
আত্মহত্যার বিষাদ সংবাদ
দরজা খোলা নদী
ভালো তো আমিও বেসেছিলাম, কেন ভাবলে
আমাকে পাষান?
কেন আঘাতে আঘাতে ভেতরটা করলে
ভাঙাচোরা খান খান?
দু’এক ফোঁটা বৃষ্টিতে মুছে ফেলি
পেরিয়ে আসা শোক—
হাসিমুখে থাকি, বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখি
ব্যথার বানান।
গোপন স্রোতে বুকের মধ্যে
দরজা খোলা নদী দিচ্ছে জানান।
খুব দূর ভালোবাসায়
যদি ভালোবাসা থেকে ফিরে কখনো নদীর কাছে
বৃক্ষের কাছে, বনপ্রান্তে অথবা গহণ অরণ্যে
যেতে চাই
মনে হয় ভালোবাসা আলো-আঁধারির
অঞ্জন ছোঁয়া এই লীলা—
অধিক দূরের অবাধারিত ব্যথিত ভোর
দুঃসহ অনল দহন, পাতা ঝরার দিন;
বৃক্ষের শুকনো শাখায় কিছু হাহাকার ধ্বনি।
অথচ উদ্ধত ঘাসের ডগায় এখন
তোলপাড় উল্লাস
পল্লবে পুষ্পে জমাট সজীবতা।
যদি ভালোবাসা থেকে ফিরে
মানুষের কাছে কখনো আসি, তিলার্ধ সময় মাত্র
করতলের অস্পষ্ট রেখাতে অলীক সুখের
ছবি দেখি—
মানুষের স্বরও জাগে।
তারপর প্লাবন, রৌদ্রের দহন
দুরন্ত-ঝড়ের জটিলতামাখা দিন।
অথচ বনভূমি, নদী, নারী
এমনকি তূলনাবিহীন তুমিও তখন
আমার পরিজন সীমা থেকে দূরে, বহুদূরে…
আত্মহত্যার বিষাদ সংবাদ
গ্রামের অথই বিল, বৃক্ষের পবিত্র ছায়া, শরতের শুভ্র নির্মল আকাশ, নতুন ধানের গন্ধ, বৃষ্টিভেজা দোয়েল-শালিক সব ছেড়ে তোমাকে ভালোবাসতে গিয়ে আমি এখন একুশ শতকের ঋণগ্রস্ত রাজা। সবুজ পাতা, মীরা বোষ্টমীর গান সব ভুলে আমার পা পিছলে যাচ্ছে অন্ধকারে। তুমি ভালোবাসবে এই আশায় আমি আরও বেশি করে ভোট দিচ্ছি সেই অন্ধকারকে।
এখন আর তোমার মনে নেই আংটি বদল সাত তারার সেই জোছনা ছাদ। সবখানে আশ্চর্য খয়েরি শুন্যতা। আজকাল সারাদিন বসে থাকি শোকের ভিতর। ঘনিয়ে আসা রাত্রির তৃতীয় প্রহরেও আমি ডুবে যাচ্ছি কেবলই ডুবে যাচ্ছি। এখন ভালোবাসার বর্ণমালাগুলো মৃত্যুর সাথে গভীর সঙ্গমে। তুমি ভালোবাসতে শেখোনি বলে প্রতিনিয়ত জয়ী হচ্ছে আত্মহত্যার বিষাদ সংবাদ।
কলঙ্কিনী দুপুর
হাইওয়ে থেকে পিচওঠা রাস্তা পেরিয়ে
গাইনদের পুকুর মাড়িয়ে গ্রাম
কার এলোচুল পুকুরে তুলছে ঢেউ
কালো চুলের বাউন্ডুলে ঝাঁপাচ্ছে কেউ
ভাসছে পিঁয়াজ-খোসা, খোসায় চমক ধরা হাসি
সেই হাসি কুড়িয়ে নিচ্ছে একটা শুকনো পাতা
পায়ে তার থেমে যাওয়া গতি…
ঠিক কৃষ্ণ এসে দাঁড়িয়েছেন, গ্রাম জুড়ে
কলঙ্কিনী দুপুর, যেমন অন্ধকারে ছায়া
কড়ইয়ের ফুলে ফুলে কামসূত্র মায়া
পাতার স্মৃতি টলছে, রাধার ঠোঁটে চুম
দু’হাতে দুপুর ছেনে জল খেলছে কার
নিকষ-কালো ঘুম!
মূর্খ রাজার তোপধ্বনি
প্রণম্য চে গুয়েভারা,
আমরা রাতবিষাদে তোমারই গান গাই
যে গান রেখেছে ইট-ভাঙা শ্রমিকের সম্মান
যে গান রেখেছে ধানখেতের কৃষকের মান
নীরবে বয়ে চলা নদী তো বধির নয়
তারও আছে কিছু ঘনিষ্ঠ শব্দ
তার জলে চাঁদ নেমে
ভেঙে যায় শত শত টুকরোয়
নদীপাড়ের রোদ্দুরে এসে একবার দাঁড়াও
মূর্খ রাজার তোপধ্বনি উপেক্ষা করে
পৃথিবীর হৃৎপিণ্ডের সাথে
আমাদের হৃৎপিণ্ড সেলাই করে দেব…