
গালিব কিংবা আসাদ ॥ পর্ব ২
তাকে বিশ্বাসীর মাঝে গণ্য করো না, আনুগত্যহীন হতে দাও
ধর্ম ও বিশ্বাসের কোনো প্রেমিক কেন তার পথে অগ্রসর হবে।
বই ঠাঁসা দোকানে মীর তকির আমার কবিতার একটি খাতা উল্টে ছিল। আমি একপাশে খোলা খাতায় কবিতা লিখছি। সুরেলা এক নারীকণ্ঠ বলল, ‘আদাব।’ মীর তকির দৃষ্টি তোলে মেয়েটিকে বলল, ‘আদাব।’
মেয়েটি বলল, ‘গালিব নামে একজন কবি আছেন, তার পুরো নামটি আমার জানা নেই। তার কোনো কবিতার বই কি আপনার কাছে পাওয়া যাবে?’
চোখ তুলে মেয়েটির দিকে তাকালাম। ওড়নায় মুখ ঢাকা। অস্পষ্ট, ছায়া ছায়া দেখি তাকে।
স্বীয় মুখে মেয়েটির মুখটি দেখতে চাই। নিজের মুখের চেয়ে প্রিয় আর কী থাকতে পারে! যদিও নিজের মুখে পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে চাই, তবুও গন্ধরাজের মতো অমাবস্যার চাঁদও মাঝেমধ্যে দেখা যায়। তাই হয়তো আমার দৃষ্টি মেয়েটির ওপর থমকে দাঁড়ায়। হঠাৎ, এক বিলাতি দমকা হাওয়া এসে মেয়েটির ওড়না মাথা থেকে উড়িয়ে নিল, ঠিক তখনই আমার দৃষ্টি তার মুখে গেঁথে গেল। মনটা ভরে গেল। পাথরের মূর্তির মতো স্থির নিষ্কম্প দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। বাঁকা ভুরুর নিচে ডাগর চোখদুটো যেন নীলকান্তমণি। নাকটা টিকালো। সামান্য ফাঁক হয়ে থাকা ওষ্ঠাধর গোলাপের পাপড়ির মতো- পেলব, কোমল। তুষারশুভ্র দাঁত। যৌবন থই থই করছে। দক্ষ ভাস্করের নিপুণ হাতে খোদাই করা মুখটা। ত্বকের ধবল উজ্জ্বলতায় পূর্ণিমাও লজ্জা পাবে। তাকে দেখতে থাকি অপলক। তাকে ছুঁতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু পারছি না। এই প্রথমই বুঝতে পারছি, আমি একা থাকার মতো মানুষ নই, আমার একাকিত্বের জন্যও পাশে কাউকে প্রয়োজন। আমার নিঃসঙ্গতা যেন ভেঙে গেল। মীর তকির বলল, ’আছে। কিছু গজল আছে।’
‘গালিব কি এখানে আসেন?’ তার আগ্রহের মধ্যে উচ্ছাসও নিহিত।
‘জি, হ্যাঁ। এই নেন তার গজলের বই।’
বইটি হাতে নিয়ে মেয়েটি জোরে জোরে একটি কবিতা পড়ল, ‘আমার হৃদয়ের অবস্থা দেখে প্রথমে আমি হাসতাম, কিন্তু এখন কোনোকিছুই আমার হাসি আনেনি।’ উত্তেজনা তার শিরদাঁড়ার আলোড়ন তুলল। অত্যন্ত উৎফুল্ল মেয়েটি। তার হৃদয় যেন আনন্দে হাসছে। আড়চোখে মীর তকিরকে লক্ষ করছি। বিমূঢ় দেখাচ্ছে তাকে। মেয়েটি এখন শান্ত, স্থির। মীর তকির মেয়েটির কাছে অতি-উৎসাহে জানতে চাইল, ‘কিন্তু তার ব্যাপারে আপনি কার কাছে থেকে শুনেছেন?’
