃষ্টি
বাদলার মাঝে চোখের উপরে ঝুঁকেপড়া চুল সরাতে সরাতে মনে হয়
সেই তো! সময় তো আর নেই।
কেবলি অতীতের পরে অতীত জমিয়েছি; বর্তমানের খোঁজ রাখিনি
ভবিষ্যৎ তাই ধরা হলো না আর।
বর্তমান নিয়ে খোঁজ নেবো, যখন সেটা অতীত হবে।
তখনকার বর্তমান আবার ফাঁকে পড়ে যাবে।