
উড্ডয়নসূত্র ॥ পর্ব- ১৪
মোহনের পকেটে পুরিয়া ছিল একটা। সেটা বের করে টেবিলের উপর রাখে ও। তারপর গোল্ডলিফের একটা শলা বের করে তার ভেতর থেকে বিশেষ কায়দায় প্রায় সবটুকু তামাকের গুঁড়ো ফেলে দেয় ময়লার ঝুড়িতে। সিগারেটের খোলসটাকে মুখ ভেংচানোর সুযোগ না দিয়ে পুরিয়ার সবটুকু মশলা খোলসের ভেতরে ঢোকায় ঠেসে ঠেসে। একটা মৃদু কটু গন্ধ ছড়িয়ে পড়তেই আমাদের বুকগুলো শিরশির করে ওঠে। একটা চনমনে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ভেতরে। চকিতে বন্ধ দরজাটার ওপারে চোখ চলে যায় আমাদের। এবং নিজেদের এই সন্ত্রস্তভাবটা পরস্পরের কাছে ধরা পড়ে যাওয়ায় আমরা বিব্রত হয়ে পড়ে মৃদু হাসির ভান করি।
জুয়েল মুখের হাসিটুকু টেনে প্রলম্বিত করতে করতে বলে, শালার ঠোলার ব্যাটারা আবার কোন চিপায় চোখ লাগিয়ে তাকায়া আছে—কে জানে।
সামান্য গাঁজার ধোঁয়া টানার আগে এর আগে কোনদিন—পুলিশ তো দূরের কথা, আর কেউ দেখে ফেলছে কি না,—সেটা নিয়ে কোনদিন মাথা ঘামিয়েছি বলে মনে পড়ে না আমাদের। এটা নিশ্চয়ই সদ্য থানা থেকে বেড়িয়ে আসার গুণ। আকতারের মুখ থমথমে তখনও। আমরা মোটামুটি নিশ্চিত, সালমান খানের ছবিগুলোর মায়া বেচারা এখনও ভুলতে পারছে না। এ ঘরেও সালমান খানের একটা ছবি আছে। বাইসেপস-ট্রাইসেপস দেখিয়ে রীতিমত মাংসের দোকান বানানো রাঙা পোস্টার। আকতারের চোখ থেকে থেকে ছবিটার দিকে চলে যাচ্ছে দেখে ওর অজান্তে আমরা নিজেদের গা টেপাটিপি করে হাসি।
ফাঁকতালে শালার জয় বাঁইচা গেল। শালার কপাল!—আমি ফোঁড়ন কাটি।
সেদিন রাতে জয়ের থাকার কথা ছিল না, সে ছিলও না, কিন্তু খুব সহজেই সে থাকতে পারতো, এবং যেহেতু কাফেলায় প্রতিরাতে চারজন থাকার কথা গড়ে— আমাদের এই ’দাগী’ চারজনের মধ্যে কেউ একজন থাকতে পারতো অনুপুস্থিত— সে কথাটার ইঙ্গিত করাই আমার উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু কেউ আমার কথার কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় না। তবে এতক্ষণ পর যেন সবার সম্বিত হয় যে জয় আড্ডায় নাই। শুধু জয় না, সুরমনও আসে নাই আজকে। জয় না আসার একটা কারণ হতে পারে ওর প্রাইভেট টিউশনি। রাজাবাজার না কোথায় যেন সপ্তাহে তিনদিন ক্লাস টেনের একটা মেয়েকে অংক করাতে যায় ও। কিন্তু সুরমনের না আসার কারণটি বোঝা গেল না। ফোনে কেমন তো তো করছিল। শালা আমাদের সাথে দেখা করতেও আসেনি আজ বিকেলে। আমার মনে একটা আশংকা জন্ম নিয়েছে। সুরমনের সাথে আমিই ফোনে কথা বলেছিলাম। ওর কথা বলার ধরণ শুনে মনে হয়েছে—ও যেন আমাদেরকে এড়িয়ে যেতে