
অবাধ্য সময়চেতন বড্ড অসময়ে ইতিহাস শেখায়
অবাধ্য সময়চেতন বড্ড অসময়ে ইতিহাস শেখায়
যখন ভালো লাগে না এই গরম বাতাস
যখন মাখামাখি পুঁতগন্ধে নাবিল আঁচল
দুর্বার বাতাস সেই অপেক্ষার আকাশে, তখন ডানা মেলে
সোনালি ডানার চিল;
ঘুরে জীবনানন্দ অস্থির ট্রামে
আলোকমুখর চিড়িয়াখানায় বন্ধী মানুষ
কষ বেয়ে পড়া শোণিত ধারায়, অবাক ফানুসের মতো
রাত নামে, কালো ঘুম নামে, দুঃস্বপ্ন নামে- সারারাত!
যখন ভালো লাগে না বৈরীপ্রাসাদ
যখন শোকের তোলাপাড় বুলেটে, পুরানো কার্তুজ নিয়ে
সম্ভ্রম খোয়ানো স্বদেশ; তখন কেউ কেউ
১৬ই ডিসেম্বর খোঁজে বসুন্ধরা সিটিতে
আমার ভালো লাগে না ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী’
আমার ভালো লাগে না এ হঠাৎ ঠেলে উঠা যৌবন
মক্ষিরানীর ক্যাপসুলে আটকানো হজমীগোলক
আমার বাতাসে ভাসছে পোড়া গন্ধ
আমার বুকে কাঁদছে জন্মান্ধ, এক কবি
যে জীবননান্দের মতো, দূর্জয়ের মতো, আলাদিনের মতো
বিজয় দিবসের প্রভাতফেরী; কবি
কার বিজয়ের কথা বলো! কার স্বস্তির সাথে চলো!
কে কে বলো সূবর্ণস্বত্তার বেশুমার বাদক!
কেউ কেউ কথা রাখে না, কিন্তু তারা তো দেখেনি
মাতাল ছবক নিয়ে দূর পরবাসে প্রেতাত্মা সঘণ ছায়াপাত
কেউ কেউ পপিফুল ছুঁয়ে বলে শেষে, বিভেদ নেই
সস্তা ‘৪৭ ভুলে যাও, জাপানীরা যেমন মনে রাখেনি নাগাসাকি!
অবাধ্য জেনারেলের উর্দিতে যে কাটা কাটা ভুল
ক্ষমতার শাসনে শব পড়ে আছে মুড়ে
থাক পড়ে সারারাত, ডোমের স্মরণ হোক অকালে এখন
কিভাবে ভুলব বলো দুঃখ তপন!
কবি, ভালো লাগে না নিউজপোর্টাল আর
কবি, ভালো লাগে না কলাম্বিয়ান কফি
দাপট শক্ত সেই পশ্চিমা দেশে
মানুষের ব্যবধান মানুষে ঘোচে
তারাও শোকের মাতামে আকাশী বৃষ্টি ঝরায় না আর!
আমার হাতজোড় আকুতি শুধু একটা শর্টফিল্ম বানাও-
অর্ণব!
আমি তার নাম রাখবো ‘কবি-র আক্ষেপ’
তুমি তো দেখেছো ‘যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল’
তুমি তো জানো হরিণীরাতের পরে ভোরের গান নামে
টুপটাপ বেনীমাধবের মতো!
ভুলে যাওয়ার জন্যে এ পরাবাস্তব সমীক্ষা
কতশত ময়দানে আর বেজন্মা মানুষের নামবে ঢল
যারা তোয়াক্কা করে না নিজেরই সম্ভ্রম, কে তাকে শেখাবে বলো
জীবনানন্দ; কে তাকে শেখাবে বেদনার গান!
আমার ভালো লাগে না এ মাতাল বাতাস
আমার ভালো লাগে না অসম বিহার
আমার ভালো লাগে না তুমিও আসো
কোলে তুলে দূরন্ত সাহস!
রমনীর মত ফুলিয়ে উচু বুক
তোমার নিশানায় কাঁপুক অস্তনগর!
