
কুঠিবাড়ির ফুল
দুর্গন্ধে নন্দিত জীবন
আমি এখন নরকের সবক’টি দরজা খুলে
সাহসী সম্রাটের মতো বিজয়ীর বেশে
হাতে তুড়ি দিয়ে হাসতে হাসতে দিব্যি
হেঁটে যেতে পারি সুদীর্ঘ অগ্নি নরকী সড়ক।
কোনো এক কবিতার পুরনো স্বরলিপির মতো কিংবা
কোনো এক নদীর কাতর কণ্ঠ ঝিমানো স্রোতের মতো
উচ্চারণ করে ফেলি ভুল করে আজো :
যেখানে সবচেয়ে বেশি ভালোবেসে সবচেয়ে বেশি ভালো থাকা যায়
সেখানে ব্যক্তিগত নীলিমায় ভালো থেকো তুমি;
যেখানে স্বপ্নেরা ধরা দেয় পাথর হিম রক্ত মুঠোয়
সেখানে আমি এবং আমার কবিতা শুয়ে আছি
ভালোবেসে পাহাড় অরণ্য তামাটে বুক দুঃখী এক নদীর ঘাট
সেখান থেকেও আমার কবিতা অভিমানে মুখ ঢেকে আজো বলে :
তার চেয়ে সেই ভালো সেখানেই থাকো তুমি
সেখানেই ভালোবাসার নামে ভালো থেকো;
যে ভালোবাসা আর ভালো থাকার ভেতর নষ্ট হয় না নারীরা কোনোদিন।
শুধু এই আমি নষ্ট হয়ে গেছি তোমার চোখে
তোমার চোখে এ আমি পাপের সন্তান;
আমিও গর্বে সগর্বে ঘোষণা রাখি তোমাকে :
নরকে দিব্যি আছি নরকী শ্রেষ্ঠ সম্রাট আমি।
দলিলে সই নেয় না
আমি এক অদৃশ্য নগরে নিজস্ব ঘরবাড়িতে চলে যাব
গুছিয়ে নেবার মতো তেমন কিছুই নেই,
যারা এসেছ উত্তরাধিকারের দাবি তুলে
অংশীদারের হিসেব কষে দলিলপত্র হাতে
যে যার মতো পাওনা চুকে নিতে কড়ায় গণ্ডায়।
হিসেবের খাতা খুলে দেখি
এ সংসারে সবকিছুই সাদা রয়ে গেছে আমার
সঞ্চিত হয়নি কিছুই
শুধু কিছু দুঃখ রয়ে গেছে বুকের বাম পাশে;
কে নেবে এসো; সই করে দিই দলিলের বুক জুড়ে।
সবাই মুখ নিচু করে থাকে
দলিল বেরোয় না কারো পকেট থেকে…
ভুল বৃষ্টি
হঠাৎ তোমার কাতর চোখজোড়া জানালায়
অ্যাশ কালারের পর্দা সরিয়ে জাগিয়ে দেয়
কুষ্টিয়া শহর
কেউ আসেনি এখানে
পড়েনি কারোর পায়ের সতর্ক শব্দ
এ শহরে আজ
ভুল মনে তুমি শুধু শুধু জেগে ওঠো
একদিন ভুল করে শুধু
বৃষ্টি এসেছিল
বৃষ্টি নেমেছিল
দুঃখময়ী শ্যামবর্ণ রাত
মানুষ এখন যেন প্রাণহীন বধির পুতুল
শামুকের মতো লুকিয়ে নিচ্ছে নিজেকে
নিজের ভেতর- ভুলগানে জেগে থাকে শুধু শুধু
দুঃখময়ী শ্যামবর্ণ রাত
দোয়েল পাখিটি কেঁদে কেঁদে ফিরে যায়
দুঃখিনী গড়াই জেগে থাকে বিধবার মতো
কচুরিপাতার মতো টানা টানা চোখের বউটি
প্রতিদিন একাত্তর শকুনের ঠোঁটে
শহিদ মিনার দাঁড়িয়ে থাকে ক্ষত শরীরে
পথের প্রাচীর ঘেঁষে- আবর্জনা দুর্গন্ধে অবহেলায়,
চোখের শিশির ভেঙে আসে না এখানে
পাখিদের প্রভাতফেরি ‘আমার ভাইয়ের রক্তে
রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি …’
নতুন প্রাণের আনন্দে অন্তঃসত্ত্বা নারীর মতো
কতদিন হেসে ওঠে না সবুজ মাঠ নদী-নালা
বাউলের একতারা- ভুলগানে জেগে থাকে
শুধু শুধু দুঃখময়ী শ্যামবর্ণ রাত;
কেউ অন্ধকার ভেঙে দাঁড়ায় না বুক পেতে
প্রাণহীন বধির পুতুল যেন মানুষ এখন।
জানি তবু একদিন সব আঁধার মুঠোয় ভরে
জেগে উঠবেন একালের কোনো এক
বিপ্লবী বাঘা যতীন
কুঠিবাড়ির ফুল
অসহ্য রোদের মতো এবার দাঁড়াব দেবতীদুয়োরে
কুঠিবাড়ির সব ফুল ছড়াব উৎসবে তোমার নামে
চোখের ডালিতে এঁকে দেব, ভালোবাসি আলপনা।
তুমি যা-ই বলো এবার শুনব না কিছুই স্পর্ধিত চৌচির
পাথরের কারুকাজ নন্দিত নগর রাজসিক ফ্ল্যাটে
সাহসের গোলাপ আঁকব এই প্রথম তোমার ঠোঁটে।
নন্দিতা শরীরে এবার পরাব পূর্ণিমাশাড়ি মুগ্ধতার,
কাঁচাস্নান শেষে বুকের জমিনে বকুলস্নিগ্ধতা বুনে
সলজ্জ সুন্দরে যেন তুমি বর্ষার নিখাদ পলিভূমি।
আমি তো কুঠিবাড়ির সব ফুল নিয়েছি নিলামে
শুধুই তোমার জন্য