চাইছিল। বাসায় সমস্যা, বাপ বাসায় বইসা আছে সারাদিন—এ জাতীয় অর্থহীন কথাবার্তা বলছিল আমার সাথে। কিন্তু এ মুহূর্তে আমার সন্দেহের কথাটা অন্যদের সাথে শেয়ার করতে ইচ্ছে করছে না বলে আমি চুপ করে থাকি। মনে মনে ভাবি, সুরমন শালা যদি সত্যিই এড়িয়ে যাবার মতলব করে থাকে কোন কারণে—যে কারণটি আমরা মোটামুটি আন্দাজ করতে পারছিলাম—ওর কানপট্টি গরম করে দিতে হবে একদফা।
আকতার হঠাৎ থেমে থেমে বলে, সাদেক হারামজাদারে খুন করব—ঠিক করেছি।
খুব সহজেই আমরা বুঝতে পারি, এটা স্রেফ কথার কথা। তবু নিজের অজান্তেই শিউরে উঠি আমরা। এবং জানতে পারি, এমন একটা ইচ্ছে আমাদের সবার মধ্যেই কাজ করে যাচ্ছে সেই রাত থেকেই।
থানার লক-আপে আমাদের সাথে পরিচয় হয়েছিল একজন আসামীর। নিজের নাম বলেছিল—জহির মিস্ত্রী। ঘর-বাড়িতে রঙ-বার্ণিশের কাজ করে। খুনের মামলায় ধরে আনা হয়েছে। মুখে চাপদাড়ি, মাথায় সুতোয় বোনা গোল টুপি। অসম্ভব সদালাপী, থানার হাজতে বসে আছে, অথচ মুখে বিন্দুমাত্র দুশ্চিন্তা নেই। আমরা যাওয়ার আগের দিন থেকেই ওখানে ছিল। কোর্টে চালান হয়ে যাবার জন্য অপেক্ষা করছিল। মাত্র ঘন্টাখানেকের এটা-ওটা আলাপের পরেই আমাদেরকে ফিসফিস করে জানাল, আপনাদের কাছে মিথ্যা বলব না, কামটা সত্য-সত্যই করছি আমি। যে কারণে করেছি, সেটা বললে আপনার আফসোস করতে করতে বলবেন, এইটা কি করলা জহির, মাত্র একবার খুন করলা? তোমার তো উচিত ছিল লোকটাকে সাতবার খুন করা।
কিছু করার ছিল না বলে আমরা রাতে বসে বসে জহির মিস্ত্রীর খুনের গল্প শুনলাম। জটিল কোন গল্প না। পরকীয়ার চিরাচরিত গল্প, তবে সিনেমাটিক-বাস্তবতা আছে গল্পে। জহির কিছুদিন আগে বিয়ে করেছে। কিন্তু বউয়ের গোপন ভাব-ভালোবাসা ছিল অন্য লোকের সাথে—কথাটা জহির ঘুণাক্ষরেও জানতো না। গত তিনদিন আগে তিনতলা একটা বাড়িতে রঙের কাজ করতে গেছে সে। ছাদ থেকে দড়ির মই টাঙানো হয়েছে। সে মইয়ে ঝুলে ঝুলে বাড়ির বাইরের দেয়াল রঙ করছে। বাড়ি রঙ করার সময় জানালা দিয়ে লোকজনের ঘর-সংসার দেখতে জহিরের ভাল লাগে। তার ভাষায়, সুন্দর-সুন্দর মেয়েছেলেরা সুন্দর-সুন্দর বাড়িতে ঘর-সংসার করতেছে —দেখার মধ্যে একটা আনন্দ আছে ভাইজান।
