
গালিব কিংবা আসাদ ॥ পর্ব ৬
আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করো না
আর কিছু না থাকলেও শত্রুতা তো আছে।
একটু করে ভাঁজ খুলতে থাকে নওয়াব জান। আমাকে খুলে বলতে থাকে তার নানা কথা। ছেলেবেলার এক ভালোবাসার ছেলের কথা। দোলনায় দোল খাওয়ার কথা। যে ছেলেটি চিরকুট লিখে দলা পাকিয়ে ছুড়ে দিত তার কথা। আমি কখনো উৎফুল্ল হয়ে উঠি, কখনো বা সমবেদনায় ভারাক্রান্ত হই। সরল মনে সে খুলে বলে সেসব দিনের কথা যেসব দিনে বন্ধুত্ব করার মতো তার কোনো মানুষ ছিল না।
“বান্ধবীও না।”
“ছিল। তবে শেষপর্যন্ত আর বান্ধবী থাকেনি। অবশ্য এর পেছনে একটি কারণও ছিল।”
“কারণ?”
“তার ভাই। আমাদের কয়েক শ্রেণি উপরে পড়ত। বান্ধবীর বাড়িতে গেলে সেই ভাইটি নানাভাবে উত্ত্যক্ত করত আমাকে। শুধু বান্ধবীর মুখের দিকে তাকিয়ে আমি কিছু বলতে পারিনি। তাছাড়া ধর্ষণের ভয়ও ছিল মনে।”
“ধর্ষণ?”
“হ্যাঁ। ভাইটি বলেছিল, শরীর নিয়ে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলার কথা তার বোনকে বললে সে আমাকে ধর্ষণ করবে। তার এই কুৎসিত লিপ্সায় প্রেম ছিল না। ছিল কাম, ঘৃণা আর ভয়।”
“জঘন্য।”
এই ভাইটি কখনো আমাকে একলা পেলে, হ্যাঁচকা টানে আমার হাত ধরে আমার গালে মুচড়ে-মুষড়ে লকলকে জিভটি লেপটে দিত। কী কুৎসিত ছিল সেসব ঘটনা। ওর অত্যাচারে আমার মনে ভালোবাসার অনুভূতিগুলো মরতে মরতে তীব্র ঘৃণা জন্মাতে থাকে। ওর কুৎসিত আচরণের কথা গোপন রাখতে রাখতে আমার মধ্যে মানসিক অশান্তি তৈরি হয়। মানসিক চাপের অভিশপ্ত কারণগুলো আমাকে প্রবলভাবে মনে করিয়ে দেয়- এই জীবন নিতান্তই অর্থহীন। আমি শুধু একখণ্ড রক্তমাংস। আমার জন্মই হয়েছে কেবল অন্যকে বিকৃত সুখ দেওয়ার জন্য। নিজেকে শেষ করে দিলেই মুক্তি মিলবে। আমার মা আমাকে আবিষ্কার করেন অচেতন অবস্থায়। তারপর হাসপাতাল। ধবধবে সাদা বিছানা। কিন্তু আমার মরণ হয় না। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে মাকে সবই বলে দেই। মা শোনেন বন্ধুর মতো। চুপচাপ শুনে যান। ধীরে ধীরে সুস্থতা আসে। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর আমার বান্ধবী এসেছিল দেখতে। মা সিদ্ধান্ত নেন আমাদের বাড়িতে ওর আসা নিষেধ। কিন্তু বান্ধবীটি আমাকেই দোষী বলে ঘোষণা দেয়। দরজার ফাঁক গলে বেরিয়ে আসা বান্ধবীটির অশ্রাব্য-অকথ্য শব্দে আমার চোখে জল এসে যায়। নিজেকে ভর্ৎসনা দিতে থাকি- আমি একটি অপদার্থ মেয়ে। পরক্ষণে চোখের জল রূপান্তরিত হয় আগুনে। নিজেকে শক্ত করি। অন্তরে দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে প্রতিবাদ। ছুটে গিয়ে বান্ধবীটিকে বলি, “তোর ভাই একটা নষ্ট শয়তান।” মা-ও শোনেন। তিনি আমার ঘাড়ে হাত রাখেন। এই স্পর্শটি আমার খুবই প্রয়োজন ছিল।”