‘লোকমুখে। যদি তার সঙ্গে কখনো দেখা হতো তাহলে নিজেকে ধন্য মনে করতাম।’
সত্যি, নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি মেয়েটির চোখের নীল অপার রহস্যে। মীর তকির বললেন, ‘এই যে, তিনি এখানেই আছেন।’
‘এখানে!’ অদ্ভুত একটুকরো হাসি ফুটে উঠল রহসময়ীর ঠোঁটের ভাঁজে। আমার কী করা উচিত, বুঝতে পারছি না। তাই মাথা নাড়াই। অর্থপূর্ণ চাউনি দিয়ে মেয়েটি শুধাল, ‘আপনি? এর আগে আপনার সঙ্গে কয়েকবার দেখা হয়েছে।’
কুর্ণিশ করার ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বললাম, ‘তাই বুঝি! আপনার নাম?’
‘নওয়াব জান।’ মৃদু একটু হাসি মেয়েটির মুখে ফুটে উঠল।
বললাম, ‘বাহ, অদ্ভুত সুন্দর তো।’ আর মনে মনে নিশ্চিত হয় আমাদের বন্ধুত্বটি অনেক দূর প্রসারিত হবে। মেয়েটির সুন্দর উচ্চারণের কণ্ঠটিই সম্ভবত এটি নিশ্চিত করেছে।
‘শুকরিয়া’ বলে নিজের হাত কপাল স্পর্শ করে উত্তেজনাকে দমিয়ে কোনোমতে বিদায় নিল নওয়াব জান।
মীর তকির আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আমি মেয়েটিকে চিনি। অনেকদিন ধরে পাশের বাড়িতে থাকছে। তুমি কি দেখেছ, ওর চোখের রং কত দ্রুত বদলাচ্ছিল?’
বললাম, ‘দেবমুখদর্শনে প্রেম আরও কোমল হয়। তাই মনের দর্পণ নয়নের রং বদলায়ই।’
মীর তকির হাসতে হাসতে বলল, ‘তোমার কবিতা আসলেই অসাধারণ। তোমার সম্মতি থাকলে সে তোমার বন্ধু হবে।’
‘গালিবপ্রেম এমনই আগুন, সেখানে জবরদস্তি খাটে না। তোমার ইচ্ছা প্রেমাগ্নি জ্বালাতে কিংবা নেভাতে পারে না।’
দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল মীর তকির বলল, ‘তুমি অন্তত একজন মানুষকে সুখী করবে।’
‘ওর কি সম্মতি নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই?’
‘ওর কি অসম্মতি দেওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে? বরং তুমি তোমার সকল কাগজ জ্বালিয়ে দাও। তার বুকে মাথা রেখে চোখ বুজে থাকো। তোমার চুলে সে অদৃশ্য সব তসবির এঁকে দেবে, তখন তুমি ধীরেআস্তে ঘুমিয়ে পড়বে।’
‘জানি না কবে থেকে আমি দুর্ভাগ্যের শিকার, নিজে বিচ্ছেদমুহূর্তের হিসাব রাখি না। প্রেমিকার হাতে সুরাপাত্র কখনো আমার কাছে পৌঁছে না। তার প্রতীক্ষায় বিনিদ্র রাত্রি কাটায়, যদিও সে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েও আসে না। তাই সে শুধু স্বপ্নে আসে- মেঘাচ্ছন্ন ও চন্দ্রলোকিত রাত্রিতে।’
‘তুমি দেখছি তোমার চিন্তার চাইতেও উঁচুতে উড়ছ।’ নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললাম, ‘খোদা হাফেজ।’
এখন নিষ্ঠুরতা থেকেও বঞ্চিত আমি- হায় ঈশ্বর
একনিষ্ঠ প্রেমিকের সঙ্গে এতখানি শত্রুতা।
