
ওপাড়ের সূর্যহীন গ্রাম
ভালো থেকো
জীবনের অনেক রোদ থেমে গেছে রাত্রির রেখায়,
এখনও তোমার দুপুরে রাবীন্দ্রিক রৌদ্রের রঙ
আমার ছায়া ছুঁয়ে যায় ওই মল্লিকা বন থেকে।
সব দিকে শুধু কঠোর কৃষ্ণক্রান্তি,
মানুষের থেকে মনুষের ভাঙনের ভয়,
মানুষের ভয়ে পাখিরা পালাবে কোথায়?
মানুষেরা কেবলই মাটির মৃত্যু চাষ করে।
এই অন্ধ অধপাতে, তুমি যে মাটির মেয়ে!
তুমি যে ধরিত্রি ধরে আছ বুকের তলায়,
মূমুর্ষু মাটির মর্মে মোছ চোখ, মাটিও তোমার জন্যে।
মাটিই প্রাণের পিপাসায় সত্য সবুজ করেছে তোমাকে।
অথচ ওরা মাটির মর্মান্তিক মৃত্যু লীলা খেলে।
আকাশে আমার সন্ধ্যা মিশে আছে,
রাতের তারারা জ্বলবে কিছু পরে,
তার সাথে ভালো থেকো তুমি!
ভালো থেকো সারাক্ষণ সারা বেলা।
ওপাড়ের সূর্যহীন গ্রাম
যদিও ধুধু-ধুসর মেঘের মায়া মাখা ঝাপসা অকুল,
তবু ওপাড়ের সূর্যহীন গ্রাম এখন আর অস্পষ্ট নয়।
কালের কৃষ্ণতুলি কখন মুছেছে সময়ের শুভ্র সকাল
সন্ধিপথে আমি শৈশবের শব্দ শুনি, যুবতি রাত্রির
সুরভিত শয্যার শব্দে মুদ্রিত মৃত্যু ভাঙে আমার।
জগৎ-যমুনার জলে রৌদ্রের অন্তিম লেখাজোখা।
আর সব ফেলে আসা ফলিত ফসল, প্রেমপুরানিক
কৃতি-সুকৃতি, এই মত মোহময় ফুল্ল আনন্দ ধ্বনি।
আর সব সঙ্গে বাঁধা বেদনার বধির বাসনাভাষা।
ঠিকানাবিহীন তিমির তীর্থের অচেনা কন্ঠ কাঁদে,
অদূরে সুদূরের শঙ্খ অজানা সংঘে সংঘে ডাকে,
তবুও কাঙাল চরণ চেয়ে থাকে ক্ষয়িষ্ণু পথে পথে।
পতিত পাতা প্রাণের পিপাসায় সবুজের শব্দ শেখে।
হৃৎপাথারে
সে কখনো হাত ছুঁয়ে দেখেনি,
মন ছুঁয়েছে খুব।
মনে মনে মৃত্যুর মুগ্ধতা মুছে দিয়েছে।
হৃদয়ের রঙ শুনিনি আমি
দেখেছি তার হৃদয়―
এক পৃথিবী সকালের সমান বড়।
জল যত বাড়ে সে তত বেড়ে ওঠে
উষ্ণ উত্তাপে।
ধুলি যেমন ওড়ে বাতাসে বাতাসে,
হাঁস যেমন ভাসে আকাশে আকাশে,
রোদ যেমন রঙ ফেলে যায় ফসলে ফসলে,
তেমনি করে সে আছে
আমার ভেতরে ভেতরে।
সে কখনো হাত ছুঁয়ে দেখেনি,
মন ছুঁয়েছে খুব।
মনে মনে আমারই রাত লিখেছে,
দিন লিখেছে,
ফুলে ফুলে নাম লিখেছে।
কাছে আসেনি কোনো দিন
শুধু সন্ধ্যার শব্দের মতো
নেমে এসেছে এই হৃৎপাথারে।
জন্মভূমি
আকাশ যখন আঁকি
নাম ধরে তার ডাকি।
বললো মেয়ে, মেঘ কোথা রে তোর?
বলছি তারে, মেঘ কেন আর?
মনের মধ্যে সবুজ পাতা, রৌদ্রলেখা ভোর।
নারে সখা না।
মন হলো তোর মেঘ, বৃষ্টি ভালোবাসা।
সেই ছবিতে
আমার এবং তোর যে যাওয়া আসা।
পথে যদি নামি, বলে মেয়ে! নাম জান না তুমি
ওইখানে তোর কর্ম লেখা, পতিত পিতৃভূমি
অবশেষে হৃদয় পেতে রাখি।
বলে মেয়ে, ওটাই হোলো আমার জন্মভূমি।