নিজেকে উজাড় করে দেয় নওয়াব জান। নিঃস্ব হয়েও যে এত সুখ, জীবনে এই প্রথম বারের মতো উপলব্ধি করি। তার কাহিনি শুনে একমুহূর্তে যেন সবকিছু পালটে যেতে থাকে। তার আবেগঘন ভঙ্গিমায় নিজেকে হারিয়ে ফেলি। কোথায় কোন অজানা এক গভীরতায় ডুবে যাই। নওয়াব জান আরও কাছে এগিয়ে আসে। তার শরীরের মিষ্টিঘ্রাণে তন্ময় হয়ে চেয়ে থাকি। অনিচ্ছা সত্ত্বেও গায়ে তরঙ্গ বয়ে যায়। একটু চাপ দিয়ে হাতটা ধরে নিয়ে ক্ষণিক চোখে চোখ রাখে নওয়াব জান। সন্ধ্যা তখন ঘনিয়ে আসছে। আবার সেই বাঁধভাঙা, অব্যক্ত অনুভূতির জোয়ার। নওয়াব জান বলল, “আমি লক্ষ করেছি আপনি এখনো সহজ হতে পারছেন না।”
নওয়াব জানের চোখে স্পষ্ট অনুরাগ দেখতে পাই। “না, না তা নয়, বরং অতিরিক্ত উত্তেজনায় এমন হচ্ছে।”
“ঠিক আছে, কাল আবার দেখা হবে। এখন যেতে হবে।”
নওয়াব জানের চলে যাওয়ার দিকে তৃষিত নয়নে তাকিয়ে থাকি। রাজ্যের আলসেমি ভর করেছে আজ আমার দেহমনে। সময় যত এগিয়ে যাচ্ছে একটু-একটু করে মিলিয়ে যেতে থাকে নওয়াব জানের শরীরের ছায়া। এই ছায়াকে অনুসরণ করতে করতে মীর তকিরের বইয়ের দোকানে এসে উপস্থিত হই। নিচু টেবিলে ঘাড় গুঁজে কী যেন লিখছে মীর তকির। দরজা দিয়ে আসা একঝলক ভেজা বাতাসে মুখ তুলে তাকাল সে। বলল, “এলে তাহলে! এদিকে আমি চিন্তা করছি কী হলো? দুই দিন কোনো খবর নেই।” বইয়ের পাতা নেচে উঠল নোনা বাতাসের ইঙ্গিতে। একটা কেদারা টেনে ওর কাছে বসে পড়ি। কৌতূহল টগবগ করে ফুটে উঠেছে মীর তকিরের চোখেমুখে। “কী হয়েছে বলো তো!”
“কিছুই হয়নি।” জোর গলায় অস্বীকার করি।
“তাহলে কথা নেই, বার্তা নেই, দুই দিনের জন্য উধাও।”
একমুহূর্ত উপভোগ করি। তারপর বলি, “এত ভাবার কী আছে। মাত্র তো দুইটা দিন। একটা দস্তান লেখার কাজে ব্যস্ত ছিলাম। তাই আসতে পারিনি।”
“দস্তান! নতুন দস্তান অবশ্যি।”
“আজ্ঞে নতুন দস্তান।”
“তাহলে আমার জীবনেরও একটা দস্তান তোমাকে শোনাই।”
“শোনাও”।
“আমার জীবনের প্রথম দস্তান। প্রথম রংধনুর কথা।… ”