আজ অমাবস্যা নেমে এসেছে। চাঁদতারাকে হত্যা করছে রাস্তার কিছু মাদকসেবক আর মাতাল-উচ্ছৃঙ্খল লোকগুলো; যদিও বিলাতের রাস্তাঘাটে ধর্ষকের পায়ের আওয়াজ আর পরাজয়ের শব্দ মাঝেমধ্যে ভেসে আসছে। জীর্ণকক্ষে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকি নওয়াব জানের কথা। শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি বাইরে। পটপট আওয়াজে কাঠ পুড়ছে অগ্নিকুণ্ডে। তারপরও একটু শীত শীত লাগছে। বাইরের আলোটাও কেমন মরে আসছে। বুক ঠেলে বেরিয়ে এলো একটি শ্বাস। হঠাৎ ঠাকুরজান কুকান বেগ খাঁর কাহিনি চোখের পর্দায় ভেসে উঠল। তিনি ভারতবর্ষে এসে লাহোরের নবাবের ফৌজবাহিনীতে ভাড়াটে সৈনিক হিসেবে নিযুক্ত হন। লাহোরের নবাব অবশ্য বেশিদিন জীবিত ছিলেন না, তাই ঠাকুরজান নতুন নবাব ও মহারাজের সন্ধানে ছুঁটতে থাকেন। যখনই সিংহাসন টলোমলো করে তখনই একরাজা থেকে অন্যরাজায় ছুটে হয়, সেসব রমণীর মতো, যাদের সাক্ষাৎ পাওয়া যায় লন্ডনের লাল-অঞ্চলেও। সারা রাত্রিই তো তাদের বৈচিত্র্যস্বাদমিশ্রিত লড়াই চলে। পুরুষ দ্বারা তাদের দেহটিকে ডাঁটা-ভেঙে-রক্তপদ্মের-পাপড়ি-ছিঁড়ে-ফেলার পর, তারা বিধ্বস্ত নগ্ন হয়ে গভীরতম অন্ধকারে লাশের মতো পড়ে থাকে। কিন্তু মরে না। মত্ত হাতির পায়ের নিচেও বেঁচে থাকে। বেঁচে থাকতেই হয়। পথে অপথে একপাল পুরুষ আছে যারা তাদেরকে, অতল কৃষ্ণরাত্রির কারাগারে, তীব্রতম যন্ত্রণায় চাটে ও কামড়ায়। তাদের মতোই লড়াই করতে করতে বেঁচে থাকার জন্যই ঠাকুরজান দিল্লি এসে পৌঁছেন। আওরঙ্গজেব মোগল সাম্রাজ্যকে লাটে তোলার পর যখন কঙ্কালস্বরূপ তখন বাদশাহ শাহ্ আলমের পঞ্চাশ অশ্বারোহী সৈনিক দ্বারা দিল্লি রক্ষিত হচ্ছে। এই অশ্বারোহী বাহিনীর সেনাপতি হয়ে জায়গির পান আমার বিচক্ষণ ও পারদর্শী ঠাকুরজান। দেখতে দেখতে বাদশাহ শাহ্ আলমের দরবারে তার যথেষ্ট প্রভাব সৃষ্টি হয়। প্রতিপত্তিও। ফলে তিনি পহাসুর পরগনটি লাভ করেন। এখানেই আমার আব্বিজান জন্মগ্রহণ করেন। বেড়েও ওঠেন। তবে বাদশাহ শাহ্ আলমের দরবারে আব্বিজানের উন্নতির কোনো আশা না থাকায় তিনি ব্যথিত অন্তরে জয়পুর, লাখনৌর এবং হায়দরাবাদের নবাবদের সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। কয়েক বছরের জন্য হায়দরাবাদের নবাব নিজাম আলি খানের তিনশত পদাতিক বাহিনীর সেনাপতি ছিলেন তিনি। দিনগুলো কাটছিল মুগ্ধতায়। কিন্তু আব্বিজান সৈনিক ষড়যন্ত্রের শিকার হন। এই ষড়যন্ত্রের কথা অবশ্য ইতিহাসে লেখা নেই, লেখা থাকলেই-বা কী! আব্বিজান চলে এলেন অলোয়ারে রাজা বখতওয়ার সিংয়ের সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে।