তারচেয়ে হারাব চলো আরও দক্ষিণে
পাল্টে ফেলব মধূর ভাষাটাও
শরীর ট্যান করে, রং লাগিয়ে চুলে
পাল্টে ফেলব ইতিহাস অন্ধকারে
তোমার শরীরে দেব রমনীয় জ্বালা
শোধের দ্বিগুণ সুখে কাঁপবে শিরদাঁড়া
নিতম্বের অস্থির বাঁকে পাল্টাবে নদীবৃক্ষ, কামনায়
হয়তো জীবননান্দ ভুলতে পারব না
হয়তো অর্ণবের শর্টফিল্মের কথা ভূলতে পারব না
আলাদিনের ফেক আমেরিকান ঈগল
অথবা দূর্জয়ের তিতাস
কোনো কোনো স্মৃতি মানুষের সম্পদ যা, তাকে বেচে দিতে না পারলে
কাঁটা যায় না সম্পর্কের মিতালী,
রেডব্রিজের কোনো নির্জন ওকতলায় শরীরিপ্রেম কি কিছুটা হিঁয়ালী
যখন অস্থির বাসাবোয় ঝরছে আগুনরঙা ড্রোন, লুকোছাপায়
ভুল করা একমেয়ে কাঁদছে আনমনে লালচে মাছরঙা শাড়ীতে
তাকে কোন ভুল শেখাবে তুমি!
তবুও তো একটা সমৃদ্ধ আকাশ তোমাকে দিতে পারব
বাতাসের কানাকানিতে ঝরে পরা শিশির মাখবে তুমি
ফুটনোটে স্কেচ আঁকবে ভ্লাদিমির কুশ
আর চিলেকোঠায় অবাক জোছনা অকারণে ঝুলে থাকবে দেখো
কবি, মুক্তির সরোবরেই তো প্রাপ্তির ঝর্ণা!
কবিতার মেয়ে দারুণ ভুলভাল ছবি আঁকে, গল্প লেখে আর আবেগি হয়; একাকী!
আমি বলেছিলাম, তোমার রহস্যময়তা নিয়ে একটা দারুন কবিতা লিখব ভাবছি
তুমি প্রতিউত্তরে আমাকে বিভ্রান্ত করে অবাক হলে খুব-
কবিতা তো সাজানো বাগানে রঙিন পাতাবাহার নয়
খুব মনের মুগ্ধবেশের অপরূপ গনকপাথর
যা হৃদয়বেগের মায়াবী চিলেকোঠায় ভয়ে ভয়ে দাঁড়িয়ে
শব্দসঙ্গমে খুব নরম হয়, আর্দ্র হয়
তারপর নেমে আসে সিঁড়ি বেয়ে মধ্যাহ্নে অথবা রাতের সেই সময়ে
যখন, মানবীর শরীর হয় দেহফল
প্রেম-ভর করা কিশোরী অবোধ আঙুলে ভাবনানাটাই- এ পিচ্ছিল কন্ঠ রাখে
এক একটা অক্ষর বিলম্বিত জ্যাকেটে অপবিত্র শ্বেদ রাখে
দহনের বৈসাম্যের গড়ে উঠে কুয়াশার বর্তুল বিবেক
তখন কবিতা ধরা দেয়, বলে: স্বপ্নবোধের পরম্পরায় তোমাকে লেখা আমার
নিবেদন ততটা মোহনীয় নয়, অবাধ্য মাতাল শাসক শোকগাঁথা পুড়িয়ে
আমারও সমুদ্র ভরা তরঙ্গে একটা সস্তা পালতোলা ডিঙি ভাসিয়ে উজানে
যাবে, যেখানে মেয়েটি ভুলভাল ছবি আঁকে!
ছবি আঁকার ফাঁকেফুঁকে সে গল্প লিখত যখন
তার কান্না ভরা গল্পমালা কখনও ভীত
কখনও বিশুষ্ক মেয়েটির কথা মনে করিয়ে দিত
রাত বাড়ার সাথে সাথে যে একাকী হয়, জোছনা আর
প্রগলভ নক্ষত্র পাশ কাটিয়ে সে কথা বলে জান্তব-জ্বীনের সাথে
চুমকী আবির ঝুমঝুম করে ছড়িয়ে দেয় অস্ফুট ভোরকথা
কিছুটা বিরাগ হয়ে, তোমার দিকে তাকাবে যখন
আমার এই পাড়ি দেওয়া মহাসময় অন্তিম রহস্যবর্তিনীর
ঠিক এই বিন্দুতে নিশ্চল থাকুক, তা চাইবার উৎপ্রেক্ষা
আমাকে ভোলাবে কবিতা না লেখার যাতনা।
তার বাক্তিগত সুখে কবির শোক মেশাতে চাই না আমি
তার অবাক পেন্সিলের আঁচড়কে ভুলভাল বলার দুঃসাহস যদিও
কবির ক্ষুদ্রতা তবুও কবি এভেবে প্রবোধ দেবে নিজেকে যে
মেয়েটি তার ছবি আঁকেনি কোনো!