তখন আমার বয়স হবে বাইশ। অসুস্থতা সারার জন্য আমাকে কাশ্মিরের পাহাড় বেষ্টিত একটি অরণ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ ছিল দুনিয়ার সেরা সৌন্দর্য। চারদিকে শুধু পাহাড় আর পাহাড়। অরণ্যের কিছু দূরেই যেন হাত বাড়ালে ছোঁয়া যায়, হিমালয়ের তুষারঢাকা শৃঙ্গগুলো। এই অরণ্যেই বেগুরের সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটে। ওর নাম সত্যি সত্যিই কী ছিল তা আজ আর মনে নেই। তবে আমি তাকে বেগুর বলেই ডাকতাম। পাহাড়-দেশের মেয়ে ছিল সে। গায়ের রং ছিল একেবারে গোলাপের মতো। লজ্জা পেলে তার মুখ হয়ে উঠত ভোরের সূর্যের মতো। সারাদিন পাহাড়ে পাহাড়ে ছাগল চরিয়ে বেড়াত বেগুর। তার ছিল সরু, লম্বা নাক। চোখদুটিতে ছিল অরণ্যের গভীরতা। লম্বা, পুরু ভুরু। সে যখন হেঁটে যেত, মনে হতো, সূর্যের একটি রশ্মি। চওড়া কাঁধ। গোল হাত। তার সৌন্দর্য ছিল অভিসারিকা রাধার মতো। পাহাড়ি পথে তার হাঁটা, মাঝেমধ্যে গান গেয়ে ওঠা, মুচকি হাসি- সবই ছিল অসাধারণ। বেশ কিছুদিন দূর থেকে ওকে দেখতে থাকি। আমার ভেতরে এতদিন ধরে জমে থাকা অন্ধকারে বিদ্যুৎরেখা ঝলসে ওঠে। একদিন, দৌড়ের গিয়ে তার হাত চেপে ধরি। সে ভীতু হরিণীর মতো আমাকেই আকড়ে ধরে। পরক্ষণে একঝটকায় আমাকে ঠেলে বেগুর পালিয়ে যায়। একদিন সে নিজে থেকেই আমার সঙ্গে কথা বলতে শুরু করে। ওকে আমি আমার ভালবাসার কথা জানাই। ও খিলখিল করে হেসে ওঠে। তারপর ওড়না উড়িয়ে বলে, “তুমি তো একদিন এই অরণ্যকুঞ্জ থেকে চলে যাবে। তখন ভালোবাসার কী হবে?” বেগুর আর কিছু বলেনি। বেগুর ঠিকই বলেছিল, একের-পর-এক কুঞ্জ পেরিয়েই তো আমরা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাই।
বেগুর একদিন বলে, “তুমি আমার ওপর রাগ করে থাকবে না তো?”
“কেন?”
“ওই যে সেদিন…।”
“কী?”
“তোমাকে চুমু খেতে দিইনি।”
“সে ঘটনা আমি ভুলে গেছি বেগুর।”
“জানো, যুবকরা বলে, তোর চোখদুটি কী সুন্দর, তোর ঠোঁট দেখলে চুমু না খেয়ে থাকা যায় না। আমার এসব শুনতে ভালো লাগে না। তোমাকেও আমি ওদের মতো ভেবেছিলাম।”
“তাহলে আমি কী রকম?”
বেগুর গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে থাকে। তারপর হেসে বলে, “তুমি ওদের মতো নও।”
আরেকদিন দেখি বেগুর কুর্তার পকেট ভর্তি কী সব জিনিসপত্র। বলি, “পকেট ভরে কী এত নিয়ে চলেছ?”
“বলব না।” বেগুর বেণি দুলিয়ে হাসতে থাকে।
“বলবে না? দাঁড়াও।” আমি ওর হাত চেপে ধরে বলি, “দেখাও, কী আছে। দেখাতেই হবে।”
“ছেড়ে দাও আমাকে।”
“না, দেখাতেই হবে।”
বেগুর অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে। তারপর পকেট থেকে একের-পর-এক আশ্চর্যসব জিনিস বের করে আনতে থাকে। শুকনো বনোফুল, কয়েকটা নুড়ি পাথর, একটি পুরাতান ছবি, চুলের ফিতে। কিন্তু একটা জিনিস সে কিছুতেই দেখাতে চায়নি। হাতের মুঠোয় চেপে দাঁড়িয়ে থাকে।
“ওটা কী?”