তখনই মোগল সাম্রাজ্য শেষ হয়ে যায়।
তখনই আমার জন্ম হয়।
তার প্রায় তিন বছর পর, আমার ভ্রাতা ইউসুফের জন্ম।
তার অনেক পর আসে আমার বোন ছোট্টি খানম।
তুমি আমারই সঙ্গে আছ, যখন আর কেউও সঙ্গে নেই।
কী করে হৃদয়ের কথা বলি, মুখ তো হৃদয় থেকে পৃথক।
আজ সারাটা দিন কী এক স্বপ্নের ঘোরে কেটে গেল। বারবার মনে পড়ছে প্রথম দেখা নওয়াব জানের চাউনি। প্রেমময় দৃষ্টি। সুন্দর রমনী। ক্ষণে ক্ষণে নিঃশব্দে হাসছিল, নিজেরই অজান্তে। অনির্বচনীয় পুলকে শরীর শিরশির করছিল। তার চোখে সুরমা ছিল। চোখের পাতায় ছিল সোনালি রঙের প্রলেপ। রত্নখচিত কাঁচের সাহায্যে বাগে এনেছিল অগ্নিশিখার মতো চুলগুলোকে। আঙুলে ছিল আংটি, কানে ঝুমকো, গলায় মুক্তোর মালা। পরিপূর্ণ গোলাপ হয়ে উঠেছিল সে, গোলাপি রঙে ঠোঁট রাঙিয়ে। শরীরে বেয়ে ঝড়ে পড়ছিল সুগন্ধী। চোরা চাউনিতে উপভোগ করছিলাম তাকে। নারী জাতির মধ্যে সম্পূর্ণ অচেনা, নতুন কোনো প্রজাতির সঙ্গে যেন আমার পরিচয় ঘটেছিল। নওয়াব জানের কথা ভাবতে ভাবতেই বাঁকের-পর-বাঁক ভেঙে থমকে দাঁড়াই আমি। আচমকা সামনে এসে দাঁড়ায় নওয়াব জান। দৃষ্টি স্থির হয় তার সরু ও সুন্দর গলায়, যা এখন শূন্য। দুটি ছোটো কানফুল বিলাতি ঝাপসা আলো-অন্ধকারে ঝলক দিচ্ছে শুধু। মৃতবৎ দাঁড়িয়ে থাকি কিছুক্ষণ। যন্ত্রণাকাতরতায় আচ্ছন্ন আমি। বিষমিহিকিঙ্কিণী ধ্বনি যেন হৃদয়ে। নাকে নওয়াব জানের গন্ধ। কিন্তু তার শরীর যেন বরফবৎ। কিন্তু চোখে আবেগানন্দের অশ্রু। কী সুন্দর তার দেহভঙ্গি! কী অসাধারণ! কী উদার অপার্থিব নিঃসঙ্গ ক্ষুদা তার দৃষ্টিতে। নওয়াব জান কম্পিত কণ্ঠে বলল, ‘আপনি কী সব সময়ই অত্যন্ত শান্ত থাকেন?’ আমি চিন্তামগ্ন থাকায় সে যোগ করল, ‘আপনার কী কিছুই বলার নেই!’
মোচড় দিয়ে ওঠে প্রাণ। নিশ্চুপে নিঃসঙ্গ চিন্তাগুলো বিলাতি প্রাচীর ভেঙে বেরোনো পথ খুঁজছে। এই জগতের পাহাড়চূড়ায়ই তো নওয়াব জান। ওর দীর্ঘ চুলগুলো বাতাসে উড়ে আকশকে হরিণের মতো করে ফেলেছে। বললাম, ‘কিছু কথা আছে যা আমার মুখকে করে রাখে পাথরবৎ।’
চারদিকে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। বিলাতি মানুষের উচ্ছ্বাস পদধ্বনির মধ্যেও কুয়াশা- জমাট বাঁধা কষ্ট- জমতে থাকে। উদ্ভ্রান্তের মতো মানুষের রক্তের ধর্মও সন্ধ্যার সমান্তরালে স্থিত। চারদিকে শান্ত স্তব্ধতা। নিষ্ক্রিয় চোখে নওয়াব জান বলল, ‘সামান্যতম প্রশ্নের উত্তর দিতেও আপনি কাব্য করে কথা বলেন।’
‘আমি জীবনভর যাকে খুঁজে চলেছি, সে যদি অন্যের প্রেমে পড়ে, তাহলে আমি সমুদ্রজলে মিশে যাব।’
‘আপনি যদি তাকে ছেড়ে যান?’