তুমি বলেছিলে- কবিতার ধরন কেমন হতে পারে,
আমার ভালো লাগায় কি মুল প্রেষণা নয়!
রবি ঠাকুরের চেয়ে যদি বিষ্ণু দে আমার ভালো লাগে তবে
আমি কি অগোত্রের মালতি ফুল অথবা শকুন্তলার ভুলে যাওয়া
দুষ্মন্ত হয়ে যাব; কবিতা কি এতটা নির্মম হবে-
পাঠক কি অবাধ স্বাধীনতার নামে কবিকে করবে সম্ভ্রমহীন!
এসব দারুণ তর্কে তোমার মোবাইলের চার্জ ফিকে হয়ে এলে
তুমি উঠে যেতে, করুন বেহালায় তানপুরা বাজিয়ে বলতে-
আবারো কবিতা পড়বো, আবারো কবিতার মেয়ে হয়ে যাবো!
আহা! কবিতার মেয়ে, আহা! মধ্যরাত
সাঁড়াসী দিয়ে অক্ষর তুলে তুলে এক একটা পদ্য
কড়া লিকারের অবোধ বিষ্ময় খাটের তলায় থাক
ঝুম করে নামা বৃষ্টিতে তোমার চোখের পাপড়ি রাখো
আমি লতানো এক সানকি দেব তোমার অশ্রু ভরে রাখার জন্যে
জমে জমে মুক্ত হবে সে অজস্র জলবিন্দু
আমার কবিতার পূণ্যি বিপুল অগ্রাহায়ণে মেঘনার পাড়ে বুনো
ফুল হয়ে রবে;
অতঃপর পরস্পর এই অভিজ্ঞান ঠোঙায় মুড়ে শেষ করি কবিতা-
বাধাহীন জীবন কবিতা আনে না, দেহটাকে আনে পোষাকে
শ্বাপদ তরু নিজেই শব্দ আবেগ বিষাদ আর খেয়ালে।
প্রেমের কবিতা
‘নিঃশ্বাস নিতে দেব না,
তোমাকে নিঃশ্বাস নিতে দেব না একবার যদি পাই,
পুনরায় আরবার যদি পাই পাঁজরে পাঁজর গুঁড়ো করে দেব- ছাই !’
তোমার এ আবৃত্তির প্রতিউত্তরে আমি বলেছিলাম- খুব আবেগী!
তুমি হেসে বলেছিলে- আবেগের বিষয় আবেগ নিয়েই লিখতে হয়,
– তুমি নিমলেন্দু গুনের ‘স্ত্রী’ কবিতাটি পড়েছ?
একটুও না চমকে তুমি বল্লে- হুম, তবে আবারও শোনাতে পার;
‘কম বয়সে এসব ফাজিল কবিতা পড়ার মোহ ছিল’
আমার এ ধরনের সরলিকা তোমাকে হয়ত আহত করেছিল,
তাই ‘এই না হলে পুরুষ মানুষ’ বলে তুমি ঝনঝন চুরী বাজিয়ে
আমাকে কটাক্ষ করে চলে গেলে দেয়ালের ওপাশে!
তোমার আবেগে ভরা স্তনজোড়া ছুঁতে চাইনি আমি কোনোদিন,
কিংবা নিতম্বের পরিধি আমার মননে কলমের আঁচড়ের বেশী
দেইনি কিছুই আমি জানি; কবিদের যে স্বতন্ত্র বৈঠা সেখানে
শাররিক পাল খুব বেশী কাব্যিক আর অপনয়নের মাঝপরাগ।
ভালোবাসার লেনদেনে শুদ্ধতম প্রেমিকার যাযাবর ঠোটও তাই অস্ত্রবিশেষ,
ক-বর্গীয় ধ্বণির সাথে বাস করে করে আমরা দেহদাস এখন;
মিথ্যে ঘ্রাণ নিই বাতিল কাঁচুলীতে।
তোমাকে শরীর নই শেখাতে এসেছিলাম কবিতা
তোমার জঘণ নয় বলেছিলাম দারুন কিছু ভাব,
চুম্বনের বাতাবরনে কাঁপা দেয়ালিকায় লিখ অবুঝ এ সুখ
বিভ্রমের বাতাসে কাঁপুক জলমগ্ন শোকের দ্বার
কবিতা আবেগী যদি হয়, কি তার দ্বিগুন কখনো
আগুনে মখমল ঋণ পেরুবে উত্তাপ ঘণ।
এটাই শেষকথা তুমি জেন নিশ্চিত
কবির উপহার এই আত্মজ খেদ
মনে রেখ অথবা ভুলে যেতে পার
অপ্রকাশিত এই বানোয়াট ভেদ!
