
এখন ভাগের দিন
এখন ভাগের দিন
মূলানুগ হলে তার ভাগে প্রবাদের মুলো!
ট্রাফিক আইল্যান্ডে দাঁড়ালেই সে দৃশ্য:
তরমুজ ফালির মতো ধর্মের ভাগহাতে
যূথবদ্ধ হেঁটে যাচ্ছে একদল;
মুগ্ধ সতীন পা, মত্ত বিপরীত গতি!
আর বৈরী সিটকানে ভরে ওঠে
মিনারের গোড়া; তো নাকে রুমাল।
দৃশ্যান্তরে- ঘেষাঘেষি যাচ্ছে অন্য দল;
সবারই হাতে প্রগতিশীলতার পতাকা
অথচ এক নয় তাদের স্লোগানের ভাষা,
পতাকার রঙ। উচ্চকণ্ঠ মিছিলের শেষে
পাঁচতারা ছায়া; আমিষগন্ধী হাওয়া!
অতএব মূলে মন দিলে নির্ঘাত পস্তানি;
এমনকি অদ্ভুত অপবাদও!
এখন ভোগের অংকে ভাগের দিন।
সত্যের পক্ষে নেই কোনো মিছিল।
সত্য বসে আছে একা
পাহাড়ের পাদদেশে গালে দিয়ে হাত।
স্বপ্নের স্বৈরিতা
দ্যাখো, গোবেচারা সত্য ক্যামন ধোলাই খায়
স্বপ্নের হাতে! তার এক চোখে কৃষ্ণপটি
শুভ্র নিতম্বে উল্লস্ফিত পদাঘাত
আর সরলচরণে রিমোট কন্ট্রোল;
যেন সে খুঁড়িয়ে চলা এক নুলো ভিখারি!
স্বপ্নের বোঝা বয়ে বয়ে
শ্রান্ত সরেন বেহারার মতো বেচারার ঘাড়:
কপালে স্পষ্ট বলিরেখা
চোখের নিচে কালি
ঘরে তার ক্ষীণকণ্ঠ শিশু,
জননীর শুকনো স্তন ঝুলে আছে নির্ভার
অদ্ভুত উপহাসের মতো!
আর যাবতীয় অন্ত্রে সজ্জিত মহামতি স্বপ্নেরা
রাত ডিঙিয়ে পা ফ্যালে
দোয়েলশাসিত দিনের আঙিনায়-
যেন দখলবাজ এক হানাদার বাহিনী!
অরক্ষিত সত্যভিটায় দাঁড়িয়ে
গুজরাটী সংখ্যালঘুর মতো কাঁপছে
আমার হাত, আমার পা,
আমার দীপ্ত সত্তার বাতা-বাঁধন!
এখানেও প্রসারণশীল ধূসরচিত্রিত জীবনের রেখা,
আমি জানি।
তবু হে স্বাপ্নিক কবি জীবনানন্দ,
তোমার আহ্বানে সাড়া দিতে
জলাতঙ্ক রোগীর মতো নিরন্তর ভয় পাই আমি!
থুতু
আমার থুতু দিই। ওয়াক্ থু!
