
উত্তর পুঁজিবাদের ঘূর্ণিজল ও বিব্রত মার্ক্স
একটি নতুন ব্যাংকের অনুমোদন চাইছি
একটি নতুন ব্যাংকের অনুমোদন চাইছি, মাননীয় অর্থমন্ত্রী
যেখানে বিষাদই হবে মুদ্রাব্যবস্থার নবতর বিকল্প।
জানেন নিশ্চয়ই, আমরা হলাম মিলেনিয়াম প্রজন্মের জার্সি পরা;
গত শতকের জলোচ্ছ্বাসের চিহ্ন এখনও আমাদের কার্নিশে।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাঁধবে বলে-
সিনাই পর্বতের অলিভ গাছগুলো সেই কবে থেকেই সটান।
অথচ তীরের মধ্যেই আদেশের অপেক্ষায় পায়চারি করছে
এডভেন্চারাস তূন।
আমাদের বিষাদগুলো ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকা গড়পড়তা শ্যাডো নয়;
বিষাদের রঙগুলোও আর নীল নেই
কারণ রঙতো আমাদের ফিংগার স্ট্রোকে-
ইচ্ছেমত পিক্সেল বসিয়ে
যেকোন বিষাদকেই লিজেন্ড বানাতে পারি আমরা;
এংরি বার্ড খেলতে খেলতে-
ইজেল-সমেত রঙের কৌটা ছুঁড়তে পারি স্ক্যান্ডিনিভিয়ার আকাশে।
কাগজের মুদ্রা এখন থিফ অব বাগদাদ, ইতিহাসের সলতে
তাই বিষাদ জমানোতেই খুঁজছি আমরা তৃপ্তির মার্সিডিজ।
প্রতিবার ফেইসবুক খোলা মানেই-তেরো হাজার টাকার বিষাদ
প্রতিবার হোয়াটস অ্যাপ দেখা মানেই-আরো সাত হাজার
ইনস্টাগ্রামে বিষাদের মূল্য খানিকটা বেশী-এই ধরুন হাজার ঊনিশ।
বিষাদই আমাদের নতুন মুদ্রাব্যবস্থা, নবতর আনন্দ
গুগল ট্রান্সলেটরে তাই বিষাদ ঠুকেই অনুবাদ করে নিই
প্রয়োজনীয় আনন্দের আনাজ-
দ্রুত উড়াল দেয়া ম্যাগপাই।
অতএব মহাত্মন,
আশা করছি নতুন ব্যাংকটির অনুমোদন দিতে
আপনার অথবা মন্ত্রীপরিষদের
যুক্তি বিবেচনার অভাব হবে না।
উত্তর পুঁজিবাদের ঘূর্ণিজল ও বিব্রত মার্ক্স
গ্রীষ্মকালীন অর্কিডের পাপড়ির মত
এই শহরে সব কিছুই খুলে যাচ্ছে। এই যেমন:
পোশাক, মানুষের দিল;
ক্রমশ পর্দা খুলছে- লন্ডন থেকে সাউথ এন্ড গামী রঙের গেলাশ,
বোট সার্ভিসের খিল।
এরই মধ্যে, ফিস এন্ড চিপসের মোড়কে
পাচার হয়ে আসে তবক দেয়া তথ্য: হ্যাম্পস্টিডের
জোড়া পুকুরগুলো উন্মুক্ত হচ্ছে শাইনিং এপ্রিলে!
সাঁতার নেশায় টগবগিয়ে উঠলো আমার কলোনিয়াল স্মৃতি
রোমাঞ্চিত হলো সুবা বাঙলার কৃষি পরম্পরা।
পুকুরগুলোর ফটক পেরুতেই হ্যাম্পস্টিড গোরস্থান
লুঙ্গির গিট্টু খুলতে খুলতেই মার্কসের সাথে দেখা হয়ে যাবে-
কষ্মিনকালেও ভাবিনি।
আইসিস নেতাদের মত তার দাঁড়িগুচ্ছের দৈর্ঘ্য দেখে
আমি যদিও বিব্রত;
তবু, মনোযোগ পাওয়ার লিপ্সায় অথবা নিজেকে জানান দেয়ার লোভে
প্রশ্নের লাটিমটি ছুঁড়লাম তাকে সরাসরিই:
‘জনাব, উইকিপিডিয়া নামের কোনো তথ্য বিতানের গল্প কি
শুনতে পেয়েছেন?’
