
গভীর চোখ ও উজ্জ্বল তারার গল্প
অশুদ্ধ নরক
চোখে রোদ্দুর নিয়ে বসে আছি
অথচ থাকার কথা ছিল অবাধ বর্ষণ।
পাহাড় কিনতে না পারায় রক্তাক্ত পায়রার মতো
ক্ষত বিক্ষত হয়েছে একটি নদী।
তবুও গাবের কষ ভুলে এক সবুজ দীঘির পানে তাকিয়ে
কাটছে সাত হাজার সাতশো রাত্রি।
আমার তবুও কেন মরে যেতে ইচ্ছে করে!
তবুও কেন অশুদ্ধ আত্মায় ঘৃণা হয়
তবুও কেন প্রতারক প্রেমে মন ডোবে
কেন মনজুড়ে দানা বাধে হাজার দুঃখের ভ্রুণ
একটা সবুজ জলের লেক, একটা ব্রিজ,
নিজস্ব চাঁদ মাখা ঠোঁট, তার হাসি আর
বটের বিনুনি রাত-ভোরে আমাকে ছুঁয়ে যায়।
এরপর দহনে দগ্ধ দিন।
পৃথিবীতে অন্ধকার নেমেছে।
নেমেছে সহস্রকালের পাপের অভিশাপ।
ক্ষুধার্ত পেটের অভিশাপ,
সাগরের তিমিদের অভিশাপ,
বনের বাঘ-হরিণদের অভিশাপ,
বিলের পাশে উড়ে যাওয়া সাদা বকের অভিশাপ।
কার্বনে পুড়ে যাওয়া নগরের অভিশাপ।
অভিশাপের জাহাজে আমি এক অশুদ্ধ নরক।
এখন মৃত্যু ভুলে গেছি।
রাজ্যে হায়েনার হানা
রাজ্যে করোনার ভয়াল থাবা
দুয়ারে দুয়ারে দুরত্বের শিকল।
আটার প্যাকেটের ওপাশ থেকে বেড়িয়েছে
তেলাপোকা, ছারপোকা আর কিছু হিংস্র হায়েনা।
তাদের পেটে পেটে দুর্নীতির জাল।
ঘরে চাল নেই, শরীরে প্রাণ নেই
শহরের অলিতে গলিতে মৃত্যুর মিছিল
তবুও তাদের হাতগুলো করে চাল চুরি,
কালো হাতে ক্ষত বিক্ষত হয় তরুণীর শরীর।
কেউ কেউ টকশোতে বুলি ফোটায় ঠিকই
আর নকলে নকলে ভরায় মানচিত্রের জাহাজ।
ভেতরের কালো মগজ সময়ের আয়নায়
ঠিকই ভাসে রেইন লিলির মতো।
এসব হায়েনা, কুত্তা-কামিনিদের শরীরে বসাও বিষের কোদাল,
গলায় ঝোলাও সতেরো কোটি জুতার মালা, ঘৃণার তাবিজ।
মা
আমার মা জানেন সংসারের দৈর্ঘ্য প্রস্থ
জানেন তেল, নুন মসলার বাটিগুলোর মাপ।
বুকে পাথর রেখে হাসি বিলি করার নামতাও
কেবল মা জানেন।
আমার মায়ের দৈব শক্তি আছে জানেন,
তিনি কখনো অসুস্থ হন না।
ঘরের সবার মৌসুমি জ্বর হয়, ঠান্ডা লাগে, মন খারাপ হয়,
কিন্তু মায়ের কিছুই হয় না।
মাঝে মাঝে আমার পুরনো দুঃখগুলো
গরম তেলের মতো তেজ দেখালে
মা সেখানেও মমতার পরশ বুলিয়ে দেন।
আমাকে শেখান- কিভাবে বিষাদের চোখগুলোকে-
সেলাই করতে হয়।
শেখান—কিভাবে প্রচণ্ড ঝড়ে ভয় না পেয়ে—
নিজেকে শান্ত রাখতে হয়।
মা বরাবরই আমাকে স্বপ্ন দেখতে বলেন,
অনেক অনেক বড় স্বপ্ন।
আমার স্বপ্ন আর সফলতাগুলোকে তিনি বুকে টেনে নেন।
কিন্তু মায়ের আলাদা কোনো স্বপ্ন নেই।
অথচ একদিন তিনি আকাশ হতে চাইতেন,
কখনো কখনো পাখি হয়ে পুরো আকাশজুড়ে
বিচরণ করতে চাইতেন।
আজ মা কেবলই বাবার শাসন, চোখ রাঙানো,
সংসারের অভাব, সমাজের সংকীর্ণতা সহ্য করার মতো
একটি মাটির পুতুল।
যা সাতাশ বছর আগে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শক্ত করা হয়েছিল।
গভীর চোখ ও উজ্জ্বল তারার গল্প
একটা গভীর চোখ
ঠিক কপালের মাঝখানে উজ্জ্বল হয়ে জ্বলছে।
সে জানে, এক জীবনে এক হাজার তিনশত নদী। অসংখ্য চূড়া।
জানে, ঠাঁ ঠাঁ রুদ্দুরে প্রচণ্ড পিপাসা নিয়ে দৌঁড়ায় মধ্যবিত্তফুল।
চলতে চলতে পথের কাটায় রক্তাক্ত হয় পা
তবুও হেঁটে যায়, হাঁটতে হয়।
সে জানে একটি নতুন আলোর খবর।
কানে কানে বলে—দূরে, হ্যাঁ আর একটু দূরে,
ঠিক কয়েক কদম পরেই উজ্জ্বল তারাটি ঝুলছে—
তোমাকে ধরতে হবে তাই, যা তুমি চাও।
সে বলে—ফুটতে থাকা টগবগে ভাতের মতো হও
হও তাজা ডালিম ও খোসা সমেত আপেলের মতো।
তোমাকে বাঁচতে হবে গর্জন করে। লড়তে হবে উচ্ছ্বাস নিয়ে।
মনে রেখ, একটি অন্ধকার কয়েক হাজার আলোর জন্ম দেয়।
একটি পরাজয়, চূড়ান্ত বিজয়ী হওয়ার রাস্তা বলে দেয়।