যাই হোক, অভ্যাস মতো রঙ করতে করতে এ ঘর ও ঘরের জানালায় উঁকি দিচ্ছিল সে। সবগুলো জানালাই আটকানো। বেশিরভাগের পর্দা টানানো। দুয়েকটা যেগুলোর পর্দা তোলা—সেগুলোর ভেতর দিয়েও খুব একটা যে কিছু দেখা যাচ্ছিল, তেমন নয়। দোতলায় রঙ করার সময় হঠাৎ একটা জানালায় চোখ পড়ে তার। পাল্লা একটু খোলা। সেই খোলা পাল্লা দিয়ে মেয়ে-পুরুষের হাসি-ঠাট্টার মৃদু শব্দ আসছে। একটু ’ইয়ে’ ধরনের শব্দ। জহির নিজের কৌতূহল মেটাতে বেশ খানিকটা ঝুঁকে জানালার ভেতরে চোখ রাখল। এবং এক ঝলক তাকিয়েই ভেতরে যা দেখলো, তাতেই তার ভাষায় ’সাতবার খুন করা’র ঔচিত্য তৈরি হয়ে গেলো। জহির দেখল, একটা ভোসকা পুরুষলোক একজন স্ত্রীলোককে আদর করছে। দুজনের কারো মুখ খুব একটা দেখা যাচ্ছে না ভাল মতো, তবে অঙ্গ-ভঙ্গি পরিষ্কার। তা এরকম ভাব-ভালোবাসার দৃশ্য আগেও বাড়ি রঙ করার সময় অনেকবার চোখে পড়েছে তার। স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপার, এভাবে দেখা ঠিক না, তবে না দেখেও সে পারে না। মিনিট খানেক দেখে সে যখন ভাবল, নাহ, সরে যাই এবার, তখুনি স্ত্রী লোকটার মুখ দেখতে পেল সে। আর কে সেই স্ত্রী লোক? জহির আঁতকে উঠে দেখল, ঘরের ভেতরের স্ত্রীলোকটি তার নিজের বিয়ে করা বউ—যে সকাল বেলা তার আগেই ঘর থেকে টিফিন ক্যারিয়ারে লাঞ্চ নিয়ে বেরিয়েছে গার্মেন্টসে কাজে যাবে বলে।
জহির মিস্ত্রীর কথায়, ঘটনা দেইখা, ভাইজান, প্রথম আমার মনে যে কথাটা বুব্ কইরা উঠলো—সেটা একটা হিন্দী সিনেমার গান। আপনারা হয়তো বিশ্বাস যাইবেন না, বলবেন, ধ্যাত, তুমি গুল মারতেছো। কিন্তু কথাটা বললাম সত্যি।
কোন গান? —আমরা জানতে চাই।
হাম তুম এক কামরা মে বন্ধ হো, আর চাবি খয়া গিয়া।—জহির গুনগুন করে গেয়ে উঠে। তারপর হি হি করে হাসে। আমাদের মনে ক্ষীণ সন্দেহ হয়, লোকটার মাথায় কোন একটা সমস্যা হয়তো আছে।
গান বন্ধ করে সে বলে যায়, গানের কলিটা মনে মনে স্মরণ করা যখন শেষ হইল, তখন বুঝলাম, আমার গা জ্বলতেছে। বলক দিয়া মাথাটা উতরাইয়া উঠতেছে। আরেকটু হলে নিচে পইড়াই গেছিলাম আর কি! আমাকে যে কাজ শিখাইছিল, পরিমল মোহাজন, তার প্রথম শিক্ষা ছিল, উঁচুতে উঠার পর—যত কিছুই হোক, মাথা গরম করবি না। মাথা গরম হইছে তো খাড়ার উপর জীবন শেষ। তার শিক্ষাটা মনে পড়ল সঙ্গে সঙ্গে। যেহেতু উঁচাতে আছি—মাথা গরম করলাম না। মই বাইয়া ধীরে ধীরে নিচে নামলাম। আমার সাথে অন্য যে মিস্ত্রী ছিল, তারে বললাম, খাড়া, মুইতা আসি। সে বলল, একটু আগে না মুতলা, আবার যাইবা? তোমার কি ডায়াবেটিস নি? আমি কথা বাড়াইলাম না। ঐ হালার কামই হলো সুযোগ পাইলে মুখ চালানির। যাহোক, আমি আস্তে কইরা কামের বাকসোটার কাছে গেলাম, সেটার ভেতর থেকে লম্বা হাতুড়িটা নিয়া বাসার ভেতরে ঢুকলাম। সিঁড়ি দিয়া উঠলাম দোতলায়। ঐ ফ্ল্যাটের দরজার ঠক্ ঠক্ কইরা আওয়াজ দিলাম। কিছুক্ষণ বাদে দরজাটা খুলল। খালি গায় একটা লোক দরজা খুলল। আমারে দেইখা খেংটা মাইরা কইল, কী চাও?
