
গোরলিপি ও অন্যান্য কবিতা
মেলকিয়াদেস-১
অদ্ভুত মেলকিয়াদেস যে পাঠ রেখে গিয়েছিলেন,
তাতে প্রেম ছিলো না—ছিলো অসামান্য ভবিতব্য,
জানা যাবে—মানুষেরা প্রেম করবে; আর প্রেম—
চাতুর্যপূর্ণ মন্ত্রের মতো, আর ওহির মতো সব মিথ্যে গল্প—
তবু তারা স্বীকার করবে না যে—স্খলনের পর প্রেম,
অসামান্য স্মৃতির মতো অতীত আর ভবিতব্যের জীবন,
কিছু সত্যি নয়—আর সময়জ্ঞানের ভিতর
সমস্ত সমাধির গায়ে লেখা থাকবে—মেলকিয়াদেস!
মেলকিয়াদেস-২
বলেছেন, মেলকিয়াদেস মহামতি—মানুষ মূলত নবী,
তার আত্মকৃত প্রবঞ্চনার ভিতর রয়েছে প্রকৃত নবুয়্যতী…
সাত আসমান বিদীর্ণ হলে দেখা যায় মেঘবৃক্ষ,
তাতেই ফলে অলৌকিক বারি,
আর খরার ঈশ্বর নয় ততোটা ক্ষমাশীল—
এই কথা উদয় হবে তাদের মনে;
লোভ, রিরংসার নিধি বিধি মূলত রমণরসিক,
আর জীয়ন দ্যোতনা খুঁজবে তারা হননের ভিতর,
এ-ই পার্থিব রীতি কিংবা বিধিমতি—বলেছেন, মেলকিয়াদেস!
চর্যা
তারা বলবে—এ নিতান্ত চোখ; তবু, চোখের ভিতর
লুপ্ত পৃথিবীর অহংটুকু উজ্জ্বল, তারা দেখে নিতে পারে
ব্যাবিলন কিংবা হরপ্পার সূত্রহীন ঐতিহ্যের উপকথা
আর প্রাচীন জিপসি পুরাণের তালগোল, যেন মিশর,
জীবন্ত—দুলছে প্রতিরোধ-প্রতিকারহীন সম্মোহন, আর
গ্রিসীয় বিদ্যার মিথ্যে অহং মিশে আছে তার বিচিত্র অভিব্যক্তির ভিতর,
সময় সংজ্ঞার ভিতর যতোটুকু বিশ্বাসের ফাঁকি
আর আরব্য প্রবঞ্চনার নির্ণীতি তারা ভুলে যাবে এমন শ্রবণ ধ্যানে,
এমন সুরেলা গীতির বিস্তার মেলে ধরে সংসার
তার অভিজ্ঞানহীন স্মিত কলরবে, ফলত, তারা ভুল করবে—
এ তো যাদুর আয়না, কিংবা বলবে—কোনো এক সন্তের মুখ,
এ আসলে সন্তই, কোনো এক কবির সন্তান—মহামহিম গীতল উপমা—চর্যা!
অদ্বয়
এ হলো হেলেন, বললেন ঈশ্বর!
তিনি নিজ হাতে গড়েছিলেন,
আর তিনি জানালেন তিনিও প্রেমিক!
তিনি অনেকানেক পুরুষ গড়েছিলেন মুহূর্তের অন্তরে।
হয়তো কিছু অজ্ঞাত ভুল, ঈশ্বরও ভুল করেন!
বিস্ময় এক প্রেমিকের, যিনি নিজেকে পুরুষোত্তম ভাবতেন
আর ঈশ্বরকণার মতো প্রতিভা তার,
তিনি ভাবতেন, এ হলো প্রেম;
আর প্রেমিকের মতো নির্ণয়হীন অন্তরের ভেদ আছে কার!
ঈশ্বরের এমন বিস্ময়ে স্বয়ং হেলেন দ্বিধার উলুধ্বনি করেছিলেন,
ফলে, হেলেন জেনেছিলো, ঈশ্বর মূলত রমণীয়
যাকে পুরুষেরা অতীব ভালোবাসে,
আর এমন গরিমার ভিতর যা ছিলো সত্যদর্শন,
স্বয়ং ঈশ্বর বলেছেন, জগতের স্রষ্টা মূলত হেলেন,
ঈশ্বর রমণীর মতো অদ্বিতীয় গহীন,
পুরুষেরা যাকে সতত অতৃপ্ত উপাসনা করে থাকে!
বুদ্ধির ঢেঁকি
অপেক্ষা ছিলো, ভেঙে পড়বে কোনো এক ঝড়ে ঘরের পাশের আমড়া গাছ,
ফলে একটা ঢেঁকি গড়া যাবে, আর ঢেঁকি যাবে স্বর্গে তাতে ভানা যাবে ধান
এবং যদি ঢেঁকি স্বর্গে গিয়েও ভানে ধান আর জানি খোদাতালা মেহেরবান,
তাই, প্রার্থনায় স্বর্গ নয় ঝড় চেয়েছি; ঝড় এলে আমড়া গাছে ঢেঁকি,
ঢেঁকি ভানবে ধান, আর মাছের শর্তে জেলে-মেয়েকেই বিয়ে করেছি,
আর বউয়ের পূর্বপুরুষ করতেন কৃষিকাজ, ফলে তারাই করবেন স্বর্গধানের চাষ;
ফলে ঢেঁকি আর ধানের দিব্যি দিয়ে বলছি—খোদাতালা নিশ্চয় ভাতমাছ খান!
প্রবাদ
নদী আঁকা এক বাকাট্টা ঘুড়ি,
সুতোর মতো, কোথাও যেন এক নদী উড়ে যায়;
মৃত নদীর নকশায় দেখেছি তারে!
ও বেহুলা, জন্মান্তরে যদি এই নদী বেঁচে ফিরে,
থেকো তুমি অপেক্ষায় সেই নকশার কিনারে,
আর, মৃত নদীটির নকশা হারালো যদি,
এই শবের চৌহদ্দি ফিরে
তোমার ভূগোলে যেন জেগে ওঠে সেই নদী,
আর নদীর উৎসে যেন থাকে সেই হারানো খেয়াঘাট,
আর আলতা রাঙা হাত আর ঘাস রঙ কাচের চুড়ি;
আর জেনো, মানুষের গল্পে কখনো ফেরে না লখাই!
গোরলিপি
তোমরা গোরের কাছে যাবে, গোরলিপি থেকে যাবে জানা—
সমুদয় সংসার মূলত সন্তের বিবেচনা;
সে গৌরাঙ্গের বিভূতি, তোমরা বলবে—গৌর গৌর!
আর বলবে—তিনি সদা জাগ্রত, গৌর কখনো ঘুমাবে না;
আর গৌরের জানাশোনা সংসার, এ কিসের নির্ণীতি!
যদিও কেবল বিস্ময়ে কুলাবে না, ফলে, তোমরা বলবে—
নির্বাণও এক ধ্যান, শবাসনের ভানটুকু কেবল সন্তের বাহানা
আর তিনি সম্ভূত, সমাসন্ন সন্ত; প্রণয়ের প্রাণায়ম জ্ঞান যিনি শেখালেন
তার মর্মর স্মৃতির আগার এ মূলত,
আর সকল স্থিতিজ্ঞান ফলছে সতত, নিয়ত প্রস্থান ব্যঞ্জনার ভিতর!