হ্যাঁ, আপনার নামেও সরেস কিছু তথ্য বিকোচ্ছে ওরা
তবে আশ্চর্য কি জানেন, ওদের কোনো শ্রমিক নেই!
বারোয়ারী কায়দায় ওরা কব্জা করেছে ২৭ হাজার স্বেচ্ছাসেবী
আর বছর শেষে পুঁজিবাদী রিং লর্ডরা ঘরে উঠাচ্ছে
৩ বিলিয়নের ব্যবসা।
হে বুজুর্গ,
আপনার দাস ক্যাপিটালে শ্রমজীবী প্রলেতেরিয়াতের
যেই ছবি দেখে উদ্বেলিত ছিলাম একদা-
তারা এখন কোথায়?
কোন্ শুঁড়িখানায় বসে গিলছে পুঁজিবাদের শরবত?
নাবালক বাঙালের কথায় দুঃখ পাবেন না- আশা করি।
আপনি বলেছিলেন:
টিকতে হলে পুঁজিবাদকে অবিশ্রান্ত খুঁড়তে হবে
নিত্য নতুন কলোনির কুয়া,
ঘোমটা খুলতে হবে নবতর বাজার বধূ’র;
অশ্বারোহী হয়ে ছুটতে হবে কৃষক আর কৃষিভূমির ধুলিস্যাতে
অথবা জুলু, রেড ইন্ডিয়ান আর হটেনটটদের বাঁধতে হবে
বৃহৎ শিল্পের টার্মিনালে।
আপনি আরো বলেছিলেন:
গতির মাস্টার হয়ে ছুটতে থাকাই-নিয়তি হবে পুঁজিবাদের,
থেমে যাওয়াতেই তার মৃত্যঘণ্টা।
কিন্তু গুরু, অশ্বারোহী ঘোডার উপমাটি বোধহয়
আর যুতসই ঠেকছে না,
কারণ পুঁজিবাদ এখন সোয়াম্প মনস্টার।
রুপান্তরিত রঙের উল্কি এঁকে-নিজের ল্যাবেই
বানাচ্ছে সে বনসাই বাজার।
হায় ওস্তাদ,
পুঁজিবাদ যখন সতত পরিবর্তিত গিরগিটি-
লাফিয়ে উঠছে উত্তর পুঁজিবাদের ট্রেনে;
আপনার সাগরেদরা তখনও কেন অন্ধ সুন্দর হয়ে
চিবুচ্ছে শুধু-শুষ্ক হয়ে যাওয়া আখের চিবড়া।
রক্তে কোরাস গাইছে ক্লান্ত পুর্বপুরুষ
এই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি আমার অধরা;
ঘোড়ার খুরের শব্দেই টারবাইনগুলো এখানে শোঁ শোঁ
মানুষেরা যখন তখন বিদ্যুতায়িত হচ্ছে,
এই যেমন আমিও হলাম সিকি প্রহর আগে।
দুই দিগন্তের পানোখিরা তাড়া করে এলে-
দৃশ্যের অন্তরালে ঝরে পডে রাত্রিকালীন ফল
স্টিফেন হকিংকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে
আমিও বাকসো বন্দি হই সময়ের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসে।
চোখের সামনে ঝেঁকে বসেছে খন্দকার বাড়ির গোরস্থান;
দিব্যি বলছি: এখানে কোনো ফটক নেই,
মাটির ঢেলাগুলো জ্বলছে কুয়াশার চোখের মত।
সময়ের ঘুলঘুলিতে আদি থেকে অন্যতর হচ্ছে চূর্ণিকৃত অন্ধকার;
আর, ব্যবিলন মিশর হরপ্পার সমূহ আকাশ জুড়ে-
লাফিয়ে বেডাচ্ছে ট্রটস্কির টাট্টু ঘোড়া।
আমার রক্তে কোরাস গাইছে ক্লান্ত পূর্বপুরুষ
হারিকেন হাতে বসে আছেন জ্যাঠামশাই;
বাঁধানো ঘাটের ওপর উড়ছে ফেনায়িত বাষ্পের ঘূর্ণি
স্মৃতির পুকুরে ইত্যবসরে, ছলকে উঠছে প্রাণবন্ত গুলশা
আহা, মাছগুলো যেন বেঁচেছিল আমারই সমন্তরালে
কিছুটা আবডালে, জলোত্তীর্ণ কসকো সাবানের ঘ্রাণে!