সুখ আর বিষাদের কষ্টিপাথর তো বিবেক!!
কাল :
বিষন্নতার অবসাদ; চতুষ্পদ রাত্রির মতো ধেয়ে আসছে যেন চারদিকে, কোলঘেষে!
আমি :
সম্ভোগ সুখ চাই, শোনো হে বিষাদ
যুবতী চাই পরিপূর্ণ ভরা ভরা; কমদামী নয় একটুও
বিষাদ তুই ফিরে যা
ওগো তরুনমেদ নিমজ্জনের অতলে নাও আমায়
শুড়িখানার নর্তকী যেন আর ঘাঘরা পরে নাচে না কখনো!
বিধাতা :
রাত ও দিনের মতো বিষাদ তোমায় করবেই ভর
পুনরায় মোক্ষলাভ, তারপর তুমিই আনন্দ!
আমি :
অপেক্ষা তো খুব প্রগাঢ় দয়াময়
আমার কন্ঠভরা সৌভিক জ্বরা, প্লাবনেও আমি টলব না!
বিষাদ :
মানুষ! তোমার ডুবে যাবার গভীরতায় আমার পূনরুথ্থান
সুখের কতটাই বলো সজ্ঞানে!
আমার চুম্বন যতই তিক্ত হোক, এ বড় সুনিপুন, খুব আপনার
আর কালের মতো দীর্ঘস্থায়ী; এসো আলিঙ্গন করো আমায়!!
আমি :
কখনো ফুরাবে এ সুখময়তা, কখনো সুরা ঠেকবে তলনীতে
সম্ভোগসুখ পালাবে সিঁদকেটে, ভাবিনি এসব ভাবিনি
জীবন আশাহীন, তপন বারিধি শুকনো ব্যাকুল হবে, ভাবিনি!
তবে তাই হোক, আসুক বিষাদ, আসুক মৃত্যুময়তা
আমি অপেক্ষায় এ জীবন, এ যাপনের সাময়িক ব্যবচ্ছেদকে
স্বাগত জানালাম।
সুখ :
হায়, মানুষ! আমাকে হৃৎপিন্ডর গোপনে পুঁতে, তোমার কলহ
মিছে মরিচিকায়; একটু হাতালে বিবেক সে-ই দিত সন্ধান আমার!
আফসোসের বেশাতী আর তোমায় করত না উতলা।
সুখ আর বিষাদের কষ্টিপাথর তো বিবেক!!
মুকিত চৌধুরীর বাগানে তথাগত ঘুমায়
মধ্যবয়সী কবিসকল রেডব্রীজ পেরিয়ে শুধু সন্ধ্যাটাকে বাঁশপাতা ঠোঙায় মুড়িয়ে, বটবৃক্ষের সান্নিধ্যে এসেছিল যখন, তখন পরিচ্ছন্ন সবকটা রাস্তায় আড়াআড়িভাবে গোধূলি লিখছিল শোকের তুলিতে আর একটি ১৫!
আমরা গোল হয়ে বসে আয়েশিভঙ্গিতে চায়ে চুমুক দিতে দিতে সবুজ, প্রকৃতি আর নির্জনতার সাথে জীবিত বুদ্ধের নিঃসঙ্গতার বয়ান শুনছিলাম। সাগর রহমান, এস এম সুলতানের কাছ থেকে ধার নেওয়া চুলে তা দিতে দিতে ভোরে লেখার কারণ সমুহ ব্যাখ্যা করার ফুরসতে সমসাময়িক ধারাবাহিকের ফিরিস্তি দিচ্ছিলেন। কন্ঠের যাদুকর মোস্তফা জামান গিটারের টুংটাং-এ আলতো করে রবিন্দ্রনাথ তুলছিলেন। সাইম খন্দকার তার স্বভাবসিদ্ধ প্রগলভতায় কার্ল মার্কসের সহজ অনুবাদের উপায় আওড়াচ্ছিল;
আমি বাগানের সবুজ কুলুঙ্গিতে একটি সমাধিস্থ তথাগত দেখছিলাম। সারিবদ্ধ গ্রন্থাগারের পাশ ঝুঁলে আছে বটবৃক্ষের ছায়ায়। শ্রবণ এবং আঘ্রাণের সবটা শুধুমাত্র একটি শব্দে বিম্বিত হলো কিছুক্ষণ, সেখানে সমাজ নেই, রাজনীতি নেই, ধর্ম কিংবা আঞ্চলিকতা নেই; শুধু গোল হয়ে আছে দুটি অক্ষর : পড়!