“না দেখাব না।“
“ঠিক আছে।” আমি হেসে উঠি। “এবার যাও।”
বেগুর অনেকটা পথ চলে যাওয়ার পর ফিরে আসে। একটা গাছের নিচে বসেছিলাম। দূর থেকে হাতের জিনিসটা আমার কোলে ছুড়ে দিয়ে দৌড় তুলে। দেখি, একটা লজেনস। অবাক হই, কেন সে অমন লজ্জা পেয়েছিল লজেনসটা দেখাতে, কেনই-বা ফিরে এসে ছুড়ে দিয়ে চলে গেল। মির্জাসাহেব, সেদিনই বেগুরের সঙ্গে আমার শেষ দেখা। দুই-একদিনের মধ্যে আমিও অরণ্যকুঞ্জকে বিদায় জানাই। তবে লজেনসটা ঠিকই থেকে যায় আমার সঙ্গে। বেগুরের একমাত্র স্মৃতি।
মনের মধ্য কত কথা আছে হে দরদি বন্ধু,
কিন্তু সেগুলো ঠোঁট পর্যন্ত এসে পৌঁছোয় না।
নওয়াব জান বলল, “চলুন।” ভিড়ের মধ্যে মিশে গিয়ে আমরা পাতালস্টেশন থেকে বেরিয়ে আসি। টেমস নদী অতিক্রম করি ঝুলন্ত সেতু দিয়ে। নদীর দক্ষিণ তীরে পৌঁছতে-না-পৌঁছতেই নান্দনিক বিদ্যুৎবাতি সমগ্র অঞ্চলজুড়ে জ্বলে ওঠে। নওয়াব জান একটু কৌতূহলীভাবে তাকায়। পাশ দিয়ে কিছু মানুষ স্রোতের মতো চলে যায়। এক যুবকের পাশাপাশি চলেছে এক যুবতী। পরস্পর সুধারসহীনভাবে হাত ধরে রয়েছে, হয়তো-বা হোঁচট খাওয়ার ভয়ে। জাতীয় নাট্যশালার সিঁড়ি ভাঙতে গিয়ে হঠাৎ নওয়াব জান বলল, “দয়া করে একটু দাঁড়ান। জুতোয় বোধহয় কাঁকর ফুটেছে, পায়ে লাগছে।” নিচু হয়ে সে তার জুতোর কাল্পনিক কাঁকর সরানোর জন্য সময় নেয় খানিকটা। পাশে মূর্তিবৎ দাঁড়িয়ে থাকি আমি। একটু পর উঠে দাঁড়ায় নওয়াব জান। আবার দুই-এক সিঁড়ি উঠে সে ইচ্ছে করেই আমার হাতের সঙ্গে ছুঁইয়ে দেয় নিজের হাত। এই স্পর্শের তুলনা হয় না। আর কোনো নারীর স্পর্শ পেতেও চাই না। তারপর কেটে যায় বেশ কয়েকটা মুহূর্ত। মনে মনে বলি, যে প্রচার করে সে যদি আমাকে আটকে রাখে, প্রেমের এই পাগলামি কী আমাকে ছেড়ে যাবে। রাতে দক্ষিণ তীরের রূপ হয়ে ওঠে অন্যরকম- অপূর্ব। হঠাৎ বলে উঠি, “চলো আমরা এমন এক জাগায় গিয়ে বাস করি, যেখানে কেউ থাকবে না। আমরা ছাড়া কেউ আমাদের ভাবনা ও ভাষার অংশীদার হবে না।” নওয়াব জানকে খোশ মেজাজে দেখা যায়। তার চেহারায় কোনো উদ্বেগ নেই। অসন্তুষ্টির কোনো ছাপ নেই। অপূর্ব হয়ে উঠেছে নওয়াব জানের মুখটি। হাসিটিও। নওয়াব জানের এই মুখ, এই হাসি রেখে দিতে চাই আজীবন।
দক্ষিণ তীর থেকে ভারতীয় ধ্রুপদ সংগীত অনুষ্ঠান দেখে নওয়াব জানের বাড়ির সরু গলি দিয়ে এগিয়ে চলি। গলিটি এত সরু যে, অন্য কাউকে পথ দিতে হলে প্রাচীর ঘেঁষে দাঁড়াতে হয়। ঝমঝম বৃষ্টির মধ্যে, দীর্ঘ সরু রাস্তার নির্জনতা ভেঙে এগিয়ে চলি আমরা।
জীবনই এখানে নিয়ে এসেছে, মৃত্যুই দূরে নিয়ে যাওয়া-আসার ইচ্ছেও ছিল না আমার, যাওয়ারও নেই।
নওয়াব জানের বাড়ির সামনে পৌঁছতে একজন দরজা ঠেলে বেরিয়ে এলো। তাকে একটু দূর লাগল, পর লাগল। কিন্তু এও মনে হলো, সে আমার উপস্থিতিটা ভালো চোখে দেখছে না। তাকে প্রথম দেখে হাসিমুখে কিছু বলতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু আর একবার তাকাতেই হাসি মিলিয়ে গেল মুখ থেকে। সে বলল, লোকটি কে?