‘সে তো যাবই। এই প্রথিবীর কোথাও আমি থাকতে আসিনি। তবে কেন আমাকে নিয়ে এই অহর্নিশ খেলা।’
নওয়াব জান শুধাল, ‘আবারও কাব্য। লাটিমের মতো মাথায় ঘুরছে।’
‘অথচ অবচেতন মনে স্বপ্ন থেকে যায়। প্রেমের স্বপ্ন, অদেখা প্রেমের স্পর্শ। প্রকৃতির প্রসাদ সত্যিই আছে গালিবের হৃদয়ে।’
‘কাব্য ছাড়া আপনার অন্যকোনো দিকে তাকানোর নেই।’
‘আমি এমন এক স্থানে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে নিজের খবরই রাখা যায় না।’
আমার অপসৃয়মান অবয়বের দিকে তাকিয়ে নওয়াব জানের কী যেন একটা ঘটে গেল তার অজান্তেই। আগে কয়েকবার দেখা মেয়েটি যেন চট করে অচেনা লাগল। নওয়াব জান অন্যসব মেয়ের মতো নয়। অকারণে কথা বলে না, হো হো করে হেসেও ওঠে না। সে বলল, ‘প্রতি শুক্রবার রাতেই আমার বাড়িতে মাহফিলের আয়োজন করা হয়। একবার এলে ধন্য হবো। আপনার তো জানাই আছে আমার বাড়ি কোথায়!’
পৃথিবী অনেক বিশাল- এই বোধটা প্রবল হতে থাকে আমার মধ্যে। দূরের রাস্তায় উড়তে থাকা কুয়াশার দিকে তাকিয়ে গোধূলিলগ্নের ইংরেজি চলচ্চিত্রের নায়কের মতো মেয়েটির জন্য প্রার্থনা করি; আর মনে মনে বলি, ও না-ই-বা হোক আমার তাতে কিছু যায়-আসে না, তবে প্রত্যাশা- সে যেন জীবনে সঠিক মানুষটির দেখা পায়। পৃথিবীতে সবার জন্য প্রেম-ভালোবাসা নয়, কেবল সৌভাগ্যবানরাই সেটির দেখা পায়, আর বাদবাকিরা বিরহে কাটায়। জীবন তো আর ইংরেজি চলচ্চিত্র নয়। বাস্তব জীবনে ছন্দতালে বাঈজির নৃত্যগীতের দৃশ্য তৈরি হয় না, বরং প্রেম-ভালোবাসা বিপজ্জনকই হয়ে ওঠে।
আমি যখন ভাবনায় লিপ্ত তারই মধ্যে মেয়েটি বিদায় নিল। রাস্তা ভাঙতে ভাঙতে আবৃত্তি করতে থাকে, ‘আমাকে প্রেমিকদের দলে গণ্য করো না, আমাকে অপ্রেমিক থাকতে দাও। প্রেম ও ভালোবাসা যেপথে প্রবল সেপথে আমাকে নিয়ে যেয়ো না।’ দূর থেকে দেখতে পারছি, তার চলনভঙ্গিতে প্রতিফলিত হচ্ছে আবেগ, প্রেম ও কামনা। মনে মনে বলি, এ কেমন আহ্বান যা বন্ধুকেই যন্ত্রণায় বিদগ্ধ করে, দুঃখের কথা কার কাছে বলব আমি।
চলবে…