জহির মিস্ত্রী থামল। মুখ এবং ঘাড়ের ঘাম মুছলো হাতের চেটোয়। আমরা নিজেরাও দর দর করে ঘামছিলাম, যদিও সময়টা গরমের কাল না। এই ঘরে আলো-বাতাস ঢোকার কোন ব্যবস্থা নাই বলেই বোধহয় এমন কাঁঠালপাকা ভ্যাপসা গরম সব সময়। ঘাম মোছা শেষ করে সে বলল, এখন ভাইজান, বিবেচনা করে দেখেন, আমার বিয়া করা বউ, এক লাখ টাকা কাবিনে বিয়া করছি, নগদ স্বর্ণ দিছিলাম দেড় ভরি। তার সাথে শাড়ি-ব্লাউজ তো বেশুমার। সেই বউ নিয়া ও ঘরের ভিতরে মউজ করতেছে, আর দরজায় আমারে জিজ্ঞাস করে—কী চাই! মাথাটা আবার বলক দিয়া উঠল। এখন তো আমি আর দড়ির উপরে উঁচা জায়গায় নাই, তাই মাথা গরম না করার সমস্যাটা আর থাকলো না। তার কথার জবাবে কিচ্ছু বললাম না, শুধু হাতের লম্বা হাতুড়িখান দিয়া লোকটার মাথার তাল্লু বরাবর মারলাম এক বাড়ি—
হাতুড়ির ঘায়ে কীভাবে সে লোকটাকে খুন করলো, কীভাবে কাটা কইমাছের মতো হাতুড়ির এক ঘা খেয়েই লোকটা মাটিতে শুয়ে তড়পাতে লাগল—নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে পুরো ঘটনার এমন তারিয়ে তারিয়ে বর্ণনা করে গেল জহির মিস্ত্রী, আমরা চারজনই রীতিমত শিউরে উঠলাম।
জিজ্ঞেস করলাম, তোমার বউ তখন কোথায়? তারেও খুন কর নাই তো!
জহির মিস্ত্রী ঠাণ্ডা গলায় বলল, তারে পাইলাম না।
পেলে না মানে? সে তো ঐ ঘরের ভিতরই থাকার কথা।—আমরা জানতে চাই।
জহির মিস্ত্রী এবারে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর বলল, ছিল না। আমি রাগের মাথায় ফ্ল্যাট উল্টা-পাল্টা কইরা ফেলছিলাম। যে ঘরে যাওয়ার কথা, তার উল্টা পাশের ঘরে টোকা দিছিলাম। যারে মারছি—সে ঐ ভোসকা লোকটা না। ভোসকা বদমাশ আর আমার বউ তখনও পাশের বাসায় আমোদ-ফূর্তি করতেছিলো। এদিকে যে এতবড় একটা খুন-খারাবী চলতেছিল—একটা উঁকি দিয়া দেখতেও আসলো না। আফসোস, জিনিসটা বুঝতে না বুঝতে পাবলিকের হাতে ধরা খাইয়া গেলাম।
জহির মিস্ত্রী আবারো দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ভুল লোককে মারার জন্য তার কোন আফসোস নাই। তার হিসাব সহজ, এইটা ভাইজান আল্লাহপাকের লিখন। গত শবে বরাতে আল্লা তার মৃত্যূ লিখছে আমার হাতে, সেইটা ঘটছে। এইটা নিয়া কোন আফসোস রাখি নাই মনের ভেতরে। একটাই আফসোস, ভোসকাটা বাঁইচা আছে এখনও। সাথে আমার বউটা—
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সে জানায়, অবশ্য সমস্যা নাই। আমি বাহির হইয়া নি। যেদিন বাহির হব, আল্লার কসম, সেদিনই দুইটারই ব্যবস্থা নিবো—এইটা আমার ওয়াদা।
একটু আমতা আমতা করে আমরা জানতে চাই, তুমি বেরুতে পারবে? খুনের মামলা—
সে হাসে। হাসতে হাসতে বলে, খুনের মামলায় বাহির হওনটা সবচেয়ে সোজা। লাইনগাঁট জানা থাকলে এইটা কোন ঘটনা না—