নওয়াব জান কোনো উত্তর দিতে পারল না। লোকটি বলল, “আমি অনেকক্ষণ ধরে তোমার অপক্ষো করছি। কোথায় গিয়েছিলে? কী? কী হয়েছে?”
নওয়াব জান আরও একটু দেরি করল। মনে মনে কথা সাজিয়ে নিয়ে আস্তে-ধীরে বলল, “তিনি একজন বড়ো মাপের কবি। তার সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম।”
কথাটা শুনে লোকটি একবার মাত্র তাকাল- চকিত, দ্রুত, একটু বিদ্বেষভরা দৃষ্টিতে।
লোকটি বলল, “কেন নওয়াব জান? এত বড়ো শয়তান আমি দেখিনি। নিজেকে কী ভাবব?”
নওয়াব জান বলল, “কী?”
লোকটি বলল, “আমাকে বলে গেলে কোনো সমস্যা ছিল না।”
দু-ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে নওয়াব জানের চোখ দিয়ে। সে কিছু না বলেই বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করল।
লোকটি আমাকে বলল, “এখন যান জনাব।”
আমি সিড়ি ভাঙতে শুরু করি। আলোর কাছাকাছি পৌঁছতে লোকটির গলা আবার শুনতে পাই, “কাছে আয়, কি আসবি না?”
নওয়াব জানের গলা শোনা গেল, “বললাম না, আমাকে একটু ক্ষান্ত দাও।”
“যা বলছি, কথা না শুনলে কিন্তু… ”
“কী করবে? মেরে ফেলবে। ফ্যালো। আমি আর পারব না। আমাকে ছেড়ে দাও।”
“আয়, মেরি জান। জেদ করিস না। এমন জেদ করলে তুই কী খাবি, বল্ তো?”
“আমার খাবারের দরকার নেই। না খেয়ে মরে যাব, তবুও আমাকে একটু বিশ্রম নিতে দাও।”
“তুই তা হলে আসবি না।”
“বলছি তো, না, না, না।”
“আস্তে কথা বল। কেউ শুনতে পারবে। শোন কাছে আয়। কতক্ষণ আর লাগবে? পঞ্চশ ষাট পাউন্ড পাবি।”
নওয়াব জান এবার কেঁদে ফেলল, “তোমার পায়ে পড়ছি। আজকের দিনটা আমাকে একটু বিশ্রাম নিতে দাও।”
“চুপ। কতক্ষণ লাগবে? বড়োজোর একঘণ্টা। তারপর যত পারিস বিশ্রাম নিস।”
আমি পা টিপে টিপে নিচে নেমে এলাম। ইচ্ছে করছিল, এই শহর, এই দুনিয়া ছেড়ে পালিয়ে যেতে। কিন্তু কোথায় যাব? কেনই-বা যাব? কে এই নওয়াব জান? কেনই-বা তার ওপর এমন নিষ্ঠুরতা? লোকটির সঙ্গে নওয়াব জানের সম্পর্ক কী! ইচ্ছে হলো না তার কথা আর ভাবতে।
চলবে…