
কাজল রশীদ শাহীনের একগুচ্ছ কবিতা
মুড়ি জীবন
পৃথিবীতে কালো মুড়ি নেই, নেই তাদের
বর্ণ যন্ত্রণাও, ব্রক্ষ্মাণ্ডে তাদের উত্তরাধিকার-
পূর্বাধিকার নেই, তারা এক ও অদ্বিতীয়
মুড়িরা মুক্তোর চেয়ে কম দামি বলে, আমরা
বলি না, হাসিতে তার মুড়ি ঝরে
মুড়িরা কারও প্রিয় হয় না, তবুও কেলিয়ে থাকে
সকল দাঁত, হাসে সব ঋতুতে- এমনকি ঋতুলগ্নেও
বড়োলোকেরা মুড়ি খায় গোপনে, পেছনে কেউ
গরিব বলে ঠাহর করে এই ভয়ে
গরিবেরা মুড়ি খায় নীরবে, কেউ শব্দে বিরক্ত
হয়- এই আতঙ্কে, এসব নিয়ে বেচারা মুড়িরা
আছে উভয় সঙ্কটে, যদিও এই নিয়ে নেই দুঃখ
কিংবা কোনোপ্রকার বিষোদ্গার, কেননা মুড়িরা
জানে বাঙালি স্বামীর সংকট তার থেকেও বহুমাত্রিক
আগুনে পুড়ে মুড়িরা তবু শ্বেতবর্ণ হয়, বাঙালি স্বামী
কী হয়- সুকুমার রায় ছাড়া কারও জানা সম্ভব নয়
হাঁসজারু-বকচ্ছপ-হাতিমি-টিয়ামুখো গিরগিটি…
এইসব দেখেশুনে মুড়িরা ভাবে সারাক্ষণ
মন্দ নয় মোটেই মুড়ি জীবন
ফেসবুক জুড়ে গোরস্তানের শেয়াল
গোরস্তান ডাকে কেবলই
আয় আয়
মানুষ মরলে শেয়ালেরা
খুশী হয়
মানুষ বেঁচে থাকলে শেয়ালেরা নেয় না খোঁজ
ঘুরে কেবল মোরগ পাড়ায়
ফেসবুকারদেরও হয়েছে শেয়ালের দোষ
স্বজন-বন্ধু কারোরই রাখে না কোনো খবর
হাতের ওপর রাখে না হাত
মুছে না মায়ের কপালের ঘাম
বোঝে না বাবার বোবা কান্নার হাহাকার
কেবল লাশ হলে ফেসবুকে লেখে
চমৎকার এক স্ট্যাটাস
হাজির করে ফিলিং স্যাড ইমোজি
তা-হলে
ফেসবুক কি বানালো কিছু মানুষকে
গোরস্তান পাড়ার শেয়াল
ইলিশ
ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ
সে কি ভীষণ টেস্টি বলে
নাকি তার ত্যাগের জন্য-
সন্তান ধারনের বাসনা না থাকলে
ইলিশ কোনোদিন গভীর সমুদ্র ছেড়ে
আসত না, যতই থাকুক শেকড়ের টান
ইলিশের জন্ম-মৃত্যু মানুষের দরিয়ায়
বাকীটা গভীর সমুদ্রে, অথচ আমরা
বলি অবলীলায়, ‘মাছের মার পুত্রশোক’
এ কথা যদি সত্য হয়, তাহলে তো বলতেই
হয়, ইলিশ কোনো মাছ নয়, মৃত্যু নিশ্চিত
জেনেও যখন এক-একজন সঙ্গী হয়
উজানের, সে কী আর মাছ থাকে, নাকি
হয়ে যায়, একজন বাবা-একজন মা
খাবারের টেবিলে, ইলিশের সামনে বসে
আমার মনে হয় এসব
তা হলে ইলিশ খাচ্ছি মানে কি
একজন বাবাকে খাচ্ছি
একজন মাকে খাচ্ছি
মৃধা মজিদ
১৩০০ কোটি বছর আগের ছবি এলো
মানুষের কাছে, অথচ একটা রহস্যের
ঘোর গেল না মৃধা মজিদের-
ফেসবুক জুড়ে দেখেন কেবলই জন্মদিনের
আয়োজন, কী সুন্দর স্ট্যাটাস, কী চমৎকার
ইমোজির উৎকলন, নিজেকে প্রদর্শনযোগ্য
ছবির সংগ্রহ- অপূর্ব, এসবের চেয়ে ভালো
কিছু হয় নাকি, আর যে যা নয়
তাই দিয়ে ভাসানো হয়েছে বর্তমানকে
যদিও বোঝেন তিনি, কেন এই কাগজের
নৌকা… উদ্দেশীয় স্তুতি, বামনের উচ্চতা নিয়ে
ফাঁপানো বয়ান-
মৃধা মজিদ এসব পড়েন আর ভাবেন, তারও তো
রয়েছে আস্তো একটা জন্মদিন, তা-হলে
নেই কোন সেইরকম স্যাটাস, ইমোজির
উৎকলন, মনোহরা কমেন্টস, প্রদর্শন
জাগানিয়া ছবির নির্লজ্জ প্রচারণা
গিফট, পাঁচতারা হোটেলে ডিনার, বিদেশ
ভ্রমণ- এসব কী দূরের বাদ্যি, অলীক কল্পনা
জো যেদিন দেখালেন পৃথিবী সৃষ্টির ৮০ কোটি
বছর পরের ছবি, সেদিনও মৃধা মজিদ পেল না
এসব রহস্যের পষ্ট কোনো কূলকিনারা
শুধু ভাবলো সে তো ভোটার নন কোথাও
এ কারণেই কি জন্মদিন থাকলেও স্ট্যাটাস
ইমোজি… কিছুই ভাগ্যে জোটে না তার?
প্রিয় ভাই ও ভগিনীগণ-
সেই থেকে মৃধা মজিদ, তাকিয়ে থাকেন
ডাস্টবিনের দিকে, তথাকথিত নেতা-
ইউনিয়নিস্টদের মুখের দিকে নয়
ব্যাখ্যাতীত
বন-জঙ্গল ছেড়ে মানুষেরা গৃহবাসী
হলো যেদিন
মানুষের সঙ্গে কিছু প্রাণীও স্বেচ্ছায়
এলো সেদিন
কেউ এলো, কেউ এলো না, জ্ঞাতি
ভাই হয়েও
দু’জনার দু’পথ গেল বেঁকে, রহস্য
র’ল আজও
মহাপ্লাবন কথা জানি- মহাপরিবর্তনের
হিরন্ময় অতীত অজ্ঞাত
যা কিছু হিরন্ময়- শেকড়ের সোঁদা গন্ধী
তাই কী সর্বদা ব্যাখ্যাতীত