কিছু কুয়াশার মত হিংসায়
কবিতার দোকান বন্ধ করে, এই ঘনবদ্ধ এপিং ফরেস্টে
চাঁদে অথবা হরিতকি অন্ধকারে;
কুচি কুচি করে নিজেকে ভাসাই অতলান্ত হাওয়ায়।
বেচাকিনি বেশী নাই, ক্ষোভে ও রোদ্দুরে পুড়ে গেছে টেড হিউজের কাক;
অনাহুত বৃষ্টিতে নিভে গেছে আ-মেঘনা বিস্তৃত গোসলের সাধ।
ভালবাসায়: কিছু কুয়াশার মত হিংসায়
হরতাল ডেকেছিল এক চুপিসারিনী
আমাকে স্ক্যান্ডিনিভিয়ান অরোরায় বিদ্ধ করে
খুঁজে খুঁজে অন্ধ হয়েছে তার প্রসন্ন রোদন।
সওদাগর আমি; তবুও কেন জানি ভুলে যাই মোহরের টান
পাহাড়ি পাখির মত খুঁটে খুঁটে দেখে যাই মানুষের সন্তাপ
ততটুকু ক্ষত হলে বল: হৃদয় উনুনে পুড়ে ছাই হয় দুরন্ত অঘ্রাণ?
ধুসর স্মৃতির ধোঁয়াশা উডিয়ে, ছেডে গেলে শেষ ট্রেনটিও
এই আধো-অচেনা শীতার্ত বাজারে-
নিজের সাথে নিজে নিশ্চুপ।
আরাধনা শেষে বসে থাকি আমি জলঢোরা সাপের মত; নির্ভার।
পিয়ানোয় পারদর্শী আঙ্গুল
যাপিত আনন্দের আইসক্রিমগুলো ফুটে আছে শীত-গোলার্ধের অরণ্যে
রাতগুলো এখানে সহস্র ব্লুবেরির মত পতন-উদ্যত
খই ফোটা আলোয় কে যেন আমায় তুলে এনেছে ন্যাশনাল হাইওয়েতে
ড্রাইভিং স্টিয়ারিঙে পিয়ানো বাজাচ্ছে আশ্চর্যবতীর পারদর্শী আঙুল
দহলিজে তার ছায়া দেখে উপবাসী হয় উৎসব রঙ;
জানুয়ারী বাতাসে স্মার্ট হয়ে উঠে ডোবার-ক্যাসলের পতাকা।
কালের পাঁচিল টপকে আমিও উতরে যাই আমাকে
বরফচাষের শেষে কামব্রিয়ার মাঠে খুঁজি ফিরি ফায়ারপ্লেইসের বৃক্ষ
আর, কৃষি সংক্রান্ত আলোচনা উন্মুক্ত রেখে-
রসমের তুলোগুলো ঢেকে রাখি কার্পাস কৌটায়।
অলংকরণ- মারুফ ইসলাম