দেখুন- এ আমাদের হাল আমলের অভ্যাস
আপনারা যারা বিদেশি, দয়া করে ভয় পাবেন না।
আমরা কিন্তু ভিনদেশি কাউকে থুতু দিই না।
আমরা আকাশে থুতু দিই
আমরা বাতাসে থুতু দিই
আমরা সমুদ্রগামী নদীর মুখে থুতু দিই।
সাপের থলিতে যেমন বিষ
ঊর্ণ-অধরে যেমন লালা
সতীনের বুকে যেমন ঈর্ষা
আমাদের পেটে তেমনি থুতু।
আমরা একলা দাঁড়ানো তালগাছের মাথায় থুতু দিই
আমরা দাদুর মতো বটগাছের গোড়ায় থুতু দিই
আমরা ফলভারে নত ধানগাছের কাতারে থুতু দিই
আমরা ভাইয়ের উঠোনের সোনালি গম্বুজে থুতু দিই
আমরা অভ্যাসবশত মাঝে মাঝে
আমাদের আত্মপ্রতিকৃতিতেও থুতু দিই।
আমরা হিংসায়-প্রতিহিংসায় থুতু দিই
আমরা অক্ষম কাতরতায় থুতু দিই
আমরা কারণে অকারণে থুতু দিই
আমরা সময়ে অসময়ে থুতু দিই।
আমাদের মাকড়সার মতো উদ্ভাবনী মন
আমরা ডানে-বামে, উর্ধ্বে-নিম্নে, সামনে-পেছনে
সবদিকে থুতু দিয়ে রচনা করেছি
তন্তুজালের মতো নিষ্ঠীবনফাঁদ।
আর এই থুতুব্যুহ ভেদ করে এমন সাধ্য কার!
স্রোত
অলখ জোয়ারে ভাসে থই থই ভাপা পিঠা দিন;
স্মৃতিচারী পাকুড়ের পলাতকা সুরেলা দুপুর;
দাদুর দুচোখ-ছোঁয়া পশমি গোধুলি; স্বপ্নমাখা
পরীদের ডানাঘঁষা বসন্তের রাত, ভাসে সেও।
প্লাবিত পুকুরের ঢেউলাগা পদ্মফুলসম
বিশ্বাসের রঙমাখা আমাদের স্বপ্ন থোকা থোকা
ঘুরে ঘুরে ভাসে দ্যাখো, তটঘেঁষা ঘোলা জলাবর্তে!
আর যতো ঝাঁকবদ্ধ প্রাণ অদ্ভুত মাছের মতো
ভেসে যায় স্রোতানুগ; প্রশ্নগুলো ভেসেছে আগেই!
আজীবন স্রোতসখা শ্যাওলাকচুরি- মাঝিদের
কাজকর্মে হতভম্ব, গদগদ ভেজাকণ্ঠে বলে-
‘হায় হায়! আমাদেরও পিছু ফেলে চলেছে কোথায়!
কোন্ সমুদ্রের টানে? স্রোত-পাওয়া মাঝিদের মুখে
কোনো কথা নেই। শুধু হাতের ইশারা, হয়তোবা
দৃশ্যাকুল- সুখকল্পনার মতো মিশে যায় দূরে….
মহা মাৎস্যন্যায়-ছোঁয়া জলধাঁধাজাত কুয়াশায়…
ভরাডুবি
আর সকালের চায়ের কাপে প্রতিদিন সেই একই দৃশ্য-
সহযোদ্ধার মৃতমুখ এবং বীরের বিজিত আত্মপ্রতিকৃতি।
আর বাণিজ্যবায়ুতে যত রঙবেরঙের দ্রুতগামী নাও
এবং নাবিকদের উল্লসিত হাতনাড়া আর খোলা প্ররোচনা।
তবু মোহনামুখি পানসির গলুই থেকে সরে আসেনি চোখ।
হায় পানসির গলুই! হায় চোখ আমার! অথচ তুমি শুধু
নোঙর পাহারায় পার করে দিলে সাতটি উতলা ভাদর!
মাঘের শীর্ণ নদী মাথা কুটে মরে আজ তোমার বুকের চড়ায়।
আর কী করেই-বা উঠবে এখন নোঙর! এই নাস্তিক তল্লাটে
হাজার চোখের জলেও ফিরে আসে না কোনো নূহের প্লাবন।
ফলে প্রোর্থিত নোঙর, ভাঙা গোড়া, আর কংকালের খচখচ
ওই বুকের ভেতরে। বেশ বুঝতে পারি, নৌকাভর্তি স্বপ্নগুলো
আমার। আচ্ছা! তোমার স্বপ্নগুলো কোথায়? তোমার গুলো!