আমরা হা করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকি। জহির মিস্ত্রী আমাদের হতভম্ব ভাব দেখে চোখ টিপ দিয়া বলে, বুঝাইয়া বলব। সব বুঝাইয়া বলব। আজান দিতাছে, ফজরটা পইড়া ঘুম দিই, সারাদিন বহুত দিগদারি আছে। কাল রাইত যদি থাকেন, সব পানির মতো বুঝাইয়া দিবো। তখন করেন না যত খুশি খুন-খারাবি হা হা হা।
একজন রঙ মিস্ত্রীর মুখে খুন নিয়ে এমন নির্লিপ্ত কথা-বার্তা কিছুতেই মেলাতে পারি না আমরা। লোকটার আচার-আচরণে বেশ দ্বিধায় পড়ে যাই। আমাদের দ্বিধা কাটানোর ব্যবস্থা করে জহির মিস্ত্রী। দুপুরে আমাদের রুমটা থেকে ওকে কোর্টে চালান করে দেবার জন্য নিয়ে যায়। তার আগেই ও ফিসফিস করে আমাদের জানায়, কাল রাইতে একটা মিথ্যা কথা বলছি ভাইজান, এইজন্য শরমিন্দা। আমি রঙমিস্ত্রী ঠিক আছে, তবে এইটা হইল আমার লোক দেখানি পেশা। আমার আসল কাম কন্ট্রাকটারি। কন্ট্রাকে খুন করি। কেউ কাউরে খুন করতে চায়, কিন্তু পাইরা উঠতেছে না, তখন আমারে দায়িত্ব দে। আমি কাজটা সাইরা আসি। আজ পর্যন্ত আরো দুইবার ধরা পড়ছি। তবে একবারও আসল খুনের কারণে ধরা পড়লাম না। পুলিশগুলায়ও বদ, বুঝলেন না। একটা খুন হইল, কিন্তু কিনারা করতে পারলো না, তখন উপরওয়ালাদের চাপ কমানোর জন্য আমার মতো দাগী-আসামীদের ধইরা আনে। ঝামেলা বেশি কিছু না, একটু খরচাপাতি হয়, কয়টা দিন একটু ব্যাবসা বন্ধ রাখা লাগে, এই এইসব দিগদারী আর কি! হা হা হা।
জহির মিস্ত্রী হাসে। আমাদের গা কাঁটা দিয়ে উঠে হঠাৎ। কী ভয়াবহ অপ্রকৃতস্থের হাসি! তাহলে বউয়ের পরকিয়ার যে গল্প শোনালো কাল রাতে, সেটি কি আদৌ সত্যি?
মানুষটা এ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে ফিসফিস করে জানায়, আমার ফোন নাম্বারটা রাখেন। দরকার পড়লে ডাক দিবেন। কনসেসানে কাজ করব।
আমরা জানতে চাই, কনসেসানে কাজ করবে কেন?
আপনাদের জন্য করব। নির্দোষি মানুষ, ভাগ্যের ফেরে ধরা পড়ছেন, একটা কলংক লাগি গেল জীবনে। তার শোধ তোলায় সাহায্য করব।
আমরা যে নির্দোষি মানুষ—বুঝলে কী করে?
ভাইজানদের কী বললাম, আরো দুইবার খুনের মামলায় জড়ায়া জেল খাটছি। এবং ফাঁক-ফোকর দিয়া যথাসময়ে বাহিরও হইয়া গেছি। জেলখানা আমাকে বহুত শিক্ষা দিছে, বুঝলেন কি না? কে দোষী, কে নির্দোষি—সেটা পুলিশ যেমন এক নজর কইরা বলতে পারে, আমার মত দাগী আসামীও পারি। কত রকম মানুষ যে দেখলাম এই জায়গায়।
জহির মিস্ত্রীর গলায় রীতিমত দার্শনিকের উদাস স্বর। আমরা হাত নাড়ি, দরকার নাই। কাউকে খুন করানোর কোন ইচ্ছে নাই আমাদের।
জহির মিস্ত্রী হাসে, না দরকার থাকলে নাই। দরকার না থাকনই ভাল। খুন-খারাবী ভাল জিনিস না গো—
আকতারের কথা শুনে মনে পড়ে আমাদের, জহির মিস্ত্রীর ফোন নাম্বারটা আনলে খুব একটা খারাপ হতো না। একটা অপশান খোলা থাকতো হাতে। এই ’শালার’ সাদেককে একটা শিক্ষা না দিতে পারলে হবে না। তার জন্য খুনও খারাপ আইডিয়া না।
(চলবে)