
অন্ধদেউল
অন্ধদেউল
আমাকে পোড়াচ্ছ! দূরের সীমানায় আকাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে
আগুনের মতো করে বিষতীর ছুঁড়ে দিচ্ছো দেমাগী দুপুরে,
তুমি তো জানো না সেই বিষতীর কিভাবে ফুলেল বৃষ্টি হয়ে
মুগ্ধ করে আমাকে আশ্বিনী মেঘে সুখবতী স্নানে।
বিষতীর যতোই ছোঁড়ো আমার জন্যে রেখেছো ফুটিয়ে
সুঘ্রাণ অস্পর্শ কুমারী পাপড়ি অজস্র ফুল ভেতরে তোমার,
কতো অন্ধগহীন ভাঙে তোমার-এপাশ ওপাশ সুখশয্যা
যেখানে রয়েছো কতোটুকু আছো সেখানে বালিকা তুমি!
ভালো থাকার রঙ্গমঞ্চে তোমার অভিনয় অদ্ভুত নিপুণ মানি
ভেতরে তোমার রঙধনু আঁকাআঁকি কেবলি তো এই আমাকে,
বয়সী মাটির অন্ধদেউলের ধ্যানী আমি-জানি তোমার সুন্দরে
আমাকে রেখেছো বেঁধে গোপন কৌটায় সযত্ন স্বপ্নপুটলিতে।
দণ্ডকারণ্য
রাজকন্যা, আমাকে আপনি দণ্ড দিন-আমি উৎসবের মতো করে
নিজেকে সাজিয়ে এনেছি-এক জীবনপথ দাঁড়িয়ে আছি,
আমি জানি আমাকে কঠিন দণ্ড দিলে বিকেল-বাতাস ঢেউ খেলে যাবে
সুনন্দা অন্তরে আপনার-এই দেখুন দু’হাঁটু গেড়ে বসে আছি দণ্ড দিন।
কীভাবে কীভাবে রাজপ্রাসাদের অন্দরমহলে ঢুকে পড়েছি অবেলা
কোনো চোখ দেখেনি আমাকে-বাগানভর্তি ফুল দেখে হেসে উঠেছিল
পাখিরা সুরেলা কণ্ঠে আমাকে স্বাগত জানিয়েছিল-বুঝিনি তখন
ছেঁড়া জুতো তালি দেয়া মাটিপুত্র বুঝেনি সরল অংক সরল নয়
আমাকে দেখে যে চাঁদ ম্লান হয়ে যায়-যে নরম মৃত্তিকা দগ্ধতায় পোড়ে
উজ্জ্বল দুপুর দুঃখে কাঁদে-কলস্বরা নদী বিধবা শাড়িতে নিজেকে লুকায়
মাঝরাত দুপুর করেছি দু’চোখে আপনার-নিদ্রাহীন রাজকন্যা দণ্ড দিন
আপনার চোখের গহীনে নতুন চোখ-নতুন লাবণ্যে বন্দি করুন আমাকে
দেবতীদেউল
পাপ বুঝিনা দেবতী
পুণ্যও চিনি না
তোমাকে চিনি
তোমাকে চাই
খরস্রোতা নদী যেভাবে সমুদ্র চায়।
অঙ্ক বুঝিনা দেবতী
পদ্যও বুঝি না
তোমাকে বুঝি
তোমাকেই চাই
পদ্মা যেভাবে পাগলা ঢেউয়ে সবকিছু নিজের করে চায়।
বাণিজ্য শিখিনি দেবতী
লাভ-লোকসান বুঝি না
তোমাকে বুঝি
তোমাকে চাই
স্বর্ণলতা যেভাবে মেঘের মতো ঢেকে রাখতে চায় বৃক্ষশরীর।
বন্দিত্ব জানিনা দেবতী
মুক্তিও বুঝি না
জীবনসত্য তুমি
তোমাকে চাই
বন্যার জলে মিশে যেভাবে উর্বরতা বোনে বন্ধ্যাভূমিতে।
তুমি কার-কার ছিলে কবে
কার আছো এখন
বুঝি না হিসেবের কড়ি
চাই তোমাকে প্রবল
কবিতা-গহীনে যেভাবে জেগে ওঠে কাঁচা চরের মতো নতুন কবিতা।
পাপ বুঝিনা দেবতী
পুণ্যও চিনি না
স্বর্গ-নরক বুঝি না
তোমাকেই চাই
জীবন উৎসবে যেভাবে জেগে ওঠে যুবতীজমিন।
প্রত্নজীবন
তুমিও কী আজ মধ্যরাত ভেঙে জেগে উঠেছিলে
তোমার নিঃশ্বাস ভেসে এলো রাতের প্রাচীর ভেঙে
বিবর্ণ নগরে-একতারা ঢেউয়ে হেঁটেছি জীবনসড়কে
একদিন মৃত্যুর ভেতর দিয়ে দুঃখভূমিতে তোমার
প্রত্নজীবন হয়ে যাবো-তখন রাত্রির গভীরতা ভেঙে
জীবন কিনারে তুমি-হেঁটেছো তুমি একজীবন পুরোটা
একটু ভালোবাসলে কী এমন হয়
একটু ভালোবাসলে কী এমন হয়!
কী এমন সর্বনাশের আগুন জ্বলে!
এই আষাঢ় কিভাবে কেঁদে কেঁদে ফেরে
দেখেছো কখনো কষ্টের কেমন রঙ!
হিসেবের চারকোণ যে জীবন
মেঘনা যমুনা গড়াই মধুমতি স্রোতময়ী যে জীবন
কবিতার মতো লালটিপ স্বরবৃত্ত যে জীবন
সেখানেও থাকে দুঃখের গহীন-
চিত্তহরিণী পাপড়ির নিচে থাকে অদৃশ্য কষ্টের ভাঁজ
সেই বেদনায় ভালোবেসেছিলো রাধিকাও গোপন শিশিররাত্রি
লাবণ্যময়ী মাদাম বোভারি রোদলফকে বেঁধেছিলো
গোপন তাবিজে
বৃক্ষশরীরে জড়িয়ে থাকে শরমহীন সোহাগিনী স্বর্ণলতা
অচিন পাখির মতো তুমি কেনো অধরা দূরের পাখি
একটু ভালোবাসলে কী এমন হয়!
কী এমন সর্বনাশের আগুন জ্বলে!
হিসেবের চারকোণ ছিঁড়ে ফেলো দেবতী প্রেমের
বেনারসি উড়ছে পাগলা হাওয়ায়
নকশি আঁচলে আঁকো নতুন যৌবন
তোমার সৌরভ উজ্জ্বলতা হীরক টুকরো রাশি রাশি
অদৃশ্য ঝড়ের মতো জেগে থাকে মাতাল মধ্যরাত
শুষ্ক ঠোঁট কাঁপে যেনো ঢেউখেলা অসহ্য রোদ্দুর
বর্ষার অবাধ্য নতুন জলের মতো ছুটে আসো দীঘল চুম্বনে
একটু ভালোবাসলে কী এমন হয়!
কী এমন সর্বনাশের আগুন জ্বলে!